গল্পঃ ভূতেদের ভূত - দ্বিতীয় পর্ব । লেখক - তাসফি আহমেদ
গল্পঃ ভূতেদের ভূত - দ্বিতীয় পর্ব । লেখক - তাসফি আহমেদ
গল্পঃ ভূতেদের ভূত
(দ্বিতীয় পর্ব)
তাসফি আহমেদ
-চোখাচোখির যুদ্ধে তুমি আমার সাথে পারবে না৷ এটা আমার একটা বিশেষ দক্ষতা৷
এই বলে তুষার হাসল। বলল,
-অনেক ট্র্যাজিডি হয়ে গেছে এ যাবত। চলো কিছুটা হাসিতামাশা করা হোক৷ আচ্ছা, তুমি কি যাদু দেখতে পছন্দ করবে?
নেহা যেন আরেকটু রেগে গেল৷ হঠাৎ খুব ভয়ংকর ভাবে তাকালো সে। চোখ দুটো যেন সরু হয়ে এলো৷ মুখটা যেন চট করেই লাল হয়ে গেল। তা দেখে তুষার বলল,
-অপ্স! রেগে যাচ্ছো দেখছি! শুনো, রাগ করতে নেই। যে রাগ করে সে হারে৷ তাকে অনেক কিছুই মিস করতে হয়৷ এই যেমন এখন যদি তুমি রাগ করো তাহলে তোমাকে আমার যাদুটা মিস করতে হবে৷ বুঝেছো? রাগ করো না৷ চলো, যাদুটা শুরু করা যাক।
এই বলে তুষার হাসল খানিক। নেহা যেন কিছুটা এগিয়ে এলো৷ মেয়েটা যেন রেগে যাচ্ছে। কিংবা তুষারকে তার পছন্দ হচ্ছে না৷ তুষার সেদিকে আর ধ্যান দিলো না৷ সে মাথার হ্যাটটা নামিয়ে নেহার দিকে ফেরালো। বলল,
-দেখো! ভেতরটা একদম খালি!
নেহা আরেকটু এগিয়ে এলো৷ তুষার হ্যাটটি বিছানার উপরে রেখে মনে মনে কিছু পড়তে থাকলো। দু'হাত নাড়িয়ে কিছু একটা করলো যেন৷ তারপর হঠাৎই ও হ্যাটটি একটা রুমাল দিয়ে ঢেকে নিলো৷ আবার যেন কিছু একটা পড়লো মনে মনে৷ এরপর ধীরে ধীরে রুমলটা সরিয়ে নিলো এবং হ্যাটটি নিজের কাছে টেনে নিলো৷ নেহার দিকে ফিরে তাকালো একবার৷ সে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে তুষারের দিকে। তুষার চোখ সরিয়ে নিল। হ্যাটটির ভেতরে হাত দিয়ে একটু পেঁচা নিয়ে এলো সে। একদম ভিন্ন রকম দেখতে পেঁচাটা। এমন পেঁচা যে পৃথিবীতে আছে তা এই পেঁচাটাকে না দেখলে বুঝা যেত না। তার চেহারাটাও কেমন জানি ভয়ংকর ধরনের। পেঁচাটাকে দেখতেই চেঁচিয়ে উঠল নেহা৷ দু'হাত মুখ দিয়ে ঢেকে সে চিৎকার করতে থাকলো। তুষার পেঁচাটাকে নিজের কাঁধে রেখে বলল,
-এই? নেহা? ভয় পাচ্ছো কেন? এটা তো একটা সাধারণ পেঁচা। এটাকে ভয় পাওয়ার কী আছে?
নেহা চিৎকার করতেই থাকল। তুষার বলল,
-এবার কিন্তু আমাকে অপমান করছো তুমি! কোথায় এতো দারুণ একটা যাদু দেখালাম বলে তুমি আমাকে বাহবা দিবে, তা না করে দিচ্ছো চিৎকার। এটা একদমই শোভনীয় নয় ম্লোরা!
নেহা হঠাৎই চুপ করে গেল। হঠাৎ চিৎকার থেকে চুপ! অবাক হয়ে তাকালো তুষারের দিকে৷ এই প্রথম নেহার চেহারায় স্পষ্ট বিস্ময় ও অবাকের ছাপ দেখা গেল৷ সে হঠাৎ ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলল,
-তুমি আমার নাম জানলে কী করে?
স্বরটা মেয়েলি। কিন্তু নেহার নয় যেন৷ কিংবা বলতে গেলে দুটো স্বর মেশানো। তুষার হঠাৎ যাদু দিয়ে পেঁচাটাকে লুকিয়ে ফেলল। বলল,
-ভয় পেয়ো না। পেঁচাটা নেই৷
এই বলে তুষার খানিকটা এগিয়ে গেল নেহার তথা ম্লোরার দিকে। চলুন এখন থেকে তাকে ম্লোরাই ধরা যাক৷ যদিও শরীরটা নেহার৷ তুষার দু'কদম এগিয়ে গিয়ে বলল,
-ভয় পেয়ো না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি। প্লীজ, আমাকে সেই সুযোগটা দাও৷
ম্লোরা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ মাথার দু'পাশের চুল গুলো মুখের সামনে পড়ে আছে। ম্লোরা যেন কান্না করছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ভেঙ্গে পড়ছে সে৷ তুষার আরেকটু কাছে গেল। এরপর আরেকটু। ম্লোরার একদম কাছে চলে গেল ও। ওর কাঁধে হাত দিবে ঠিক তখনই ম্লোরা তুষারের গলাটা চেপে ধরল। চোখ-মুখ শক্ত করে তাকালো ওর দিকে৷ লাল লাল চোখ দুটো যেন খুনের নেশার উন্মাদ হয়ে আছে। ম্লোরা তুষারের গলা চেপে ধরে ওকে শূন্য তুলে ধরল। তা দেখে আঁৎকে উঠল আরমান সাহেব। তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। ম্লোরা তুষারকে দেয়ালের সাথে পিশে ধরলো। রাগী স্বরে বলল,
-আমার নাম ম্লোরা তা তোকে বলল কে? আর এখানে কেন এসেছিস তুই? এই মেয়েকে বাঁচাতি? তোর কি মনে হয়? তুই ওকে বাঁচাতে পারবি? এতো সহজ? আমার প্রভুর সামনে তো তুই কিছুই না৷ ছাইয়ের মতো!
তুষারের দম আঁটকের যাওয়ার মতো অবস্থা। ও কোনো মতে বলল,
-তোদের এই এক সমস্যা! প্রভুর ভক্ত। আর সোজা কথা বুঝিস না।
এই বলে চট করেই হাতের তুড়ি বাজালো। অমনি কোত্থেকে যেন ওই পেঁচাটা উড়ে এলো। ম্লোরা চট করেই তুষারকে ছেড়ে দিলো৷ এক কোণে গিয়ে লুকিয়ে পড়ার মতো পড়ে থাকলো। চোখমুখময় ভয়ের ছাপ। তুষার নিজেকে সামলে নিলো৷ দ্রুত শ্বাস নিতে থাকলো সে। আরমান সাহেব এগিয়ে আসতে চাইলেন৷ তুষার বলল,
-আপনার এদিকে আসার দরকার নেই৷ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখেন; সাদা একটা দাগ আছে। এই দাগের ভেতরে আসবেন না প্লীজ!
আরমান সাহেব নিচের দিকে তাকাতেই দেখলেন সেখানে সত্যি সত্যি একটা দাগ দেওয়া আছে। তিনি অবাক হয়ে তাকালেন। আশ্চর্য! এই দাগ কোত্থেকে এলো?
.
তুষার আবার পেঁচাটাকে লুকিয়ে ফেললো। তবে তার আগে সে পেঁচার শরীর থেকে একটা পালক ছিড়ে নিলো। সেটা নিয়েই এগিয়ে গেল ম্লোরার দিকে। ম্লোরা যেন ধীরে ধীরে জড়সড় হয়ে বসতে থাকল৷ দু'হাঁটু ভাঁজ করে কোলের ভেতর মাথাটাকে লুকিয়ে রেখেছে৷ তুষার ম্লোরার সামনে বসে বলল,
-তোমাদের চির শত্রু এই পেঁচা গুলো। সেটা তুমি নিশ্চয়ই জানো। তোমরা এগুলোর ছায়াও পছন্দ করতে পারো না। কেন বলতো?
ম্লোরা কোনো কথা বলল না। সে মাথা নিচু করে গোঁ গোঁ করতে থাকল। তুষার আর কিছু বলল না৷ ম্লোরার এক হাত টেনে নিলো সে। ম্লোরা সেটাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। তুষার পেঁচার পালকটিকে ম্লোরার বাম হাতের অনামিকা ও মধ্যমা আঙ্গুলের ভাঁজে চেপে ধরলো৷ চেপে ধরতেই চেঁচিয়ে উঠল ম্লোরা। তার সে কী চিৎকার। জোরে জোরে বলতে থাকলো,
-ক্ষমা করো প্রভু। ক্ষমা করো। আর কখনই এমন করবো না৷
তুষার খানিকটা হেসে বলল,
-যারাই তোদের আয়ত্ত্বে আনতে পারে তাদেরই তোরা প্রভু বানিয়ে ফেলিস! এটা তো বাজে অভ্যাস৷ গোলামির স্বভাব ছাড়বি না?
ম্লোরা চেঁচিয়ে বলল,
-ছাড়বো। ছাড়বো। আপনি যা বলবেন তা-ই শুনবো৷ কেবল দয়া করে এই পালকটিকে আমার আঙ্গুলের ভাঁজ থেকে সরিয়ে নিন৷
তুষার মৃদু হাসলো। বলল,
-তোদের বিশ্বাস নেই। বিশ্বাসঘাতকতায় তোরা সেরা। তোদের দামুডি গোত্রের সর্বপ্রথম অস্র হচ্ছে তোরা বিশ্বাসঘাতকতা করিস৷ কথা দিয়ে কথা রাখিস না৷
-ক্ষমা করুন। ওটা আমার গোত্রের স্বভাব। এতটুকু যেহেতু জানেন তবে এও জানবেন যে আমাদের গোত্র এই পেঁচা গুলোকে কেমন ভয় পায়৷ আপনি দয়া করে আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন। একটু দয়া করুন।
তুষার ম্লোরার কথায় কান দিলো না৷ সে পকেট থেকে একটা ছোট্ট সুতা নিয়ে ম্লোরার আঙ্গুলের মাঝে পালকটা বেঁধে দিলো। বলল,
-চিন্তা করিস না। এখন তুই ব্যাথা কম পাবি। আমি ছেড়ে দিলাম।
এই বলে তুষার ম্লোরার হাত ছেড়ে দিলো। ছাড়তেই ম্লোরা আবার তুষারের গলা চেপে ধরতে চাইলো। কিন্তু তুষারের দিকে হাত বাড়াতেই তার বাঁম হাতের বাঁধটা চেপে বসলো যেন। ওমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠলো। তুষার শব্দ করে হাসলো। বলল,
-আমি জানতাম তুমি এমনই করবি। কারণ তোদের রন্দ্রে রন্দ্রে বিশ্বাসঘাতকতা ঘুরে বেড়ায়। এ জন্যেই তো সুতো বাঁধলাম। এটা যেনতেন সুতো নয়! কিংবা এটাকে সাধারণ একটা বাঁধ ভেবে ভুল করিস না৷ এটা খুবই মারাত্মক একটা বাঁধ।
ম্লোরা অসহায়ের মতো পড়ে থাকলো। তুষার বলল,
-তোকে যে প্রভু এখানে পাঠিয়েছে সে হয়তো জানে না তার ঝম এখানে চলে এসেছে। সে হয়তো এ'ও জানে না যে ভূতেদেরও ভূত থাকে। দেখি তোর প্রভুকে দেখতে দে তো!
এই বলে তুষার ম্লোরার দু'হাত চেপে ধরলো। তারপর চট করেই চোখ বন্ধ করে নিল। ম্লোরাও নিজের চোখ বন্ধ করে নিলো। আরমান সাহেব কেবল দেখে গেলেন৷ তার চেহারায় চিন্তা এবং ভয় দুটোই মিশে আছে। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো পার হলো। হঠাৎই তুষার চোখ খুলল৷ ম্লোরার হাত ছেড়ে মেঝেতে বসে পড়লো সে। চেহারায় তার আতঙ্কের ছাপ। আরমান সাহেব বললেন,
-কী হয়েছে বাবা!
তুষার জবাব দিলো না। সে ম্লোরার দিকে তাকালো৷ বলল,
-তোমাকে যে ভেতরে বেঁধে রাখা হয়েছে তা আমি জানতাম না৷ দুঃখিত৷ আমি পেঁচার পালকটা খুলে নিচ্ছি। তবে তোমাকে কথা দিতে হবে তুমি একদম বাড়াবাড়ি করবে না৷ নেহার শরীরের ভেতর চুপচাপ লুকিয়ে থাকবে৷ তোমাকে এখান থেকে বাঁচানোর একটা উপায় আমার কাছে আছে৷ যদি তুমি নেহার আর কোনো ক্ষতি না করো তবে আমি তোমাকে সাহায্য করবো।
ম্লোরা কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো তুষারের দিকে তারপর হঠাৎই নেহার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো সে৷
.
চলবে...
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়