গল্পঃ কগন । লেখক - তাসফি আহমেদ
গল্পঃ কগন । লেখক - তাসফি আহমেদ
গল্পঃ কগন
তাসফি আহমেদ
একটা মেয়ে মেসেজ রিকোয়েস্ট দিলো৷ আমার গল্প পড়তে চাচ্ছেন তিনি৷ টুকটাক লিখালিখি করি ফেসবুকে। মনের আবেগ গুলো লিখে প্রকাশ করি৷ কেউ কেউ পড়ে প্রশংসা করে। বেশ লাগে আমার৷ এই ছাইপাঁশ আবেগেরও মূল্য বুঝি তখন।
মেয়েটার ফেসবুক আইডির নামটা ভীষণ নজর কাড়ল। আইডির নাম, 'কাব্যে কাদম্বিনী'। 'কাদম্বিনী' শব্দের অর্থ আমার জানা নেই৷ তবে শব্দটা বেশ লাগল। কৌতুহল হলো আমার৷ নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,
-আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
সে তখনই জবাব দিলো,
-সিউর!
-'কাদম্বিনী' শব্দটার অর্থ জানা আছে?
সে দ্রুতই জবাব দিল,
-সম্ভবত কায়া। যার শরীরী আবরন নেই।
-কায়া কী? আবরণহীন এমন কিছু?
-অস্তিত্বহীন! অনেকটাই তাই।
-আচ্ছা। ধন্যবাদ।
-জ্বি।
মেয়েটা 'জ্বি' বলেই চুপ করেই রইলো। আমি একটা হাসির ইমুজ দিয়ে তার সাথে আমার প্রথম আলাপন সম্পন্ন করলাম৷ 'কাদম্বিনী' শব্দটা সম্পর্কে জেনে বেশ ভালোই লাগল। নতুন একটা শব্দ সম্পর্কে জানা গেল৷ এ জাতীয় নতুন শব্দের প্রতি প্রবল আগ্রহ আমার। এর পরের দিনই মেয়েটা আবার মেসেজ দিলো,
-ইরিনকে নিয়ে একটা গল্প ছিল। হারিয়ে ফেলেছি। পড়া হয় নি। মেনশন দিবেন প্লীজ?
আমি খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম৷ ইরিন কে নিয়ে আমার বেশ কয়েকটা গল্প আছে। তিনি কোন গল্পটা চাচ্ছেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। বললাম,
-কোন গল্পটা? ইরিন আর রাফির?
-ঠিক জানি না রাফি ছিল কি না। ইরিনের শাড়ি পর্যন্ত আটকে ছিলাম। এরপর একটা কাজ পড়ে যাওয়ায় যেতে হয়। তাই শেষ করতে পারি নি। তারপর আর গল্পটা খুঁজে পেলাম না।
আমার ভ্রু কুচকেই থাকল৷ তখনও বুঝতে পারিনি কোন গল্পটার কথা বলছেন৷ বললাম,
-কাহিনীটা একটু বলতে পারবেন?
-দুটো লাইন পড়তে পেরেছি কেবল! "ইরিন শাড়ি পড়েছে আজ, মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম। বাতাস বইছিল না, জনকোলাহল নেই...” এমন কিছু একটা।
আমি ঠিক তখনই যেন বুঝতে পারলাম উনি কোন গল্পটার কথা বলছেন। বললাম,
-ইরিন নাম? নাকি নিশিতা? নিশিতা নামক নায়িকার গল্পে এমন কিছু ছিল, জনকোলাহল নেই, বাতাস বইছে না। এই ধরনের।
-গুলিয়ে গেছি নামটায়। নিশিতা হলেও হতে পারে। আমার ঠিক মনে নেই৷
আমি খানিকটা নিশ্চিত হয়ে বললাম,
-নায়িকার নাম নিশিতাই হবে৷ আমি মেনশন দিচ্ছি। দেখুন ওটা কী না।
মেসেজটা করে আমি তাকে মেনশন দিতে যাবো ঠিক তখনই সে বলল,
-গল্পটা পেয়ে গেছি লেখক। আপনাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। ধন্যবাদ।
আমাকে আর মেনশন দেয়া লাগেনি৷ বললাম,
-আচ্ছা। স্বাগতম।
এই বলে আমি চুপ থাকলাম। আমাদের কিছুক্ষণ কথা হলো না। স্বভাবতই পাঠকদের সাথে আমার এই ধরনের আলোচনা ঠিক এই জায়গাতেই থেমে যায়। যাওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু এই মেয়েটা যেন ঠিক অন্যরকম। হুট করেই অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসল। বলল,
-স্বাগতমের উত্তরে কী বলতে হয়? আমার জানা নেই।
আমি খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। স্বাগতমের উত্তরে আদৌ কি কিছু বলা লাগে কি না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই৷ ভাবলাম খানিকটা। লেখক হয়েছি। পাঠক কিছু জানতে চেয়েছে৷ উত্তর তো দিতেই হবে৷ মনে মনে ভাবলাম এর উত্তরে কিছু একটা বলতে না পারলে ভীষণ লজ্জায় পড়ে যাবো আমি। বললাম,
-আসলেই৷ সে ব্যাপারে আমিও নিশ্চিত নই। তবে এটা জানি স্বাগতম বলার মানে যে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে তার একটা পরিপূর্ণ সমাপ্তি হওয়াকে বোঝায়।
-বাহ! নতুন কিছু জানলাম। গল্পটা ভালো লেগেছে।
আমি মনে মনে হাসলাম। বললাম,
-ধন্যবাদ।
সে বলল,
-স্বাগতম। উত্তর দিতে পারবেন না কিন্তু। প্রতিশোধ!
আমি খানিকটা বোকা বনে গেলাম যেন৷ আনমনে হাসলাম। স্বাগতম বলার পর কিছু বলতে হয় না কিংবা বলার থাকে না তা না হয় হলো! কিন্তু তিনি আমার থেকে কিসের প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছেন? একটু আগে 'স্বাগতম' বলে চুপ থাকার? নাকি অন্য কিছু? বললাম,
-এভাবে কাউকে প্রতিশোধ নিতে দেখিনি। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্যরকম একটা প্রতিশোধ।
-আসলেই। সহজ প্রতিশোধ নিয়েছি। ঠিক হয়নি। সুযোগ সমেত কঠিন প্রতিশোধ নিব। হাহাহা।
আমিও হাসলাম খানিক। একা একা রুমে হাসির ছোট্ট শব্দটা মিইয়ে গেল যেন। জানতে চাইলাম,
-কেন? হঠাৎ আমার উপর কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন? কী দোষ আমার?
তার অভিমানী জবাব এলো,
-পুরুনো প্রোপিক টা পাল্টেছেন কেন?ওটাই ভালো ছিল!
প্রোফাইল পিকচার পাল্টানো যে বিশেষ কোনো অপরাধ তা তখনও আমার জানা ছিল না৷ বললাম,
-পাল্টানো কি অপরাধ? এখনকারটা কি ভালো নয়?
সে বলল,
-এখনকারটা দেখিনি। তবে আমি সাইলেন্ট রিডার ছিলাম। লুকিয়ে লুকিয়ে আপনার প্রোফাইলে গিয়ে গল্প পড়তাম। হঠাৎ করে আমার আইডিটা নষ্ট হয়ে যায়। আপনিও হারিয়ে যান। তারপর আবার প্রায় এক বছর পর আপনার পুরনো প্রোপিক টার জন্যেই চিনতে পারি আমি। প্রায় একটা বছর পেরিয়ে গেল। আমি আপনার গল্প পড়ছি না৷ আমি বঞ্চিত হয়েছি। তাহলে এবার বলুন, প্রোপিক পাল্টিয়ে কি আপনি অপরাধ করেন নি?
আমি খানিকটা অবাক হলাম। ইনি অনেক আগ থেকেই আমার গল্প পড়ছেন? আর আজ মেসেজ দিচ্ছেন? কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলাম,
-লুকিয়ে লুকিয়ে আমার গল্প পড়তেন? আরো আগ থেকেই?
-হ্যাঁ৷
আমি বললাম,
-নামটা তো পাল্টাইনি৷ নাম দিয়ে সার্স করলে বুঝি পাওয়া যেত না?
-যেত! তবে চিনতাম কেমন করে? লেখকদের প্রোপিক পাল্টানোর অধিকার দেয়া মানে আমাদের মতো সাইলেন্ট রিডারদের অধিকার কেড়ে নেয়া।
আমার কেমন জানি হাসি পেল। মেয়েটার কেমন জানি বুক ভরা অভিমান৷ আমার প্রোফাইল পিকচার পাল্টানো ঠিক হয়নি৷ পাল্টানোটা কেবল ঠিক নয়, যেন মহা অপরাধ হয়েছে৷ বললাম,
-সজ্ঞানে তো করিনি। সজ্ঞানে করলে না হয় অপরাধ হতো। তা না হলে কি অপরাধ বলে গণ্য হবে?
-যে জ্ঞানেই করেন, অপরাধ তো অপরাধই৷ আরও কিছু লেখক/ লেখিকা আছে। তাদেরও খুঁজে পাইনি। হয়ত প্রোপিক পাল্টেছে।
বললাম,
-তাদের রিকোয়েস্ট দিতেন না কেন?
-ইচ্ছে হয় নি।
অদ্ভুত ব্যাপার তো! গল্প পড়বে অথচ রিকোয়েস্ট দিবে না, আবার হারিয়েও যাওয়া যাবে না, প্রোপিক পাল্টানোও যাবে না, এ যেন জোরাজোরি অবস্থা। বললাম,
-তাহলে তো হারাবেনই! যে ধরে রাখতে জানে না, তার হারানোর সম্ভাবনা প্রবল৷
এখন নিজে ধরে রাখতে না পেরে হারিয়েছেন। সেই দোষ কি আমার?
-বাহ বেশ বলেছেন। তবে কি জানেন প্লাবন সাহেব, আমি হারিয়েই ধরে রাখতে শিখেছি। ভয় থাকে না, প্রতারনা নেই, নেই হাপিত্যেশ করা নিয়ম-কানুন।
-হারিয়ে এমন পাওয়ায় স্বার্থকতা নেই মিস কগন৷ নেই কোনো বিশেষ অনুভূতি। সকল পাওয়া, পাওয়া হয় না। সকল পাওয়াতে আনন্দ হয় না৷
-এ দায় আমার একার? আপনাদের জানা উচিত, কিছু ইন্ট্রোভার্ট মানুষ এ দুনিয়ায় বেঁচে থাকে। যারা লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প পড়বে, মন্তব্য পড়বে, কিন্তু রিকু দিবে না। তাদের পথটা বন্ধ করে নির্দয় হবেন না। লেখকরা থাকবে কোমল। যেন ছুলেই নুয়ে পড়ে। নয়তো অনুভূতির রাজ্য গড়বে কিসে? বলুন ভুল বলেছি?
Bangla Love Stories
বেশ সুন্দর গুছিয়ে কথা বলছে মেয়েটা৷ আমি খানিকটা মুগ্ধ হলাম। কিন্তু তার অভিমানী অন্যায়টা মেনে নিতে তখনও নারাজ৷ দোষটা যেন আমার পক্ষে না হয়। সেই লাড়াইয়ে বললাম,
-না তো! ভুল তো কিছু বলেন নি! তবে দায়টা আপনার একারই। লেখক কি জানতো, কেউ তার গল্প পড়ছে? লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে? রিকু দেওয়ার তো প্রয়োজন নেই৷ তা না হলে ফলো করার অপশান কেন দেওয়া হয়েছে? আপনাদের মতো ইন্ট্রোভার্ট মানুষদের জন্যে অবশ্যই। এখন ইন্ট্রোভার্টদের কথা না জেনে যদি লেখক ভুল করে ফেলে তবে দোষটা কি তার? আর আমি কি যথার্থ কোমলতা প্রকাশ করিনি?
-আপনি কোমলতা প্রকাশ করেছেন হয়তো৷ সকলেই তো করেনি৷ করে না। শুনুন মিস্টার প্লাবন, ঠিক এখানটায় আলাদা যে যার মতন। মেলে না। অমিল বলেই রহস্যরা বেঁচে থাকে। শেষে কিনা খুনি হতে বলছেন?
-না তো! খুনি হতে বলছি না তো! কেবল স্বীকার করতে বলছি৷
-বাহ! রেগে যাচ্ছেন দেখি! আমি কেবল বলেছি...। না থাক, করলাম স্বীকার। দোষ আমারই। লেখকদের সাথে কথায় পারা যাবে না। আমি হার মানলাম।
-আমার কথায় কি রাগ পেয়েছেন? কিন্তু আমি তো তা অনুভব করিনি? কিংবা সেটা উদ্দেশ্যও করিনি।
-হবে হয়তো। আমি গভীরতা বুঝিনি।
-নারী আপনি। অথচ আপনি বলছেন গভীরতা বুঝেন না? কথাটা আপনার মুখে শোভা পেল না। যেখানে আপনাকেই কারো চোখের দিকে তাকিয়ে গভীরের কথাটা বুঝে নিতে হবে!
-হাহাহা। সবাই কি সবটার জন্য? পৃথিবীর সব নিয়ম কী আসলেই সবার জন্যই? তবে কেন প্রকৃতি হুটহাট অনিয়ম শেখায়?
-মানুষ বড্ড অনিয়ম করে যে!
-বুঝেছি৷ কথায় পারবো না আপনার সাথে। হার মানলাম আমি৷ আপনি জিতলেন৷ আপনার কথাই সত্য৷ দোষ আমারই।
আমি হাসলাম। মনে মনে অদ্ভুত এক আনন্দ হতে লাগল। মেয়েদের সাথে কথায় জেতার যে অনবদ্য এক আনন্দ তা ভীষণ টের পেলাম। নিজ থেকেই স্বীকার করলাম যে,
-জানেন! জেতার কী একটা তাড়না ভেতরটাকে অস্থির করে তোলে। যেন মনে হয় মেয়েটা আমার সাথে ভালোই কথা বলছে। তার সাথে কথার প্যাঁচে জিতে বেশ মজা পাওয়া যাবে!
তার নিরুৎসাহিত জবাব পাওয়া গেল। হার জিতে তার মন নেই৷ বলল,
-তাড়নার মারপেচ জানি না। জিততে চাইনি কখনও।
-জিততে না চাওয়াটা বোকামি। চাইতে হবে। আগ্রহটাই বড় ব্যাপার। এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ৷ তবে জিততেই হবে তেমন তো নয়! কিছু হারে আনন্দও মেলে ভীষণ।
-আপনি যে গল্পই ভালো লেখেন তা নয়।কথাও যৌক্তিক আর গোছানো।
আমি এপাশ থেকে হাসলাম। ওপাশের মানুষটি কী করল তা জানা নেই। তবে তার সাথে এমন আলোচনা সত্যিই মহিত করলো৷ যা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি। বললাম,
-ধন্যবাদ দিয়ে কারো প্রতিশোধের ব্যাথাটা জাগাতে চাই না। আর আমি সব কথা যে যৌক্তিক বলি তা নয়৷ আমার মন যা বলে তাই লিখি। গুছানোর চেষ্টা করি।
-হাহাহা। প্রতিশোধের ব্যাথা! ভালো বলেছেন।
-ব্যাথা তো বটেই। কাউকে আমি কিছু অনুভূতি থেকে দূরে রেখেছি। আড়ালে দোষটা যে আমারো!
-অভিযোগ পরায়ন মানুষ আমি। অভিযোগে কষ্ট পাবেন না লেখক। মিথ্যে, মনগড়া অভিযোগগুলো বড়ই ফিকে। মনে, ভাবনায় জায়গা দেয়ার কিছু নেই।
-কিছু মনগড়া, ফিকে অভিযোগ গুলো থেকেই তো সুন্দর সুন্দর মূহুর্তের তৈরী হয়। এই যে! এই কতোক্ষন একটা সাধারণ বিষয়ের উপর এতো দীর্ঘ আলাপন, আপনার কী ভালো লাগেনি? আমার তো বেশ লেগেছে। (নোট)*
-ভালো যে লাগেনি তা নয়। যা লেগেছে তা অপ্রকাশ্য। প্রকাশের ক্ষমতা নেই। একটা আবদার কিংবা অনুরোধ, রাখবেন?
-প্রকাশের ক্ষমতাহীন কারো কথা রাখতে পারলে আমি মনে হয় খুশিই হবো৷
-আপনার ইনবক্স তো সব সময় ভরপুর থাকে মেসেজে তাই না?
-সে কথা কেন আসছে?
-আহা! বলুন না?
-না। ভরপুর থাকে যে তা নয়৷ মাঝে কেউ নক দেয়। আবার মাঝে মাঝে কেউই না৷ কে কাকে মনে রাখে বলুন!
-রাখে অনেকেই। রাখতে জানে। হয়তো আপনি সেটা টের পান না৷
-জগৎ সংসার বড়ই বিচিত্র মিস কগন! কোথায়, কীভাবে, কী হয় বলাই মুশকিল। অনুরোধ ছিল নাকি?
-হ্যাঁ, এই যে এই আলোচনা হলো, দু'পক্ষের ভালো লাগার মাঝামাঝিতেই তো হলো৷ আমি চাই সেটা মাঝে হোক। দু'পক্ষেরই ভালো লাগুক কিছু সময়৷
আমি মনে মনে যেন লোভাতুর হলাম। কিংবা বলা যায় আমিও যেন তাইই চাচ্ছিলাম। এভাবে কথা হলে মন্দ হয়৷ আলোচানায় মজা পাওয়া যায়৷ বললাম,
-আমিও চাই। এমন আলোচনা আরো হোক।
আমার মনে হলো ওপাশের মানুষটা যেন খুশি হয়েছে। সে তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো,
-আপনার অমায়িক ব্যবহার মুগ্ধ করলো।
-আপনার কথার ধারা আমায় আনন্দিত করলো৷ কোত্থেকে শিখেছেন এসব? এতো গুছিয়ে কথা বলতে জানেন কীভাবে?
-তা জেনে লাভ কী! গুছিয়ে কথা বলেও কি আপনার সাথে পেরে উঠেছি?
-পেরে উঠাই স্বার্থকতা নয়৷ কারো হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়াটাই বড় স্বার্থকতা৷
-তা আমি কি আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছি?
আমি হাসলাম। বললাম,
-সে সব বাদ দিন৷ আমরা পরিচয় পর্ব ছাড়াই এতো দীর্ঘ আলোচনা করে ফেললাম৷ আপনার পরিচয়?
-কগন চৌধুরী। পড়াশোনা করছি।
-আমি প্লাবন। প্লাবন আহমেদ৷ আমিও পড়াশোনা করছি৷ তা কিসে পড়া হচ্ছে?
-অনার্স থার্ড ইয়ার। ইংরেজি সাহিত্য৷ আপনি?
-আমিও অনার্স থার্ড ইয়ার৷ তবে বিষয় ভিন্ন৷ আমি ক্যামিস্ট্রি নিয়ে পড়ছি।
-বেশ তো।
আমি হাসির ইমুজ দিলাম। বললাম,
-তাহলে আজকের জন্যে এখানেই সমাপ্ত হোক? নাকি?
কথাটা বলে আমার মনে হলো এটা বলা ঠিক হয়নি৷ মেয়েটা আরো কিছুক্ষণ থাকতো৷ আমরা আরো আলোচনা করতাম। উদ্ভট সব বিষয় নিয়ে কথা বলতাম। হার-জিতের হিসেব হোতো দুজনের মাঝে। মেয়েটা বলল,
-আচ্ছা৷ আজ এখানেই সমাপ্ত। আল্লাহ হাফেজ।
-আল্লাহ হাফেজ৷
আমি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কেবল। কেন জানি ওখানে থেকে বের হতেই মন চাইলো না। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হলো আমার। যা আর কখনই হয়নি।
গল্পঃ কগন
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়