Bangla Golpo: স্বপ্নরাজ্য

বাংলা ছোট গল্প। বাংলা গল্প| Love Stories Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.
Bangla Golpo


গল্পঃ স্বপ্নরাজ্য

তাসফি আহমেদ


বিশাল গেইটের উপর খুব সুন্দর করে লিখা। " স্বপ্নরাজ্য ।" মৃদু শ্যাওলা পড়ে রঙটা খানিকটা সবুজ হয়ে গিয়েছে।একটা বাড়ি এখানে। এর চারপাশে ঘুরার জন্যে খুব সুন্দর, মনোরম কৃত্রিম দৃশ্য রয়েছে।যা দেখে প্রায় লোকই মুগ্ধ হয়।বাড়িটাও বেশ আকর্ষনীয়! যেন ভালোবাসা দিয়ে তৈরি বাড়িটা। তবে কেউ থাকে না এই বাড়িতে।এই বিস্তার জমির মালিক কে তাও কেউ জানে না।অবশ্য কেউ জানার চেষ্টাও করে নি।হয়ত প্রয়োজন হয় নি।সবাই আসে।ঘুরাঘুরি করে! আবার চলে যায়।জায়গাটা অনেকটা পার্কে পরিনত হয়েছে।অনেক কপোতকপোতির দেখা মিলে স্বপ্নরাজ্যে।আবার দেখা যায় কেউ বিষন্ন হয়ে বসে আছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কেউ কেউ।চুল উসকোখুসকো। দাঁড়ি গোঁপ বড় বড়।আবার কাউকে হাসতে দেখা যায়।প্রচন্ড খুশি সে।তার প্রেমিক আজ তাকে প্রপোজ করেছে।বেশ আবেগ প্রবন হওয়ায় কেঁদে ফেলেছে কেউ।আবার কেউ খুশিতে জড়িয়ে ধরেছে কারো বুক।খুব শক্ত করে ধরেছে একজন অপর জনের হাত।চিরকাল সেই হাতটা আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার অঙ্গিকার করেছে কেউ।কেউ কেউ রাখতে পেরেছে।আবার কেউ কেউ পারে নি।কষ্টে আছে অনেকে। কষ্ট গুলো এখানে এসে মিলিয়ে দেয়। বড় বড় চুল,দাঁড়ি গোঁপওয়ালা অনেকে বসে থাকে এখানে।কিছু সময় কষ্ট গুলো ভুলে কল্পনায় হারিয়ে যায় সে।যেখানে তার একটি কষ্টের অতিত আছে।আছে একটি মেয়ের চরিত্র।কিছু সুখ।কিছু কষ্ট।কিছু মায়া, ভালোবাসা আনন্দে ঘেরা একটা ভুবনে বাস করে সে।ভুলে যায় সেও কষ্টে আছে।একটু সময়ের জন্যে সেও সুখে থাকে। দুঃখ গুলো ছুসে নেয় স্বপ্নরাজ্য নামক বাড়িটা। কিছু সময়ের জন্যে দুঃখে থাকে সেও।
.
একটা বেঞ্চিতে বসে আছে একটা ছেলে।চুল,দাঁড়ি,গোঁপ গুলো বেশ বড় বড় নয় তার।ছোট ছোট। যথেষ্ট স্মার্ট সে।মনে হয় বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারে কোন সন্তান। তাকে দেখে কারো বুঝার উপায় নেই সে কষ্টে আছে।কল্পনায় ভাসছে সেও।তার অতিতেও একটা সুন্দর নারি ছিল।খুব সুন্দর করে কথা বলত।ছেলেটা মেয়েটার কন্ঠ শুনে বেশ মহিত হয়েছিল সেদিন।সেদিন আর আজ খুব তপাত এর মাঝে।কিছু লোক আছে যারা নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না।নিজের কষ্ট গুলো ভাগ করতে পারে না।তাদের দেখে কেউ বলতে পারে না তারা কষ্টে আছে।তাদেরও ভালো থাকার চেহারাটার আড়ালে যে একটা কষ্টে জর্জরিত অতিত আছে সেটা অনেকে ঠিক ধরতে পারে না।ছেলেটা ঠিক তেমনই। নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না ।চুপচাপ বসে আছে বেঞ্চিটাতে। কেবল এখানে আসলেই ও এমন হয়ে যায়।সেও কল্পনায় ভাসে কিছুক্ষণ! অতিতে চলে যায়।কষ্ট গুলো এপাড়ে থাকে।অতিত কল্পনার অপর পাড়ে।কষ্ট গুলো ছুসে নেয় সেই স্বপ্নরাজ্য নামক পার্কের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।ছেলেটাকে দেখলে বুঝা যায় না কিছু বছর আগে সেও সুইসাইড নামক জঘন্য কাজটা করতে গিয়েছিল।কষ্ট গুলো কি এমনই হয় যে একজন ভালো মানুষকে বাধ্য করে নিজের প্রান নিজেই নিতে।ভালোবাসায় কি এতই মজে যায় কেউ?এটা ঠিক না।মোটেও ঠিক না।
.
নুপুরের চোখ যুগল যখনই ছেলেটার দিকে গেল তখনই ওর বুকটা ধক করে ওঠে।কেঁপে উঠল ও।অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল তারও।ওর খুব ইচ্ছে হল ছেলেটাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।কপালে, গালে ও ঠোটে বেশ কয়েকটা চুমু দিয়ে ছেলেটার কিছু কষ্ট কমিয়ে দিতে ইচ্ছে হল। খুব ইচ্ছে হল ছেলেটাকে এখন গিয়ে বিয়ে করি।বলতে ইচ্ছে হয়,"এত কষ্ট কেন তোমার হু! এত কষ্ট কেন? আমি আছি না।আমি আছি তো।দেখ! এইত আমি চলে এসেছি।" প্রচন্ড মায়া হল ছেলেটাকে এভাবে দেখে।নুপুর কিছু সময় ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকল।ওর চোখ জোড়া ছলছল করতে থাকল।চোখের জল গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই চোখ সরিয়ে নিল নুপুর। যেন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলে কান্না শুরু করে দিবে নুপুর।এই মুহুর্তে কোন ভাবেই কান্না করা যাবে না।নুপুর আর তাকাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল।অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে।ও কিছুতেই এখন কান্না করতে চায় না।কিছুতেই না।
.
নুপুর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।চোখ কেবল ছেলেটার দিকেই যাচ্ছে।যেন ছেলেটার দিকে না তাকিয়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ও।নুপুর এ পর্যন্ত কতবার চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেটা ও জানে না। তবে এটা জানে যে এই ছেলেটার সাথে এখন কথা না বললে ও মারা যাবে।সত্যি সত্যি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।আবার যেতেও চাচ্ছে না ও।গেলেই যদি ওর কষ্ট আরো বেড়ে যায়? না! এটা কোন ভাবেই হতে দেওয়া যায় না।এমনিতেই আমার জন্যে ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে।এখন গিয়ে যদি কথা বলি তাহলে সেটা হবে কাটা গায়ে নুনের ছিটে দেওয়া।কথা গুলো নুপুর ভাবল।উঠে গেল না ছেলেটার কাছে।চুপচাপ বসে থাকল।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল ওর সাথে কথাও বলবে না।অন্য দিকে ঘুরতে চলে গেল।
.
সুমন আগের মতই চুপচাপ, ভাবলেশহীন ভাবে বসে রইল।কল্পনায় ভাসছে ও।নুপুর ওর দিকেই আসতে থাকল।অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আঁটকে রাখতে পারল না।সুমনের সাথে কথা বলার জন্যে ছুটে এল।সুমনের পাশে বসে পড়ল ও।কিছু সময় চুপচাপ থাকল।নুপুরের খুব ইচ্ছে হল সুমনের হাতটা ধরার।কিন্তু ধরল না।চুপচাপ বসে থাকল।সুমনের হাত ধরার কোন অধিকারই ওর নেই।কিছু সময় পরও যখন সুমন কিছু বলল না তখন নুপুর বাধ্য হয়ে বলল,
:কেমন আছ!
সুমন তখনও কিছ ুবলল না।ও এখনও কল্পনায় ভাসছে।নুপুর আবার বলল,
:কেমন আছ সুমন!
সুমন এবারেও কিছু বলল না।এমন ভাবে রয়েছে ও যেন ও বুঝতেও পারে নি ওর পাশে কে বসেছে।নুপুর সুমনের কাঁদে হাত রাখল।ঠিক তখনই সুমন হালকা কেঁপে উঠল। শিউরে উঠল।শিহরনটা সোজা গিয়ে ওর কোমল হৃদয়ে বিধল।কেন জানি ওর মনে হল যে মানুষটা ওর কাঁদে হাত রেখেছে তাকে ও আগ থেকে চিনে।অনেক আগ থেকে।ছলছল চোখে নুপুরের দিকে তাকাল।মেয়েটাকে দেখেই খানিকটা ভড়কে গেল সুমন।নিজেকে সামলে চোখ দুটো মুছল। নুপুর কেবল সামনে বসে থাকা ছেলেটার কান্ড এ দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে।ওর নিজের চোখও ছলছল করেছ।চোখের কোনায় জল জমতে থাকল।সুমন ভ্রু কুছকে বলল,
:কে আপনি?
নুপুর কিছু সময় চুপ করে থাকল।তারপর বলল,
:আমিই! আমি একটা স্বার্থপর মেয়ে।নামটা তোমার খুব চেনা।
মেয়েটার মুখে তুমি করে ডাকা শুনে কেমন জানি  লাগল সুমনের। কন্ঠটা কানে যেতেই দ্বিতীয় বারের মত আবার শিউরে উঠল ও।কেমন জানি চেনাচেনা লাগছে কন্ঠটা। সুমন বলল,
:কি নাম আপনার? 
:নুপুর! আমার নাম নুপুর।যার সাথে তোমার ফেবুতে পরিচয় ছিল এক সময়।
সুমন এবার পুরোপুরি শক খেল।নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করাতে পারছে না।এই সেই নুপুর! যাকে ও মন প্রান উজাড় করে এক সময় ভালোবেসেছিল।
.
গল্প পড়ার প্রতি তিব্র নেশা ছিল সুমনের।ফেবুতে মুলত আসত এই জন্যেই।কোন ছবি ছিল না আইডিতে।প্রোফাইল ছিল নীল রঙের একটা ছবিতে বড় করে "নীল" লিখা।আইডির নাম ছিল "নীল আকাশের গল্প। " ফ্রেন্ড লিস্টও খুব একটা বড় ছিল না।খুব একটা চেনাজানা কেউ নেই ওর।বন্ধুও নেই।ওর মত ছেলেদের বন্ধু হয় না।কেউ হতে চায় না।সেদিন হুট করেই সন্ধ্যেবেলা একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে "নয়ন তারা" নামক একটা আইডি থেকে।সাথে একটা মেসেজ।
:আপনার প্রোফাইল পিকে  "নীল" নাম কেনো?আসলেই কি আপনার কাছে নীল আকাশের কোন গল্প আছে?আমাকে একটু শুনাবেন প্লিজ?
মেসেজটা দেখেই খানিকটা ভড়কে যায় সুমন।ঠিক বুঝে উঠে পারে না কি বলবে।অনেক ভেবেচিন্তে বলে,
:না! আমার কাছে নীল আকাশের কোনো গল্প নাই।।নীল নামটা আমার পছন্দ।তাই দিয়েছি।কেন? কোন সমস্যা আছে?
:সমস্যা মানে! অনেক বড় সমস্যা।আপনি এই নাম দিবেন কেন? এসব নাম দেয় কবি সাহিত্যিকেরা।আপনি কি কবি বা সাহিত্যিক?
:নাম।আমিও কবিও না।সাহিত্যিকও।ওদের লিখা যারা পড়ে আমি তাদের মত একজন।মানে একজন পাঠক আমি।
:তাহলে এই নাম কেনো দিয়েছেন?আমি তো ভেবেছিলাম আপনি লেখকটেখক হবেন।তাই এই নাম দিয়েছেন।এখন! এখন কি হল! আপনি তো আমার মতই একজন পাঠক।আর শুনুন যে এই নামটা দিবে তার সাথে নামটা মিল থাকা উচিত।আপনার নামটা দেওয়া মোটেও ঠিক হয় নি।আমাকে বলতেন আমি একটা নাম খুঁজে দিতাম।
:ঠিক আছে। দিন তাহলে একটা নাম।
:হাহাহাহা!দুষ্টামি করছিলাম।আসলে মাঝে মাঝে কি সব উদ্ভট দুষ্টামি করে ফেলি।সরি সরি।একটু পাগলামি করলাম আরকি।তবে আপনার প্রোফাইলটা দেখে ভালো লেগেছিল।তাই রিকু দিলাম।
সুমন কিছু সময় কিছু বলল না।চুপ করে থাকল।তারপর বলল,
:জানেন আমার আইডির নাম "নীল আকাশের গল্প" কেন? 
:কেন?
:কারন আমার আকাশটা নীল না।ধুসর কালো।কালো মেঘ সে আকাশে উড়ে বেড়ায়।আমার নীল আকাশটা কষ্টের কালো ছায়ায় কালো হয়ে আছে।কেবল মেঘ জমেই থাকে।মাঝে মাঝে বর্ষন হয়।জানেন আমার আকাশে বৃষ্টি হওয়ার সময় কেউ দেখে না।কেবল আমি ছাড়া।তাই আইডির নাম দিয়েছি নীল আকাশের গল্প।কেননা আমার নীল আকাশটা কালো হয়ে আছে। আমি নীল আকাশ দেখতে পাই না।অথচ নীল আকাশ আমার ভীষন পছন্দ।এই জন্যেই এই নাম দেওয়া।ভালোবেসে আইডির নাম দিয়েছি এটা।
ও পাশ থেকে কিছু সময় কোন রিপ্লে এল না।কিছু সময় পার হওয়ার পর নুপুর  বলল
:খুব কষ্ট আপনার তাই না?
সুমন কিছু বলল না।সেদিনের মত ফেবু থেকে চলে গেল।রাতে আর যায় নি ফেবুতে।শুয়ে ছিল।কান্না করছিল হয়ত। রুম অন্ধকার করে কান্না করছিল।রাতে কখন ঘুমিয়েছে সেটা ওর জানা ছিল না।
.
নুপুর বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। ছেলেটার আইডির নাম নিয়ে এমন মজা করাটা ঠিক হয় নি।মোটেও না।নুপুর  রাতে ফেবুতে এস বেশ কিছু সময় সুমনের অপেক্ষায় ছিল।সুমন না আসায় খুব খারাপ লাগতে লাগল।নুপুর রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পারে নি। ঘুম আসে নি ওর।খুব খারাপ লাগছিল ওর কাছে।শেষ রাতে এক ঝাক চিন্তা নিয়ে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে।
.
:কি ব্যাপার! কাল কোথায় গিয়েছিলেন?
সুমনকে অনলাইনে দেখতেই মেসেজটা দিল নুপুর।সুমন বলল,
:কোথাও না।খারাপ লাগছিল।তাই শুয়ে গিয়েছি।
:আই এম সরি!
:ইটস ওকে।আসলে এই বয়সে মা কে হারাতে হবে ভাবতে পারি নি। খুব কষ্ট পেয়েছি মাকে হারিয়ে।বাবা ছিলেন বাসের ড্রাইভার। আমাকে ওখানে যেতে বলতেন যেখানে উনি থাকাতেন।কিন্তু আমি যাই নি কেন জানি না এই বাড়িটাই আমার কাছে ভালো লাগে।এখানে যেন আমি মায়ের গন্ধ পাই।যেন মা আমার চারপাশে ঘুরে।বাবা টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে দেয়।আসলে গাড়ি চালিয়ে খুব ক্লান্তি এসে যায় উনার।তাই আর আসে না।মেছে থাকে।কি করবে! এ ছাড়া যে উপাও নেই।একা একা পড়ে থাকি আমি।আর নীল আকাশের গল্প নিয়ে ভাবি।ইশশ্! যদি আমারো এমন একটা নীল আকাশ হত তাহলে আমার একটা গল্প হত।দুর্ভাগ্য আমার।আমার মত অধমদের নীল আকাশ হয় না।ঘন কালো,আষাঢ়ে আকাশ হয় আমাদের।কর্দমাক্ত হয় আমাদের জিবন।
কথা গুলো পড়তেই দু চোখ ছলছল করে উঠল নুপুরের।ওর খুব কান্না করতে ইচ্ছে হল। প্রচন্ড আবেগি মেয়েটা।ক'ফোটা জল চোখ হতে গড়িয়ে পড়ল।বলল,
:এভাবে বলবেন না।যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।ভালো করে পড়ালিখা করুন।জিবনে কিছু একটা করতে হবে আপনাকে।আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন।ঠিক আছে।
:আচ্ছা! ঠিক আছে।
.
এভাবে ওদের কথা বলা বাড়তে থাকে।সুমন ঠিক বুঝতে পেরেছে যে নুপুর ওর প্রতি ভীষণ দূর্বল হয়ে পড়েছিল।এটা সুমন একদমই চায় নি।ও কোন ভাবেই ওর এমন জিবনের সাথে কোন মেয়েকে জড়াতে চায় নি।তাই ওর সাথে কথা বলা কমিয়ে দেয়।রেগে কথা বলে। ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারে না নুপুর।তাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।বলে,
:এভাবে না কাদালেও পারতে সুমন।আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। এটা তুমি একদমই ঠিক কর নি।
সুমন ভাবল ও ফাইজলামি করছে।তাই বলল,
:তাই নাকি! যদি সত্যি সত্যি কান্না করে থাকেন তাহলে ০১৯........ এই নাম্বারে কল দিন তো। আপনার কান্নার আওয়াজ শুনব।
ওর ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরই একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসল। রিসিভ করতেই ওপাশে কান্নার আওয়াজ শুনা গেল।মেয়েটা সত্যি সত্যি কান্না করছিল।নাহ! ঠিক হয় নি।মোটেও না।সুমনের নিজের থেকেই খারাপ লাগতে লাগল।অনেক কষ্টে ওর কান্না থামাল সুমন।সরি বলতে বলতে মুখ ব্যাথা হয়ে যায় ওর।প্রমিস করে আর কাদাবে না ওকে।ভীষন খুশি নুপুর।খুশিতে একেবারে গদগদ অবস্থা।এর পর থেকেই ওদের মাঝে কথা বলা বেড়ে যায়। কয়েক দিন পর পিক চায় নুপুর।সুমন নিজের ছবি দেয়।তবে ওপাশের মানুষটার কাছ থেকে ছবি চাইতে পারে না সুমন।ভীষন ভয় হয় ওর।যদি ও কিছু মনে করে?
একদিন রাতে ওর সাথে ফোনে কথা বলছিল সুমন।রাত প্রাত  ১টা বেজে গিয়েছে হয়ত।সুমন যখন ফোন রেখে দিবে তখন ও একটা কান্ড করে বসে।চিৎকারের দিয়ে বলে "ভালোবাসি।" এটা বলেই ফোনটা কেটে দেয়।হাসি দেয় সুমন।আনমনে হেসে বলে "পাগলি একটা।" 
.
সুমন নিজের সম্পর্কে সব বলে ওকে। কতটা কষ্টে থাকে ও সেটাও বলে। এ সব কিছু মেনে নেয় নুপুর।এগুলো মেনে নিয়েই সুমনের হাত ধরে ও।আজিবন এক থাকার অঙ্গিকার করে।তবে সেটা ফোনেই।দেখা হয় নি কখনো ওদের।ছবিও দেখে নি সুমন।অন্ধের মন ভালোবেসেছে ও নিজেও।এর পর অবশ্য ওর মায়ের সাথেও কথা হয়।কি আশ্চর্য! মেয়েটা যেন ওর বাবা মাকে মানিয়ে নিয়েছে।সুমন আর নুপুরের বিয়ে যেন ঠিকই হবে।সুমন সেটা বিশ্বাস করতে থাকল।আর এই বিশ্বাসই ছিল ভুল।সব চেয়ে বড় ভুল।
সেদিন হুট করেই নুপুরের মা সুমনের সাথে দেখা করতে চাইলেন।একটা জায়গার নাম বললেন।সুমনের বাসা থেকে তার দূরত্ব প্রায় তিন ঘন্টার পথ।খুব ভোরে উঠেই তৈরি হতে থাকল ও।ভালো ভাবে সেজে গুজে সুমন সেখানে গেল।নুপুরের মায়ের বেশ বিলাশবহুল গাড়ি দেখেই খানিকটা চমকে যায় সুমন।তবুও নিজেকে সামলে রাখে।নুপুরের মা ওর সম্পর্কে জানতে চায় সব কিছু খুলে বলে ও।বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর হাসি মুখে বিদায় নেন উনি।উনার হাসি মুখ দেখে ভীষণ ভালো লাগে সুমনের।যাক! একটা টেনশন থেকে বাঁচা গেল।নুপুর আমার! আমরই থাকবে।বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে বাসায় গেল সুমন।
.
সন্ধ্যায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে নুপুরের কথা ভাবতে থাকল সুমন।ইন্টার পরিক্ষা শেষ ওর।রেজাল্ট দিবে কিছুদিন পর।সুমনের তা নিয়ে চিন্তা নেয়।ওর একটাই চিন্তা। ওকে অনেক বড় হতে হবে।নুপুরদের যোগ্য থে হবে।এর জন্যে ওকে যা করতে হয় করবে ও। সুমন ওর বাবাকে ফোন দিল।কিছু বই কিনতে হবে।ওকে ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে।বড় হতে হবে ওকে।তাই কিছু বইয়ের প্রয়োজন।টাকা দেওয়ার জন্যে ওর বাবাকে ফোন দেয় ও।কথা বলা শেষ হতেই নুপুরের মায়ের কল আসে ওর ফোন।ধরেই সালাম দেয় ও।উনি সালামের উত্তর নিলেন না।কপট রাগ নিয়ে বললেন,
:আমার মেয়েকে আর ফোন দিবে না।ওর সাথে যোগাযোগ রাখবে না।তোমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়ে কি আমার মেয়ের জিবন ধ্বংস করব?শুন! আমি এতটা বোকা নই।
 কথাটা বলার পরই নুপুর খুব জোরে কান্নাকাটি করে দিল।সুমন ফোনের এ পাশ থেকে শুনতে পেল ওর কান্নার আওয়াজ। নুপুর ওর নাম ধরে ডাকছিল।বলছিল, আমি ওকে চাই মা।আম ওকে ভালোবাসি।এতটা নিষ্ঠুর হইও না।প্লিজ।
তারপরেই একটা পুরুষালি  কন্ঠ শুনা গেল ওপাশ থেকে।ঝারি দিচ্ছিলো কেউ নুপুরকে।সম্ভবত ওর বাবা।এর পরেই ঠাশ করে একটা চড়ের আওয়া এল।
ওর মা আরো কিছু কথা বলে।সেগুলো যেন সুমনেরর গায়ে তীক্ষ্ণ তীরের ন্যায় বিধছিল।প্রচন্ড কান্না পেক ওর।চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিল।ও পাশের পাশান মহিলাটা ততক্ষনে ফোন কেটে দিয়েছিল।
.
এর পর সুমন নুপুরকে অনেক খুঁজেছে।পায় নি।পাগলের মত খুজেছে ছেলেটা।অনেকটা মানসিক রোগি হয়ে গেল ও।খায় না।কথা বলে না খুব একটা। একা একা এক রুমে পড়ে থাকে।মাঝে মাঝে নুপুরের নাম বলে চিৎকার দেয়।ওর এ অবস্থা দেখে ওর বাবা ওকে উনার কাছে নিয়ে যায়।এখন অবশ্য সুস্থ আছে ও।
.
ছলছল চোখেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকল সুমন।ক'ফোটা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।বলল,
:তুমিই সেই নুপুর!
:হুম।আমিই সেই নুপুর।যাকে তুমি পাগলের মত ভালোবাসাতে। আমিই সেই নয়ন তারা।
সুমন আর একটা মূহুর্ত ব্যয় করল না।চট করেই নুপুরকে জড়িয়ে ধরে।হু হু করে কান্না শুরু করে দেয় ও।কান্না করতে করতে বলে,
:কোথায় গিয়েছিলে তুমি।জানো! তোমায় কত খুঁজেছি।খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি।আর কখনই আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।আমার কষ্ট হয়।বুকটা ফেটে যায়।যেন কেউ চুরিঘাত করে আমার হৃদয় আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।এই বলে ওকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকে ও।সুমন আবার চট করেই ওকে ছেড়ে দেয়।বলে,
:শুন! আমি তোমার কথা রেখেছি।অনেক বড় হয়েছি।এখন তোমার মায়ের চেয়ে দামি গাড়ি আমার আছে বুঝেছ।একটা বাড়ি আছে আমাদের।বাবা একা একা থাকে।আমাক্র বিয়ে করতে বলে। আমি করি না।কারন আমি জানতাম তুমি আসবে।তোমাকেই আমি বিয়ে করব।
সুমন কি বলছে ও নিজেও জানে না।খুব খুশি হওয়াতে কি না কি বলবে সেটাও ভেবে পাচ্ছে না।অতিরিক্ত খুশি ও।হুট করেই ও উঠে দাঁড়াল।নুপুরের হাত ধরে টানতে লাগল।বলল,
:চল!
নুপুর এতক্ষণ সুমনের দিকে তাকিয়ে ছিল।পাগলটার এমন পাগলামি দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছে না ও।এবার একেবারে কেঁদেই দিল ও।শব্দ করে কাঁদতে লাগল।সুমনের বুকটা ধক করে উঠল
বলল,
:কাঁদছ কেন? কি হয়েছে তোমার?
নুপুর কিছুই বলছে না।কেবল কেঁদেই যাচ্ছে।সুমন কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা চারবছরের বাচ্ছা ছেলে এসে নুপুরের গলা জড়িয়ে ধরল।বলল,
:আম্মু তুমি কান্না করছ কেন? কি হয়েছে?
নুপুর কিছু বলল না।কেবল নিজের ছেলেকে কোলে টেনে নিল।সুমন বোকার মত কেবল দেখেই গেল।আশ্চর্য হয়ে বলল,
:এ কে নুপুর!
নুপুর যেন এর অপেক্ষায় ছিল।সাথে সাথে বলল,
:ও আমার বাচ্ছা।
সুমনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।রক্ত চোখে নুপুরের দিকে তাকাল।বলল,
:তুমি -তুমি বিয়ে করে ফেলেছ? ছিঃ আমায় এভাবে ধোকা দিতে পারলে তুমি?
নুপুর কান্না করতে করতে বলল,
:কি করব বল।বাধ্য হয়েছি আমি।কিছুই করার ছিল না।বাবা মা জোর করেই বিয়ে দিয়ে দেয়।
:তাহলে তুমি আমার সাথে প্রেম করলে কেন? কেন আমার জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলেছ।
:আমি তোমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলি নি সুমন।ভাগ্য আমাদের...
:চুপ! একদম চুপ।চলে যাও এখান থেকে আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না।কথাটা বলে নিজেই কেঁদে উঠল ও।ঠিক তখনই নুপুরের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাসফি নামটা ভেসে উঠল।নুপুর চোখ মুছে ফোন রিসিব করল।ওপাশ হতে হস্তদন্ত হয়ে তাসফি বলল,:কি ব্যাপার! তোমরা কোথায়।তোমাদের খুঁজতে খুঁজতে আমি ক্লান্ত প্রায়।
নুপুর ভেজা কন্ঠে বলল,
:তুমি গেইটের সামনে দাঁড়াও।আমরা আসছি।
:তোমারা মা ছেলে না আমায় জ্বালিয়ে খাবে।জানো কত টেনশন হচ্ছিল।হুট করেই আমার পাশ থেকে উধাও হয়ে গেলে।আস আজ।মজ দেখাব।
:আসছি।
বলে ফোন কেটে দিল ও।তাসফির সত্যিই টেনশন হচ্ছিল।খুব ভালোবাসে স্ত্রী আর পুত্রকে।
নুপুর উঠে দাঁড়াল।তাসফির চোখে চোখ রাখল।বলল,
:তোমাকে বলতে হবে না।আমি চলে যাচ্ছি।তবে একটা কথা বলি। শুন।যদি আমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবেসে থাক তাহলে নিজেকে নতুন ভাবে তৈরি কর।আমি হয়ত তোমার হত্র পারি নি।কিন্তু অন্য কেউ তো তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে।তাকে কষ্ট দিও না।একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেল।
কথাটা বলতেই গলা ভিজে এল নুপুরের।অনেক কষ্ট সেটাকে আঁটকে রাখল।সুমন এগিয়ে এসে নুপুরের হাত ধরল।বলল,
:না গেলে হয় না নুপুর? তোমায় নিয়ে আমি দূরে কোথাও পালিয়ে যাব।চল না।
:তোমার মাথা ঠিক আছে।কি বলছ তুমি?
:আমি জানি না আমি কি বলছি।আমি জানতে চাইও না।আমি শুধু তোমাকে চাই।প্লিজ।শুধু তোমাকে চাই। :সুমন।পাগলামি কর না।ছাড় আমাকে।ছাড়।এই বলে এক ঝটকায় হাত ছাড়িতে নিল।বলল,
:ভালো থেক!পারলে একটা বিয়ে কিরে শান্তিতে থেক।আত আমাক্র ভুলে যেয়।
এই বলে বাচ্ছাটাকে নিয়ে হনহন করে চলে যায় ও একটি বারের জন্যেও পিছন ফিরে চায় না।সুমন ডাক দেয়।বলে,
:নুপুর দাঁড়াও।
নুপুর দাঁড়াল।পিছন ফিরল না।সুমন বলল,
:তুমি আমাকে চিনলে কিভাবে?
নুপুর কিছু বলল না।আবার চলে যেতে লাগল।ও যতই দূরে যাচ্ছে  সুমনের বুকটা ততই কুকড়ে উঠছে ।ব্যাথা হয় বুকের বাঁ পাশে।যেন হৃদয়টা ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে কেউ।ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর।চিৎকার করে কেঁদে উঠল ও।ডুকরে কান্না শুরু করে দিল।আওয়াজটা নুপুরের কানে গেল তবুও সে পিছন ফিরল না।সামনের দিকে এগিয়ে চলল।আর তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তেই থাকল।তবে সেটা সুমনের চোখের আড়ালে।
এর পর মাঝে মাঝে সুমনকে স্বপ্নরাজ্যের ওখানে দেখা যায়।তবে আগের মত কল্পনায় ঢুবে থাকে না।এমনি চুপচাপ বসে থাকে।হয়ত কারো আসার অপেক্ষায় আছে ও।ঠিক এর কিছুদিন পরেই একটা মেয়েকে দেখে ও।ওর বেঞ্চি হতে কয়েক হাত দূরে অন্য একটা বেঞ্চিতে সেও বসে আছে বিষন্ন মায়ায়।তার চেহারাও গল্প ভাসছে।বিষন্নতার গল্প।আষাঢ়ে গল্প।সুমনের খুব ইচ্ছে হল মেয়েটার আষাঢ়ে গল্প জানার। কথা বলতে ইচ্ছে হল কিন্তু ও কথা বলল না।ওর সামনেও গেল না।চুপচাপ বসে রইল।এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে ওর।
ভীষন ভালো লাগছে।
.
শেষের কাহিনীটা কাল্পনিক হলেও প্রথমটা সত্য।যার গল্প এটা এবং যিনি উক্ত নুপুরকে পাগলের মত খুঁজচ্ছেন তিনি যেন নুপুরকে  গল্পের শেষংশের অবস্থায় না পান সেই দোয়াই করি।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url