গল্পঃ অনামিকা এবং একটি গল্প - তাসফি আহমেদ | Tasfi's Blog
গল্পঃ অনামিকা এবং একটি গল্প
তাসফি আহমেদ।
-মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে একটু?
বউ লজ্জা পায়। নতুন বউ। লজ্জা পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আমি তার দিকে তাকাই। তার সমস্ত মুখে লাল আভা বিরাজ করে। আমি ওর বাঁ হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে চুমু খাই। কী সুন্দর ফর্সা হাত। হাত জুড়ে কী চমৎকার করে মেহেদী আঁকা। বউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অন্য হাতে। আমার বেশ আরাম লাগে। এই প্রথম কোনো নারীর হাত আমায় স্পর্শ করে, চুলের ভাঁজে ভাঁজে নিজের কোমল হাতটি বুলিয়ে দেয়, নিজের করে, নিজের স্বামী মনে করে। এ কথা ভাবতেই আমার হৃদয় নগরী আন্দোলিত হয়ে হয়ে উঠে। কী অনবদ্য এক অনুভূতি খেলে যায় আমার সমস্ত শরীর বেয়ে। সে যে আমাকে নিজের করে নিতে প্রস্তুত আমি তা বেশ বুঝতে পারি। বলি,
-তোমার হাত বড় সুন্দর গো বউ!
বউ মৃদু হাসে। লজ্জাময় হাসি। আমি ওর হাসি দেখি। মেয়েটার হাসি কী অনিন্দ্য। দু'ঠোঁট প্রসারিত হলে যেন সমস্ত মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আলো ঝরে পড়ে। আমি তার কোল থেকে মাথা তুলে বলি,
-বিরক্ত হচ্ছো?
বউ মাথা নাড়ে। বলে,
-বিরক্ত হচ্ছি না।
আমি বলি,
-শাড়িটা বদলে নাও।
বউ এবারেও মাথা নাড়ে। মৃদু স্বরে বলে,
-শাড়ি এখন বদলালে কাল সকালে আবার পরিয়ে দিবে কে? আমি শাড়ি পরতে পারি না।
বউ মুখ নামিয়ে নেয়। মুখে ভয় খেলা করে। যেন শাড়ি পরতে না পারাটা বড় মারাত্মক অপরাধ। আমি বলি,
-বোকার মতো কথা বলো না বউ। শাড়ি বদলে নাও। সকালে আমি পরিয়ে দিবো। আমি না হলে মা তো আছেনই।
-মা যদি জানতে পারেন আমি শাড়ি পরতে পারি না তাহলে তিনি কষ্ট পাবেন। মেয়ে মানুষ হয়ে শাড়ি পরতে না পারাটা লজ্জার ব্যাপার।
-মা কষ্ট পাবেন না। তুমি চিন্তা করো না। আমি তো আছিই।
বউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কী ভীষণ সরল দৃষ্টি তার। টানা টানা চোখ দুটো চার পাশে কাজল দেয়া। পৃথিবীর সমস্ত মায়া যেন এসে লেপ্টে আছে। অথচ আমার কাছে তার এই মায়াটাও ফিকে লাগে। কারণ আমি তাকে চাইনি। এতো সুন্দর চাইনি। আমি একজনকে চেয়েছি। হোক সুন্দর কিংবা অসুন্দর। একটা পাগলিকে চেয়েছি। আমার কল্পনা সে রোজ আসে। আমাদের অনেকক্ষন চোখে চোখে কথা হয়। শব্দ হয় না। বউ নেমে যায় বিছানা থেকে। শাড়ি বদলে নতুন একটা সেলোয়ার কামিজ পরে বিছানায় এসে বসে। আমি বলি,
-জামাটা বেশ মানিয়েছে।
বউ লজ্জা পায়। বড় লাজুক বউ আমার। পাশের টেবিলে থাকা দুধের গ্লাসটা বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে। বলে,
-দুধটা খেয়ে নিন। না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে। ঠান্ডা হলে আপনি খেতে পারবেন না। খেতে পছন্দ করেন না।
আমি মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করি,
-আমার পছন্দ অপছন্দও জানা হয়ে গিয়েছে?
বউ আবারো লজ্জা পায়। মুচকি হাসে। আমি দুধটা গিলে নেই। মনে মনে একটা ভয় আমার ভেতরটা কাঁপিয়ে তোলে; আমি কি ভুল করছি? মেয়েটাকে ঠকাচ্ছি? বলি,
-শুয়ে পড়বে?
মেয়েটা কিছু বলে না। আমি বিছানা থেকে নেমে গিয়ে লাইট অফ করে দেই। বাইরে ভীষণ জোৎস্না! চাঁদের আলোয় আলোকিত এই পৃথিবী। বউ বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বুঝতে পারি। বলি,
-বারান্দায় বসবে?
বউ মাথা নাড়ে। বলে,
-ঘুমাবো।
এই বলে শুয়ে পড়ে সে। আমিও তার পাশে শুয়ে পড়ি। ভাবতেই অবাক লাগে, আমার আজ বিয়ে হয়েছে। এখন আমি চাইলেও হুট করে কোথাও চলে যেতে পারবো না। যেতে হলেও কারো পার্মিশন লাগবে। আজ থেকে আমাকে বাড়তি একজনের খেয়ালও রাখতে হবে। তিনি আজ আমার বিছানার অর্ধেক নিজের করে নিয়েছেন। বলা বাহুল্য তিনি আমার সমস্ত কিছুর অংশিদার এখন। আমার ভয় হয়, সে যখন জানতে পারবে আমি আসলে তাকে কখনই আমাকে দিতে চাইনি তখন সে কেমন রিয়েক্ট করবে? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? বুক কেঁপে উঠে আমার। পরিবার পরিজন, আত্মিয় স্বজনদের কথা মনে পড়ে। ভয় হয়। বাবার মান সম্মান চলে যাবে না তো! আমি তার পাশে শুয়ে পড়ি গুটিসুটি মেরে। শীত পড়ছে। কম্বলটা মেলে দেয়া উচিৎ। আমি ওর গায়ের উপর কম্বল মেলে দেই। নিজেও ঢুকে পড়ি কম্বলের ভেতর। বউ আর আমার মাঝে খানিকটা দূরত্ব। বউ এগিয়ে এলো না। চুপচাপ পাশ ফিরে শুয়ে থাকল। সে কি ওপাশ ফিরে এই কথা ভাবছে যে আমি তাকে ডেকে বুকের কাছে নিবো? সে কি এই আশায় শুয়ে আছে? বউ নিজেই এপাশ ফিরে। অন্ধকারে আমার দিকে তাকায়। আমি দেখিনি। কিন্তু অনুভব করি। বউ আরেকটু সরে আসে আমার দিকে।
তারপর আরেকটু আসে। আবেগ মাখা কণ্ঠে বলে,
-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন?
আমি কিছু বলি না। জড়িয়ে ধরি ওকে। মেয়েটা নিশ্চিন্তে মাথা রাখে আমার বুকে। বলে,
-বিয়ের আগে মেয়েদের বাবাই তাদের ছায়া হয়ে থাকে। কিন্তু বিয়ের পর সে সব কিছু ফেলে স্বামীর কাছে চলে আসে। একজন অজানা মানুষকে নিজের করে নেয়। সোহান, আপনি যতই অজানা হোন, আমি আপনাকে নিজের করে নিবো। আপনি আমাকে সেই সুযোগটা দিবেন?
আমি মেকি হেসে বলি,
-দিলাম।
মেয়েটা প্রচণ্ড খুশি হয়। আমি তা অনুভব করি। ও বলে,
-প্রথম দেখায় আপনাকে আমার ভালো লেগে গিয়েছে। আপনার মাঝে কিছু একটা আছে যেটা আমাকে আপনার প্রতি বেশ টেনেছে। আচ্ছা আপনি বই পড়েন?
মেয়েটা মুখ উপরে তুলে তাকায়। তার চুল লাগে আমার মুখে। আমি বলি,
-পড়ি। আমার নিজস্ব একটা লাইব্রেরী আছে।
মেয়েটা যেন ভীষণ খুশি হয়। অবাক স্বরে বলে,
-সত্যিই?
-হ্যাঁ।
-আমাকে ওখানে এলাউ করবেন?
-তোমাকে নিজের জীবনেই এলাউ করে ফেলেছি। এখন আমার যা তোমারও তা।
বউটা খুব খুশি হয়। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বলে,
-আমাকে মাঝে মাঝে বই গিফট করবেন?
-তুমি বই পছন্দ করো?
-হ্যাঁ। ভীষণ।
-তাহলে অবশ্যই করবো। বই উপহার দিতে বেশ লাগে আমার।
মেয়েটা অভিমানী স্বরে বলে,
-এর আগে দিয়েছেন কাউকে?
-দিয়েছি।
-ছেলে না মেয়ে?
-দুটোই।
-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন?
আমি কিছু বলি না। জড়িয়ে ধরি ওকে। মেয়েটা নিশ্চিন্তে মাথা রাখে আমার বুকে। বলে,
-বিয়ের আগে মেয়েদের বাবাই তাদের ছায়া হয়ে থাকে। কিন্তু বিয়ের পর সে সব কিছু ফেলে স্বামীর কাছে চলে আসে। একজন অজানা মানুষকে নিজের করে নেয়। সোহান, আপনি যতই অজানা হোন, আমি আপনাকে নিজের করে নিবো। আপনি আমাকে সেই সুযোগটা দিবেন?
আমি মেকি হেসে বলি,
-দিলাম।
মেয়েটা প্রচণ্ড খুশি হয়। আমি তা অনুভব করি। ও বলে,
-প্রথম দেখায় আপনাকে আমার ভালো লেগে গিয়েছে। আপনার মাঝে কিছু একটা আছে যেটা আমাকে আপনার প্রতি বেশ টেনেছে। আচ্ছা আপনি বই পড়েন?
মেয়েটা মুখ উপরে তুলে তাকায়। তার চুল লাগে আমার মুখে। আমি বলি,
-পড়ি। আমার নিজস্ব একটা লাইব্রেরী আছে।
মেয়েটা যেন ভীষণ খুশি হয়। অবাক স্বরে বলে,
-সত্যিই?
-হ্যাঁ।
-আমাকে ওখানে এলাউ করবেন?
-তোমাকে নিজের জীবনেই এলাউ করে ফেলেছি। এখন আমার যা তোমারও তা।
বউটা খুব খুশি হয়। আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বলে,
-আমাকে মাঝে মাঝে বই গিফট করবেন?
-তুমি বই পছন্দ করো?
-হ্যাঁ। ভীষণ।
-তাহলে অবশ্যই করবো। বই উপহার দিতে বেশ লাগে আমার।
মেয়েটা অভিমানী স্বরে বলে,
-এর আগে দিয়েছেন কাউকে?
-দিয়েছি।
-ছেলে না মেয়ে?
-দুটোই।
বউটা হুট করে চুপ হয়ে যায়। কেন চুপ হয়? অন্য মেয়ের কথা বলায়? তার কি হিংসে হয়? বুকের ভেতর ভয় হয়? আমাকে হারানোর ভয়? সে বলে উঠে,
-আচ্ছা আপনি প্রেম করেছিলেন কখনও?
আমি চুপ করে থাকি। অনেকটা সময় চুপিচুপি কাটে। মেয়েটা এতোক্ষন হাত দিয়ে যেভাবে শক্ত করে ধরে রেখেছিল আমায় তা যেন ধীরে ধীরে সহজ হতে থাকে। বলি,
-হ্যাঁ। করেছি।
মেয়েটা আমাকে ছেড়ে দেয় পুরোপুরি। কেবল মাথাটা বুকের কাছে রাখে। বলি,
-আমি সেই ক্লাস টেন থেকেই প্রেম করতাম। কল্পনায়। কেউ একজনের সাথে।
সে হুট করেই বলে উঠে,
-কল্পনায়?
-হ্যাঁ। কেউ আমার সাথে প্রেমই করতে আসেনি। তাই নিজে নিজে কল্পনাতেই প্রেম করতাম আমি।
বউটা যেন কাঁদতে কাঁদতে হেসে দেয়। বুকের উপর হাত দিয়ে দু একটা কিলঘুষিও দেয়। বলে,
-শয়তান লোক!
আমি হাসি। একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয় আমার। বলি,
-আচ্ছা, যদি প্রেম করতাম আমি, তুমি কি মেনে নিতে না?
-আপনাকে না মেনে নেয়া অনেকটা অসম্ভব আমার জন্যে। আপনাকে ভীষণ পছন্দ যে!
এই বলে ফিক করে হেসে দেয় সে। আমি চুপ থাকি। সেও চুপ থাকে। তারপর বলে,
-ভাগ্য ভালো আমার। কেউ আপনার সাথে প্রেম করেনি। তা না হলে তো আজ...
মেয়েটা চুপ করে যায়। অনেকটা সময় চুপ থেকে বলে,
-আচ্ছা,আমায় বই মেলায় নিয়ে যাবেন?
বাচ্চাদের মতো আবদার করে সে। বলি,
-যাবো।
-আমি অনেক বই কিনব। কেমন?
-আচ্ছা। অনেক বই কিনিও।
আবার কিছুসময় চুপচাপ কাটে। মেয়েটা আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে আনে। বলে,
-আপনি আমায় কখন ছেড়ে যাবেন না। কেমন?
আমি কিছু সময় তার অন্ধকার অবয়বের দিকে চেয়ে থাকি। কিছু বলতে ভয় হয়। তবুও বলি,
-যাবো না।
তারপর চুপচাপ থাকি আমি। মেয়েটা কেবল আমার দিকে চেয়ে থাকে। হুট করেই আমার ঠোঁটে চুমু খায়। লজ্জা পায়। চট করেই বুকের উপর মুখ লুকায় সে। আমি তাকে শক্ত করে বুকের সাথে ধরে রাখি। এভাবেই কথায় কথায় আমাদের বাসর রাতটা কেটে যায়।
সকাল হয়। মেয়েটা আমায় ডেকে তোলে। তাকে ভীষণ চিন্তিত দেখায়। দ্রুত আমায় ডাকতে থাকে।
-এই? উঠুন। এই উঠুন না। আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে বলে এখন ঘুমাচ্ছেন মহাশয়। উফ! উঠুন না?
আমি বিছানার উপর উঠে বসি। চোখ কচলে নেই। দেখি, মেয়েটা চিন্তিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষন অস্থির লাগছে সে। বলি,
-কী হয়েছে?
সে হস্তদন্ত হয়ে বলে,
-আপু ডেকে গিয়েছেন। এখনই যেতে হবে। আমি কি এভাবে যাবো?
-গেলে প্রব্লেম কী?
-বিয়ের প্রথমদিন কেউ এভাবে বের হয়?
-হয় না?
-জানি না। আপনি কিছু একটা করুন।
আবারো বাচ্চা সুলভ আবদার। ঠোঁট উলটে দাঁড়িয়ে আছে।
-দাঁড়াও। দেখছি।
আমি একটা নীল শাড়ি বের করি ওর লাগেজ থেকে। শাড়িও বের করে দেয়নি। রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে। শাড়িটা নিয়ে এগিয়ে আসি ওর দিকে। ওর চোখ-মুখ লাল হয় যায়। কী ভীষণ লজ্জা খেলে যায় তার চেহারায়। মৃদু হাসে। লজ্জামাখা হাসি। আমি নিজ হাতে তাকে শাড়ি পরিয়ে দেই। ও বেশ অবাক হয়। কেবল আমার দিকে চেয়ে থাকে। বলি,
-এই শাড়িতে তোমায় বেশ লাগছে।
ও লজ্জা পায়। বলে,
-আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?
-হু।
-শিখেছেন?
-হু।
-কে শিখালো?
-ইউটিউব।
এই বলে মৃদু হাসি আমি। ও তখনও কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি তাকিয়ে থাকি না। চোখ সরিয়ে নেই। আমার যেন খানিকটা বিরক্তি লাগতে শুরু করে। বলি,
-তাকিয়ে আছো যে?
-কোনো পুরুষ মানুষকে শাড়ি পরাতে এই প্রথম দেখলাম। তাই অবাক হচ্ছি।
আমি মৃদ্যু হাসি। কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যাই।
ও বাইরে চলে যায়। পুরোদিনে ভালোই ধকল যায় তার উপর। নতুন বউকে দেখতে আসে অনেকেই। আমি আড়াল হয়ে মেয়েটাকে দেখি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। মেয়েটা চঞ্চল নয়। শান্ত। এই মেয়েটা প্রেমিকা হওয়ার মতো না। স্ত্রী হওয়ার মতো। তার বাড়তি আবদার নেই। তাকে দেখলেই বেশ বোঝা যায়, সে পূর্ব থেকে স্বামীর বাড়ির জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। অথচ আমি এমন কাউকেই চাইনি। আমি একটি চঞ্চল মেয়েকে চেয়েছি। যে কখনই শাড়ি পরতে চাইবে না। কিন্তু আমি জোর করিয়ে তাকে শাড়ি পরাবো। শাড়ির কুচি ধরে সে বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলবে,
-কি কচু পরিয়েছো আমায়? এখন আমি হাঁটবো কী করে?
আমি তার বিরক্তিভরা মুখ দেখে হাসবো। হাঁটতে তার কষ্ট হবে। আমি তার হাত ধরে হাঁটতে সাহায্য করবো। শাড়ী পরে অস্বস্তিতে থাকা এমন একজনকে আমি ভীষণরকম চেয়েছি। অথচ স্রষ্টা আমায় প্রতিবারের মতোই নিরাশ করেছেন। শেষমেশ তিনি আমার কাছ থেকে আমার স্বপ্নটাই ছিনিয়ে নিলেন। মানুষটাকেও।
বিয়ের দিন গুলো খুব দ্রুতই পেরিয়ে যায়। অনামিকাকে বেশ প্রাণবন্ত দেখায়। সে রোজ ভোরে উঠে। নামাজ পড়ে। আমায় উঠায়। আমি উঠতে চাই না। শীতের ভোর। আরামের ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে হয় না। সে মাথার কাছে বসে পড়ে। কানের কাছে এসে মাথা ঝুঁকিয়ে ফিস ফিস করে ডাকে আমায়।
-সোহান? এই সোহান? উঠো!
তার চুল গুলো এক পাশে ফেরানো থাকে। সে পাশের চুল গুলো আমার মুখের উপর পড়ে। আমার তবুও ঘুম ভাঙ্গে না। আমি চোখ বুঁজে থাকি। সে নিজের নরম ঠোঁট দুটো আমার কানের কাছে লাগিয়ে বেশ কোমল স্বরে ডাকে আমায়। নারীর ডাক ফেলা যায় না। তারউপর যদি এমন সুন্দরী কেউ হয় তাহলে তো না-ই। অনামিকা আমায় রোজ বুঝায়। আল্লাহর গুণগান গায়। কী অভিনব পদ্ধতিতে সে কথা গুলো বলে। আমি বেশ মনযোগ দিয়ে শুনি। প্রথম প্রথম খুব ভালো লাগে। কিন্তু হুট করে বিরক্তি এসে যায় মেয়েটার উপর। আমি একটা ব্যাপার বেশ খেয়াল করি।
অনামিকার উপর মাঝে মাঝে আমার বিরক্তি চলে আসে। আসার একটা বৃহৎ কারণও আছে। কারণটা আমাকেও রোজ ভোগায়। কষ্ট দেয়। একদিন যেন মেয়েটা কিছুটা বুঝতে পারে। আমি তাকে নিতে পারছি না, কোনো একটা কারণে। সেই ব্যাপারটা সে বুঝতে পারে। রাত তখন সাড়ে বারোটা। দুজনে প্রায় রাতেই ছাদে বসে থাকি চাঁদের আলোয়। চাঁদের মিষ্ট আলো মেয়েটার মুখটা চকচক করে। যেন আমার পাশেই একটা চাঁদ বসে আছে। আজও বসে আছি আমরা। অনামিকা আমার পাশে। কাঁধে মাথা রেখে আছে। সে যখন আমার কাঁধে কিংবা বুকে মাথা রাখে, তাকে তখন বেশ নিশ্চিন্ত মনে হয়। যেন যেন নির্ভয়ে বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে কিংবা কাঁধে মাথা রেখে আছে। আমরা অনেকটা সময় ছাদে বসে থাকি। অনামিকা আমার হাত ধরে এক সময়। আমার হাত পাঁচ আঙ্গুলের ভাঁজে নিজের পাঁচ আঙ্গুলে দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে। কাঁধে মাথা রেখেই বেশ নিরস কণ্ঠে বলে,
-সোহান, তুমি আমাকে ভালোবাসো?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই। অবাক হই। বলি,
-তোমার সন্দেহ হয়?
-সোহান, তুমি আমাকে ভালোবাসো?
আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই। অবাক হই। বলি,
-তোমার সন্দেহ হয়?
সে অনেকটা সময় চুপ থাকে। একদম বেশ নিরব। তারপর বলে,
-তোমার হৃদয়টা ছুঁয়ে দিয়ে পারি না কেন?
আমি বোকার মতো তাকিয়ে থাকি। কিছু বলতে পারি না। ও আবার বলে,
-তোমাকে যেন টানতে পারি না নিজের কাছে। বুঝতে পারি না। কোথাও যেন একটা দেয়াল তৈরী হয়ে আছে। সোহান, আমার এমনটা কেন মনে হচ্ছে?
আমি তখনও কিছু বলতে পারি না। চুপ করে থাকি। অনামিকা হুট করেই উঠে যায়। দৌড়ে চলে যায় নিচে। আমি ছাদে বসে থাকি। ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে আমার। কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসতে চায়। খুব অন্যায় করছি আমি। অনামিকাকে সব বলে দেয়া উচিৎ। সব। মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। সেটা আমার ভালো লাগছে না। ইদানিং মেয়েটার প্রতি বেশ টান অনুভব করি আমি। এরপর অনেকবার আমি কথাটা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। সম্ভব হয়নি। ভয় হতো আমার।
.
এভাবে সময়টা কাটতে থাকে। মেয়েটা আমাকে নিজের সমস্ত দিয়ে ভালোবেসে যায়। অথচ আমি তাকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালোবাসতে পারছি না। একটা নাম, একজন মানুষ আমার মনের ভেতর একটা দেয়াল তৈরী করে রেখেছে। আমি সেই দেয়াল কোনো ভাবেই টপকাতে পারছি না। সেটা কেবল বাধা দেয় আমায়। কিন্তু আজ হঠাৎ ঘরের পরিবেশটা অন্য রকম লাগল আমার কাছে। প্রতিদিনের মতো নয়। আমার মনে হলে কিছু একটা ঠিক নেই। কিছু একটা যেন হয়েছে। অনামিকাকে খুব চিন্তিত দেখায়। অফিস থেকে এলে দরজা খুলে দিত সে। আজ দেয়নি। রুমে এসে দেখলাম চুপচাপ বসে আছে। আমি ঢুকতেই বেরিয়ে গেল সে। অন্যদিন হলে সে আমার পাশে বসতো। আমাকে পানি খাওয়াতো। কতো কথাই না বলতো। অথচ আজ মেয়েটা একদম নীরব। তার মুখে হাসি নেই। আমার বুকটা যেন কেঁপে উঠে। কী হয়েছে ওর? পুরোটা সময় ও আমার কাছে আসে না। সে মায়ের রুমে বসে মায়ের সাথে গল্প করতে থাকে। একবার ডেকে চা চাইলাম। সে চা নিয়ে এলো কিছুক্ষন পর। বলি,
-অনামিকা? কী হয়েছে তোমার?
সে জবাব দেয় না। বলে,
-চা নিন।
আমি চা নিতে নিতে বলি,
-আমি কি কোনো ভুল করেছি? বা কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?
অনামিকা একদম আমার চোখে চোখ রাখে। আমার ভেতরটা কেঁপে উঠে যেন। এই চোখ জোড়ার সাথে একদম পরিচিত নই আমি। চোখ দুটো যেন কষ্টে জর্জরিত হয়ে আছে। অভিমান ভরে আছে। মেয়েটা যেন কেঁদে দিলো। আমি বললাম,
-কী হয়েছে? মুখ এমন কালো করে রেখেছো কেন? এই মেয়ে?
অনামিকা দৌড়ে চলে যায়। আমি বোকার মতো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। খাবার টেবিলেও তেমন বিশেষ কোনো কথা হলো না। রাতে সে ঘুমাতে এলো। আমি খাটের উপর পাঁ ঝুলিয়ে বসে আছি। ও আসতেই আমি উঠে দাঁড়াই। ওর কাছে যাই। বলি,
-কী হয়েছে বলো না?
অনামিকা দরজা আঁটকে দেয়। তারপর বিছানায় এসে বসে পাঁ ঝুলিয়ে বসে থাকে। কথা বলে না আমার সাথে। তাকায়ও না। চাপা কষ্ট হয় আমার। আমি ওর পাশে গিয়ে বসি। ওর হাতটা ধরতেই ছাড়িয়ে নেয় ও। আমি চূড়ান্ত পর্যায়ে অবাক হই। হাঁটু ভেঙ্গে ওর পায়ের কাছে বসে বলি,
-বলো না অনামিকা। কী হয়েছে?
ও আমার দিকে তাকায়। আমি তার চোখে স্পষ্ট জল দেখি। সে কাঁদছে। আমি বলি,
-কাঁদছো কেন?
অনামিকা কথা বলে না। চট করেই উঠে দাঁড়ায়। আলমারি খুলে কিছু একটা বের করে। আমার কাছে আনতেন আমি টের পাই জিনিসটা কি। আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে। এ অন্য এক কাঁপন। আমার পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে। আমি দ্রুত উঠে দাঁড়াই। ওর হাত থেকে ডায়েরীটা এক প্রকাশ ছিনিয়ে নেই। বলি,
-কই পেয়েছো এটা? আমার ড্রয়ার ঘেটেছো?
অনামিকা প্রসঙ্গ পালটায়। বলে,
-আমায় মিথ্যা কেন বললে?
-কী হয়েছে বলো না?
অনামিকা দরজা আঁটকে দেয়। তারপর বিছানায় এসে বসে পাঁ ঝুলিয়ে বসে থাকে। কথা বলে না আমার সাথে। তাকায়ও না। চাপা কষ্ট হয় আমার। আমি ওর পাশে গিয়ে বসি। ওর হাতটা ধরতেই ছাড়িয়ে নেয় ও। আমি চূড়ান্ত পর্যায়ে অবাক হই। হাঁটু ভেঙ্গে ওর পায়ের কাছে বসে বলি,
-বলো না অনামিকা। কী হয়েছে?
ও আমার দিকে তাকায়। আমি তার চোখে স্পষ্ট জল দেখি। সে কাঁদছে। আমি বলি,
-কাঁদছো কেন?
অনামিকা কথা বলে না। চট করেই উঠে দাঁড়ায়। আলমারি খুলে কিছু একটা বের করে। আমার কাছে আনতেন আমি টের পাই জিনিসটা কি। আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে। এ অন্য এক কাঁপন। আমার পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে। আমি দ্রুত উঠে দাঁড়াই। ওর হাত থেকে ডায়েরীটা এক প্রকাশ ছিনিয়ে নেই। বলি,
-কই পেয়েছো এটা? আমার ড্রয়ার ঘেটেছো?
অনামিকা প্রসঙ্গ পালটায়। বলে,
-আমায় মিথ্যা কেন বললে?
আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিছু বলতে পারি না। অনামিকা ভেজা গলায় বলে,
-বলো? কেন মিথ্যা বললে? কেন বললে যে তুমি কখনই প্রেম করোনি?
-আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম আমার প্রেমের কথা শুনে তুমি অন্য রকম আচরণ করবে। আর সবচে বড় কথা হলো আমি সেই স্মৃতি গুলো মনে করতে চাইনি।
-কী এমন হৃদয় বিদারক স্মৃতি যে তা তুমি মনে করতে চাওনি।
-পড়োনি তুমি?
ও অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
-এই গল্প পড়তে পারবো না আমি। এটা পড়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো আমার।
-এভাবে বলো না প্লীজ। আমার এক কালের আবেগ এখানে। আমার সাত মাসের পরিশ্রম এখানে লেপ্টে আছে।
কথাটা বলা সময় গলাটা ধরে আসে। কান্না পায়। অনামিকা ভ্রু কুচকে বলে,
-সাত মাসের পরিশ্রম?
-এটি কেবল সাত মাসের পরিশ্রম নয় অনামিকা। এটি একটি ছোট্ট গল্প। যেটা বৃহৎ আকারে আমার বুকের ভেতর দলা বেঁধে পড়ে আছে। আমাকে রোজ কষ্ট দেয়। ইন্টার প্রথম বর্ষের শেষের দিকের কথা। কমার্স বিভাগের একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগে যায়। নাম অহনা। বলা বাহুল্য তাকে আমার আগ থেকেই ভালো লাগতো। আমাদের তিনটা কম্বাইন্ড ক্লাস হতো। তখন দেখতাম মেয়েটাকে। কী অপরূপ ছিল সে। একটা শ্যামলা রঙের মেয়ে এতো অনিন্দ্য সুন্দরী হতে পারে তা আমার ভাবনায় ছিল না। ওর চোখ দুটো একদম তোমার মতো টানা ছিল। সত্যি বলতে এই কারণেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। তার চোখের প্রতি প্রবল দূর্বল ছিলাম। পাগল ছিলাম এক প্রকার। অনামিকা, আমাদের বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি প্রায়ই তোমার মাঝে অহনাকেই খুঁজতাম। কিন্তু পেতাম না। কেবল দুটো চোখ ছাড়া।
ক্লাসে অনেকটা অমনোযোগি হয়ে পড়ি আমি। কেবল তাকেই দেখে যেতাম। মেয়েটা কি সুন্দর করে কাজল দিতো। মাঝে মাঝে খোলা চুলে আসতো কলেজে। কী চমৎকার লাগতো তাকে। তার কেবল একটাই অপূর্ণতা ছিল। গায়ের রঙটা শ্যামলা। অথচ এই শ্যামাকেই আমার কী অপূর্ব লাগল। এরপর প্রায় সাত মাস ঘুরি ওর পেছনে। সাত মাসের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা গুলো কেবল এই ডায়েরীটাতে লিখা। কী কী হয়েছিল সব লিখতাম অল্প অল্প করে। ডায়েরীটার নামও দেই অহনা। এই যে দেখো!
-বলো? কেন মিথ্যা বললে? কেন বললে যে তুমি কখনই প্রেম করোনি?
-আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম আমার প্রেমের কথা শুনে তুমি অন্য রকম আচরণ করবে। আর সবচে বড় কথা হলো আমি সেই স্মৃতি গুলো মনে করতে চাইনি।
-কী এমন হৃদয় বিদারক স্মৃতি যে তা তুমি মনে করতে চাওনি।
-পড়োনি তুমি?
ও অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
-এই গল্প পড়তে পারবো না আমি। এটা পড়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো আমার।
-এভাবে বলো না প্লীজ। আমার এক কালের আবেগ এখানে। আমার সাত মাসের পরিশ্রম এখানে লেপ্টে আছে।
কথাটা বলা সময় গলাটা ধরে আসে। কান্না পায়। অনামিকা ভ্রু কুচকে বলে,
-সাত মাসের পরিশ্রম?
-এটি কেবল সাত মাসের পরিশ্রম নয় অনামিকা। এটি একটি ছোট্ট গল্প। যেটা বৃহৎ আকারে আমার বুকের ভেতর দলা বেঁধে পড়ে আছে। আমাকে রোজ কষ্ট দেয়। ইন্টার প্রথম বর্ষের শেষের দিকের কথা। কমার্স বিভাগের একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগে যায়। নাম অহনা। বলা বাহুল্য তাকে আমার আগ থেকেই ভালো লাগতো। আমাদের তিনটা কম্বাইন্ড ক্লাস হতো। তখন দেখতাম মেয়েটাকে। কী অপরূপ ছিল সে। একটা শ্যামলা রঙের মেয়ে এতো অনিন্দ্য সুন্দরী হতে পারে তা আমার ভাবনায় ছিল না। ওর চোখ দুটো একদম তোমার মতো টানা ছিল। সত্যি বলতে এই কারণেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। তার চোখের প্রতি প্রবল দূর্বল ছিলাম। পাগল ছিলাম এক প্রকার। অনামিকা, আমাদের বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি প্রায়ই তোমার মাঝে অহনাকেই খুঁজতাম। কিন্তু পেতাম না। কেবল দুটো চোখ ছাড়া।
ক্লাসে অনেকটা অমনোযোগি হয়ে পড়ি আমি। কেবল তাকেই দেখে যেতাম। মেয়েটা কি সুন্দর করে কাজল দিতো। মাঝে মাঝে খোলা চুলে আসতো কলেজে। কী চমৎকার লাগতো তাকে। তার কেবল একটাই অপূর্ণতা ছিল। গায়ের রঙটা শ্যামলা। অথচ এই শ্যামাকেই আমার কী অপূর্ব লাগল। এরপর প্রায় সাত মাস ঘুরি ওর পেছনে। সাত মাসের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা গুলো কেবল এই ডায়েরীটাতে লিখা। কী কী হয়েছিল সব লিখতাম অল্প অল্প করে। ডায়েরীটার নামও দেই অহনা। এই যে দেখো!
আমি অনামিকাকে অহনার নাম দেখাই। অথচ সে দেখে না। গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে অন্য দিকে। আমি বলি,
-ঠিক সাত মাস পর অহনা আমার প্রপোজ একচেপ্ট করে। আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। খুশিতে যেন নাচতে ইচ্ছে করে আমার। ওই দিন, ওই সময়টাই ছিল আমার জীবনের সবচে সুখি সময়। এমন সময় আর আসেনি।
এতটুকু বলে থেমে যাই আমি। অনামিকাকে দেখি। সেও দেখে আমায়। হুট করেই সে বলে উঠে,
-এরপর? এরপর কী হয়? বিয়ে করোনি কেন তোমার ওই সুন্দরীকে?
অনামিকার মুখে স্পষ্ট রাগ দেখি আমি। যেন গল্পটা শুনতে খুব অসহ্য লাগছে তার। আমি বিছানায় পাঁ ঝুলিয়ে বসি। ডায়েরীটা বুকের কাছে রেখে বলি,
-অহনা মারা যায় গো বউ। তা না হলে বিয়ে তো তাকেই করব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।
আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি যেন আপনাআপনি পড়ে গেল। আমি বহু কষ্টে ভেতরের আর্তনাদটা আঁটকে রাখলাম। ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকলাম অনামিকার দিকে। অনামিকা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। তার মুখে রাগ নেই এখন আর। হুট করেই যেন তার চেহারার পরিবর্তন হয়ে গেল। আমার কাছে এসে বলল,
-মারা গেছে মানে?
আমি অনেকটা সময় চুপ থাকি। তারপর বলি,
-যেদিন আমার প্রেম নিবেদন গ্রহন করে সে ঠিক সেই দিনই মারা যায় ও। বাসায় যাওয়ার পথে বাস এক্সিডেন্ট করে। আমি তখন আনন্দে ব্যস্ত ছিলাম। অহনা আমার প্রোপজ গ্রহন করেছে; এই আনন্দে। অথচ এর কিছু সময় পরই শুনতে পাই অহনার এক্সিডেন্ট এর খবর। রাত আটটায় খবর আসে অহনা আর বেঁচে নেই। অনামিকা? ওই সময়টা আমার জীবনের সবচে দুঃখের সময় ছিল। এমন দূঃখে ভরা সময় আর কখনই আসেনি।
-ঠিক সাত মাস পর অহনা আমার প্রপোজ একচেপ্ট করে। আমি পাগলের মতো হয়ে যাই। খুশিতে যেন নাচতে ইচ্ছে করে আমার। ওই দিন, ওই সময়টাই ছিল আমার জীবনের সবচে সুখি সময়। এমন সময় আর আসেনি।
এতটুকু বলে থেমে যাই আমি। অনামিকাকে দেখি। সেও দেখে আমায়। হুট করেই সে বলে উঠে,
-এরপর? এরপর কী হয়? বিয়ে করোনি কেন তোমার ওই সুন্দরীকে?
অনামিকার মুখে স্পষ্ট রাগ দেখি আমি। যেন গল্পটা শুনতে খুব অসহ্য লাগছে তার। আমি বিছানায় পাঁ ঝুলিয়ে বসি। ডায়েরীটা বুকের কাছে রেখে বলি,
-অহনা মারা যায় গো বউ। তা না হলে বিয়ে তো তাকেই করব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।
আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি যেন আপনাআপনি পড়ে গেল। আমি বহু কষ্টে ভেতরের আর্তনাদটা আঁটকে রাখলাম। ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকলাম অনামিকার দিকে। অনামিকা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। তার মুখে রাগ নেই এখন আর। হুট করেই যেন তার চেহারার পরিবর্তন হয়ে গেল। আমার কাছে এসে বলল,
-মারা গেছে মানে?
আমি অনেকটা সময় চুপ থাকি। তারপর বলি,
-যেদিন আমার প্রেম নিবেদন গ্রহন করে সে ঠিক সেই দিনই মারা যায় ও। বাসায় যাওয়ার পথে বাস এক্সিডেন্ট করে। আমি তখন আনন্দে ব্যস্ত ছিলাম। অহনা আমার প্রোপজ গ্রহন করেছে; এই আনন্দে। অথচ এর কিছু সময় পরই শুনতে পাই অহনার এক্সিডেন্ট এর খবর। রাত আটটায় খবর আসে অহনা আর বেঁচে নেই। অনামিকা? ওই সময়টা আমার জীবনের সবচে দুঃখের সময় ছিল। এমন দূঃখে ভরা সময় আর কখনই আসেনি।
আমি মাথা নিচু করে রাখি। কাঁদি না। চোখ থেকে কেবল পানি পড়ে আপনাআপনিই। অনামিকা আমার কাছে এসে দাঁড়ায়। দু'হাত দিয়ে আমার মুখটা উপরে তুলে। আমি ওর চোখ দেখি। ওর চোখ দুটো ভিজে আছে। অনামিকা কিছু বলে না। কেবল আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। শব্দ করে কেঁদে দেই। অনামিকাও কাঁদে। আমার মাথার কাছে চুমু খায়। আমি ভেজা স্বরে বলি,
-এই জিনিসটা আমার বুকের ভেতর আঁটকে ছিল। একটা দেয়াল তৈরী করে রেখেছিল। এই একটি নাম, এই একটি গল্প, একটি পাথরে দেয়াল তৈরী করেছিল আমার ভেতর। এর জন্যে আমি তোমার সাথে মিশতে পারিনি। ওই ঘটনার পর থেকে আমি আর রিলেশন তো দূরে থাক, কোনো মেয়ের সাথে তেমন কথাও বলতাম না। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করতো না। সবাই বলতো অল্প বয়সে আবেগের বসে পাগল হচ্ছি আমি। অথচ আমার সেই নিষ্পাপ আবেগ এখনও কী স্পষ্ট তাজা তা কেবল আমিই টের পাই। অনামিকা, আমাকে একটু সাহায্য করো এই দেয়াল ভাঙ্গতে। এটা বড় কষ্ট দেয় আমায়। সাহায্য করবে আমায়?
অনামিকা ধমক দেয় আমায়। বলে,
-কথা বলবা না। চুপ থাকো। আর দেখো আমি কীভাবে সেই দেয়াল ভাঙ্গি।
আমি কিছু বলি না। চুপ থাকি। অনামিকা আমার পাশে বসে। আমার চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে কপালে চুমু খায়। বলে,
-আমি আছি তো। সব ঠিক করে দিবো।
আমি কিছু বলিনা। পরম নির্ভরশীলতায় অনামিকার কাঁধে মাথা রাখি কেবল।
অনামিকা ধমক দেয় আমায়। বলে,
-কথা বলবা না। চুপ থাকো। আর দেখো আমি কীভাবে সেই দেয়াল ভাঙ্গি।
আমি কিছু বলি না। চুপ থাকি। অনামিকা আমার পাশে বসে। আমার চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে কপালে চুমু খায়। বলে,
-আমি আছি তো। সব ঠিক করে দিবো।
আমি কিছু বলিনা। পরম নির্ভরশীলতায় অনামিকার কাঁধে মাথা রাখি কেবল।
গল্পঃ অনামিকা এবং একটি গল্প
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
-তাসফি আহমেদ।
ভালো ছিল গল্পটা😊
এক কথায় অসাধারণ ছিল