হাসির গল্প

গল্পঃ মশা। 
-তাসফি আহমেদ।


আমার শরীর খারাপ। কেবল খারাপ নয়। ভীষণ খারাপ। প্রথমমত ডায়রিয়া। দ্বিতীয়ত জ্বর। মারাত্মক জ্বর। সমস্ত শরীর ব্যাথা করছে। গায়ের চামড়া যেন ফেটে যাবে এমন অবস্থা। মাথাটা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে যেন। শুয়ে থাকতেও অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। তবুও আমি শুয়ে আছি৷ ঘুমানোর চেষ্টা করছি৷ অথচ আমার ঘুম আসছে না। আসছে না বললে ভুল হবে। চোখ লেগে আসছে। এরপরই ওর গানের কণ্ঠে আবার সেই লেগে আসা চোখ খুলে যাচ্ছে। আমি ওকে বারংবার নিষেধ করছি। ও আমার নিষেধ শুনছে না৷ নিজের মতো করে গান গেয়ে যাচ্ছে৷ আমার মাথায় যন্ত্রণা করছে। আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম,
-এই চুপ করবি? অসহ্য লাগছে আমার।

কে শুনে কার কথা। সে আপন মনে গেয়ে যাচ্ছে৷ যন্ত্রণায় উঠে বসলাম আমি। রাগী একটা লুক দিলাম। সে দৌড়ে পালালো। আমি আবার শুয়ে পড়লাম। আম্মা কিচেনে আছেন৷ সে হয়তো সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছে৷ আপদ বিদায় হলো ভেবে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। চোখ লেগে আসতেই সে আবার উপস্থিত হলো৷ গুনগুনিয়ে গান গাইছে। মেজাজটা চড়ে গেল একদম। কাছে আসতেই দিলাম এক চড়। চড়ের আঘাত সামলাতে না পেরে আলমারির কাছে গিয়ে পড়ল৷ কপাল লাগল আলমারিতে। এরপরই মেজেতে স্থির হয়ে পড়ে রইলো৷ আমি প্রথমে ভাবলাম ঢং করছে৷ কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো না এটা ঢং নয়৷ সে সত্যি সত্যি ব্যাথা পেয়েছে৷ দৌড়ে কাছে গেলাম। গায়ে হাত দিতেই দেখলাম নড়াচড়া নেই৷ নাকের কাছে হাত দিতেই দেখলাম শ্বাস নিচ্ছে না৷ টেনশনে পড়ে গেলাম। গা গুলিয়ে উঠল ভয়ে। বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠল। হার্টবিট বাড়তে থাকল৷ স্পষ্ট অনুভব করলাম আমি কাঁদছি৷ চোখে জল। আমি কী করব ভেবে পেলাম না। মেজেতে শুয়ে পড়লাম। ভীষণ অস্থির লাগছে। ওর বাবা মাকে কী বলব আমি। ওর ভাই বোন? ওরা তো আমাকে জ্যান্ত রাখবে না৷ ওদের বংশটাই তো এমন৷ ভয়ংকর। হঠাৎই মা এগিয়ে এলেন৷ আমার রুমে ঢুকেই কঠিন চোখে তাকালেন৷ আমি ভীত স্বরে বলল,
-আমার দোষ নেই মা। বিরক্ত করছিল ভীষণ। তাই রাগ সামলাতে না পেরে...
মা এবার অবাক চোখে দেখলেন। তারপর ওর দিকে তাকালেন৷ কোমরে হাত দিয়ে আমার দিকে আরো কঠিন দৃষ্টিতে তাকালেন৷ যেন এই মশাটার মারা যাওয়াটা বড় ব্যাপার নয়, আমি এখানে বসে কাঁদছি ওর জন্যে, এটাই বড় ব্যাপার হয়ে গেল। মা বললেন,
-তোর ফাজলামো আর গেল না না?
আমি অবাক স্বরে বললাম,
-আমি ওকে মেরে ফেলেছি৷ আর তুমি এটাকে ফাজলামো বলছো? মা তুমি এতো শক্ত? নিষ্ঠুর? মশাটার জন্যে মায়া হচ্ছে না? ওর ফ্যামিলির জন্যেও না? আচ্ছা মা ওর যায়গায় যদি আমি হতাম? তাহলে? তাহলে কি তুমি এভাবে বলতে পারতে?

মায়ের দৃষ্টি এবার করুণ হয়ে এলো। কেমন এক দৃষ্টিতে তাকালেন। হয়তো ভাবলেন, রোগে রোগে ছেলেটা পাগল হয়ে গেল নাকি? আমিও ভাবলাম আমি কি আসলেই পাগল হয়ে গেলাম নাকি? পশুপাখিদের জন্যে মায়া দেখানোটা পাগলামি নাকি? 😑
.


-তাসফি আহমেদ।



Bangla choto gopo| bangla funny story




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url