Bangla Golpo: পরশে তুমি
Bangla Golpo: পরশে তুমি
তাসফি আহমেদ
সেহেরী খাওয়ার পর আমি সত্যিই খানিকটা ক্লান্ত বোধ করলাম।এদিকে ঘুমে দু চোখ যেন আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে আসছে। তাই নামাজ না পড়েই শুয়ে পড়ি।অবশ্য নামাজের এখনো মিনিট পাঁচেক দেরি আছে।মিহিন যখন রুমে এসে আমাকে শুয়ে থাকতে দেখল ঠিক তখনি ও বলল,
:নামাজ পড়বা না?
আমি দু'চোখ বুঁজে আছি।কিছু বললাম না।ঘুম যেন চারদিক থেকে জড়িয়ে ধরছে।আমি শুয়ে থাকলাম আমার মতই।মিহিন কিছু বলল না আর।ধির পাঁয়ে আমার দিকে এগিয়ে এল।বিছানার পাশে বসে আমার মাথায় হাত রাখল।মাথার চুল গুলো পিছন দিকে টেনে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেল।তারপর ঠোটে।মৃদু স্বরে বলল,
:খুব বেশি ঘুম আসছে?
আমি মাথা ঝাঁকালাম কেবল। ও মাথায় হাত বুলাতে থাকল।বলল,
:আর তো কয়েকটা মিনিট।নামাজটা পড়ে নিলে ভালো হত।বেশি না।দুই রাকাত করে চার রাকাত।আচ্ছা তুমি ছোট ছোট সূরা দিয়ে পড়িও।কেমন?
আমি চোখ খুলে মেয়েটার দিকে তাকাল।কেমন আগ্রহী হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চেহারায় অনুরোধের ছায়া।এই মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ এমন সুন্দর অনুরোধ কখনই ফেলতে পারবে না।আমি হাসলাম। বললাম,
:পড়তেই হবে?
ও আবার আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকল।তারপর বলল,
:দিনের শেষ চুমুটা তোমাকে দিলাম।রাতের শেষ নামাজটা আমায় দাও।দিবে না?
আমি এবারেও হাসলাম।আশ্চর্য হলাম খানিকটা। মেয়েটা আমাকে বেশ ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে জানে।আমার হাসি দেখে মিহিন হাসল।বলল,
:এপাশে ছোট একটা ভুল করে ওপাশে তোমার হাত ছাড়তে পারব না আমি। জান্নাতে আমি তোমাকেই পাশে চাই। ঠিক এ পাশের দুনিয়ায় যেমন আছি।
আমি এবার উঠে পড়লাম।মেয়েটা এত সুন্দর করে কথা বলে যে না উঠে পারি না।ঠিক তখনই আজান দেয়।আমি উঠে অজু করে নেই।মিহিনও।নামাজ পড়ে আমি শুয়ে পড়ি।মিহিন একটু দেরিতেই আসে।আমার চোখ তখন একটু লেগে আসছিল।মিহিন আমার পাশে শুয়ে পড়ল টের পেলাম।আমি জানি ওকে জড়িয়ে না ধরলে ও ঘুমাবে না।ওকে আমার বেশ চেনা আছে।আমি চোখ মেললাম বহু কষ্টে। দেখলাম মিহিন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বললাম,
:কি ব্যাপার! এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
:আমার ঘুম কাতুরে স্বামীটা দেখিছে।কি সুন্দর করে ঘুমায় ও।
আমি হাসলাম কেবল।ওকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।এত পাগলি মেয়েটা। আমি মৃদু স্বরে বলি,
:দেখলে হবে।ঘুমাবা না?
:এখন ঘুমাবো।
এই বলে ও থামল।একটু দেরি করে আবার বলল,
:একটা কথা বলি?
:বল।
:কাল মার্কেটে যাব একটু।তোমাকে নিয়ে।
:কেন? আমাদের তো শপিং শেষ।
:হুম।তবুও যাব।কিছু কাজ আছে।
:কি কাজ।
:কাল গেলে দেখবা।
:মার্কেটে যেতে খারাপ লাগে আমার।এত ভীড় সহ্য হয় না।
:আমার সাথে গেলে খারাপ লাগবে?
আমি কিছু বললাম না।মিহিনকে নিজের বুকের সাথে আরেকটু চেপে ধরলাম। মিহিন কিছু বলল না।আমি লক্ষ্য করলাম যে আমি আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে হারিয়ে যাচ্ছি।একা না।সাথে একটা পরি আছে আমার।পরিটাকে বুকে নিয়ে স্বপ্নের দেশে বিচরণ আমার।
.
আমি সত্যি সত্যিই অবাক হলাম।এখন আবার কার জন্যে কেনা বাকি আছে।ওর পরিবার, আমার পরিবার সবার জন্যেই তো কেনা শেষ। তাহলে? ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।দেখি কি করে ও।মিহিনকেও কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।ও যা করে সবই আমার কেন জানি ভালো লাগে।
নিউ মার্কেট থেকে বের হয়েই ও আমাকে রিক্সা নিতে বলল।রিক্সা ডাকলাম।কাছে আসতেই মিহিন বলল,
:রেল স্টেশন থেকে খানিকটা দূরে যে একটা বস্তি আছে সেখানে যাবেন?
আমি এবার সত্যি সত্যিই চমকালাম।এক মুহুর্তের জন্যে মনে হল যেন আমি এই পৃথিবীতে নেই।অন্য কোথাও।আমি অবাক ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারলাম না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। এতক্ষন মিহিনের কাজের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ জেগেছিল।হুট করেই ভীষণ অনিহার সৃষ্টি হল।ওর সাথে যেতে ইচ্ছে করল না মোটেও।পাশ থেকে মিহিন বলল,
:কি ব্যাপার! উঠছো না কেন?
ঘোর কাটল। পাশে তাকিয়ে দেখলাম মিহিন নেই।রিক্সায় বসে আছে।আমি উঠলাম না।ও আবার বলল,
:কি হল! এই তাসফি! উঠছো না কেন?
আমি কিছু বললাম না।প্রচন্ড অনিহা নিয়ে রিক্সায় উঠলাম।রিক্সা চলতে থাকল।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে।আর পাশের মিহিন মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে পড়ছে।আমার চোখ পড়ছে।হৃদয়ে জমে থাকা প্রতিটা কষ্টের গল্প পড়ছে ও।আমি সেদিকে ধ্যান দিলাম না।কিছু সময় পর হুট করেই মিহিন আমার হাত ধরল।এটা ওর অভ্যাস।হাত ধরে কাঁদে মাথা রাখা।এতেই আমি চরম আনন্দ অনুভব করি।আজও করছি।তবে এক প্রকার কষ্টে আছি।অতিত আমাকে কষ্ট দিচ্ছে অনেক।অনেক কষ্ট দিচ্ছে আমায়।
.
আমার সত্যিই ভয় করছে।এক প্রকার অপরাধ বোধ কাজ করছে। মানুষ গুলোকে অনেক দিন দেখি না।না জানি কতটা অভিমান করে আছে আমার উপর।বাচ্ছা গুলো না জানি কি বলে। খুব খারাপ লাগল আমার।কতদিন ওদের দেখি না।একসময় দৈনিক আসতাম।এখন আর আসা হয় না।আসলেই কষ্ট পাই।ভীষন কষ্ট। জায়গাটতে আমার অতিত লেগে আছে। প্রতিটা জায়গায় আমার অতিতের পায়ের চিহ্ন লেপ্টে আছে।
.
আমি সামনে এগুলাম।আমাকে দেখতেই ছোট ছোট বাচ্ছা গুলো দৌড়ে এল। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। একজন তো কেঁদেই ফেলল।বলল,
:ভাই জান! এতদিন কই ছিলেন।আমাগরে দেখতে আইলেন না কেন? আমরা গরিব বইলা কি
আমাগোরে ভুইলা গেলেন?
:না রে। তোদের ভুলি কিভাবে! ভুললে কি আজ এখানে এভাবে আসতাম।
:তাইলে এত দিন আসেন নাই কেন?
:ছিল কিছু সমস্যা। চিন্তা করিস না।আজ থেকে আবার আসবো।
ওরা আমাকে জড়িয়ে ধরেই থাকল।আমার মাঝে সত্যিই প্রচুর অপরাধ বোধ কাজ করতে থাকল। এদের এত ভালোবাসা রেখে আমি স্বার্থপরের মত চলে গেলাম কষ্টের দেশে। এখানে আসলে মন খারাপ হত ঠিকই তবে তার চেয়ে বহুগুনে ভালো লাগত,এটা আমি আগে বুঝতে পারি নি।পারলে এখন এতটা খারাপ লাগত না।ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে পিছনে তাকাল।বলল,
:ভাই জান।উনি কে?
আমি পিছন ফিরে তাকাল।মিহিন দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখে জল।জলে ভরা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার খুব ইচ্ছে হল ওকে জড়িয়ে ধরি।ধরলাম না।জমা রেখে দিলাম।পরে খুব করে জড়িয়ে ধরে কাঁদব কিছুক্ষণ।মেয়েটা কিভাবে যে আমার মন পড়তে পারে।আমি সত্যিই মাঝে মাঝে ভীষণ অবাক।একজন মানুষ অন্যজনকে এত বুঝে কিভাবে?ভালোবাসার জোরে বোধ হয়।ওদের বললাম,
:তোদের ভাবি এটা।
পাশ থেকে একজন বলে উঠল,
:তয় ইনি তো নিরা আপু না।নিরা আপু কই? উনিই তো আমাগো ভাবি।
আমার চোখে জল জমে এবার।প্রচন্ড কষ্টে কুকড়ে উঠে বুক।খারাপ লাগে ভীষণ।বুকের ভিতর কেমন জানি করে নামটা শুনলে।ভেজা গলায় বলি,
:ইনিই তোদের নিরা ভাবি।যা ভাবির কাছে যা।
বাচ্ছা গুলো কি বুঝল জানি না।দৌড়ে নিরার কাছে গেল।না নিরা নয়।মিহিনের কাছে গিয়েছে।নিরা তো আমার অতিত ছিল।ভালোবাসার আনন্দ কষ্টে মাখা একটা রঙিন অতিত।যে এক সময় আমার আমি ছিল।প্রচন্ড মায়ায় যার প্রেমে পড়েছি প্রথম।
আমি চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।ঠিক তখনই কেউ একজন বলে উঠল,
:ভাইয়া কেমন আছেন?
চমকালাম এবার।কন্ঠটা খানিকটা চেনা মনে হচ্ছে।পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ওকে চিনতে একটু দেরি হলেও চিনলাম।বললাম,
:তুই রিফাত?
ছেলেটা কিছু বলল না।ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে।তারপর চট করেই দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।কান্না শুরু করে দিল ও।আমি ওকে থামাই।শান্তান দেই।ছেলেটাকে আমি একটু ভালো করেই চিনি।নিরার সাথে পার্কে বসে ছিলাম।তখনই রিফাত আসে ফুল নিয়ে।লাল রাঙা গোলাপ ফুল।তারপর নিরার হাত ধরেই রিফাতের মাধ্যমে এই বস্তিতে আমাদের প্রথম বিচরণ। রিফাতকে আমার দেখতেই কেন জানি খুব ভালো লাগল।ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম আমি আর নিরা মিলে। বই কিনে দেই।মাঝে মাঝে যখন ওই বস্তিতে যেতাম তখন ওকে খানিকটা পড়া বুঝিয়ে দিয়ে আসতাম।ওর বাবা মার মনে ওকে পড়ানোর জন্যে আগ্রহ জাগাতাম।নিজের যতটুকু ছিল সবটুকু দিয়েই সাহায্য করেছি ছেলেটাকে।অন্যদের মা বাবাকে উৎসাহিত করতাম।রিফাতের সাথের অনেকেই স্কুলে যাওয়া শুরু করে দেয়।অনেকেই যায় না।তাদের পরিবারের গুরু দায়িত্ব ওদের উপর ছিল।তাই চাইলেই ওরা পড়তে পারত না তবুও আমি বলতাম।পড়ার জন্যে খুব করে বলতাম। এর পিছনে খুব বড় ভাবে অবদান রেখেছে নিরা।ও নিজেই আমাকে খুব উৎসাহিত করত।সত্যিই বলতে আমি প্রথম এই কাজটা করার পর অদ্ভুত একটা আনন্দ অনুভব করি।এত ভালো লাগছিল যে বলে বুঝাতে পারব না।নিরা চলে যাওয়ার পর আর আসা হয় নি।তাই ওদের খবরও নেয়া হয় নি।
আমি ওকে ছাড়িয়ে নিলাম।বললাম,
:কেমন আছিস তুই।কত বড় হয়েছিস!
:ভালো আছি ভাইয়া।তুমি ভালো আছো?
:আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি।তোর পড়ালিখার কি খবর।
:খুব ভালো ভাইয়া।খুব ভালো।এই দেখো...
এই বলে হাতে থাকা ফাইলটা থেকে একটা কাগজ আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা নিলাম।কাগজ নয়।একটা সার্টিফিকেট। ছেলেটা পঞ্চম শ্রেনিতে এ প্লাস পেয়েছে।আমি অবাক চোখে রিফাতের দিকে তাকালাম।ওর চোখে জল।আনন্দের জল।আমি দেরি না করেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম।প্রচন্ড আনন্দে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি।ভীষণ কান্না করি।ইদের জামা পেয়ে এত খুশি হয়েছে ওরা যা ভাষায় অপ্রকাশ্য।
.
ফিরতি পথে হাঁটছি।রিক্সা পাওয়া যায় নি।আমি মিহিনের হাত ধরলাম।ওকে আমার সামনে নিয়ে এলাম টেনে।ওর চোখে চোখ রাখলাম।প্রচন্ড অভিমান জমে আছে ওখানে।মুখটা কালো করে আছে। বললাম,
:থ্যাংক্স!
ও কিছু বলল না।অন্য দিকে মুখ ফিরাল। আমি ওর মুখ আমার দিকে ফিরালাম।ওর চোখে চোখ রেখে বলি,
:রাগ করেছ?
মিহিন এবারেও চোখ ফিরিয়ে নিল।আমি চমকালাম এবার। ওর চোখে জল।বললাম,
:মিহিন! তুমি কি খুব রেগে আছ?
:রেগে থাকার কি কথা নয়!এই! এই তুমি কি আমায় কখনো আপন ভাব নি।উত্তর দাও।ভাব নি?
:আর কত আপন ভাবব বল।আমার হৃদয় আর তুমিই দুটোই তো এক মিহিন!তোমাতেই আমি আমাকে দেখি।
:তাহলে এই এত ভালোবাসার কথা আমাকে আগে বল নি কেন? কেন বলনি যে তোমার প্রিয় একটা বস্তি নগরি আছে।যেখানে তোমার জন্যে এত ভালোবাসা অপেক্ষা করছে।
আমার চোখে জল জমে এবার। বলি,
:কি ভাবে বলতাম বল।এই জায়গাটার কথা মনে পড়লেই নিরার কথা মনে পড়ে।কিছু সৃতির কথা মনে পড়ে।যেগুলো ভাবলেই আমি ভীষণ কষ্ট পাই। বিশ্বাস কর আমি তোমাকে বলতে চেয়ে ছিলাম অনেকবার। যত বারই বলতে গিয়েছি ততবারই আমি মাঝ পথে এসে আঁটকে গিয়েছি।অদ্ভুত বাধার কারনে বলতে পারি নি।আর নিরার কথা তো তুমি জানোই।
:জানতাম।তবে এতটা জানতাম না।
আমি কিছু বললাম না। চুপচাপ হাঁটতে থাকলাম।মিহিন পাশেই আছে। আমার হাত ধরে হাঁটছে।কিছু সময় নিরাবতায় কাটল আমাদের। হুট করেই মিহিন বলে উঠল,
:খুব ভালো বাসতে ওকে তাই না।
আমি এবারেও কিছু বললাম না।হুট করেই মনটা খানিকটা খারাপ হয়ে গেল। মিহিন আমার দিকে তাকাল। বলল,
:মন খারাপ করছে?
আমি কেবল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। খানিকটা সময় নিয়ে বললাম,
:এত বুঝ কিভাবে আমায়! আর এই বস্তির কথা জানলে কিভাবে?
মিহিন কেবল হাসল।খুব শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে ও।একটু কাছে সরে এল যেন। আমি আমার উত্তর পেয়ে যাই চট করেই।মেয়েটা আমাকে সত্যিই ভিষণ ভালোবাসে। চুপচাপ হাঁটতে থাকলাম ওর পাশে। ঠিক তখনই আমার নিরার কথা মনে পড়ে গেল।নিরা ঠিক এভাবেই আমার হাত ধরে হাঁটত। এক মুহুর্তের জন্যে মনে হল ওই নিরা।আমি বললাম,
:জানো মিহিন,নিরা ঠিক...
ও আঙ্গুল দিয়ে আমার ঠোট চেপে ধরে।বলে,
:নিরা অতিত।আমি বর্তমান এবং তোমার ভবিষ্যৎ। নিরার কথা বাদ।আমি থাকতে ওর কথা মোটেও মুখে আনবা না।
আমি ওর চোখে চোখ রাখি।অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করি চট করেই।বলি,
:নিরার কথা বলাতে কি তোমার খারাপ লাগছে?
মিহিন অনেকটা সময় চুপ করে থাকে।বলে,
:হু! খারাপ লাগে।
:কেন?
:তুমি আমার সম্পদ। তুমি কেন অন্য মেয়ের কথা বলবে।অতিতে কি হয়েছে সেটা আমি জানি না।জানতে চাইও না।আমি বর্তমানের তোমাকে চাই।খুব করে চাই।তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে চাই।তবুও তোমার মুখে কোন অতিত মেয়ের গল্প শুনতে চাই না।কষ্ট হয় আমার। সহ্য হয় না।
:এত ভালোবাস কেন?
:তুমি কি কম বাসো?
আমি এবারেও কিছু বললাম না।চুপ করে থাকলাম কেবল।রাস্তায় এখন, তা না হলে মেয়েটাকে এখানেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতাম।জড়িয়ে ধরে বলতাম,
:পাগলি ভীষন ভালোবাসি তোমায়।
আজ বাসায় যাই।তারপর না হয় মুক্ত ভাবে নিজের অনুভুতির কথা প্রকাশ করব।
:কি ভাবছো।
মিহিন পাশ থেকে বলল।আমি মিহিনের দিকে তাকালাম আবার।বললাম,
:একটা পাগলির কথা ভাবছি।
মিহিন আমার শার্টের হাতা চেপে ধরে বলে,
:খবরদার ওই নিরার কথা মোটেও ভাববে না।দাঁড়াও।আজ বাসায় যাই।নিরার ভূত কিভাবে তাড়াতে হয় সে আমার জানা আছে।
আমি হাসলাম কেবল। মেয়েটার চোখ বলছে, সে সত্যি সত্যিই নিরার ভূত আমার মাথা থেকে নামাবে।আমার বিশ্বাস, পুরোপুরি না হলেও অনেকটা পারবে মেয়েটা।এটা আমি চোখ বুঁজে বলতে পারি। এই মেয়েটা সত্যি একটা মেয়ে না।যেন ভালোবাসার একটা খনি। আল্লাহের কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমায় এমন একটা বউ দিয়েছে। সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ।