গল্পঃ অচেনা শহর। লেখকঃ তাসফি আহমেদ

গল্পঃ অচেনা শহর।

তাসফি আহমেদ


মোবাইলের চার্জ পনেরো শেষ হয়ে চৌদ্দতে এসেছে। ডাটা কানেকশন এর পরির্বতন হচ্ছে। কিছুক্ষন h+, তো কিছুক্ষন e। মাঝে মাঝে নেট কানেকশন এ সমস্যা দেখা দেয়।গ্রাম তো তাই।সমস্যা টার কারনে কতই না কথা শুনতে হয়েছিল তাসফি কে। সে না হয় বাধই দিলাম। হাজারো সমস্যা উপেক্ষা করে করে চলতে থাকে তাদের কথফোকথন।এরকম দু-চারটে বাধা আসবেই। বেপার না।গ্রামের ছেলে তাসফি। যথেষ্ট প্রভাব আছে তার গ্রামে।যার সাথে কথা বলছে তার নাম রিহা জান্নাত। থাকে ঢাকাতেই।তাসফির সাথে ফেবুতেই পরিচয় হয়।এক সময় ভালো বন্ধুত্ব হয় ওদের মাঝে। তার পর প্রনয়।কিন্তু সামনাসামনি কেউ কাউকে দেখে নি।দু'জনেই একি সাথে পড়ে।খুব মিল পাওয়া যায় তাদের চিন্তাধারার মধ্যে। মানষিকতাও এক।ভিন্নতা হল গ্রাম আর শহর। প্রথমে তাসফির অমত ছিল।মানিয়ে নিতে পারবে না।শহরের মেয়ে বলে কথা।কিন্ত তা ভুল প্রমাণ করে বলল
"শুন আমিও গ্রামে থেকে এসেছি।এমনকি গ্রামের পরিবেশ আমার যথেষ্ট ভােলা লাগে।পড়ালিখার জন্যেই তো এই অচেনা শহরে পাড়ি দেওয়া। "
তারপরেও আবেগ বলে চালিয়ে দিতে চাইছিল তাসফি। কিন্তু হার মনতে হয়েছে ওকে। তাসফি এবার HSC এক্সাম দিয়েছে। ওর ইচ্ছা অনার্স টা ঢাকাতেই শেষ করবে। এমনটাই পরিবার কে বলেছে। মুল উদ্দেশ্য হল রিহা।পরিক্ষার পরে তো কথাবার্তা বেড়েই চলল।সাথে ভার্সিটি ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি। ভালোই যাচ্ছে দিনকাল। তাসফি রিহা কে বলেনি যে ঢাকাতে এডমিট হবে।সারপ্রাইজ হিসেবে বন্দক রেখে দিল।দুজনের মাঝে এই জিনিসটা খুব ভালো যে "আর যাই করি না কেন পড়ালিখার ক্ষতি কেউ করব না।"
রেজাল্ট দেওয়ার পর দুজনেই খুব খুশি। বাঁধ ভাংগা আনন্দ। ভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষার দিল ঠিকি কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত দুজনের কলেজ ভিন্ন।(আচ্ছা আমি কলেজ টাই বলি।ভার্সিটি বলতে ভয় হয়।) সারপ্রাইজটা আর দেওয়া হল না।
মেয়েটার ইচ্ছা হল দুজনে যেদিন দেখা করবে সেদিন খুব বৃষ্টি হবে।কদম ফুল হাতে দেখা করবে ছেলেটি।আর ভিজবে। মেয়েটা দেখার পর জড়িয়ে ধরবে। কিন্ত তা কি আজো হবে? ছেলেটির ভাবনা এটাই।তাসফি যে ঢাকা এটা রিহা জানে না।তাসফির মান টা খারাপ একই কলেজে ভর্তি হতে পারেনি বলে।আর মেয়েটার মন খারাপ দেখা হয় নি বলে।
'
'
আকাশে খুব মেঘ ধরেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি টা ভালো করেই আসবে। তাসফি কিছু একটা ভেবে ফুল এর দোকানে গেল।কিন্তু কাংক্ষিত জিনিস টা পেল।হ্যাঁ ওটা কদম ফুল।ওটা পেতে হলে কিছুটা না অনেক টাই বেগ পেতে হবে। পাবে কি না তারও গেরান্টি নেই।এদিকে বৃষ্টি অনুকুলে।তাই শিউলি ফুলটাই বেছে নিল।শিউলি নাকি ওর খুব পছন্দের।ফোন দিল রিহা কে।
:কই তুমি,,,?
:কি বেপার আজ হায় হ্যালো বাদেই ডিরেক্ট প্রশ্ন?
:আহা বল না কই তুমি,,,?
:আচ্ছা তুমি কি জানো না আমি এখন কোথায় থাকার কথা,,,,?
:কোথায়,,,,,?
:আরে গাধা আমি কলেজে।এটাও বুঝ না,,,?
:অহ শিট।আমি আসলেই একটা গাধা। কিন্তু তুমি ফোন ধরলা কি ভাবে,,,,?
:জানোই তো বৃষ্টি আমার পছন্দের। তাই ক্লাস টা ফাঁকি দিয়েছি।
(তাসফি কথা বলছে আর ওর ভার্সিটি র দিকেই যাচ্ছে।)
:হুম তা তো জানি,,,,,
:কি কর তুমি,,?
:কিছুনা ফোনটা রাখি।বাই।
এই বলে ফোনটা কেটে দিল তাসফি। সারপ্রাইজ তো,একটু আকর্ষণী হতে হবে না।এদিকে রিহা ফোন দিয়েছে।ও হয়তো খুব অবাক হয়েছে। তাই ফোন দিচ্ছে। হয়তো মনের ভিতর অজানা ভয় জাগ্রত হয়েছে। এই তো আবার ফোন দিচ্ছে। একি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কি করি এখন???? ধুর ভিজে ভিজেই যাই।যা হবার হোক।
"
"
রিহার কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে তাসফি। স্বয়ং খোদাও হয়তো আমাদের উপর খুশি। তাইতো বৃষ্টি শেষ হয়ে আবার শুরু হল।কলেজের গেইট এর দিকে তাকিয়ে খানিকটা অবাক হয়েছে তাসফি। আরে এ তো রিহা।বৃষ্টি দেখে মনে হয় লোভ সামলাতে পারে নি তাই ভিজছে। আর না হয় ফোন না ধরার করনে আমার উপর রেগে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এই কারন টাই যথার্থ বলে আমি মনে করি।কারন কত বার যে ফোন দিছে হিসেবে নেই।আমার স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকা দেখে ও একেবারেই স্তব্ধ হয় গেল।মনে হয় জিবনে এই প্রথম এতটা অবাক হয়েছে। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের মাঝে দুরত্ব বোধ হয় পনেরো হতে বিশ হাত হবে।নাহ রিহা আর দাড়িয়ে থাকতে পারল না।ব্যাগ টা পড়ে গেল হাত থেকে।চোখের জলসমুদ্র থেকে সামান্য হতে ক্রমান্বয়ে আজোর ধারায় পানির বর্ষন শুরু হতে লাগলো।বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি মিলে একাকার। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলল। আহ সে হৃদয় পাগল করানো হাঁসি।হৃদয় এ জড় উঠে এই হাসি দেখলে। হাত দু'টো প্রসারিত করল তাসফি। দোড়ে আসছে রিহা।হঠাৎ মনে হল আমি স্বপ্ন দেখছি না তো।কারন এমন স্বপ্ন আমি মাঝে মাঝেই দেখি।হাতে কি চিমটি দিয়ে দেখব? হঠাৎ মনে হল আমার বুকের উপর কিছু একটা পড়েছে। পরক্ষনে হ্যাঁ পাগলি পড়েছে আমার বুকে। তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছি না।ইয়াহহু।
জড়িয়ে ধরলাম পাগলি টা কে।কিন্তু আমার থেকে শক্ত করে ধরল রিহা। আজিব তাই না।এই জড়িয়ে ধরার ভালোবাসা অনুভূত হয়। খুব ভাল লাগে।ওহ কি শান্তিই না বিদ্যমান এই জড়িয়ে ধরার মাঝে।কিন্তু ও কান্না করতেছে কেন,,,?
:এই কান্না করতেছ কেন,,,?
:চুপ শয়তান ছেলে। একটা কথাও বলবা না।
ও আমার বুকের সাথে লেপ্টে আছে।চুল গুলো ভেজা।কিন্তু গ্রান টা এখনো যায় নি।মন মুগ্ধকর সেই গ্রান।,,,,
না এভাবে আর থাকা যাবে না।বৃষ্টি গুলো আস্তে আস্তে পড়ছে। বিদায় নিচ্ছে আর বলছে "যাই বস। আমি আসছি তোমাদের জন্যে। আমার কাজ শেষ। ভালো থেক " আমার মনে হয় এমন টাই বলছে। আর থাকা যাবে না এভাবে। লোকালয় এর বৃদ্ধি টা শুরু হচ্ছে।
:এই ছাড়। মানুষ জন দেখছে তো।
:না ছাড়ব না।
:কেন?
:তুমি চলে যাবা।
:নাহ আমি যাব না।ছাড় লোকজন দেখবে।
ও আমার হাত ধরে টানা শুরু করল। টানছে তো টানছেই।আর আমি বোকার মত ওর দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুদুর যাওয়ার পর একটা রিক্সা নিল।এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে রিক্সায় উঠলাম। তাই কিছুটা সংকোচ বোধ করছি। আমার সংকোচ টা দুর করে ও আমার এক হাতে নিজের পাঁচ আংগুল আমার পাঁচ আংগুল এর মাঝে রেখে খুব শক্ত করে ধরল। আরেক হাত দিয়ে বোগল নিচে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।আমি খানিকটা অবাক হচ্ছি যে এই আমাকে এত ভালবাসে।এখানে না আসলে তো বিশ্বাসই হত না।মেয়েদের এই জিনিস টা খুব ভালো।যাকে ভালোবাসবে তাকে মন প্রান উজাড় করে ভালোবাসবে।।
""
""
রিকশাটা একটা পার্ক এর সামনে থামল। আমাকে টেনে ভিতরে ঢুকাল।একটা বেঞ্চি তে বসল। তারপর আবার জড়িয়ে ধরল। আল্লাহ আমি এত ভালবাসা কই রাখি।আমি ওর দিকে তাকালাম। চোখ দুইটা বন্ধ করে আমার বুকে মাথা রেখে আছে।আমারওও খারাপ লাগছে না।
:তুমি আসলেই একটা শয়তান।
হঠাৎ করে ও বলে উঠল।
:আমি আবার কি করলাম
:তুমি আসবা আমাকে বলবা না,,,
::বললে তো আর এই মুহূর্ত টা আসত না।তোমার হাসিটা দেখতাম না।
:তাই বলে এত বড় সারপ্রাইজ!!!
:হুম।শুধু তোমার জন্যে।
:হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি আমার ফোন কেটে দিলা কেন,,,,,?
:এইযে এই এই সারপ্রাইজ টার জন্যে।
:তাই বলে এমন করবা,,,,?জানো আমি কত কষ্ট পেয়েছি। রাগি, অভিমানে আমি বাড়িতে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্ত তোমাকে দেখে কোথায় যে আমার রাগ আর অভিমান চলে গেল।জানো এত বড় সারপ্রাইজ আমি আর কখন পাই নি।
:আরো একটা সারপ্রাইজ আছে,
:কি????
:আমি এখন থেকে তোমার পাশেই থাকব।
:সত্যি!!!!
:হুম।পিউর সত্যি।
:জানো আমি কতদিন এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলাম। যাক বাবা তুমি এখনে এসেছ এতেই আমি খুব খুশি।
:আচ্ছা এবার ছাড়। আর কতক্ষণ ধরে রাখবা,,,?
:সারা জিবন এভাবে ধরে রাখব।কোন সমস্যা?
:নাহ সমস্যা হবে কেন?? তোমারি তো সব।তুমি ছাড়া আর কে আছে বল যে এভাবে জড়িয়ে ধরবে।।। তুমিই তো আমার সব।
:হুম মনে থাকে যেন।আর আজ থেকে প্রতিদিন আমার সাথে দেখা করবা।কোন গিপ্ট লাগবে না আমার।তুমি আসাটাই আমার বড় গিপ্ট।
:হুম আচ্ছা ঠিক আছে।
ও গিপ্ট নিতে বারণ করেছিল।কিন্তু আমি মাঝে মাঝে নিতাম। ও রাগ করত আর আমি ওর রাগ ভাংগাতে ব্যাস্ত হয়ে যেতাম।রিহাও আমাকে গিপ্ট দিত।আমি নিতাম না।কিন্তু ও কথা নিতেই হবে।দুষ্টুমি, ভালোবাসায় ভরা কিল ঘুসি, শেয়ারিং, কেয়ারিং,সামান্য রাগা-রাগি,অতঃপর রাগ ভাংগানো এর মাঝেই আমাদের ভালোবাসার পথ চলতে থাকে।
ওর একটা জিনিস আমাকে খুব আকর্ষিত করত।কান্না করলে বা রাগ করলে ওর নাকের সামনের দিকটা লাল হয়ে যেত।কি যে ভালো লাগত তখন। এই ভালো লাগা যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত তাহলে এত দিনে হাজারো উপন্যাস রচিত হত।
"""
""'
পড়ালিখা শেষ করে চাকরি করি এখন। রিহাকে ঘরের বউ হিসেবে মা-বাবাও কোন দ্বিমত পোষন করে নি।আমি জানি বাবা একটু সমস্যা করবে। তবে সে দিক সামলাতে মা তো আছেই।পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়।খুব সুখেই ছিলাম।আল্লাহর বুঝি আমাদের এত সুখ পছন্দ হয় নি।"আমি এত সুখে কাউকে রাখি নি।বেশি সুখ ভাল না।" আমার মনে হয় আল্লাহ এমনটাই বলছে। তাই তো আজ আমার এত বিপদ। এই বলেই কান্নায় ভাংগে পড়ল তাসফি। সে কি কান্না।কারো সাধ্যি নেই যে এ কান্না থামাবে। কখন যে আমিও কান্না করে দিয়েছি বুঝতেই পারি নি।খুব আবেগ প্রবণ আমি তাই।আমি আরাফাত রাফি।আর এতক্ষণ আমি তাসফি ভাইয়ার কাছ থেকে গল্প টা শুনতেছিলাম।ভাইয়
া আসলেই রিহা আপু কে খুব ভালবাসে।যা আমি এখন বুঝতে পেরেছি। আসলে আজ সকালে আমি কলেজ যাচ্ছিলাম। আমি এবার ঢাবি তে পড়ি।আমারা একি বাসাতে থাকি।ভাইয়া আর আপু আমাকে খুব ভাল জানে।আপু আজ কি কাজে জানি আমাদের কলেজে যাচ্ছিল। তাই আমি আর আপু এক সাথেই যাচ্ছিলাম।ভাইয়াও ছিল আমাদের সাথে। কিন্তু ভাইয়ার অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়।তাই উনি ওই রাস্তা দিয়ে চলে গেলেন। আমি আর আপু যাচ্ছিলাম। আপু বলল
:রাফি তুমি কলেজের গাড়ি করে যাবে,,,,?
:না আপু আসলে তানহা দাড়িয়ে আছে তো তাই,,,,
:হুম বুঝেছি।আচ্ছা তুমি যাও আমি কলেজের গাড়িতে করে যাব।
:আচ্ছা আপু যাই।সাবধানে যাবেন।
:হি হি হি।আচ্ছা ঠিক আছে।আমি কিছুদুর যাওয়ার পর কোন মেয়ের চিৎকার শুনলাম।পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম রিহা আপুর গায়ের উপর দিয়ে সি,এন,জি
টা চলে গেল।আমি চিৎকার করে দোড় দিলাম।রিহা আপু সেন্সলেস হয় গেছে।আমার মাথায় যে আকাশ ভেংগে পড়ল।কিছুক্ষন পূর্বে আমি উনার সাথেই ছিলাম।ভাইয়াকে ফোন দিলাম।তানহা কে ফোন দিলাম। ভাইয়া তো পুরা পাগলের মত হয়ে গেছে।পুরা পাগল।আজ যদি না থাকতাম তা হলে ভাইয়া যে রিহা আপুকে এত ভালবাসে।(এক্সিডেন্ট এর কথা টা পুরা বললাম না।ওটা যেদিন শুনলাম অজান্তেই কান্না করে দিয়েছি। এমনকি যিনি বলেছে তার চোখেও আমি স্পষ্ট পানি দেখিছি।তাই আর মনে করতে চাই না।)।উনাকে হাসপাতাল আনার পর ডাক্তার বলল অবস্থা খুব খারাপ।অনেক গুলা টেষ্ট দিচিল।ওগুলার রিপট এর জন্যে বসে আছি।কিছুক্ষন পর ডাক্তার তার কেবিনে ডাক দিলেন। ভয়ে ভয়ে আমি আর ভাইয়া ডাক্তার এর কেবিনে গেলাম।ডাক্তার বলল
:আপনাদের দুইটা খবর আছে। একটা সুখবর আরেক টা দুঃসংবাদ বাদ।কোন টা আগে শুনবেন? ভাইয়া কেমন যানি হয়ে গেছে। আমার সাথে আমার সাথে আসতে না করেছিলাম।কে শুনে কার কথা। ভাইয়া কিছুবলছে না দেখে আমি বললাম
:সুখবর টা আগে বলেন।
:সুখবর টা হল উনার কোমরে,হাতে আর কাঁধের হাড় ভেংগে গেছে। কিন্তু হাড় গুলো এমন ভাবে আছে যে ব্যান্ডেজ করলে খুব সহজেই জোড়া লেগে যাবে।
:আর,,,,,,,,
:দুঃসংবাদ টা হল উনার কিডনি তে ব্লাড লাগে গেছে।আর এতে কিডনি দুইটা নষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। আর এ খেত্রে উনার বাঁচার চান্স টা মাত্র ১ %।আর আমরা এখানে সি চিকিৎসাটা এখানে দিতে পারব না।সরি।
আমি আর ভাইয়া স্তব্ধ হয়ে গেলাম।বরফ জমার মত আমরাও জমে গেলাম।
ভাইয়া কান্না করতে করতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। এই প্রথম উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন। উনার শরির থেকে একটা সেন্ট এর গ্রান আসতেছে।হ্যাঁ এই গ্রানটা আমি আগেও পেয়েছিলাম।রিহা আপুর সেন্ট এর গ্রান আমিও কান্না করে দিলাম।
""""
""""
ওই হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিলাম। তারাও নিল না।পরে DMC টে আসলাম। কেবিন পেতে একটু বেগ হল।এত রাতে ওরা নিতে চাচ্ছিল না।তাই আমার ফ্রেন্ড দের ফোন দিলাম।রাজনিতিক চক্কর। ।উন্নত মানের একটা কেবিন।পাবলিক শিট থেকে এখন প্রাইভেট সিট দিতে হয়েছে।আসলে সব কেবিন মানুষএ ফিল আপ।তাই অন্য কাউকে তার কেবিন ছাড়তে হয়েছিল।যাদের কেবিন ছাড়তে হয়েছিল তাদের কে একটু শান্তনা দেওয়া দরকার। তাই গেলাম।ওদের কে সব বুঝিয়ে বললাম। এদের তেমন সমস্যা নেই কাল পরশুর মধ্যেই রিলিজ নিতো তারা।কিন্ত আমাদের কারনে আজ যেতে হচ্ছে আর কি।
রাফি রাফি বলতে ভাইয়া আসছে। আমি বললাম
:জি ভাইয়া।
ভাইয়ার মুখে হাসির রেখা দেখলাম।
:কি হয়েছে ভাইয়া?
:ডাক্তার বলল আজ রাতের ভিতরে অপারেশন না করলে উনি হয়ত মারা যাবেন। এখন অপারেশন করলে বাঁচার সম্ভাবনা টা বেশি থাকবে।
আমি আল্লাহ এর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।
"""""
"""""
রাতেই অপারেশন শুরু হয়। আমি আর ভাইয়া চিলাম। ভাইয়ার মা বাবা দুজনেই অসুস্থ। তাই তার কিছুক্ষন আগেই চলে গেছে।ভাইয়া আমাকেও যেতে বলল।কিন্তু ভাইয়া কে একা রেখে যাওয়া টা ঠিক হবে না।তাই যাই নি। তানহা!!!!! ওর কথা মনে পড়তেই ফোনটা হাতে নিলাম। কিন্তু ফোনে চার্জ না থাকার কারনে ওটা বন্ধ হয়ে যায়।কি আর করার।মাকে আগেই বলে দিয়েছি। তাই সে দিক হতে নিশ্চিত। সমস্যা হল তানহা কে নিয়ে।কি যে করি। মেয়েটাও পাগল টাইপের।কখন কি করে ফেলে তার ঠিক নেই।চিন্তা টা আমাকে গ্রাস করে নিয়েছে।
"
"(বাকিটা তাসফি ভাইয়া বলবে) "
সে কখন থেকে বসে আছি।খাওয়া দাওয়া নামছে না মুখ দিয়ে।ভাগ্যিস রাফি ছিল পাশে। ওকে আমি নিজের ভাই এর মতন দেখি।ওর কোন ভাই বোন নেই।তাই মাঝে মাঝে আমাদের সাথে গল্প করে।ও হ্যাঁ ওর আবার গফ ও আছে। তানহা। খুব ভাল একটা মেয়ে।রাফি আমাকে ভাইয়া ডাকে। আর রিহা কে ভাবি। রিহার কথা মনে পড়তেই মন টা খারাপ হয়ে গেল।ওর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।ডাক্তার বলল কিডনিতে যে রক্ত লাগেছে ওটা ওয়াস করতে হবে।রক্ত টা ভালো ভাবে ক্ষতি করতে পারে নি।তবে অপারেশন টা দেরিতে করলে হয়ত আর,,,,,,,,,,,
নিজের অজান্তেই কান্না শুরু করে দেয় তাসফি। রাফি শান্তনা দেয় শুধু।
বেশ কিছুক্ষন পর ডাক্তার অপারেশন রুম হতে বের হয়।ডাক্তারের মুখে বিষন্ন তার চাপ।যেন আষাঢ়ের মেঘেলা আকাশ।
ডাক্তারের এই রুপ দেখা মাত্রই তাসফি আর রাফির বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠল। ডাক্তার যতই এগিয়ে আসছে ততই ভায়টা ক্ষিন হয়ে আসছে। ওদের স্তব্ধতা দেখে ডাক্তার কাছে এসেই হেসে উঠলেন।
:তাসফি সাহেব,,,, অপারেশন সাক্সেস ফুল।আপনার ওয়াইফ এখন অউট অফ ডেইঞ্জার।
মুহূর্তেই স্তব্ধতা ভেংগে আবেগ এর বসে ডাক্তার কে জড়িয়ে ধরল।শুরু হল বাঁধ ভাংগা কান্না। ডাক্তার ওকে ছেড়ে বলল
:এখন বাকি কাজ টা আপনার।বরাবর তিন মাস উনাকে শুয়ে থাকতে হবে।আপনি না খুব ভাগ্যবান।হাড় গুলো এমন ভাবে ভেংগেছে যে ভাল ভাবে জোড়া লেগে যাবে।আসা করি আপনার কেয়ার পেলে উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।বাকি আল্লাহ এর হাতে। আসি।।।।
:হুম আচ্ছা ঠিক আছে।আর ডাক্তার আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি???
:হুম অবশ্যই। তবে আওয়াজ করবেন না।
তাসফি রাফি কে নিয়ে রুমে গেল।পুরো চেহারাটাই পাল্টে গেছে ওর।
:আচ্ছা ভাইয়া আমি তাহলে যাই?
:হুম যা।সাবধানে যাস।ভাই তোর ঋণ আমি কখন শোধ করতে পারব না রে,,,?
:আরে ভাইয়া কি বলতেছেন।আমি তো আপনার ছোট ভাইয়ের মত তাই না,,,,?
:হুম
:তাহলে ঋণ কোথা থেকে আসল।এসব কথা বাদ দাও আর ভাবির পাশে থেক।আমি গেলাম। বাই।
:আচ্ছা ঠিক আছে যা।
রাফি চলে যাচ্ছে। তাসফি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।একটা মানুষ যে এত ভাল হয় তা রাফি না দেখলে বোঝাই যেত না।
কিছুক্ষন পর রিহার জ্ঞান ফিরল।মিট মিট করে তাকাচ্ছে।তাসফিকে দেখা মাত্রই ওর চোখ আটকে গেল।কিছুই বলতে পারছে না।চোখের কোনা বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
তাসফি ওর হাত টা শক্ত করে ধরল। আর রিহার চোখের পানি মুছে দিল।
শুরু হল তাদের চোখে চোখে কথা।
"""""""""""""""""'''
রাফি বাড়িতে আসল।এসেই কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ল।যাক নিশ্চিত হতে পারলাম যে আপুর জ্ঞান ফিরেছে।ফোনটা চার্জ এ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।সকাল হতে না হতেই তাকে কেউ ডাকছে।
:ওই কুত্তা ওই।উঠছ না কেন।উঠ।
:এই কেরে।এত সকালে আমার ঘুমের বারোটা বাজালো।
:তোর জম।আজ তুই উঠ তোর একদিন কি আমার একদিন।
:আরে তানহা তুমি এখানে?
:হ্যাঁ আমি।কোন সমস্যা?
:নাহ সমস্যা হবে কেন? কিন্তু তুমি কিভাবে ভিতরে আসলা।
:আসলাম কোন এক ভাবে।সেটা বাদ দাও আগে বল তুমি আমার ফোন ধর না কেন?
তারপর ওকে সব ঘটনা বললাম।যা শুনেই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল।কিছুক্ষন পর ও বলল
:আচ্ছা তুমি কি রিহা আপু কে কোলে নিচিলা,,,,?
:এ আবার কেমন প্রশ্ন?
:বলতে বলছি।
বুঝেছি।হা হা হা একটু মজা নেওয়া যাক।
:হুম কোলেই তো নিয়েছিলাম।অফ উনার ফারফিউম এ কি গ্রান।
:ওওও
বেচারির মুখটা কালো হয়ে গেল।নাহ আমি ওর মুখে হাসি দেখতে চাই।
ওকে জড়িয়ে ধরে বলালাম
:নারে পাগলি। কোলে নি নাই।যেখানে এক্সিডেন্ট করেছে ওখান থেকেই সিএনজি নিছিলাম।
:সত্যি,,,,?
:হুম।এই তিন সত্যি।
:এইতো গুড বয়।দাড়াও আমি তোমার জন্যে চা নিয়ে আসছি।
আমি ওর দিকে চোখে তাকিয়ে আছি।
:ওভাবে হা করে আছ কেন? মসা ডুকবে তো।হি হি হি।
আমি পুরাই অবাক হলাম।

সব শেষে তাসফি আর রিহা ধন্যবাদ জানায় রাফি কে।
(সত্যি রাফি তোমার মত মানুষ হয় না)
(ভুলত্রুটি মার্যনীয়)
তাসফি আহমেদ

আরো গল্প পড়তে এখানে ক্লীক করুনঃ

সকল গল্পের লিংক। 


গল্পঃ অচেনা শহর। লেখকঃ তাসফি আহমেদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url