গল্পঃ অভাবনীয় শেষ । লেখকঃ তাসফি আহমেদ।

অনু গল্প

গল্পঃ অভাবনীয় শেষ । লেখকঃ তাসফি আহমেদ।

" অভাবনীয় শেষ "

তাসফি আহমেদ।


মেহেদী হাসান তাসফি। বাবা থাকে বিদেশ। ছোট ভাই মাহিন।মাও আছে।মোটামুটি ভালোই চলছে। সংগ দোষ টাই শেষ করে দিয়েছে তাসফি কে।প্রাইমারী লেভেলে পড়ালিখায় ছিল প্রশংসনীয়। পাড়া,প্রতিবেশী আর শিক্ষকের কাছে ছিল প্রিয় পাত্র।কিন্ত প্রাইমারী লেভেল পেরিয়ে মাধ্যমিকে কিছুটা সমর পেরুতেই সংগ টাই শেষ করে দিল এই ফুটন্ত গোলাপটাকে।ঝরে পড়া শুরু করল তার সমস্ত পাঁপড়ি।সবার কাছে অপছন্দনীয় হতে বেগ পেতে হয় নি।গালি দেওয়া, মারা মারি করা,নেশা করা এগুলোই ছিল তার দৈনিক রুটিনে।বাবা মা চেষ্টার ত্রুটি রাখে নি।তদবিরও নিয়েছে। কিন্ত শেষ মেষ আর ভালো হয়ে উঠা হয় নি।
সম্প্রতিতে তার সাথে একটা মেয়ের প্রনয় হয়েছে। বিষয়টা প্রথমে শুনে মাথাটা ঘুরে উঠল। প্রনয়টা কি ভাবে হয়েছে তা আমার অজানা। কিন্তু মেয়েটা যে ওকে এত ভালোবাসে তা আমার বিশ্বাস করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।যখন মোবাইল নিয়ে আমার সামনে কথা বলেছে তখন আমার বিশ্বাস হয়েছে।কি রাগ, কি ভালোবাসা! আমি শুধুই দেখে যাচ্ছি যে কি করে ওরা।ওদের প্রেমের এক প্রকার সাক্ষি ছিলাম আমি।আরও কয়েকজনও ছিল।রাত জেগে কথা বলত তারা।মেসেজিং তো সাধারণ বেপার। দেখাও করত।মেয়েটা ওর অতিত জানত।তারপরেও ভালোবাসত।মেয়েরা যথেষ্ট প্রভাবশালি ছিল।অর্থ সম্পদের কমতি ছিল না।বংশ মর্যাদায় তাসফিরা ছিল স্মার্ট। প্রভাবের দিক দিয়েও।আর্থিক অবস্থাও খারাপ ছিল না।কোন মেয়ে একটা ছেলেকে এতটা ভালোবাসতে, আমার জীবনে দেখা এই প্রথম।
তাসফি ওর প্রতি এতটা সিরিয়াস ছিল না।খারাপ ছেলেতো তাই।কয়েক দিন কথা বলত তো কয়েক দিন বলত না।আমি ওকে নিষেধ করতাম। কারো মন নিয়ে খেলা মাহা পাপ।ছেড়ে দে এগুলো।মাস খানেক যাওয়ার পর তাসফির মধ্যে বিরূপ আচরণ অনুধাবন করলাম।টাইম পাস করতে করতে এক সময় মেয়েটার মায়া জালে আঁটকা পড়ে গেল।মেয়েটার ভালোবাসায় নিজেকে ভাসিয়ে দিল।তার পর থেকেই তাসফির সব কিছুতে পারিবর্তন।নামজ পড়ার চেষ্টা করত।পাঁচ ওয়াক্ত না পড়তে পারলেও পড়ার চেষ্টা করত।সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত।এদিকে ও hsc তে ফেইল করে।ওর কাছে স্বাভাবিক হলেও আমি বা ওর মা বাবা কেউই এ জিনিশটা মেনে নিতে পারি নি।পরের বছর ও আর পরিক্ষা দিবে না।ওর নাকি পড়িতে ভালো লাগে না।হাজারো বার বলার পরেও না, দিবে না, এক কথা।ও খুব একরোখা ছিল।যা বলবে তাই।তাই আমাকেই অন্য পথ বেছে নিতে হয়েছে। কিছুদিন পর ও বলল ও নাকি পরিক্ষা দিবে।আমি অবাক হলাম না।এটা হওয়ার ছিল।তার এমন পরিবর্তনে সবাই কিঞ্চিত অবাক হল।পরিক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করে বের হল।সবাই খুশি। আমি বললাম
অনার্স এ ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা আছে।ও মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।আমি মৃদু হাসলাম।এর পিছনে অবদানটা আমার নয়।নব্বই ভাগই তানহার (ওর প্রিয়তমা)। আমি শুধু তার পাশে ছিলাম।ওরা এত বেশি স্বপ্ন দেখিত।যা আমার অজানা ছিল না।তাসফি আমাকে বলল আর হাসত।আমিও হাসতাম ওর পাগলামি দেখে।যখন আমি আর ও বসে থাকতাম তখন ও কি জানি ভাবত।আবার নিজের অজান্তেই হাসত। আমি ওর এই পাগলামি দেখে বলতাম, "পাগল একটা "।প্রতি উত্তরে ও বলত,"আমি ওরে ছাড়া বাঁচাবো না রে দোস্ত। "আমি বলতাম," পাগল হয়ে যাবি তো "।ও বলত," আমি তো আরো আগেই পাগল হয়ে গেছি রে।"আমি আর কিছু বলতে পারতাম না।চুপ হয়ে যেতাম।
ওর আর পড়ালিখা করা হয়ে উঠে নি।ওর বাবা ওকে নাকি বিদেশ নিয়ে যাবে।ওখানে নাকি ভালোই আয় হয়।আমিও তেমনটা শুনেছি। মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে।এটা ওর বাবার কাছ থেকে প্রাপ্য ছিল না।আমার কিছুই করার ছিল না।যেখানে ওর মা পরাজয় শিকার করেছে। তাই শির নিছু করিয়া মেনে নিতে হয়েছে বন্ধুর এই অকাল বিদেশ গমন।সে দিন মেয়েটার সে কি কান্না।এই প্রথম আমি কোন প্রেয়সী কে এভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখেছি।যা বর্নানর আমার দ্বারা সম্ভব নয়। ছেলেটা যাওয়ার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল।কি আর করবে।অর্থ লোভ যে ওর বাবাকে গ্রাস করে পেলেছে। তাসফিকে নিত না,তবে ওর অতিত ইতিহাস দেখে ওর বাবা ওকে বিদেশ, নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বেশিই উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন।একটাই ছিল মুল কারন।যাক ও চোলে গেল।কিছুদিন পর আমাকে ফোন দিল।ওর ইমো নাম্বার আর ফোন নাম্বার দিল আমাকে। আমিও যথা স্থানে পোঁছে দিলাম।
কিন্ত কথায় আছে না।"চোখের আড়াল তো মনের আড়াল "কয়েক মাস পর শুনলাম মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে।আমার মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়ল।ওর বিয়ে আমাকে জানানো প্রয়োজন মনে করে নি।আমি মেয়েটা কে ফোন দিলাম। বন্ধ। তাসফি কে দিলাম। ও আমার ফোন কেটে নিজে ফোন করল।সে দিন কি কান্নাটাই না ও কাঁদল।আমিও কেঁদে দিলাম।কিছু দিন পর মেয়েটার ফোন।আমি খানিক টা অবাক হলাম। ফোন দিয়েই কি কান্না মেয়েটার।তার অমতেই বিয়ে হয়।ওর পরিবার ওর রিলেশন সম্পর্কে জেনে গিয়েছিল। কিন্ত তারা তানহা কে তা বুঝতে দেয় নি।ওর অজান্তেই পাত্র খোঁজে।এবং সময় করে বিয়ে টাও দিয়ে দেয়।বিয়ের দুই দিন আগ থেকে ওর ফোন উধাও হয়ে যায়।আমি তানহার কথা বিশ্বাস করলাম। বুঝতে পারিলাম, ওর পরিবার আগ থেকেই ওর বিয়ের
নীল নকশা বানিয়েছে। কত চতুর তারা।কিন্তু কি পেল।নিজের মেয়ের সুখ খুজতে গিয়ে মেয়েকে জেনে শুনেই দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিল।ওদের কথা বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আসলেই কি সব ঠিক হয়ে যায়,,,,,,?হয়ত বা হয়ত না।
কিন্তু ওর যা করল তা নেহাত অন্যায়। ওদের কান্নাকাটি সব আমাকেই শুনতে হত।আর আমি নির্বাক শ্রোতা হয় শুনতাম। কিছুটা হলেও বুঝতে পারেছি যে,"প্রনয় শিখা বড় উত্তপ্ত।জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সব শেষ করে দেয়।
ওদের শেষ টা যে এমন অভাবনীয় ভাবে হবে তা আমার জানা ছিল না।প্রথমে ভাবলাম গল্পে অন্তত মিল টা দি।কিন্তু মিথ্যা এই মিলটা দিয়ে কোন লাভ নেই।যেখানে বাস্তবে তারা দুজন দু 'প্রান্তে।

তাসফি আহমেদ।
আরো গল্প পড়তে এখানে ক্লীক করুনঃ

সকল গল্পের লিংক। 





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url