ভালোবাসার গল্প - মিহিন এবং 'আমি'র গল্প দ্বিতীয় পর্ব | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি
ভালোবাসার গল্প - মিহিন এবং 'আমি'র গল্প দ্বিতীয় পর্ব | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি
ভালোবাসার গল্প - মিহিন এবং 'আমি'র গল্প | লিখেছেন শাকের আহমেদ তাসফি
মেয়েটা বলল,
-হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেলেন যে?
আমার ঘোর ভাঙ্গল। বললাম,
-ভাবছিলাম।
-নিশ্চয়ই ওই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন?
আমি হাসলাম। বললাম,
-আপনি কীভাবে বুঝলেন?
সে স্মিত হাসি দিল। বলল,
-বুঝেছি কোনো এক ভাবে। তা জেনে আপনার লাভ নেই৷ তবে এবার ঠিকই টের পাবেন, ভাবতে ভাবতে আসলে কেমন অশান্তি লাগে।
-আপনি আমাকে মানসিক অশান্তিতে ফেলতে চাচ্ছেন?
-হ্যাঁ।
-কোন অন্যায়ের শাস্তি এটা?
-যে অন্যায়ে আপনি আমাকে দেখেননি এবং আমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিনরাত ভাবিয়েছেন, এটা ঠিক সেই অন্যায়ের শাস্তি।
-বুঝলাম না।
সে এবার একটু শব্দ করে হাসল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
-কিছু কথা না বুঝাই ভালো।
-আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন?
সে হাসল কেবল। আমি তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। বাতাস বইছে৷ বসন্তের বাতাস৷ এই বাতাস এক অনন্য অনুভূতি জাগায়৷ কেমন শিরশিরে একটা অনুভূতি হয়৷ সেই বাতাসটা এসে আমাদের দুজকে ছুঁয়ে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। অনুভব করলাম বাতাসটাকে৷
আমার সমস্ত শরীর শীতল হয়ে এলো যেন। অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করলাম আমি। এরপর থেকে আমাদের দেখা হলে কথা কম চোখাচোখিই হতো বেশি। আমি তাকে ধরে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করছিলাম যে ওই ব্যাপারটা কী৷ সে একগাল হেসে বলল,
-পারলে ভেবে বের করুন৷ না পারলে অপেক্ষা করুন সঠিক সময়ের৷
-অপেক্ষা যে বড় কষ্টকর!
সে হাসত। কোনো জবাব দিতো না৷ এভাবেই দিন পার করছিলাম।
.
তারপর আজ রাতে হঠাৎই তার মেসেজ পেলাম। মেসেজটা যে সে-ই দিয়েছে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নই৷ অন্য কেউই হতে পারে। আবার নাও হতে পারে৷ আমি চুপচাপ বসে থাকলাম৷ কী করবো ভেবে পেলাম না৷ এদিকে ওই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে বড় অস্থির আমি।
আমি তার মেসেজের কোন রিপ্লাই দিলাম না৷ বিছানা থেকে নেমে গেলাম। রুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম। আব্বু আম্মুর রুমের দরজা বন্ধ৷ ছোট বোনটা পড়ছে৷ ধীরে ধীরে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। তারপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকলাম৷
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
আমার মন বলছে, যে মেয়েটা মেসেজ দিয়েছে সে মিহিনই৷ একমাত্র মিহিনই। অন্য কেউ হতে পারে না৷ আমার মনটা যেন এই ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আছে। কিন্তু এই মেয়ের এতো রাতে আমার কী প্রয়োজন পড়ল তা বুঝতে পারলাম না৷ এদিকে আমি অদ্ভুত কিছু অনুভব করতে থাকলাম৷ আমার নিজেকে বেশ দূর্বল মনে হলো৷ যতোই উপরে উঠছি আমার হাত পাঁ যেন দূর্বল হয়ে আসছে৷
বুকের ভেতর অন্য রকম লাগছে৷ মন যেন চিৎকার করে বলছে আজ কিছু একটা হবে৷ অন্যরকম কিছু একটা৷ মনের এমন কিছু মনে হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। সেদিনের একটা ঘটনাটা আমার মনকে বেশ নাড়িয়ে দিল৷ এরপর থেকেই আমি যেন মেয়েটার প্রতি অন্যরকম কিছু অনুভব করি৷ অন্যায় কিছু৷ এই বাড়িতে প্রেমের মতো বড় অন্যায় আর কী হতে পারে! অথচ আমি নিজের অজান্তেই সেই অন্যায়টা করে ফেলেছি৷
.
আমি ভার্সিটির গেইট দিয়ে বের হলাম। সাথে আমার বান্ধুবি অনামিকা ছিল৷ দুজনে বের হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকলাম। হঠাৎই কোত্থেকে যেন মিহিন এসে উপস্থিত হলো৷ একদম পথ আগলে দাঁড়ালো। আমি তাকে দেখেই হকচকিয়ে গিয়ে বললাম,
-আরে! আপনি এখানে?
মিহিন কিছু বলল না৷ মলিন মুখে আমার দিকে চেয়ে থাকল। আমি আবারো বললাম,
-আপনি এখানে কেন?
সে মন মরা হয়ে বলল,
-এমনি এসেছি।
-ও আচ্ছা। থাকুন তাহলে।
এই বলে আমি অনামিকার সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটা শুরু করলাম। মিহিন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কিছু সময়। আমি আর তাকে দেখলাম না। অনামিকার সাথে হাসাহাসি করে যেতে থাকলাম। কিছু পথ যেতেই পেছন থেকে মিহিনের ডাক এলো।
-এই? শোনেন?
আমি পেছন ফিরে তাকালাম। সে বলল,
-আমি এখানে আপনার জন্যে এসেছি৷
আ'মি কেমন জানি স্থির হয়ে গেলাম। কী বলব ভেবে পেলাম না। অনামিকা মুচকি হাসল। আমাকে জড়িয়ে ধরার বাহানায় কানে কানে বলল,
-কী রে বন্ধু? কে এই বালিকা?
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
আমি তখন অনামিকার দিকে তাকিয়ে। সে মুখ কালো করে আছে। ভীষন মলিন তার মুখ। কিছু একটা যেন তাকে পিড়া দিচ্ছে। হঠাৎই দেখলাম মেয়েটার চোখে জল। সে যেন খুব কষ্ট করে নিজের কান্না আঁটকে রাখছে। আমি অনামিকাকে ছাড়িয়ে নিয়ে মৃদু হেসে বললাম,
-তুই যা ভাবছিস তা নয়৷ ঠিকাছে?
-হ্যাঁ। বুঝি বুঝি!
-তোর মেধা বেশি। এজন্যে বেশি বুঝিস। এখন যা। পরে কথা হবে। ওয়েট রিক্সা ডেকে দিচ্ছি।
অনামিকা হাসতেই থাকল। আমি রিক্সা ডেকে দিলাম তাকে। সে রিক্সায় উঠে চোখ টিপ মারল আমায়৷ আমি হাসলাম কেবল। সে চলে গেল।
আমি মিহিনের দিকে ফিরে তাকালাম। বললাম,
-আমার জন্যে এখানে এসেছেন? সে মলিন স্বরে বলল,
-বলেছি তো একবার।
আমি আবারো হাসলাম। বললাম,
-তা হঠাৎ আমার ক্যাম্পাসে আপনার আসার কারণ কি জানতে পারি?
-কোনো কারণ নেই।
-সত্যিই কোনো কারণ নেই?
-হ্যাঁ৷ সত্যি৷
-আচ্ছা৷ এখন কী বাসায় যাবেন?
-জানি না।
-আশ্চর্য! জানেন না মানে?
-সেটাও জানি না৷
-মন খারাপ আপনার?
সে চট করেই জবাব দিল না৷ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল৷ বলল,
-বুঝতে পারছি না৷
আমার মাথাটা ঘুরিয়ে এলো যেন৷ বললাম,
-এমন ভাবে কথা বলছেন কেন? কী হয়েছে আপনার।
-জানি না৷ আমার কেমন জানি পাগল পাগল লাগছে৷ ভীষণ অস্থির লাগছে৷ দম বন্ধ বন্ধ লাগছে।
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
মেয়েটার চোখে জল জমে গেল। তার চোখ ছলছল করে উঠল। এখনই গড়িয়ে পড়বে৷ আমি বললাম,
-আশ্চর্য! আপনার এমন লাগছে কেন? পানি খাবেন?
এই বলে আমার ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের তাকে দিলাম। সে এক ডোকে সমস্ত পানি খেয়ে ফেলল। তারপর খালি বোতলটা রাস্তার দিকে ছুড়ে ফেলল। এমন ভাবে ফেলল যেন ভীষণ রেগে আছে সে৷ বহু কষ্টে এতোক্ষণ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এখন হাতে কিছু পেতেই সেটার উপর রাগ ঝাড়ল। মেয়েটার চোখে জল। গালে আর নাকে ডোগায় রাগ খেলা করছে। আমি আবারো বললাম,
-কী হয়েছে আপনার।
সে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে। বলল,
-একটা রিক্সা ডাকুন। আমি বাসায় যাবো৷
আমি তাকে একটা রিক্সা ডেকে দিলাম। সে উঠে বসতেই বললাম,
-একা একা যেতে পারবেন? শরীর খারাপ লাগছে বেশি?
সে আবার মলিন মুখে তাকালো। বলল,
-আপনি যাবেন না বাসায়।
-তা তো যাবোই।
-এখন কোনো কাজ আছে?
-না। নেই।
-তাহলে আমার সাথে যেতে কী সমস্যা আপনার?
-সমস্যা নেই। তবে আপনি কী ভাববেন আবার!
-বেশি কথা বলবেন না৷ উঠে বসুন৷
আমি উঠে বসলাম। রিক্সা চলতে থাকল৷ অনেকটা সময় নীরবতায় থাকার পর মিহিন নিজ থেকেই বলল,
-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
এমন ভাবে কথাটা বলল যেন সে কোনো অপরাধ করছে৷ এখন সেটা বলবে আমায়৷ খুব আতঙ্কিত লাগছে তাকে৷ আমি বললাম,
-জ্বী বলুন৷
সে খানিকটা সময় চুপ করে থাকল৷ তারপর অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
-ওই মেয়েটা কে ছিল?
-কোন মেয়েটা?
-একটু আগে যে আপনার সাথে ছিল সে।
-ও। অনামিকার কথা বলছেন? সে আমার বান্ধুবি৷ একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি আমরা৷
সে আরো কিছু সময় নিয়ে বলল,
-শুধুই কি বান্ধবী?
আমি তাকালাম মিহিনের দিকে। সে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল তখন৷ আমি তার চোখের গভীরে তাকালাম। তার চোখ ভর্তি বেদনা। না বলা কিছু আর্তনাদ। সে কিছু একটা শুনার জন্যে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। দু'চোখ ভর্তি ভীষণ আগ্রহ৷ আমি বললাম,
-না৷
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
তার চোখ দুটোয় হঠাৎই যেন সতেজতা ফিরে পেল। কেমন জানি বেশ উজ্জ্বল লাগল৷ অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিল সে৷ আমি বললাম,
-আপনার কী ওই কারণে মন খারাপ ছিল?
সে কিছু বলল না। চুপ করে থাকল কেবল। আমি তার দিকে চেয়ে থাকলাম৷ সে আমার দিকে তাকালো না আর। অন্য দিকেই তাকিয়ে থাকল। যেন সে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছে। বললাম,
-জবাব দিচ্ছেন না যে?
সে চট করে বলল,
-আমার ইচ্ছে৷ আমি জবাব দিবো না৷ তাতে আপনার কী?
মেয়েটা যেন চট করেই রঙ বদলালো৷ তার মাঝে পুরনো সেই প্রানবন্ত ভাব ফিরে এলো৷ বললাম,
-আপনার কী এখন ভালো লাগছে?
সে হাসল খানিক। বলল,
-হ্যাঁ। ভীষণ ভালো লাগছে৷ এতো ভালো লাগছে যে বলে বুঝাতে পারবো না৷
আমি বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুই যেন বুঝতে পারলাম না৷ কেবল তাকে দেখতে থাকলাম। তারপর সে নিজ থেকেই বলল,
-বান্ধবির সাথে এতো হাসাহাসির কী আছে? আবার জড়িয়েও ধরেছেন। হুহ৷ লজ্জা লাগে না আপনার?
-আশ্চর্য ব্যাপার! বান্ধুবির সাথে কী হেসে হেসেও কথা বলা যাবেনা নাকি?
-না। যাবে না।
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
-কেন যাবে না?
-সেটা যদি আপনি বুঝতেন তাহলে আজ আমাকে আপনি করে বলতেন না৷
-মানে?
-মানে হচ্ছে আপনার মাথা৷ শোনেন, মেয়েদের সাথে এতো মেশার প্রয়োজন নেই। ছেলে বন্ধুদের সাথে বেশি মিশবেন৷
-অধীকার খাটাচ্ছেন মনে হয়৷
-যদি তা-ই ভাবেন, তবে হ্যাঁ৷ খাটাচ্ছি অধিকার৷
-কারো উপর যে চট করেই অধিকার খাটাতে নেই সেই কথা কি আপনি জানেন না?
-জ্বী না। জানি না৷ জানতেও চাই না৷
আমি অবাক স্বরে বললাম,
-কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে মলিন মুখে চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল!
মিহিন কিছু বলল না। সে কেবল হেসে গেল। আমি তার মন খারাপের কারণ খুজতে থাকলাম৷ মেয়েটার চোখে জল এলো কেন তখন। অনেক ভেবে বের করলাম যে আমার পাশে অনামিকাকে দেখে সে ভেবেছিল অনামিকা আমার প্রেমিকা। তাইই তার মন খারাপ হয়েছিল। চোখে জল জমছিল। নাকের ডগায় রক্তিম রাগ খেলা করছিল। তাকে তখন অনন্য সুন্দরী লাগছিল। কোনো উপমাই যেন তার জন্যে কম হয়ে যাবে৷ আমার বেশ ভালো লাগল৷
এই মেয়েটা আমাকে নিয়ে ভাবছে, আমার জন্যে কাঁদছে, আমার জন্যে তার পাগল পাগল লাগছে, তার দম বন্ধ লাগছে ভাবতেই চরম আনন্দ আমায় অভিভূত করে৷ এই অনন্য খুশি যেন আমার ভেতরের সমস্ত কোষে কোষে আনন্দের বার্তা পাঠাতে থাকল৷ গা ভর্তি হঠাৎই শিরশিরে একটা অনুভূতি হতে থাকল৷
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
সেদিন থেকেই আমার সমস্ত ভাবনা জুড়ে মিহিন মেয়েটা আছে। আমি তাকে ভেবে ভীষণ আনন্দ পাই৷ মাঝে মাঝে অহেতুক হাসি৷ তার কর্মকাণ্ডে আনন্দ লাগে৷ তার সাথে দেখা হলেই যেন প্রথম দেখি৷ প্রতিবারই তাকে ভিন্ন লাগে। অন্য রকম এক রহস্যময় সৌন্দর্যতা তার মাঝে বিরাজ করে৷ ধীরে ধীরে তার প্রতি যেন আকৃষ্ট হতে থাকি আমি। ভালো লাগতে থাকে ভীষণ।.
আমি ছাদে আসতেই হঠাৎ একটা লাইট জ্বলে উঠল। লাইটের নিচে একটা কেক রাখা৷ টেবিলটি খুব সুন্দর করে সাজানো। কেকের মাঝখানে একটা মোমবাতি৷ আমি অবাক হলাম খানিক। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন। আরেক পাঁ এগোতেই মিহিনের ফুলের বাগানটায় লাল-নীল বাতি জ্বলে উঠল৷ আরেক পাঁ এগোতেই ছাদের উত্তর দিকে একটা লাইট জ্বলল। সে আলোয় মিহিনকে দেখতে পেলাম৷ সে শাড়ি পরেছে।
শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে৷ আমি চমকে গেলাম। তাকে সুন্দর লাগছে৷ অনিন্দ্য সুন্দর লাগছে। যেন আকাশ থেকে কোনো পরী নেমে দাঁড়িয়ে আছে এখানে৷ সে ধীর পাঁয়ে এগিয়ে এলো৷ আমার কাছে এসে বলল,
-আমি জানতাম আপনি আসবেন৷
আমি মলিন মুখে হাসলাম। বললাম,
-আপনি জানতেন আজ আমার বার্থডে?
-হ্যাঁ৷ জানি৷ কিন্তু মহাশয়, আপনি যে দেরি করে এলেন! বারোটা তো পেরিয়ে গিয়েছে।
আমার চোখে জল জমল যেন। অবাক স্বরে বললাম,
-এতো কিছু আপনি আমার জন্যে করেছেন?
-হ্যাঁ।
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আবেগে আমার কান্না পাচ্ছিল। বললাম,
-আমার জন্মদিনের ব্যাপারটা আমি নিজেই ভুলে যাই৷ অন্য কারোও তেমন মনে থাকে না৷ এই দিনটি আমার কাছে স্পেশাল। অথচ এই দিন কাটে বড় অবহেলায়। এই দিনে তেমন স্পেশাল কিছুই ঘটে না৷ বাকি দিন গুলোর মতোই বেশ স্বাভাবিক কাটে৷
এই স্বাভাবিকের মাঝে হঠাৎ আপনার এমন অস্বাভাবিক আয়োজন সত্যিই আমায় মুগ্ধ করলো৷ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে কেউ আমার জন্যে এমন কিছু করেছে। আমার বার্থডে পালন করেছে৷ আমার কেমন জানি লাগছে মিহিন৷ আপনি আমার জন্যে এমন আয়োজন করেছেন কেন বলুন তো?
মিহিন কিছু সময় চুপ থাকল। কেবল আমার দিকে চেয়ে থাকল। তারপর আমার দিকে আরেকটু এগিয়ে এলো৷ তার গা থেলে মৃদু মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে৷ ঘ্রাণটা মহোময়। ঘোর ধরায়৷ সে আমার একদম কাছে চলে এলো৷ তার নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনছি আমি৷ সে মৃদু স্বরে বলল,
-এতো দিনে আপনার সাথে আমার যা ঘটল এই সব ঘটনার মাঝে একটা জিনিস কমন৷ আপনি জানেন সেই জিনিসটা কী? আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছু বললাম না৷ সে বলল,
-কমন জিনিসটা হচ্ছে আপনার উপর আমার ভীষণ রাগ এসেছে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার কি জানেন! আমি আপনার উপর একটু রাগও দেখাতে পারিনি৷ আপনার উপর রাগ আসে না। জোর গলায় কথা বলতে এলেই যেন সব মিইয়ে যায়। যা বলার জন্যে এসেছি সব ভুলে যাই৷ গুলিয়ে ফেলি সব৷ এই ব্যাপারটায় আমি ভীষণ অবাক হই৷ আমার কখনই এমন হয়নি। অন্য কেউ হলে এতোদিনে বেশ কয়েকটা চড় খেয়ে যেত৷ কিন্তু আপনি? আপনি যেন আমার আরো গভীরে ঢুকতে থাকলেন।
ধীরে ধীরে আমার সমস্ত আঁকড়ে ধরে থাকলেন। আমি সারাটিক্ষন আপনাকে ভাবি। ভাবতেও যেন ভীষণ আনন্দ লাগে৷ কী যে খুশি লাগে তা বলার মতো না৷ এরপরই আমি ওই ব্যাপারটা আবিষ্কার করি। আমি অনুভব করি, আমি আপনাকে ভালোবাসি৷ কেবল ভালোবাসি না৷ অসম্ভব ভালোবাসি। আপনাকে না দেখে থাকতে পারি না৷ সুযোগ পেলেই আপনাকে দেখি আমি। দেখাও যেন শেষ হয় না আমার।
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
মিহিন থামল। তার নিঃশ্বাসের গরম বাতাস আমার মুখের উপর পড়ছে। আমি তাকিয়ে থাকলাম কেবল৷ চোখ ভর্তি জল আমার। চেহারায় মুগ্ধতা। বললাম,
-ভালোবাসা তো এই বাড়িতে অন্যায়৷ আপনার বাবা-মা? তারা কী বলবেন?
-বাবা-মা আগে থেকেই আপনাকে ভেবে রেখেছিল। তাদের ইচ্ছে আপনার সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার৷ যদিও এই ব্যাপারটা আমি সেদিনই জানতে পারি৷
আমি হাসলাম। বললাম,
-তো! এখন?
-আমার মনে হয় না কেউ আমাকে, আমার এমন রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যতটা না আপনি পারবেন। কী? পারবেন দায়িত্বটা নিতে? বিনিময়ে আমি আমার প্রেম দিয়ে আপনার আপনার অগোছালো জীবনটা সুন্দর করে দিবো৷ প্লীজ! কেবল একটা সুযোগ দিন৷
-মিহিন আমার ভয় হয় এসবে! মিহিনের ভ্রু কুচকে এলো৷ আমাকে টেনে নিয়ে গেলে সিড়ির দেয়ালের কাছে।
আমি মিশে গেলাম দেয়ালের সাথে৷ মিহিনও একদম আমার গায়ের সাথে মিশে গেল৷ বলল,
-ছুরি একটা নিয়ে এসেছি৷ প্রপোজ একসেপ্ট করবি। না করলে ওই ছুরি দিয়ে তোকে খুন করবো আমি তারপর নিজে নিজেকে খুন করবো৷ তারপর দুজন এক সাথে খবরের কাগজে ছেপে যাবো৷
আমি বোকার মতো তার দিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। কী করবো বুঝে পেলাম না৷ মিহিন নিজের মুখটা আরেকটু এগিয়ে নিয়ে এলো৷ একদম আমার মুখ বরাবর।
ভালোবাসার বাংলা ছোট গল্প সমগ্র | লেখকঃ তাসফি আহমেদ
ফিসফিস করে বলল,-তুমি জানো না তোমাকে আমি কী রকম ভাবে চাই৷ আমার কতো জুড়ে তুমি আছো!
আমি স্বল্প স্বরে বললাম,
-জাদু জানো তুমি?
-হঠাৎ এই প্রশ্ন!
-কীভাবে করলে এটা। সহজ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলাম। কোত্থেকে 'তুমি' নামক এই 'মিহিন'টা এসে আমার সহজ সরল জীবটায় ঢুকে পড়ে। এখন বের হওয়ার নামও নিচ্ছো না। ভাবনায় এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছো যে আমি চাইলেই তোমাকে না ভেবে থাকতে পারি না৷ এমন কী যাদু জানো তুমি মিহিন? কীভাবে এই কাজ করলে?
-তুমি মনে হয় কম যাদু জানো! আমি ছেলেদের পাত্তাই দিতাম না। আর কোত্থেকে মহাশয় এসে আমার সব কিছু বিগড়ে দিলেন।
-বিগড়ে দিয়ে কি লাভ করিনি।
মেয়েটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিল। বলল,
-আমার না ভীষণ ভালো লাগছে৷ ভীষণ।
আমি মিহিনকে জড়িয়ে ধরে তার গাঁড়ের কাছে মুখ গুঁজে বললাম,
-প্রেমের অনুভূতি এতো আনন্দঘন হয় তা যদি আগে জানতাম তবে তোমাকে আগ থেকেই পটানো শুরু করতাম৷
মিহিন মৃদু হাসল। আমিও কিছু বললাম না৷ চুপচাপ তাকে জড়িয়ে থাকলাম। মিহিন ভারি একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বলল,
-এতো প্রশান্তি কেন তোমার বুকে তাসফি। কী অাছে তোমার মাঝে?
আমি হাসলাম কেবল। কিছু বললাম না৷ মিহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকল৷ ভালোবাসার আলিঙ্গনে তারা ভুলে গেল যে তারা এক সময় আপনি আপনি করে বলতো। এখন তুমি করে বলছে।
প্রেম বুঝি এমনই হয়৷ এটি বুঝি স্থান কাল, আপনি-তুমি কিছু মানে না? এটি আসলেই কী অনন্য অনুভূতি? বসন্তের শিরশিরে বাসাতের মতো এই প্রেমও কি তাদের মনে নানান প্রেমময় অনুভূতি জাগায়? আচ্ছা প্রেমের অনুভূতিটা কেমন? আনন্দঘন? প্রাসান্তির মতো কিছু একটা? নাকি একে অপরের চোখে অফুরান্ত ভালোবাসা দেখা? প্রেম? তুমি আসলেই অদ্ভুত। রহস্যময়ি। কাকে, কখন, কোথায় আকৃষ্ট করো তা বুঝাই মুশকিল।
♥♥♥♥♥
😍
অসাধারণ লেখা ভাই
😍😍😍😍
😍😍
Nice
ধন্যবাদ
Nc
ধন্যবাদ
অনেক ভালো লাগলো ভাই গল্পটা পড়ে।❤
❤❤❤
😍
এককথায় অসাধারণ
গল্পটা খুব ই সুন্দর ছিল।অনেক ভালো লাগল ভাইয়া
ধন্যবাদ
Khub ee sundor chilo vai
ধন্যবাদ
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।