Bangla Golpo: কালো পুকুর
তাসফি আহমেদ
জামাল সাহেব পুকুরটার কাছে এসেই কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন|কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন কেবল|অদ্ভুত!এমন পুকুর তিনি আগে কখনও দেখেন নি|পুকুর যে এমনটা হয় সেটা তার জানা ছিল না|এমন কালো রঙের পানি তিনি আগে কখনও দেখেন নি|কি অদ্ভুত!এত কালো পুকুরের পানি হয়?জামাল সাহেব একজন ছোটখাট বিজ্ঞানি|একজন কৃষি বিজ্ঞানি বলা চলে|মাঠের কিংবা ফসলের গুণগত মান নির্ণয় করেন তিনি|কোন মাঠ ফসল রোপনে উপযোগি বা কোন মাঠে কি জাতের ফসল রোপন করতে হবে এ নিয়ে পরিক্ষা করেন তিনি|পরবর্তিতে তিনি সেটা কৃষকদের বুঝিয়ে বলেন|ফসলের পর মাছ উৎপাদনে কৃষকদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন তিনি|তাই গ্রামের প্রতিটা পুকুরের পানি তিনি পরিক্ষা করে দেখছেন|দেখতে দেখতে গ্রামের শেষ প্রান্তে চলে আসেন তিনি|এসেই দেখা মিলল এই অদ্ভুত পুকুরটার|পুকুরটার চারপাশে প্রচুর গাছপালা রয়েছে|পুকুরের ঠিক মাঝখানে ঘন কালো পানির উপর ভাসছে একটা পদ্ম ফুল|অদ্ভুত সৌন্দর্য ফুলটার|লাল আর বেগুনি রঙের ফুলটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে|ফুলের পাপড়ি গুলো কড়া লাল রঙের|মাঝখানের অংশটা বেগুনি রঙের|জামাল সাহেব ঘোর লাগা চোখে সেদিকে তাকিয় আছেন|জিবনে হয়ত এমন ফুল আগে দেখেন নি|জামাল সাহেব ঘোর কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলেন|
নেমেই তিনি বতলে পানি নিতে লাগলেন|পরিক্ষাটা তিনি ল্যাবেই
করবেন|বতলটা যখন অর্ধেক পুরে এল ঠিক তখনই উনার মনে
হতে লাগল কেউ একজন উনার পিছনে আছে|উনি কিছুটা ভয়
পেয়ে গেলেন|জায়গাটা একেবারে নির্জন|কেউ এদিকে খুব
একটা আসেন না|তিনি দ্রুত ঘাড় ফিরালেন|না!কেউ নেই|সেদিকে
তাকিয়ে তিনি স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন|বতলের দিকে তাকাতেই
দেখলেন বতলটা পুরে গেছে|সাদা বতলটা একেবারে কালো
হয়ে গেছে|তবে অদ্ভুত ব্যপার হল উনি যখন পিছনের দিকে
তাকালেন তখন বতলের মুখটা ভাসা ছিল|কোন মতেই বতলে পানি
ঢুকার উপক্রম ছিল না|তাহলে বতলে পানি ঢুকল কিভাবে?হয়ত উনার
ভাবনার ভুল|তিনি আস্তে আস্তে করে উপরে উঠে এলেন|
পিছন ফিরে দেখলেন না আর|সোজা বাড়ির পথ ধরে এগুলেন|
ঠিক তার পরই একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল|পুকুরের কালো পানি গুলো
স্বচ্ছ পানিতে পরিনত হতে থাকল|
.
রাকিব পুকুরটা দেখে যতটা না অবাক হল তার থেকে বেশি অবাক
হল ফুলটা দেখে|এত স্বচ্ছ পানি রাকিব আগে কখনও দেখে নি|
এরকম পুকুর গ্রামেও আর নেই|তার উপর এমন পদ্ম ফুল রাকিবের
বিস্ময় ভাবটা আরেকটু বাড়িয়ে দিল|রাকিবের মাঝে এক প্রকার
উত্তেজনা কাজ করছে|তার খুব ইচ্ছে হচ্ছে পুকুরটায় গোসল
করতে|কয়েকটা ঝাপ দিতে ইচ্ছে করছে|ইচ্ছেটাকে আর
দমিয়ে রাখল না|দৌড়ে গেল পুকুরটার দিকে|
:কিরে?তোর গা ভিজা
কেন?রাকিবের মা কথাটি বলল ওকে|রাকিব মৃদু হেসে
বলল,
:গোসল করেছি মা|
:তোর জ্বালায় আর বাঁচি না|ক্লাস নাইনে
পড়া পোলা যদি এমন উদ্ভট কাজ করে তাহলে কেমন লাগে|যা!যা
ঘরে গিয়ে তয়ালে দিয়ে গা মুছে ফেল|না হলে পরে অসুখ
বাধাবি|রাকিব হাসল কেবল|যাওয়ার সময় হঠাৎ-ই ওর মা বলে
উঠল,
:তোর হাতে ওটা কিরে?
:পদ্ম ফুল মা|পুকুরে ভাসছিল|খুব
সুন্দর|তাই ছিড়ে নিয়ে আসছি|:পদ্ম ফুল?এ গ্রামে পদ্ম ফুল পেলি
কই?
:আরে মহি চাচার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যে পুকুরটা আছে
না ওখান থেকে|
:কি?তুই ওই পুকুরে গোসল করেছিস?
:হু মা|
অনেক মজা পাইছি গোসল করে|কথাটা বলার পরই রাকিব দেখল তার
মায়ের চেহারায় আতঙ্ক দেখা দিল|মুখটা কালো হয়ে গেল|
চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমতে লাগল|এই গড়িয়ে
পড়বে বলে|ও কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর মা দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল|একেবারে কেঁদেই
দিলেন তিনি|খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন ওকে|রাকিব এখনও
বুঝতে পারল না তার মা এমন কান্ড কেন করল|ঠিক সেদিনই ওর মা
ওকে নিয়ে ওই গ্রাম ছেড়ে চলে এলেন|চলে আসার কারনটা
জানা হল না রাকিবের|তবে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করল
নিজের মাজে|
.
মিরা রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাবার ল্যাবে
একটু উকি দিল|দেখল ওর বাবা একটা কাঁচের পাত্রে পানি নি নিয়ে
নাড়াচাড়া করছে|কিন্তু অদ্ভুত বেপার হল পাত্রের পানি গুলো
সম্পূর্ন কালো|মিরা সেদিকে ধ্যন দিল না|ওর বাবা কি সব উদ্ভট কাজ
করে যা মিরার একেবারেই অসহ্য লাগে|তবে এর জন্যে
গ্রামের মানুষ গুলো মিরাকে খুব স্নেহ করে|ওকে
দেখলেই 'বিজ্ঞানির মেয়ে' বলে ডাক দেয়||এটা অবশ্য মিরার
কাছে খুব ভালো লাগে|তবে ওর বন্ধু রাকিব ওকে এ নিয়ে
অনেক খ্যপায়|তখন ভিষন রাগ হয় মিরার|মিরার ওর বাবাকে ডাক দিয়ে
বলল,
:বাবা ভাত খেতে আস|মা তোমার জন্যে খাবার টেবিলে
অপেক্ষা করছে|
:তুই যা!আমি আসছি|
:তাড়াতাড়ি এস|
এই বলে মিরা ঘুমাতে গেল|মিরা খুব ঘুম পিপাসু|বিছানা শুয়ে পড়লেই
ওর ঘুম চলে আসে|মিরা ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল|ঘুমের
মধ্যে মিরা দেখল একটা কালো ছায়া ওর দিকে এগিয়ে আসছে|
ভয়ার্ত সেই
ছায়া|এত ঘন কালো ছায়া মিরা আগে কখনও দেখে নি|ও ঘুম
ভাঙানোর চেষ্টা করল|কিন্তু পারল না|একটু নড়তে পর্যন্ত পারছে
না ও|কথা বলতে পারছে না|কথা বললে আওয়াজ হয় না|তবুও
জোরে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করল|কিন্তু অদ্ভুত ব্যপার হল ওর
মুখ থেকে একটু আওয়াজও বেরল না|কালো ছায়াটা ওর দিকে
ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগল|এসেই মিরাকে জড়িয়ে ধরল|তিব্র
চিৎকারে মিরার ঘুম ভাঙল|
.
জামাল সাহেব অনেকটাই ঘেমে একাকার|জিবনে আজ প্রথম এত
ভয় পেলেন|তিনি আস্তে আস্তে ভাঙা কাঁচের পাত্রটার দিকে
এগুলেন|এমন সময় মিরার চিৎকার শুনতে পেলেন|তিনি দৌড়ে
সেদিকে গেলেন|
মিরার স্বপ্নের কথা শুনে তিনি কিছুটা ভড়কে গেলেন|উনি তখনও ঠিক বুঝে
উঠতে পারেন নি উনার সাথে কি হয়েছে এবং উনার মেয়ের সাথে কি হতে যাচ্ছে|
এরপর থেকে গ্রামের মানুষ গুলোর কষ্টের জিবন শুরু হতে
থাকে|গবাদি পশু গুলো এক এক করে মারা যাচ্ছে|মাঠের ফসল
গুলো অকারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে|হঠাৎ-ই অজ্ঞাত কারনে মিরার
বাবা ওর মা আর ওকে শহরে পাঠিয়ে দেন| মিরা ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি তবে মিরা এত দিনে
নিজের মাঝে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করে|
.
:কি হল?কথা বলিস না কেন মিরা?
রাকিব মিরার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল|
কিন্তু মিরা এমন ভাব করছে যেন ও রাকিবের কথা শুনতেই পায় নি|
রাকিব আবারও মিরার দিকে তাকিয়ে দুষ্টামির স্বরে বলল,
:বিজ্ঞানির
মেয়ে কি আমার উপর খুব রেগে আছে?এতক্ষন মিরা রাকিবের
উপর প্রচন্ড রেগে ছিল|হুট করে এ কথা বলাতে রাগটা মাথায়
চড়ে গেল|ও চোখ-মুখ লাল করে রাকিবের দিকে তাকাল|রাকিব
কিছুটা ভয় পেয়ে গেল|হয়ত মিরার এ রূপের সাথে আগে পরিচিত
ছিল না|এর কিছু সময় পরই মিরা বোমা ফাটাল|রাকিবকে মারতে শুরু
করল|এক পর্যয়ে ক্লান্ত হয়ে বেঞ্চিটাতে বসে রাকিবের
দিকে রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকাল|রাকিব ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
:এই বার
অন্তত সুন্দর করে তাকা|তুই কি জানিস তোকে এখন কতটা বাজে
দেখাচ্ছে|একদম সন্দর লাগছে না|মিরা কড়া কন্ঠে বলল,
অ্যাই!
রাগাবিনা বলে দিলাম|তা না হলে আবার মার খাবি|
:সমস্যা নেই|তোর
হাতে মার খেতে খারাপ লাগছে না|কতদিন পর তোর হাতের
ছোঁয়া পেলাম|
:চুপ!একদম চুপ|একটা কথাও বলবি না|
:কতদিন পর
তোর সাথে দেখা|কথা না বললে কি আর হয়?
:তোর সাথে
আমার কোন কথা নেই|
:এত রাগ করিস না|বেশি রাগ মোটেও
ভালো না|
:আচ্ছ মনে কর তোর খুব কাছের কোন বন্ধু যদি
তোকে না জানিয়ে হুট করেই গায়েব হয়ে যায় তাহলে তোর কেমন লাগবে বলত?
:অবশ্যই খারাপ লাগবে|ভিষন রাগ
হবে|
:তাহলে একবার ভেবে দেখ আমার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক না?
:আমি কি করব|মা হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলেন যে গ্রাম ছেড়ে
চলে যাবেন|একেবারে বলার সাথে সাথেই তিনি রেডি হয়ে
চলে এলেন এখানে|তোকে জাননোর কোন উপায় ছিল না
রে|রাকিব থামল|মিরা কিছু বলল না|রাকিবের দিকে তাকিয়ে থাকল
কেবল|.মিরা ঘুমিয়ে আছে|ঘুম কাতুর মেয়েটা ঘভির ঘুমে ডুবে
আছে|হঠাৎ-ই ও দেখতে পেল ও রাস্তার মাঝখানে|কোথাও
যাচ্ছে|জায়গাটা ওর খুব চেনা|হ্যাঁ!এদিক দিয়েই তো মেয়েদের
হোষ্টেলে যায়|ভার্সিটির মেয়েরা এই হোষ্টেলেই থাকে|
ও সেদিকেই এগুল|গেইট খুলে ও ভিতরে গেল|আশ্চর্যের
ব্যপার হল গেইট খোলার শব্দেও দারোয়ানের ঘুম ভাঙল না|
তালাটাও আপনাআপনি খুলে গেল|মিরা ধির পায়ে সামনের দিকে
এগুচ্ছে|৩০১ নম্বর রুমের দরজার সামনে দাড়াল ও|দরজাটা খুট্ শব্দ
করে খুলে গেল|ও ভিতরে ঢুকল|দেখল নিতু ঘুমিয়ে আছে|
মেয়েটা কালো হলেও বেশ মায়াবি|ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ওকে
খুব সুন্দর লাগছে|তবুও মিরার পাষাণ হূদয়টার নিতুর জন্যে একটুও মায়া
হল না|না!মিরার নয়|মিরার ভিতরে যে কালো সত্বা বাস করে তার|এ
পর্যন্ত যত গুলো মেয়েকে মেরেছে ও ওর হাতটা একটু
কাঁপে পর্যন্ত|কি পাষাণ হৃদয় তার|মিরা আর দেরি করল না|আস্তে করে নিতুর গায়ের উপর বসল|
তারপর এক হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরল আর অন্য হাত দিয়ে
গলা চেপে ধরল|নিতু একটু নাড়াচাড়া করল|মিরা দেখল মেয়েটার
চোখের কিনারা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে|মিরার খুব খারাপ
লাগল|কিন্তু ওর ভিতরের কালো স্বত্বাটা পৈশাচিক হাসি দিল|হাসির
শব্দে মিরার ঘুম ভাঙল|কিছু সময় চুপচাপ বসে থাকল|তারপর উঠে
গিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এল|রাতে আর ঘুম আসবে না ওর|
প্রথম স্বপ্নটা দেখার পর থেকে ওর মাঝে কিছু পরিবর্ত আসে|
ও ঠিকই বুঝতে পারে সেদিন থেকেই ওর ভিতর কেউ একজন
বাস করতে থাকে|যে ওকে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে
চাচ্ছে|এ যাবত অনেক গুলো মেয়েকে ও খুন করেছে|
রাতে স্বপ্ন দেখে|সকলে গিয়ে শুনে সে বেঁচে নেই|
প্রথম প্রথম খুব কান্না করে মিরা|এখন অবশ্য গা সয়ে গেছে|নিতু
মেয়েটা বড্ড ভালো একটা মেয়ে|পড়ালেখায় বেশ|একটাই
দোষ ওর|গায়ের চামড়াটা কালো|খুব গরিব ওরা|ওর বাবা নাকি অনেক
কষ্টে টাকা পাঠায়|ও অবশ্য টিউশানিও করায়|প্রতিকূল মূহুর্তেও
নিজেকে টিকিয়ে রেখে এ পর্যন্ত এসেছে|ওর লক্ষ্য বাবা
মায়ের দুঃখ গুলো দূর করা|যে কোন মূল্যে| মিরার খুব খারাপ
লাগছে|কারন ওর কারনেই মেয়েটার স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই
রয়ে গেল|বাস্তবে পরিনত হল না|কথাটা মনে হতে মিরার খারাপ লাগার মাত্রাটা আরেকটু বেড়ে
গেল|কালকেও মেয়েটা কি সুন্দর করে মিরার সাথে কথা বলছিল|
আপু আপু বলে জান দিয়ে দিচ্ছিল মিরা নিজে গিয়ে আজ তাকে
খুন করল|না!মিরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না|চোখের
পানি বাধা মানছে না|বাধ ভেঙে বেরিয়ে আসছে|মিরাও বাধা
দেওয়ার চেষ্টা করল না|
.
সকাল হল|আস্তে আস্তে সূর্যটা
চারদিকে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে|মিরা তখনও বসে ছিল বারান্দায়|
রাতে আর ঘুমাতে পারে নি ও|হঠাৎ-ই ফোন এল ওর|মিরা উঠে
গিয়ে ফোন তুলল|ওপাশ থেকে হস্তদন্ত হয়ে মিম
বলল,
:দোস্ত!একটা খারাপ খবর আছে রে|কথাটা শুনেই মিরার মন
খারাপ হয়ে গেল|আস্তে করে ফোনটা কেটে দিল|আর
শোনার ইচ্ছে নেই ওর|আর শুনতে চায় না ও|মিরা সিদ্ধান্ত নিল
নিজেকে শেষ করে দেবে|বেঁচে থেকে অন্যের ক্ষতি
করার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো|তবে তার আগে রাকিবের
সাথে কিছু কথা বলতে হবে|কিছু অব্যক্ত বানি ওকে শুনাতে
হবে|যা বলার জন্যে অস্থির হয়ে আছে মিরা|
.
:কখন থেকে তোর সাথে এমন হচ্ছে?
রাকিবের এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা হকচকিয়ে যায় মিরা|কিসের কথা
বলছে রাকিব?তাহলে কি ও জানে সব কিছু|মিরা বলল,
:ঠিক বুঝলাম না|
:মানে তুমি কখন থেকে ঘুমের ভিতর মানুষকে খুন কর?
মিরা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়|এত গোপনিয়
সত্যটা ও জানল কিভাবে?আর জানার পর এত শান্ত আছে কিভাবে?
মিরা বলল,
:ছোট বেলা থেকে|তুই চলে আসার কিছুদিন পর|কিন্তু
বিশ্বাস কর আমি এগুলো ইচ্ছে করে করি নি|
:আমি জানি মিরা|তোর
ভিতর এক শয়তানি কালো ছায়া বাস করে|সে তোকে দিয়ে
নিজের স্বার্থ হাসিল করে মাত্র|আচ্ছ সে কিভাবে তোর ভিতর
প্রবেশ করে?
:আমি ঠিক জানি না|তবে একদিন তাকে স্বপ্নে
দেখি|সে আমাকে সেদিন জড়িয়ে ধরে|সেদিনের পর
থেকেই আমি যা স্বপ্নে দেখি সেটাই সত্যি হয়ে যায়|কিন্তু তুই
এটা জানলি কিভাবে?আমি তো এ কথা কাউকেই বলি নি?*আমরা
যেদিন গ্রাম ছেড়ে চলে আসি সেদিন আমি একটা পুকুরে
গোসল করি এবং সেই পুকুর হতে একটি পদ্ম ফুল ছিড়ে আনি|
তারপর থেকেই আমি নিজের মাঝে কিছু অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য
করি|কিছু অদ্ভুত শক্তি আমার মাঝ চলে আসে|নিজের
আশেপাশে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটার আগেই আমি টের
পেয়ে যাই|যেমন তুই যে নিতুকে মারতে যাবি এটাও আমি
আগেই টের পেই|আর একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন|
:তার মানে আমি এ পর্যন্ত যতগুলো খুন করেছি সব ক'টার কথা কি তুই
আগ থেকে জানতি?
:না|
:কেন?
:কারন এতদিন তোর সাথে আমার
পরিচয় হয় নি|হলে জানতাম|
:আর তুই কি জানি বললি|কি জানি স্বপ্ন
দেখিস তুই?
:একটা মেয়ে দৌড়াচ্ছে|তার পিছন কালো একটা ছায়া দৌড়ে আসছে|মেয়েটা জোরে বাচাও বাচাও বলে
চিৎকার করছে অথচ কেউ তাকে বাঁচাতে আসছে না|
:মেয়েটাকে কি মেরে ফেলে ওই কালো ছায়াটা?
:সেটা
দেখার আগেই আমার ঘুম ভেঙে যায়|
:ও|এখন কি করবি?
:মেয়েটাকে ওই কালো ছায়ার হাত থেকে বাঁচাব|
:পারবি?
:আমি
ছাড়া আর কেউই তাকে বাঁচাতে পারবে না রে|
:তুই আমাকে বাঁচা
প্লিজ|আমাকে ওই কালো ছায়ার হাত থেকে বাঁচা|আমি বাঁচতে চাই|
আমার মনে হয় তোর স্বপ্ন কন্যাই আমি।
:তুই এখানে আসার আগে মরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলি|এখন আবার
বাঁচতে চাস কেন?
:জানি না|আমি কিচ্ছু জানি না|তবে এত কথা জানার পর
আসার আলোটা জ্বলে উঠেছে রে|*শুন মরে গেলেই সব
কিছুর সমাধান হয়ে যায় না|বেঁচে থেকে সমাধান করার যে মজা
সেটা মরে গিয়েও পাওয়া যায় না|এটা নেহাত বোকামি ছাড়া আর কিছই
নয়|মিরা কিছু বলল না|চুপ করে থাকল কেবল|ও ভাবল,'আসলেই
আমি একটা বেকামি করতে যাচ্ছি|'পাশ থেকে রাকিব মৃদু হেসে
বলল,
:তা তুই নাকি আমাকে কিছু একটা বলবি|মিরা কিছু বলছে না|মাথা
নামিয়ে নিয়েছে|লজ্জা পেয়েছে মেয়েটা|লজ্জায়
মেয়েটা একেবারে লাল হয়ে গেছে|রাকিব লক্ষ্য করল
মিরাকে খুব সুন্দর লাগছে|রাকিব মহিত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে
থাকল|
.
রকিব বাসে বসে আছে|নানান চিন্তা চারদিক থেকে ওকে
আকড়ে ধরছে|কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে
পারছে না|এমন সময় ও লক্ষ্য করল এক লোক ওর দিকে
তাকিয়ে আছে|ও খুব একটা গুরত্ব দিল না|তবে অস্বস্থিতে পড়ে
গেল ও|তবুও চুপচাপ বসে থাকল ও|রিকশা থেকে নেমে
গেইটের ভিতর ঢুকতে যাবে ঠিক তার আগেই কেউ একজন ওর
নাম ধরে ডাকল|তাকাতেই দেখল বাসের সেই লোকটা ওর
দিকে তাকিয়ে আছে|
.
:তোমার আম্মু কই বাবা?
:ভিতরে আছে
আঙ্কেল|আপনি বসেন|আমি ডেকে নিয়ে আসছি|
:আচ্ছ এখন
না হলেও হবে|এখন তোমাকে দরকার|
:জি বলেন|
:আচ্ছা!
তোমার সাথে কি এযাবত কোন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে?রাকিব
মৃদু হাসল|বলল,
:আমার জিবনটাই অস্বাভাবিক হয়ে গেছে|সব কিছু
পাল্টে গেছে|অন্ধকারকে এক ভয় সময় হত|এখন অন্ধকারে
থাকতে বেশি পছন্দ করি|রাতের বেলা অন্ধকারে হাটতে বের
হই|চালতা গাছের ধপধপে সাদা ফুল আমার কখনই পছন্দ ছিল না|আর
এখন সেটা আমার প্রিয় ফুল|এ রকম হাজারো পরিবর্তন হয়েছে
আমার মাঝে|
:আমাকে একটু খুলে বলত|আর কিভাবে এমন হল
সেটাও বল|
.
সবটুকু শুনে একটা দির্ঘশ্বাস ফেললেন জামাল
সাহেব|হঠাৎ-ই মরিয়ম বেগম বলে উঠলেন,
:রাকিব তোর সাথে
কে রে?
:জামাল চাচা এসেছে মা|*কি বলিস|আমাকে আগে
ডাকলি না কেন?এই বলে তিনি রুমে ঢুকলেন|
.
:রাকিবের কেন
সেদিন কিছু হয় নি সেটা আমি জানি|জামাল সাহেব বললেন কথাটা|
মরিয়ম বেগম
বললেন,
:কেন?বলেন ভাই|আসলে ওই পুকুর থেকে গোসল
করে আজ পর্যন্ত কেউ উঠে আসতে পারে নি|আমার
ছেলে কিভাবে পারল?
:আসলে পানি পরিক্ষার জন্যে আমি যে
পানিটুকু নিয়েছিলাম সেই পানির সাথেই কালো ছায়াটা আমার বাড়ি চলে
আসে|পরিক্ষার এক পর্যায়ে যখন আমি কিছুটা এসিড পানিতে ঢালি
তখনই একটা আর্তনাদ শুনতে পাই|সাথে সাথে আমার পরিক্ষার
পাত্রটা ভেঙে যায়|সেখান থেকে কালো ধোঁয়াকে উড়ে
যেতে দেখলাম|ঠিক তারপরই আমার মেয়ে মিরার চাৎকার শুনতে
পাই|আসলে সেটা গিয়ে আমার মেয়ের গায়ে প্রবেশ করে
এবং তার সকল কুকর্মে আমার মেয়েকে ব্যবহার করে|রাকিব ও
ওর মা খুব মনযোগ দিয়ে জামাল সাহেবের কথা শুনল|তারা দেখল
জামাল সাহেবের চোখে জল খেলা করছে|তিনি আবার
বললেন,
:সে দিন কালো ছায়াটা আমার বাড়িতে চলে আসাতে
রাকিবের কোন ক্ষতি করতে পারে নি|এখন আপনার
ছেলেকেই আমার মেয়েকে বাঁচাতে হবে|
:কিন্তু কিভাবে
বাঁচাবে ও|
:সেটা আমিও জানি না|আপনি জানেন?রাকিবের মা কি জানি
ভাবল|তারপর বলল,
:না|আমি জানি না|
:আচ্ছা এই কালো পুকুরের
রহস্যটা কি বলেন তো|
:আমি তেমন জানি না|তবে শুনেছি চৌধুরি
বাড়ীর বড় বউকে নাকি খুব অত্যাচার করত তারা|তাই সে নির্যাতন
সইতে না পেরে সেই পুকুরে এসে আত্মহত্যা করে|
:নির্যাতন করা হত কেন?
:কারন সে কালো ছিল|ছেলে প্রেম করে
বিয়ে করেছে|তারা সেটা ঠিক মেনে নিতে পারে নি|তারউপর
মেয়েটা কালো ছিল|যা উনারা একেবারেই মেনে নিতে পারে
নি|তাই নানা রকম নির্যতন শুরু করে মেয়েটার উপর|আহ্!মেয়েটা
শুধু মুখ বুঁজে তা সইত|তবে আমার জানা মতে মেয়েটা বড্ড
লক্ষি ছিল|এতটুকু বলে থামল মরিয়ম বেগম|পাশ থেকে রাকিব
বলে উঠল,
:এই কারনেই সে এখন মিরাকে দিয়ে সব কালো
মেয়েদের খুন করায়|এ যাবত যত গুলো মেয়ে খুন হয়েছে
সব গুলো মেয়ে ছিল কালো|
রাকিবের কথা শুনে জামাল সাহেব ও মরিয়ম বেগম তাজ্জব হয়ে
ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেন|বসার ঘরে নিরাবতা নেমে এল|মাথার
উপর ফ্যনের ফিস্ ফিস্ শব্দ আসছে কেবল|আর একটু শব্দও
হচ্ছে না|
.
জামাল সাহেব চিন্তিত হয়ে বসে আছেন|মরিয়ম বেগমও|হঠাৎ
রাকিব বলে উঠল,
:আমার কাছে একটা অদ্ভুত জিনিস আছে|
এই বলে ও উঠে ওর রুমের দিকে গেল|একটু পর ফিরে এল
হাতে একটা পদ্ম ফুল নিয়ে|অদ্ভুত সেই ফুল|কড়া লাল রঙের
পাপড়িতে ঘেরা মাঝখানের বেগুনি অংশটার সৌন্দর্য মাদকায়িত করে
তোলে|জামাল সাহেব ফুলটার দাকে তাকিয়ে আছে|অদ্ভুত!
সেই প্রথম দিন যেমন দেখেছেন তিনি ফুলটা আজও ঠিক একই
রকম রয়েছে|বিন্দু মাত্র পরিবর্তন হয় নি ফুলটার|একটা পাপড়িও
পঁচে কালো হয়ে যায় নি|একদম আগের মত রয়েছে ফুলটা|জামাল সাহেব অবাক হয়ে
সেদিকে তাকিয়ে আছেন|মরিয়ম বেগমও|রাকিব সেটা
ভ্রক্ষেপ করে বলল,
:আমার মাঝে একটা শক্তি আছে যা দ্বারা মানুষের ভেতরটা ভালো
ভাবে পরক্ষ করতে পারি|আমি যখন মিরা কে ফুলের কথাটা বলি
তখনই আমি দেখতে পাই মিরার ভেতরের কালো ছায়াটা
উত্তেজিত হয়ে যায়|এমকি সে বেশ কয়েকবার ফুলটা দেখার
জন্যে বলেছিল|আমি ঠিকই তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারি|তাই মিরাকে
কখনও ফুলটা দেখাতে নিয়ে আসি নি|দেখতে আসলেই সে
মিরার দ্বারা ফুলটা নিয়ে গায়েব হয়ে যাবে|আমার মনে হয় ফুলটার
কোন বিশেষত্ব রয়েছে|যার জন্যে কালো ছায়াটা মরিয়া হয়ে
আছে|রাকিব থামাল|জামাল মনে মনে হাসলেন|বললেন,
:তুমি মিরাকে চিন?
রাকিব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল|ও কি বলেছে আর উনি
বলছেন|রাকিব কিছুটা লজ্জা পেল|মাথা নামিয়ে বলল,
:জি!
মরিয়ম বেগম ছেলের এ অবস্থা দেখে মনে মনে হাসলেন|
.
গ্রামের অবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়েছে|আজ অনেক দিন পর
গ্রামে এসে এমন পরিবর্তন দেখে সত্যি মুগ্ধ হচ্ছে রাকিব|
মিরারও মুগ্ধতার শেষ নেই|অনেক গুলো সৃতি জড়িয় আছে এই
গ্রামে|এখানে আসতেই সব সৃতি যেন জেগে উঠল|জেগে
উঠা সৃতি গুলো নিয়ে গ্রামের এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে মিরা
আর রাকিব|তাদের দেখে মনে হচ্ছে
তারা খুব খুশি|উপরে খুশি খুশি ভাব হলেও ভিতরে এক প্রকার লড়াই
করে যাচ্ছে মিরা|ভেতরের কালো সত্বাটা ওকে বার বার
বলছে ও যেন রাকিব কে ফুল নিয়ে আসতে বলে|রাকিব যেন
ফুলটা মিরা কে দেয়|কিন্তু মিরা কোন ভাবেই সেটা চায় না|কারন
ফুলটা পেলে কালো ছায়াটা আরো শক্তিশালি হয়ে উঠবে|আর
সেটা মিরা চায় না|ঘুমের ভেতর থাকলেই অশুভ কলো ছায়াটা
মিরাকে বশ করে ফেলে|কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় সে মিরার উপর
জোর খাটাতে পারে না|তাই এখনও সে মিরার উপর জোর
খাটাতে পারল না|হঠাৎ-ই মিরার একটা কথা মনে পড়ে গেল|তার মনটা
খারাপ হতে থাকল|মুখটা হুট করেই কালো হয়ে গেল|রাকিব কিছুটা
বাঝতে পারল|বলল,
:কিরে?হঠাৎ করেই তোর মুখের এ অবস্থা হল কেন?
মিরা স্বচ্ছ ঘাসের উপর বসতে বসতে উদাস মনে বলল,
:গত দুই দিন থেকে একটা স্বপ্ন দেখে আসছি|ঠিক যেমনটা তুই
দেখতি|কালো অশুভ ছায়াটা আমাকে দৌড়াচ্ছে|আর আমি প্রানপণে
বাঁচার চেষ্টা করছি|হঠাৎ-ই দেখা মিলল কোন সুপুরুষের|যে
আমাকে বাঁচাতে এসেছে|কিন্তু আপসুস!আমি তার মুখটা দেখতে
পেলাম না|
রাকিব মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
:আপসুসের দরকার নেই|আজ রাতেই তার দেখা পাবি|
মিরা ঠিক বুঝল না কিছু|অবুঝের মত তাকিয়ে আছে মিরার দিকে|
.
চারদিকে খুব চাঁদের আলো|চাঁদাটাও অনেক বড়|এতবড় চাঁদ মিরা আগে দেখেছে কিনা মনে নেই|ওর বাবা
বলেছে আজকের চাঁদটা নাকি অনেক বড় হবে|কিন্তু এতটা বড়
হবে সেটা ওর ধারন ছিল না|ঠিক তখনই মিরা লক্ষ্য করল ও ওর রুমে
নেই|কি আশ্চর্য!একটু আগেই তো ওর মা ওকে এক গ্লাস দুদ
দিয়ে গেল|সেটা খেয়েই ও ঘুমিয়ে পড়ল|নিজের নরম
কোমল বিছানায়|কিন্তু ও এখানে এল কেন?আর কিভাবেই বা এল|
না!ও স্বপ্নও দেখছে না|তাহলে...মিরা চারপাশ ভালোভাবে লক্ষ্য
করল|আরে এটা তো সেই অলুক্ষনে পুকুরটা|কিন্তু ও এখানে
কি করছে|কিছুই বুঝতে পারছে না ও|ঠিক তখনই ও সামনের দিকে
তাকিয়ে দেখল কেউ একজন দু হাত উপরের দিকে তুলে
চাঁদের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে|তার ঠিক
সামনে লাল বেগুনি পদ্মটা|মিরার বুঝতে বাকি রইল না কি ঘটতে
যাচ্ছে|ও আস্তে আস্তে সেদিকে এগুলো|মেয়েটা তখনও
চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে|কিন্তু এঈ মেয়ে কে?না! এত কিছু
ভাবার সময় নেই|মিরাকে এখনই কিছু একটা করতে হবে|ও
আরেকটু সামনে এগুলো|মেয়েটার সামনে থেকে যে
করেই হোক ফুলটার সরিয়ে নিতে হবে|মিরা তাই করল|আস্তে
করে মেয়েটার সামনে পড়ে থাকা ফুলটা নিল|যখনই দৌড় দিতে
যাবে তখনই মেয়েটা চোখ খুলে ফেলল|মিরাকে দৌড়াতে
দেখে সেও মিরার পিছন দৌড়াতে লাগল|তবে মানুষ রূপে নয়|
কালো ছায়া রূপে মিরার পিছন দৌড়াতে লাগল|মিরা একবার ঘাঢ় ফিরাতেই দেখল একটা কালো
ছায়া তার পিছন পিছন দৌড়ে আসছে|ঠিক যেমনটা ও স্বপ্নে
দেখেছে|মিরা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল|ভয়ে মিরা চেঁচাতে
লাগল|কালো ছায়াটা ওর অনেকটা কাছে চলে এল|ঠিক তখনই মিরা
তার সামনে কেউ একজনকে দেখতে পেল|সে দাঁড়িয়ে
আছে| মিরা একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করল লোকটাকে|
আরেকটু কাছে যেতেই বুঝল এটা কে|মিরার ভয়টা অনেকটাই
কেটা গেছে রাকিব কে দেখে|মিরা এগিয়ে গিয়ে রাকিবকে
জড়িয়ে ধরল|রাকিব একটু ভালো করে সামনের দিকে তাকাতেই
দেখতে পেল ছায়াটা ওদের দিকে এগিয়ে আসছে|এসে
একেবারে রাকিবের সামনে দাঁড়াল|তারপর কালো ছায়াটা মানুষে
পরিনত হতে থাকল|রাকিব কিছুটা অবাক হয়ে গেল|এমন অবাক করা
কান্ড সে আগে কখনও দেখে নি|তাছাড়া এই সুন্দরি মেয়েটাইবা
কে|একটা কালো কালারের প্যান্ট ও কালো জ্যকেট পরিহিতা
মেয়েটাকে দেখে রাকিবের অবাক ভাবটা আরেকটু বেড়ে
গেল| মেয়েটার ঠোটে কড়া লাল রঙের লিপষ্টিক|চোখে
বেগুনি কালারের কাজল|রাকিবের অবাক হওয়ার
মাত্রাটা যেন বেড়েই চলচে|মেয়েটা রাকিবের দিকে
আরেকটু এগিয়ে এল|রাকিব অবাক ভাবটা কাটিয়ে
মেয়েটার দিকে রুক্ষ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
:তাহলে আপনিই আমার রুম থেকে ফুলটা চুরি করে নিয়ে
এসেছেন?
তা আপনি কে? আর এখানেই বা কি করছেন?
মেয়েটা রাকিবের দিকে তাকিয়ে হাসি দিল।অদ্ভুত সেই
হাসি।রাকিব কাউকে এভাবে হাসতে দেখেনি কখনও।
হাসি থামিয়ে সে বলতে লাগল,
:তোমরা কি ভেবেছ|আমি কোন ওই মরে যাওয়া চৌধুরি
পরিবারের বড় বউ এর আত্মা?হা হা হা|এটা তোমাদের ভুল
ধারনা|আমি কোন আত্মা নই|আমি হচ্ছি শয়তানের শির্ষ|
যে এই পৃথিবিতে রাজ করতে চায়|পৃথিবিকে নিজের করে নিতে চায়।নাম পিটাস।একটা শক্তিশালি শিয়তান|আমি হলাম
তারই শীর্ষ|সেদিন আমি চৌধুরি বাড়ির বড় বউকে মারার
কারনেই আজ তোমার সামনে দাঁড়াতে পেরেছি|তা না
হলে এভাবে একটা মেয়ের রূপ নেওয়া সম্ভব না|এটা শুধু
পূর্নিমার রাতেই করা সম্ভব|তা না হলে আরো আগেই
আমি তোমার কাছ থেকে ফুলটা নিয়ে নিতাম|এতদিন শুধু
এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলাম|কারন আজকের চাঁদটা হল
স্পেশাল চাঁদ|প্রতি বিশ বছর পর এমন চাঁদ দেখা দেয়|তখন
আমাদের মনভাসনা পূরণ হয়|আজকেই আমার সুযোগ|
আজকের মধ্যেই আমাকে ফুলটা থেকে সকল শক্তি চুসে
নিতে হবে|এর পর থেকেই আমি যেকোন সময়ই এই মেয়ের
রূপ ধারন করতে পারব এবং যা চাইব তাই করতে পারব|আর
এই কাজটা করার জন্যে আমাকে সাহায্য করবে তোমরা|
কি পারবে না?রাকিব মেয়েটার কথা শুনে কিছুক্ষন
হাসল|বলল,
:তুমি কি ভেবেছ|তোমার অশুভ কাজ করতে
আমরা তোমাকে সাহায্য করব?হা হা হা|এটা তোমার ভুল
ধারন মিস.|
:হা হা হা!আমাকে সাহায্য করতে তোমরা
বাধ্য|
:ইমপসিবল|আমরা তোমাকে সাহায্য নয়|খুন করতে
বাধ্য|
এই বলে রাকিব মেয়েটাকে একটা চড় দিল|অদ্ভুত
ব্যপার হল চড় দিতেই মেয়েটা হাওয়া হয়ে গেল|তারপরই
পিছন থেকে একটা হাসির আওয়াজ এল|তাকাতেই দেখল
মেয়েটা ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে|রাকিব দৌড়ে
গেল|মেয়েটার থেকে হাত পাঁচেক দূরে থাকা অবস্থায় একটা ঝাপ দিল|
রাকিব কিছুটা হয়ে অনুভব করল যে ও উড়তে পারছে|
অবাকটা বেশিক্ষন স্থায়ি হল না|ও মেয়েটার দিকে
উড়ে গিয়ে ঘুসি মারার আগেই মেয়েটা হাওয়া হয়ে
সেখান থেকে সরে গেল|রাকিব টুপ করেই মাটিতে পড়ে
গেল|পড়েই ও ককিয়ে উঠে|বা'হাতে খানিকটা চোট পায়
ও|তবুও আস্তে আস্তে উঠতে থাকল|তখনই মেয়েটা বলে
উঠল,
:বুঝেছি|তুমি এভাবে মানবে না|এই বলেই ও হাওয়ার
বেগে রাকিবের দিকে আসতে লাগল|রাকিব কিছু বুঝে
উঠার আগেই ও অনুভব করল ওর তল পেটা কেউ সজোরে
ঘুসি মারল|তারপর বুকে এবং পরিশেষে মাথায় জোরে
আঘাত অনুভব করে ও|ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠে ও|রাকিব
নিজেকে কন্ট্রল করতে পারল না|টলতে টলতে মাটিতে
পড়ে যায়|মিরা 'রাকিব'বলে চিৎকার দিয়ে রাকিবের
দিকে দৌড়ে আসতে লাগল|তখন মেয়েটা মিরাকে একটা
চড় মারে|মিরা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়|
রাকিব তা দেখেও কিছু করতে পারল না|একটা চিৎকারও
না|
.
রাকিব মিটমিট করে তাকাতেই দেখল মেয়েটা
ফুলটা সামনে নিয়ে দুহাত উপরে তুলে আছে|পাশে
তাকাতেই দেখল মিরা নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে|ওর
পাশেই দেখতে পেল জামাল সাহেব কে|তিনি
নির্বিকার হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি রাকিবের চিৎকার শুনে এদিকে এসেছেন|ঠিক তখনই
মেয়েটা উঠে এল|রাকিবের পাশে জামাল সাহেবকে
দেখতেই হেসে উঠল|জামাল সাহেব কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন|
মেয়েটা সেটা বুঝতে পেরে বলল,
:ভয় পাবেন জামাল
সাহেব|আপনার কোন ক্ষতিই আমি করব না|আপটার অল
অপনার কারনেই আমি সফল হতে চলেছি|
তারপর রাকিবের
কাছে এসে বলল,
:যাও!এই ফুলটা যেখান থেকে ছিড়েচ
সেখানেই রেখে এস|
রাকিব ভাঙা কন্ঠে বলল,
:আমি পারব
না|আমি একটু নড়তেও পারছি না|
মেয়েটা একটু হাসল|
বলল,
:পারবে!পারবে!তুমিই পারবে|আর এটা তোমাকেই
করতে হবে|কারন তুমিই ফুলটা ছিড়েচ|যাও বলছি|যাও|
:না|
আমি পারব|না|
:ওকে|নো প্রব্লেম|আমি অন্য ব্যবস্থা
করছি|
এই বলে সে ফুলটা রেখে উঠে গেল|মিরার গায়ের
কাছে গিয়ে বসে মিরার মাথাটা দুহাত দিয়ে ধরল|
বলল,
:যাবে?নাকি গাঁড়টা ভেঙে দিব?
রাকিব হাসল|উচ্ছ
স্বরে হাসতে লাগল|তারপর ফুলটা হাতে নিল|মেয়েটাকে
একটু ভালো করে দেখে নিল|কেননা এত সুন্দর মেয়ে আর
দেখা হবে হয়ত|অবশ্য মিরাও কম যায় না|রাকিব ফুলটার
গ্রান নিল শেষবারের মত|তরপর আস্তে করে ফুলের একটা
পাঁপড়ি ছিড়ে ফেলল|সাথে সাথে একটা আর্তনাদ শুনা
গেল|মেয়েটা চিৎকার দিয়ে মাটিতে শুয়ে গেল|অদ্ভুত
সেই আর্তনাদ|রাকিব আস্তে আস্তে সব গুলো পাঁপড়ি
ছিড়ে ফেলল|মেয়েটা মাটিতে শুয়ে কাতরাতে লাগল|
এক সময় কপট চিৎকার দিয়ে হাওয়া হয়ে গেল|রাকিব
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল|
সাথে জমাল সাহেব ও|মিরাও আস্তে আস্তে উঠতে
লাগল|এমন কিছু যে হবে সেটা রাকিবের আগেই জানা
ছিল|
.
পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে দুই মানব মানবি পা ডুবিয়ে
একজন আরেকজনের হাত ধরে বসে আছে|তাদের চোখে
স্বপ্ন ভাসছে|নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন|
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ