গল্পঃ ভালো আছি আমি
গল্পঃ ভালো আছি আমি
প্রথম পর্ব
তাসফি আহমেদ
"জীবনে প্রেম করার খুব সখ ছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে এই চমৎকার ব্যাপারটা হয়ে উঠেনি৷ বলা বাহুল্য প্রেম করার প্রতি এক প্রকার ভয় কাজ করছিল আমার। সময় করে খোঁজ নেয়া, দিনরাত কথা বলা, ঘুরতে যাওয়া, তাকে নানান রকমের উপহার দিয়ে মুগ্ধ করা, এসব করতে যেন একটু ভয় হতো। এই ভয়টাও হতো যে যার সাথে আমি প্রেম করবো তাকে অবশেষে পাবো কী না! না পেলে আরেক কষ্ট৷ তাই আর প্রেম করা হয়ে উঠেনি৷ কিংবা ধরুন করব করব বলে আর করাই হয়নি৷"
আমি এতটুকু বলে থামলাম। হাসলাম খানিকটা। গল্প স্রোতাদের কাছে আমার হাসিটা কেমন লাগল তা আমি জানি না৷ তবে আমার মনে হলো হাসির অভিনয়টা আমি ভালোই করছি। আমি আবার বলতে থাকলাম,
"গ্র্যাজুয়েশন শেষ। এরপর চাকরির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। তারপর ব্যাংকের এই চাকরিটা পাওয়া এবং ধীরে ধীরে এই ইট পাথরের শহরে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া। এরপরই মায়ের বিয়ের জন্যে পিড়াপীড়ি শুরু। আমিও ভাবলাম একা একা এই জীবনের অনেক ভোজা এই যাবত টেনে এলাম৷ এবার কেউ একজনকে খুব দরকার, যার সাথে আমি নির্দ্ধিধায় কথা বলব, গল্প করব, দু'জনে মিলে হাঁটব অনেক দূর, সন্ধ্যা দেখব, তারাভরা আকাশ দেখব, স্নিগ্ধ বাতাসে চন্দ্র বিলাশ করব। মানুষ একা একা বেশিদিন থাকতে পারে না৷ এক সময় তার কেউ একজনের প্রয়োজন পড়েই৷ তবে যাদের মন বেশি শক্ত তারা নিজেদের স্থির রাখতে পারে৷ আমি অতো কঠোর নই। বেশ নরম মনের মানুষ বলে নিজেকে দাবি করি। মায়ের মতের সাথে সম্মতি দিলাম। মা অবশ্য একটু এডভান্স ছিলেন৷ তিনি আমাদের গ্রামের ওইদিকের একটা মেয়েকে আগ থেকেই টার্গেট করে রাখলেন৷ মেয়েটাকে তার কলেজে গিয়েও নাকি দেখে এসেছেন৷ মেয়ে ইন্টার পরিক্ষা দিবে। বিশেষ বড় হয়নি। মায়ের এই কথা শুনে আমি খানিকটা বেঁকে বসলাম। বললাম,
-এতো ছোট মেয়েকে বিয়ে করবো? কী বলো? তার এখন গ্রো আপের সময়৷ পড়বে, ভার্সিটিতে ভর্তি হবে৷
মা ঠোঁট বাকিয়ে বললেন,
-বয়সে একটু ছোট মেয়ে বিয়ে করাই ভালো৷ স্বামীর কথা শুনবে। শ্বশুর শাশুড়ীদের মানবে৷ যা যুগ আসলো। আজকাল মেয়ের গুলো যে কী হয়েছে! আল্লাহই ভালো জানে৷
আমি কথা বাড়ালাম না৷ বাড়ালেও যে লাভ হবে তেমন কিছু নয়৷ মা নিজের কথায় অটল থাকেন। এমনকি বাবাকে মাঝে মাঝে নিজের কথা ফিরিয়ে নিতে হয়৷ মা ভীষণ রাগি৷ আমি আজোও আমার মাকে ভয় পাই। তবে আজকাল তিনি আমায় রাগ দেখান না। বড় নির্জীব হয়ে গেলেন তিনি।"
আমি খানিকটা অন্য মনষ্ক হয়ে গেলাম। গলার স্বরটা ম্লান হয়ে এলো যেন। আমি এক দৃষ্টিতে বাইরে চেয়ে থাকলাম। ট্রেনের ঝক ঝক শব্দ ছাড়া তেমন কোনো শব্দ হচ্ছে না। আমাদের কামরাটায় যেন রাজ্যের নিরবতা ভর করেছে৷
.
ট্রেনে উঠার পর থেকেই দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে আড়চোখে দেখছে। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই সে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। আবার সুযোগ পেলেই দেখছে। এমন সুযোগ পেলে দেখাটা ছেলেদের স্বভাব ছিল এক কালে। বর্তমানে নারী পুরুষ সমান অধিকারের তালে সেই সুযোগটা মেয়েরা বেশ সানন্দেই লুপে নিয়েছে। বেশ চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে সে। পাশে তার বান্ধুবি। মেয়েরা কথা বলতে পছন্দ করে। স্বভাবত তারা দুজন তাইই করছে। তবে এই বালিকা সুযোগ করে আমাকেও দেখছে। আমি খানিকটা অবাকই হলাম। দেখার মতো বিশেষ কিছু আমার মাঝে নেই। বিশেষ কোনো গুণও নেই। যা আছে চেহারার বিশেষত্ব তা আমাকে কখনই আকৃষ্ট করে না। ব্যাংকের চাকরির মতো ব্যস্তময় চাকরির পরেও আমি বই পড়ার অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। জীবনে কিছু কিছু অভ্যাস থাকে যা কখনই ছাড়া যায় না৷ আমি বই পড়ায় মনোযোগ দিলাম। বইয়ের নাম অপেক্ষা৷ লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আমি 'অপেক্ষা'কে পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ট্রেনের এই কামরাটায় আমরা মোট জন আছি৷ আমি এবং আমার পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধ৷ তাঁর চোখে চশমা৷ হাতে একটা বই৷ মূলত এই বৃদ্ধের বই পড়া দেখেই আমার মনে হলো বইয়ের সাথে এই ভ্রমনটা করা যাক৷ আমাদের সামনের সিটে বসে আছে ওই দুই বালিকা৷ কামরায় কেবল তারাই কথা বলছে৷ এক স্টেশনে এসে আমাকে নামতে হলো। পানির বড় তৃষ্ণা পেয়েছিল। প্রতিবারই জার্নির সময় পানির বোতল নিয়ে উঠি আমি৷ আজ কেন জানি ভুলে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে ইদানিং অনেক কিছুই ভুলে যাচ্ছি। হাতের বইটা ব্যাগে রেখে কামরা থেকে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে এসে দোকান থেকে পানি কিনে কামরায় ফিরতেই দেখি সেই চঞ্চল মেয়েটা, হাতে একটা ডায়েরি নিয়ে বসে আছে। একটু ভালো করে তাকাতেই দেখলাম তার হাতের ডায়েরিটা আমার। আমার বুকটা কেঁপে উঠল যেন৷ আমি দ্রুত গিয়ে ডায়েরিটা নিয়ে নিলাম তার কাছ থেকে। মেঝেতে দেখলাম আমার ব্যাগটা পড়ে আছে৷ মেয়েটা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। তার মুখটা চট করেই কালো হয়ে গেল। বলল,
-আ'ম সরি৷ কারো ব্যক্তিগত জিনিস না জানিয়ে ধরা অনুচিত। আমি অপরাধ করেছি। মাপ করবেন প্লীজ৷
আমি কিছু বললাম না। ব্যাগটা নিচ থেকে
নিয়ে ঝেড়ে নিলাম। তারপর সব ঠিকঠাক করে আমার পাশে রাখলাম। ততক্ষণে মেয়েটা বলে উঠল,
-আসলে নিচে পড়ে যেতেই ডায়েরিটা বের হয়ে গিয়েছিল৷ উপরের কাভারটা বেশ নজর কাড়ল আমার৷ কৌতূহল হলো। দেখার ইচ্ছে জাগল ভীষণ। নিজের কৌতূহলকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। তাই ডায়েরিটা নিয়ে নেই।
আমি নিজেকে সংযত রাখলাম। নিজের ভেতরের অস্থিরতাকে স্থির করে বললাম,
-ইটস ওকে।
মেয়েটা হাসল। বলল,
-থ্যাংকিউ!
এর কিছু সময় বাদেই সে চট করেই বলে উঠল,
-আচ্ছা অনামিকা কে? আপনার প্রেমিকা? নাকি স্ত্রী? আপনার হ্যান্ড রাইটিং কিন্তু দারুণ।
আমি খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কী বলব ভেবে পেলাম না৷ মেয়েটা আবার বলে উঠল,
-বলুন না!
বড় অস্থির মেয়ে সে। দেখে তো মনে হচ্ছে না শুনে ছাড়বে না। বললাম,
-বলাটা কি খুব প্রয়োজন?
-না শুনলে আমার ঘুম হবে না। এখানে অনামিকার নামটা দেখেছি। কয়েকটা লাইন পড়লাম। বেশ ভালো লাগল। তাই আগ্রহটা বেশিই হচ্ছে।
মেয়েটাকে কেবল আমি চঞ্চল ভেবেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে তার রন্দ্রে রন্দ্রে চঞ্চলতা। বললাম,
-অনামিকা আমার হৃদস্পন্দনের নাম। আমার প্রেম, ভালোবাসা। আমার স্ত্রীর নাম।
মেয়েটা ফিকে হাসি দিল। তার ফিকে হাসির তেমন কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না৷ সে নিজ থেকেই আবদারের স্বরে বলল,
-আপনাদের কোনো গল্প আছে? থাকলে বলুন না! আমি আসলে জার্নির সময় কয়েকটি উপন্যাস সাথে করে নিয়ে আসি। কিন্তু এইবার কেন জানি ভুলে গেলাম। বই নিয়ে আসা হলো না। এখন দেখুন না, বান্ধবির সাথে বকবক করে সময় পার করছি। এভাবে আর কতক্ষণ সময় পার করা যাবে বলুন! তার চেয়ে বরং আপনাদের প্রেমের গল্পটা শোনা যাক। আমার আবার এই ধরনের গল্প শুনতে বেশ ভালোই লাগে। তাছাড়া আমি মোটামুটি ফেসবুকে লেখালেখি করি। পছন্দ হলে আপনার গল্পটাও লিখে ফেলব।
কী বাচ্চা সুলভ কথা৷ আমার কেন জানি হাসি পেয়ে গেল খানিক। তবে তার আচার ব্যবহার বড় নিষ্পাপ লাগল। মনে হলো না এই মূহুর্তে গল্পটা বলা যায়। বললে আমারো ভালো লাগবে। সময়টাও ভালো কাটবে৷ তারপর থেকেই গল্পটা বলতে শুরু করলাম। গল্পের এই পর্যায়ে আমি খানিকটা অন্যমনষ্ক হয়ে যাই। মেয়েটা বলে উঠে,
-এরপর? এরপর কী হলো?
আমার ধ্যান ফিরে এলো যেন। বললাম,
"আমার সাথে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়৷ নাম অনামিকা চৌধুরী। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর তার নাম হয় অনামিকা ভূঁইয়া। অনামিকা বেশ ভালো এবং মিশুক প্রকৃতির মেয়ে। সে সহজে আমার সাথে, আমার পরিবারের মিশে গেল। এই ব্যাপারটা আমায় এতো আনন্দ দিল যে বলার মতো না। মনে হলো যাক একটা মনের মতো মেয়ে পেলাম। অনামিকা তখনও কিশোরী। চাঞ্চল্যতায় ভরপুর। সব সময় হাসিখুশি থাকত। তবে আমার কাছে আসলেই যেন মিইয়ে যেত। কেমন জানি লজ্জা পেত৷ মাথা নিচু করে রাখত। আমি একদিন জোর করে আমার কাছে টেনে নিলাম। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। বললাম,
-ভয় পাও আমায়?
কথাটা বলে তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখলাম লজ্জায় সে লাল হয়ে আছে। বললাম,
-এতো লজ্জা পেও না। ভয় পাওয়ারও কিছু নেই৷ ঠিক আছে?
সে মাথা ঝাকি দিয়ে সায় দিল। বললাম,
-আমরা দুজন এখন স্বামী স্ত্রী। আমাদের মাঝে লজ্জার কিছু নেই। কেমন?
সে কিছু বলল না। চুপচাপ থাকল। তারপর আমরা একান্তে কিছু সময় কাটালাম। ওই সময়টার যেন বিশেষ প্রয়োজন ছিল আমাদের দু'জনের মাঝে৷ কারণ এরপর আমরা দুজন আরো ক্লোজ হয়ে যাই৷ একে অপরের সাথে অনেক কথা বলি। গল্প করি৷ কতো কথা যে শেয়ার করলাম তার কাছে। কতো গোপন কথা! যেগুলো নিজের কোনো বন্ধুকেও বলা হয়নি৷ কোন কোন মেয়েটাকে আমার পছন্দ ছিল, কাকে দেখলে আমার ভালো লাগত, সব বলতাম তাকে৷ একেক দিন একেক কথা মনে পড়ে যেত৷ দু'জনে বসতাম বারান্দায়, কখনও ছাদে আবার কখন বিছানায় শুয়ে থেকে। তবে মেয়ের কথা বললেই অনামিকা যেন চুপসে যেত৷ কিংবা মাঝে মাঝে সে খানিকটা রাগ দেখাতো৷ চোখ রাঙিয়ে বলতো,
-এসব করতে তুমি?
আমি হাসতাম। এই কিশোরীর নিষ্পাপ রাগ আমায় যেন ভীষণ ভাবে আন্দলিত করতো৷ এমন এক অনুভূতি হতো যেটা কখনই প্রকাশ যোগ্য নয়৷ অনামিকা বেশ ভালো গান গাইতে পারতো৷ প্রায় রাতেই সে আমাকে গান গেয়ে শোনাতো। আমার এতো ভালো লাগতো যা বলার মতো না। আমি কেবল মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনতাম। আমার বুকের ভেতর তখন শীতল শিহরণ প্রবাহিত হতো। দিন দিন আমি যেন অনামিকার মধ্যে ডুবে যেতে থাকলাম। এর মাঝে তার ইন্টার পরিক্ষার রেজাল্ট বেরিয়ে গেল। রেজাল্ট আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালোই৷ আমি বললাম ভার্সিটির ফর্ম নাও। সে তেমন আগ্রহ দেখালো না। বলল,
-আর পড়তে পারবো না। কষ্ট লাগে পড়তে। আমি তোমার সংসার করেই জীবন পার করে দিবো। আমার আর কিছু লাগবে না। কেবল তুমি হলেই হবে।
কিশোরী অনামিকার এমন আবেগ মাখা বাক্য গুলো আমায় প্রায়ই অভিভূত করত। কারো প্রথম পুরুষ হওয়া যে কতটা আনন্দের আমি সেটা তখন টের পাই। আমি বুঝতে পারি অনামিকার ভেতরটা জুড়ে আমিই আছি। কেবল আমি। তারপর হঠাৎ একদিন আমাকে জানানো হলো যে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। দুদিনের জন্যে। ওখানে আমাদের একটা নতুন শাখা হচ্ছে। তার কিছু কাজ বাকি ছিল। সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে৷ দুদিন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷ বাসায় এ কথাটা বলতেই অনামিকা যেন হুট করেই চুপসে গেল। সারাটাক্ষন মুখ কালো করে বসে থাকল। এমনকি আমাকে আমাকে শেষ বিদায়ের সময়ও তার মুখ কালো ছিল। আমি তাকে অনেক বুঝালাম। বললাম দুদিনেরই তো ব্যাপার। থাকো না! আমি তো আর কোথাও চলে যাচ্ছি না। ফিরে আসবো ইনশাআল্লাহ। এবার হাসো তো। সে হাসেনি। মোটেও হাসেনি। কী আর করার৷ আমাকেও বিষন্ন মন নিয়ে আসতে হলো চট্টগ্রাম। প্রথম দিন অনামিকার প্রচুর কল পেলাম। কিছুক্ষণ পরপরই কল দিতো। কী করছি জানতে চাইতো৷ কিন্তু দ্বিতীয় দিনটা কাল হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্যে। তার কল পেলাম না। আমার ভেতরটা অস্থির হয়ে পড়লো। আমি ফোন দিলাম বেশ কয়েকবার। ধরল না৷ আমার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল। মাকে ফোন দিলাম। তিনি প্রথমবারে তুললেন না। দ্বিতীয়বার রিঙ হতেই তুললেন তিনি। আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম,
-কী ব্যাপার মা? ফোন ধরছিলে না কেন? অনামিকা কই? ওকে এতবার যে ফোন দিচ্ছি ফোন ধরছে না কেন?
মা খানিকটা চুপ থাকলেন। হাসলেন যেন। বললেন,
-একটু দম নে। এতো অস্থির হইস না। অনামিকা ঠিক আছে। শুধু কাল বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরটা বাধিয়ে নিয়েছে। কতো করে বললাম৷ সে শুনলোই না।
-এই অসময়ে ওকে বৃষ্টিতে ভিজতে বলেছে কে? এই মেয়েটারও না কাণ্ডজ্ঞান নেই। এই অসময়ে বৃষ্টিতে কেউ ভিজে। দেখি তাকে ফোন দাও তো?
-ও ঘুমোচ্ছে। পরে কথা বলিস৷ এখন তোর খবর কী বল। কবে ফিরছিস...
দুদিন পার হয়ে গেল। আমি বাসায় চলে এলাম। আসার সময় অনামিকাকে বললাম আমি আরো একদিন থাকব এখানে। সে মন খারাপ করে ফোন কেটে দিয়েছিল। এখন গিয়ে তাকে ভীষণ চমকে দেয়া যাবে। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডোর বেল বাজালাম। অল্প সময় পরই অনামিকা দরজা খুলে দিল এবং আমাকে দেখতেই বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকল। আমি ভাবলাম আমাকে দেখে সে চমকে যাবে বটে তবে তৎক্ষনাৎ আমাকে জড়িয়েও ধরবে। কিন্তু আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে সে দরজা ছেড়ে দিল আমায়। আমি ভেতরে ঢুকতেই মা আসলেন। বললেন,
-কিরে? তুই না আজ আসবি না বলেছিলি?
অনামিকা আমাদের রুমে চলে গেল। আমি মাকে সব খুলে বললাম। তারপর রুমে আসতেই দেখলাম মহারানী মুখ কালো করে বিছানার কাছে বসে আছেন৷ আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম। সে সরে বসল। আমি আবারো তার গা ঘেঁষে বসলাম। বললাম,
-রাগ করেছো বুঝি?
সেই ভারি গলায় বলল,
-কথা নেই তোমার সাথে৷ যাও এখান থেকে।
-আচ্ছা। চলে যাচ্ছি।
এই কথাটা বলে দাঁড়াতেই সে আমার হাত টেনে ধরল। তারপর চট করেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। বুকের কাছে কয়েকটা কিল-ঘুষিও দিল। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
-তুমি ভীষণ পঁচা। আমাকে খালি কষ্ট দাও৷
আমি কিছু বললাম না আর। তাকে কেবল জড়িয়ে ধরে রাখলাম। এভাবেই দিন যাচ্ছিল। অনেক বলে কয়ে সাত কলেজের ফর্ম নিলাম তার জন্যে। বললাম, ভালো করে পড়ো। এখানে তোমাকে চান্স পেতেই হবে। তোমাকে আবার নতুন করে পড়াশোনা করতে হবে। অনামিকা, আমি চাই তুমি পড়াশোনা করো। অনামিকা যথেষ্ট মেধাবী ছিল। তার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুটোতেই রেজাল্ট বেশ ভালো৷ আমি তাকে পড়ার জন্যে খুব আগ্রহ জাগালাম। বাবা মাকে বলতেই তারা তেমন না-রাজ হলেন না। সায় দিলেন। অনামিকা আবার পড়ালেখা শুরু করল। এবং আল্লাহর রহমতে সে চান্সও পেয়ে গেল। সেদিন সে এতো খুশি হলো যা বলার মতো না। তার সাথে আমার নিজেরও বেশ খুশি হচ্ছিল। কী একটা আনন্দ যেন আমার সমস্ত গ্রাস করে নিচ্ছিল। অনামিকা সেদিন আমায় জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল। বলল,
-আমার আসলে পড়ালেখা করার প্রতি খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বাবা মা নিষেধ করলেন। জোর করলেন যেন আমি বিয়ের পরে তোমাকে কিংবা তোমার পরিবারকে এসব নিয়ে পিড়াপিড়ি না দেই। তাই আমি এতোদিন কিছু বলিনি। অথচ তুমি কীভাবে যেন আমার মনের কথাটা বুঝে ফেললে। আমি খুব পড়তে চাই। নিজেকে একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই।
আমি বললাম,
-তুমি চিন্তা করো না। আমি আছি তোমার সাথে। তোমার প্রতিটি স্বপ্ন আমি পূরণ করব অনামিকা।"
আমি থামলাম। পানির বোতল থেকে কয়েক ডোক পানি গিলে নিলাম। পাশের ভদ্রলোককে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর চোখে মুখে ভীষণ আগ্রহ। যেন তিনি গল্পটা শুনে বেশ মজা পাচ্ছেন। আমি পানি খেয়ে শেষ করতেই তিনি বললেন,
-এরপর? তুমি নিশ্চয়ই তোমার স্ত্রীর সকল স্বপ্ন পূরণ করেছো? তা সে কেমন আছে এখন?
আনি বললাম,
-সে বেশ ভালোই আছে৷ আমি তার স্বপ্নের জন্যে যা যা প্রয়োজন তা তা-ই করেছি। এবং আমি মনে করি আমি সফল হয়েছে। কেউ একজনের পরিপূর্ণ স্বামী হয়েছি। একজন পপরিপূর্ণ স্বামি ক'জনই বা হতে পারে!
এই বলে আমি মৃদু হাসলাম। তারা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি আবার বলা শুরু করলাম,
"অনামিকা গান গাইতে বেশ পছন্দ করতো। কলেজের প্রায় অনুষ্ঠানেই সে গান গাইতো। আমি প্রথমবার গিয়েছিলাম। পরের অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি বলে সে আমার রেকর্ড করে নিয়ে এসেছে। কী পাগলামো! আমি জানতে চাইলাম,
-গান নিয়ে তোমার কী কোনো স্বপ্ন আছে নাকি?
সে মাথা নিচু করে হাসল। আমি বুঝলাম সে গায়িকা হতে চায়। তবে এই বিষয়ে আমাদের কারোই তেমন কোনো ধারণা ছিল না। তাই তেমন আগানোও হয়নি৷ এদিকে আমার বাবা মা'ও যে সায় দিবেন না তা আমি নিশ্চিত। তাই সবার আড়ালেই অনামিকাকে নিয়ে গেলাম একটা গানের প্রতিযোগিতায়৷ দেশের বড় বড় গায়ক গায়িকারা এখানকার বিচারক। যে জয়ী হবে তাকে পুরষ্কৃত করা হবে এবং 'সাদ আহমেদ' নামক দেশের জনপ্রিয় গায়কের সাথে একটা গান করার সুযোগ দেয়া হবে। ছেলে এবং মেয়ে দুই দল থেকে দুজনকে সিলেক্ট করা হবে। সর্বমোট সাতটা রাউন্ডে এই প্রতিযোগিতা কমপ্লিট হবে৷ অনামিকা প্রথম রাউন্ড অনায়াসেই পেরিয়ে গেল৷ তবে পরের রাউন্ড গুলো তার জন্যে বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। তার গানের চর্চা তেমন নেই। স্কুল কলেজে যা শিখেছে, গেয়েছে তা দিয়েই এতটুকু এগোলো৷ আমি খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। অনামিকার এখন রিহার্সালের প্রয়োজন। চর্চ না করলে হবে না। চর্চা ছাড়া সামনে এগোনো যাবে না৷ ঠিক তখনই আমার ভার্সিটির বন্ধু তপুর কথা মনে পড়ে গেল। সেও তো গান গাইতো। নিজের একটা স্কুল আছে যেখানে সে বাচ্চাদের গান শেখায়। বাহ! দারুণ একটা আইডিয়া পাওয়া গেল। অনামিকাকে নিয়ে গেলাম ওর কাছে। বললাম,
-তোর ভাবি যেন জয়ী হয়। সেভাবেই টিচিং দিবি৷ ও যদি প্রথম না হয় তবে তুই শেষ।
বন্ধু মানুষ! একটু মজা তো করাই যায়। অনামিকা তপুর এখানে এসে গানের চর্চা শুরু করল। বাসায় বললাম তার প্রাইভেট পড়তে হয়৷ অমুক বিষয় বেশ জটিল। সে বুঝে না৷ তাই প্রাইভেট পড়তে হয়। বাবা মা'ও আর বিশেষ খেয়াল দেননি এদিকে। অফিস থেকে ফেরার পথে আমি ওকে নিয়ে আসতাম বলে বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলেন তারা৷ এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে তার গায়ের চর্চ চলল। এদিকে গানের প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগি বেশ বলে নেক্সট রাউন্ড আসতেই বেশ দেরি হচ্ছে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই অনামিকা গান চর্চার বিস্তর সময় পাচ্ছে। এভাবেই দিন গুলো যেতে থাকল।"
এতটুকু বলে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। জানালা দিয়ে বাইরের নিকশ কালো অন্ধকারের দিয়ে চেয়ে থাকলাম। মনটা কেমন জানি ভার ভার লাগল৷ ওই চঞ্চল মেয়েটার বান্ধুবিটা বলে উঠল,
-তারপর?
আমি তার দিকে তাকালাম একবার। আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে বললাম,
" প্রতিযোগিতার চতুর্থ থেকে সপ্তম রাউন্ড গুলো টিভিতে লাইভ দেখায়৷ এ নিয়ে কয়েকদিন বেশ উত্থানপতন শুরু হলো আমাদের বাসায়। অনামিকার বাবা মা'ও বেশ বকাঝকা করলেন। আমি তাদের সকলকে কনভিন্স করলাম। আমার মাকে অবশ্য সহজে গলানো গেল না৷ তিনি বেঁকেই থাকলেন। আমি তাঁকে অনেক বুঝালাম। কিন্তু তিনি কিছুই বুঝতে চাইলেন না৷ কিন্তু ঠিকই যখন অনামিকা ওই প্রতিযোগিতায় প্রথম হলো তিনি মিষ্টির টাকা দিয়ে বললেন জলদি যেন মিষ্টি নিয়ে আসি৷ সকলেই অনামিকার বেশ প্রশংসা করল। আম্মু হয়তো তাতেই অতিরিক্ত কনভিন্স হয়ে গেলেন৷ অনামিকা সাদ আহমেদের সাথে গান করলো। তাদের প্রথম গান হিট হলো। অনামিকার ফ্যান ফলোয়ার বাড়তে থাকল। তার ছবি মেয়েদের প্রোফাইলে ঘুরতে থাকল। অমুক ছেলের ক্রাশ হলো সে। আমি ঠিক তখনও বুঝতে পারিনি যে আমি আসলে এভাবেই ধীরে ধীরে অনামিকাকে হারিয়ে ফেলছি৷"
চঞ্চল করে মেয়েটা বলে উঠল,
-মানে? হারিয়ে ফেলছেন মানে কী?
আমি খানিকটা চুপ থেকে বললাম,
"খুব দ্রুতই অনামিকা বেশ পপুলার হয়ে উঠে। সবার প্রিয় হয়ে উঠে। গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। প্রথম প্রথম আমার জন্যে সে সময় বের করতো৷ কিছুদিন যাবত তাও হচ্ছিল না। অনামিকা ধীরে ধীরে ব্যস্ততায় হারিয়ে যায়৷ অমুক যায়গা যায় গান করতে। ওখানে আজ পার্টি! ফিরতে রাত হবে তার৷ মানে হুট করেই যেন মেয়েতা চেঞ্জ হয়ে যায়৷ যে মেয়েটা দিনে আমায় ত্রিশ চল্লিশটা কল দিত সে আজকাল আমারই ফোন ধরে না৷ আমি তবুও ফোনে দিতে থাকি৷ সে ফোন ধরে না৷ পার্টিতে পড়ে থাকে। কোথায় কোথায় মজা করে। মাস্তি করে। অথচ আমাকে জানায় না৷ কখনও নিয়ে যেতেও চায়নি৷ হয়তো সে নিজের বিয়ের ব্যাপারটাও গোপন রাখতে চায়৷ খুব কষ্টে দিন কাটে আমার। যে মেয়েটার আমাকে না দেখলে দম বন্ধ হয়ে আসে, একা একা লাগে, আজ সে মেয়েটাই আমার খোঁজ নেয় না৷ কক্সবাজার যায়,বান্দরবান যায়। আমাকে জানায়ও না। আমি কিছু বললেই তার ঝগড়া শুরু হয়৷ প্রথম প্রথম এমন হতো না৷ ইদানীং ঝগড়াও বেশ দারুণ ভাবে হয়৷ আমার একদিন বেশ ইচ্ছা হলো তাকে গিয়ে একবার দেখে আসি। সে তখন অডিটোরিয়ামে। কিসের শ্যুটিং চলছিল নাকি৷ আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম। ভাবলাম আমাকে দেখে খুব খুশি হবে সে। অথচ আমাকে দেখতেই সে চোখ রাঙলো। এমন একটা ভাব করলো যেন আমার এখানে আশাটা মহা অন্যায় হয়েছে৷ আমি ওর কাছে যেতেই ও চাপা স্বরে বলল,
-কী ব্যাপার? তুমি এখানে কী করছো?
-তোমাকে দেখার ইচ্ছে হলো ভীষণ। তাই চলে এলাম।
-এখন তো দেখলে আমায়৷ হলো তো৷ যাও এবার৷ আর দেখা লাগবে না৷
-এমন করছো কেন? একটু থাকি না। শ্যুটিং দেখি একটু৷ আমার শ্যুটিং দেখার খুব সখ৷
-কোনো প্রয়োজন নেই শ্যুটিং দেখার। তুমি এখান থেকে চলে যাও। এক্ষুনি চলে যাও৷
-থাকলে তোমার প্রব্লেম কী?
-অনেক প্রব্লেম৷ যাও এখান থেকে৷
ঠিক তখনই একটা ইয়াং ছেলে এসে অনামিকার পাশে দাঁড়াল। বলল,
-এই অনু? কে ইনি?
অনামিকা অপ্রস্তুত হয়ে হাসল। বলল,
-আমার এক রিলেটিভ। দেখা করতে আসলো আরকি।
-কেমন রিলেটিভ?
-দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়। তুমি...
ছেলেটা ওকে শেষ করতে না দিয়েই বলল,
-তাহলে উনাকে যেতে বলো। আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করতে হবে ফিউচার নিয়ে। চলো।
আমি বোকার মতো কেবল তাকিয়ে থাকলাম। মনে মনে বললাম, রিলেটিভ? আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। মুখ দিয়ে কথা আসেনা যে। দম বন্ধ লাগে৷ আমি তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কথাটা খুব আঘাত দেয় আমায়। আমার কান্না চলে আসছিল অনেকটা। ঠিক তখনই ছেলেটা অনামিকার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকল। আমার মেজাজটা চট করেই গরম হয়ে গেল। নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। দৌড়ে গিয়ে ছেলেটা নাক বরাবর একটা ঘুষি মারি। বলি,
-তুমি আমার স্ত্রীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিস কীভাবে? এতো বড় সাহস দিলো কে তোকে? বেয়াদব! কতোবড় স্পর্ধা তোর।
ঠিক তখনই অনামিকা আমার গালে একটা চড় মেরে দেয়। বলে,
-তোমার সাহস কী করে হয় ওকে মারার? কীভাবে?
বিশ্বাস করেন ওই সময়ে, ঠিক ওই সময়ে আমি বাক রুদ্ধ হয়ে পড়ে। আম যেন আর কথা বলতে পারছিলাম না। শ্যুটিং স্পটের কয়েকটা ছেলে এগিয়ে আসে৷ যাকে মেরেছি সে উঠে দাঁড়ায়। আমাকে চড় দেয়। অনামিকা তাকিয়ে দেখে কেবল। আমি অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি অনামিকাকে। তারা আমাকে অনেকটা মেরে,ধাক্কিয়ে ওখান থেকে বের করে দেয়। ওখানে শেষ হয় আমাদের পথ চলা। আমার আর অনামিকার। আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায় খুব গোপনে। এখন সে তার মতো আর আমি আমার মতো৷"
আমি থামলাম। আমার দৃষ্টি তখনও বাইরে৷ আন্ধকারে হারিয়ে আছে। ট্রেন থামলো যেন। আমার ঘোর ভাঙ্গল। সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম মেয়ে দুটো তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে জল। পাশের ভদ্রলোক লোক মুখ কালো করে চেয়ে আছেন। ঠিক এই মূহুর্তে এই স্টেশনটাকে, আমাদের এই ছোট্ট কামরাটাকে খুব নির্জন মনে হলো আমার। একদম শান্ত। নীরব। আমি আবার বাইরের দিকে তাকালাম। লোকজন হেঁটে যাচ্ছে। যার নামার সে নামছে। যার উঠার সে উঠছে। সবারই গন্তব্যে ফেরার কী তাড়না। এই সবার মাঝে হয়তো আমিই খানিকটা ভিন্ন যার গন্তব্যে ফেরার কোনো তাড়না নেই। চঞ্চল টাইপের মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ভারি স্বরে বলল,
-আপনাকে দেখে তো বুঝাই যায় না এতো বড় একটা কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন ভেতরে। কীভাবে পারছেন? আচ্ছা আপনি ঠিক আছেন? এই যে চেহারায় 'ভালো আছেন' এমন একটা ভাব রাখছেন, আপনি কি আসলেই ভালো আছেন?
আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকি কিছু সময়৷ চট করেই হেসে দেই। হাসিটা কখন যে কান্না বদলে যায় টেরই পাই না৷ চোখের কোণা বেয়ে জল পড়ে কেবল। ভেজা স্বরে বলি,
-হ্যাঁ। আমি ভালো আছি। ভীষণ ভালো আছি।
পাশের ভদ্রলোক আমার কাঁধে হাত রাখলেন। কিছু বললেন না৷ কারোই হয়তো কিছু বলার থাকে না৷ যা বাস্তব, যা সত্য, তা মেনে না নিতে চাইলেও মেনে নিতে হবে। কারন এটাই বাস্তব। এটাই সত্য৷
গল্পঃ ভালো আছি আমি।
ভুলত্রুটি বিশেষ ভাবে মার্জনীয়।
-তাসফি আহমেদ।