Bangla Golpo: কেন এই ঘৃণা

BanglaGolpo: কেন এই ঘৃণা

তাসফি আহমেদ


সাদিক আবারও কাগজটা বের করল।ঠিকানাটা আবারও ভালো করে দেখে নিল।হ্যাঁ! এই বাড়িটাই। এখানেই তো থাকে সেই লোক।যাকে সাদিক তন্নতন্ন করে খুঁজছে। সাদিক বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজাল।নাহ! কোন সাড়া পাচ্ছা না ভেতর থেকে।দরজায় ঠক ঠক করে শব্দ করল।শব্দ করতেই দরজাটা খুলে গেল।সাদিক কিছুটা অবাক হল।আশ্চর্য! কেউ এভাবে দরজা খুলে রাখে! সাদিক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকল। এভাবে কারো বাসার দরজা খোলা পেয়েই হুট করে ঢুকে যাওয়া ঠিক নয়।একদম ঠিক নয়।এটা ভদ্রলোকের কাজ না।চোরেরা এভাবে ঢুকে।দরজা একটু ফাঁক পেলেই ঢুকে পড়ে।সাদিক চোর নয়।যথেষ্ট উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে ও।তাই হুট করেই ঢুকে গেল না।বেশ কয়েকবার ডাক দিল।কিন্তু কেউ সাড়া দিল না।সাদিক উপায় না পেয়ে ভিতরে ঢুকল। কারন ওকে বলা হয়েছে বাসায় কেউ না থাকলেও ঢুকে গিয়ে বসে থাকতে।সাদিক ভিতরে ঢুকল।বসার ঘর পরিপাটি করে রাখা।এক সেট সোফা আর তার সামনে একটা ছোট্ট টি-টেবিল রাখা। বসার ঘরের পাশেই রান্না ঘর।দক্ষিণে একটা রুম আছে।রুমের দরজাটাও খোলা।সাদিক রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকল।রুমটা বাইরে থেকে লক্ষ্যে করল।রুমটা বেশ পরিপাটি করে রাখা।একদম গোছানো। একটা ছেলের পক্ষ্যে এতটা গোছগাছ থাকা অনেকটাই কষ্টের।সাদিক বেশ অবাক হল।ঘরটা একদম খালি।কেউ নেই।কেমন জানি ভূতুড়ে। সাদিকের কেমন জানি লাগল। অবশ্য ওকে এখন প্রতিনিয়ত ভূতের সাথেই থাকতে হয়।তাই সাধারণ পরিবেশও ওর কাছে কেমন জানি ভূতুড়ে লাগে।সাদিক সোফায় গিয়ে বসল।ওর কেমন জানি লাগছে।খুব অস্বস্তি লাগছে ওর কাছে।তবুও চুপচাপ বসে থাকল।
.
বিকেল তিনটা বাজে।নিরা বিছানায় শুয়ে আছে।দুপুরের খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়ল ও।খুব ক্লান্ত লাগছে ওর কাছে।সারাদিন এত কাজকর্ম করলে ক্লান্তিতো আসবেই।খুব ক্লান্ত থাকায় নিরার চোখটা লেগে এল।ঘুমটা এখনও ঘভির হয় নি।এমন সময় শুনতে পেল টেপ থেকে পানি পড়ছে।গড় গড় শব্দ হচ্ছে।কেউ যেন গুনগুন করে কান্না করছে।নিরা এক ঝাক ক্লান্তি নিয়ে বিছানা হতে উঠে বসল।মনে মনে ভাবল "আবার সেই কষ্ট? " নিরার চেহারায় একঝাক বিরক্তি দেখা দিল।আস্তে করে বলল,
:আল্লাহ! কবে যে এই আপদ হতে মুক্তি পাব?আমি আর পারছি না।
ঠিক তখনই রান্নাঘর হতে খট খট আওয়াজ এল।কেউ যেন রান্নাবান্না করছে।একটা পাতিল মেজেতে পড়ে গেল।ঝনঝন করে একটা শব্দ হল। নিরাকে সেই আগের মতই বিরক্ত দেখাল।তবে ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে না এটা নতুন কিছু।যেন প্রতিনিয়ত ওর সাথে এমনটাই হয়।ও মোবাইলটা হাতে নিল।সাদিককে ফোন করা দরকার। ওর ভীষণ ভয় করছে।ভয়ে যেন গা কেঁপে উঠছে।এমন সময় ও দেখল ঠিক ওর গায়ের শাড়ির মত শাড়ি পরে কেউ একজন বসার ঘরের দিকে গেল। ওর চুল খোলা।অদ্ভুত স্বরে কান্না করছে সে।নিরার ভয়ের মাত্রাটা আরেকটু বেড়ে গেল।বসার ঘর হতে কান্নার আওয়াজ আসছে।আওয়াজের তীব্রতা বাড়ছে।সাথে নিরার ভয়ের মাত্রাটাও বাড়ছে।নিরা কল লিষ্টে গেল। প্রথমেই সাদিকের নাম্বার পেল।কল দিবে ঠিক তার আগেই আবার সেই কান্নার শব্দ।এবার শব্দটা একেবারে কাছ থেকে আসছে।যেন সেই অদ্ভুত মেয়েটা ওর দিকে তড়িতবেগে এগিয়ে আসছে।নিরা সামনের দিকে তাকাতেই দেখল একটা মেয়ে।মুখটা সম্পুর্ন সাদা।চোখ দুটো নেই।গর্ত হয়ে আছে।সেখান থেকে রক্ত ঝরছে।ওর দিকে তাকিয়ে মেয়েটা হাসল।ওর কালো দাঁত গুলো দেখে নিরা আরো ভয় পেয়ে গেল।চিৎকার দিয়ে উঠল ও।একটু পিছিয়ে গেল।আত্মাটা আরেকটু এগিয়ে এল।নিরা সাদিককে ফোন দিবে তার আগেই মেয়েটা ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল।ফ্লোরের দিকে ছুড়ে মারল।ফোনটা পড়তেই কয়েকটা শব্দ হল।তারপর কয়েকভাগে ভাগ হয়ে গেল।আত্মাটা নিরাকে বেশ কয়েকটা চড় মারল।চড়ের আঘাত সামলাতে পারল না ও।গোঙ্গিয়ে উঠল ও।তারপর জ্ঞান হারাল।
.
সাদিক বসে আছে।লোকটা এসেছে।ওকে একটু অপেক্ষা করতে বলেছে।কফি বানিয়ে আনতে গিয়েছে ল।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল লোকটা বাসাতেই ছিল।বার্থরুমে ছিল।গোসল করেছে সে।সাদিক আরো আশ্চর্য হল কারন লোকটা ওকে দেখেই চিনে ফেলল।সে নাকি জানত সাদিক যে আসবে।মাহফুজ মিঞা নাকি উনাকে আগেই সাদিকের কথা বলে রেখেছে।সাদিক আরো বেশি আশ্চর্য হল কারন লোকটা ওর সমান বয়সি। লোকটা না! তার সুন্দর একটা নাম আছে। তাসফি! নামটা অনেকটাই মেয়েলি নামের মত।তবে বেশ সুন্দরও বটে।সাদিক প্রথমে শুনে ভীষণ অবাক হল।ছেলেদের এমন নাম হয়?
তাসফি কফির মগটা সাদিকের দিকে বাড়িয়ে দিল।মৃদু হাসল।সাদিক বলল,
:আপনি এখন দুপুরের খাবার খাবেন। তা না করে কফি খাচ্ছেন কেন?
তাসফি মুখে হাসি রেখেই বলল,
:খাওয়ার ইচ্ছে নেই। আর তাছাড়া আমি খাব আর আপনি একা একা বসে থাকবেন তা তো হয় না।
সাদিকের তাসফির কথাটা শুনে ভালো লাগল।যাক অন্তত ছেলেটার মাঝে সিনসিয়ারিটি আছে।সাদিক তো ভেবেছিল ছেলেটা উদ্ভট টাইপের হবে।তাসফি আবার বলল,
:তা কি সমস্যা আপনার? হঠাৎ আমার খোঁজ করলেন যে?
সাদিক কিছুটা আমতাআমতা করে বলল,
:আসলে সমস্যাটা হচ্ছে আমার ঘরে। কিছু একটা আছে ওই ঘরে।যা আমাকে এবং আমার স্ত্রিকে জ্বালিয়ে মারে।সেদিন বিয়ে করেছি।মাস চারেক হবে।এর মাঝে যদি এমন সমস্যা হয় তাহলে ভালো লাগে!
:আপনি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন।কি কি সমস্যা হয় আপনাদের।
:আমি ঠিক কিভাবে যে বোঝাই।আসলে কিছু একটা এই যেমন আত্মা টাত্মা আরকি! এমন কিছু আছে ওই ঘরে। সে নিয়ম করে আসে।প্রথমে বার্থরুমের টেপ ছেড়ে দেয়।গুনগুনিয়ে গান গায়।তারপর রান্না ঘরে গিয়ে খুটখুট শব্দ করে।পাতিল ফেলে দেয় মেজেতে।যেন সে রান্নাবান্নায় মহা ব্যাস্ত।মাঝে মাঝে অদ্ভুত স্বরে কান্না করে। তারপরই সে আমার বউয়ের দেহে প্রবেশ করে।আমাকে মারতে শুরু করে।মাঝে মাঝে আমার বউকে মারতে থাকে।রাত হলে আমার বউ নিরাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।আমি ওকে খুজতে বের হই।প্রতিদিন ছাদে গিয়ে দেখি সে দোলনায় বসে আছে।কি যেন ভাবছে।তারপর হুট করেই আমার দিকে তাকায়।আমি প্রথম দিন দেখেই অজ্ঞান হয়ে যাই।সাদা চেহারা।একেবারে সাদা চেহারা তার।চুল গুলো খোলা।দাঁত গুলো ভিষণ কালো।আমার দিকে তাকিয়ে হাসল ও।ওর সেই হাসি দেখেই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।জ্ঞান ফিরার পর দেখি নিরা পাশে বসে আছে।চোখের নিচে কালো কালী পড়ে আছে ওর।কেমন জানি ভয় ভয় করে আমার দিকে তাকায় ও।এখন প্রতিদিন এমনটা হয়।কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
:এটা কি প্রতিরাতে হয়?
:হুম।প্রতি রাতেই হয়।
:কখন থেকে এমন হয়?
:এই তো চার মাস হবে।
:মানে বিয়ের পরেই?
:হুম।
তাসফি খুব মনযোগ দিয়ে সাদিকের কথা গুলো শুনল।সাদিককে একটু ভালো করে পরক্ষ করল।অনেকক্ষণ চুপ থাকল।কিছু বলল না।কি যেন ভাবল।বসার ঘরে কিছু সময় নিরাবতা নেমে এল।হুট করেই তাসফি বলল,
:আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব।প্রশ্ন গুলো কাগজে লিখে পাঠাব আপনাকে। কাল! কাল আমি একজনকে পাঠাব।সে একটু দেখে আসবে।আর প্রশ্নের কাগজটা ওর হাতে আপনাকে দিবে।ওকে!
:আচ্ছা! ঠিক আছে।তাহলে আমি আজ আসি।
:হুম।আসুন।আর এই নিন।এটা আমার নাম্বার। প্রয়োজনে ফোন দিবেন।
:জি! আচ্ছা!
.
সাদিক অনেকটাই ক্লান্ত।অফিস হতে ছুটি নিয়ে সাকের আহমদ (তাসফি) -র সাথে দেখা করতে গিয়েছে ও।খুব ধকল যাচ্ছে ওর উপর।নিরার উপরও। কষ্টে আছে দুজনই।সাদিক ক্লান্ত শরির নিয়ে বাসার সামনে আসল।বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজাল। কিন্তু কোন রেসপন্স ফেল না ভিতর থেকে।নিজের কাছে যে চাবিটা ছিল সেটা দিয়ে দরজা খুলল।নিজের রুমে গিয়েই কিছুটা অবাক হল ও।পুরো রুমটা অগোছালো হয়ে আছে।বিছানার চাদুরটা মেজেতে পড়ে আছে।কিছু বই ছিল টেবিলে।সেগুলো মেজেতে পড়ে আছে।মিহিন খুব পছন্দ করত বই।বইয়ের পোকা ছিল ও।সেই বই গুলোই মেজেতে পড়ে আছে।মেজেতে চোখ যেতেই দেখল নিরার নিথর দেহ পড়ে আছে।সম্পুর্ন উলঙ্গ ও।সাদিকের বুকটা হুট করেই ধক করে উঠল। দৌড়ে গেল নিরার কাছে।মেজে হতে চাদুরটা নিয়ে নিরার শরির ঢেকে ফেলল।কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিল ওকে।জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ওর।আলমারি খুলে নিরার একটা জামা নিল ও।ডাক্তারকেও ফোন দিল।
.
তাসফি কলিংবেল বাজাতেই সাদিক দরজা খুলে দিল।ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও ভালো নেই।একদম ভালো নেই।কিছু একটা নিয়ে টেনশনেই আছে ও।তাসফিকে দেখেই শুকনো হাসি দিল।বলল,
:আসুন!
তাসফি ভিতরে ঢুকল। দুহাত দু পকেটে। বসার ঘরে গিয়ে বসল।কিছু সময় চুপচাপ বসে থাকল।সাদিকও বসল।তাসফি বলল,
:চিঠিটা পেয়েছেন?
সাদিক শুকনো মুখে বলল,
:কোন চিঠি?
:কেন? কাল রাকিব নামক যে ছেলেটাকে পাঠিয়েছি সে আপনাকে চিঠিটা দেয় নি?
:হুম।দিয়েছে।যেখানে দুইটা প্রশ্ন ছিল মাত্র।
:হুম।সেগুলো বলবেন।তার আগে চলুন আপনার স্ত্রীকে দেখে আসি।
সাদিক একটু ইতস্তত বোধ করল।মুখ ভার করে বলল,
:আসুন আমার সাথে।
তাসফি ওর ইতস্ততভাবটাকে উপেক্ষা করল।সাদিকের সাথে ওর রুমে গেল।দেখল আধ মরা হয়ে একটা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।মুখটা শুকিয়ে আছে।চোখের নিচে কালী পড়ে আছে।বেশ মায়াবি মুখ।তাসফির ভিশন খারাপ লাগল।সাদিকের দিকে ইশারা করল।যেন না জাগায়।মেয়েটা হয়ত অনেক দিন ঠিক মত ঘুমায় না।ঘুমাক মেয়েটা। সাদিক নিরার পাশে বিছানায় বসে রইল।তাসফি ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখল।কিছু বই দেখল।বেশ গোছানো বই গুলো।যেন কেউ প্রতিদিন খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে।তাসফি রুমের দক্ষিণ কোন থেকে কাগজে মোড়ানো কিছু একটা বের করল।সাদিক তা দেখে ভীষণ অবাক হল।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল কেবল।তাসফি রুম হতে বেরিয়ে গেল।রান্না ঘরে গেল।সেখান থেকেও তেমনই কিছু একটা বের করল।বসার ঘরে গিয়েও আরেকটা বের করল।সাদিক অবাক হয়ে দেখল কেবল।অবাক ভাব কাটিয়ে বলল,
:এগুলো কি? আর কেই বা এগুলো এখানে রেখেছে?
:এগুলো কি সেটা আপনার না জানলেও চলবে।আর কাল যে ছেলেটা এসেছে না ওই রেখেছে এগুলো।
:কে? ওই রাকিব?
:হুম।
.
তাসফি আরো কিছুক্ষণ পুরো ঘরটা পরক্ষ করল।সাদিক অবুভব করল ওর কাছে খুব হালকা লাগছে। প্রতিদিন যেমন ভূতুড়ে একটা অবুভব হত এখন তেমনটা মোটেও হচ্ছে না।কেমন জানি খুব ভালো লাগছে। তাসফি ঘুরছে ঠিকই। তবে মনের ভিতর অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে।আর একটা ফোন কলের অপেক্ষা করছে ও।কিছু সময় পরই কাঙ্গক্ষিত কলটা এল।ফোন ধরতেই রাকিব ওপাশ থেকে হস্তদন্ত হয়ে বলল,
:ভাইয়া! কেউ কিছু বলছে না।কেমন যেন ভয় পাচ্ছে সবাই।সাদিকের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেই সবাই এড়িয়ে যায়।যা বুঝলাম! এই এলাকার সবাই ওকে খুব ভয় পায়।
:বোর্ডটা নিয়ে চলে আয়?
:প্লানচেট করবে?
:হুম।চলে আসিস।প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নিয়ে আসিস।
:আচ্ছা।
তাসফি কথা বলে পেছনের দিকে তাকাল।দেখল সাদিক কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও খুব চিন্তিত। কেমন জানি লাগছে ওকে।তাসফি ওর দিকে এগিয়ে গেল।সোফায় বসে পড়ল।বলল,
:আপনি কি খুব বেশি বই পড়েন?
কথাটা শুনে সাদিক কিছুটা অবাক হয়ে গেল।কিছু সময় আমতাআমতা করে বলল,
:না! তেমন কিছু না।আমি খুব একটা বই পড়ি না।তবে মাঝে মাঝে পড়ি আর কি?
:আচ্ছা! তা কাল কি হয়েছিল।এত রাতে ফোন করলেন যে?
সাদিক কিছু সময় চুপ থাকল।হয়ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।কাল রাতের গল্প বলার প্রস্তুতি! মুখে বিরক্তি ভাবটা চলে গেল।যেখানে গল্প ভাসতে লাগল।হাজারো গল্প।অজানা গল্প।সাদিক বলল,
:পরশু আপনার ওখান থেকে আসার পর দেখি আমার রুমটা কেমন জানি অগোছালো হয়ে আছে।নিরাকে দেখলাম উলঙ্গ হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।ওকে সেখান থেকে উঠাই।নতুন জামা পরাই।ডাক্তার কে ফোন দেই।তারপর...
:নিরার গায়ে আগে যে জামা গুলো ছিল সেগুলো কোথায় ছিল।
:জানি না।সেগুলো পাই নি আমি।
:আচ্ছা! তারপর?
:রাতে ঘুমিয়েছিলাম।নিরা খুব ক্লান্ত ছিল।তাই আগেই ঘুমিয়ে গেল।আমি একটু দেরি করেই ঘুমাতে যাই।চোখ লেগে আসতেই শুনতেই পেলাম কারো কান্নার আওয়াজ।আমি কিছুটা অবাক হই।ভয় পেয়ে যাই।পাশে তাকিয়ে দেখি নিরা নেই।আমি তাড়াতাড়ি উঠে গেলাম।দেখলাম নিরা দয়জা খুলে কোথাও যাচ্ছে।আর অদ্ভুত স্বরে কান্না করছে।আমি দৌড়ে ওর কাছে গেলাম।ওর হাত ধরে টান দিলাম।টান দিতেই ওর হাতটা ওর শরির হতে আলাদা হয়ে চলে আসে।সেখান থেকে তাজা রক্ত পড়তে থাকল।আমি যেন স্তব্ধ হয়ে যাই।চিৎকার দিতেও পারি না।ভয়ে গলা একেবারে শুকিয়ে গিয়েছে।নিরা আমার দিকে ফিরতেই দেখলাম সে নিরা না।সেই মেয়েটা!
:কোন মেয়েটা?
সাদিক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল।বলল,
:আরে ওই ভূত মেয়েটা! যে প্রতিদিন আসে।সেই সাদা চেহারার অধিকারীনি।যার দু'চোখ নেই।সেখান থেকে রক্ত ঝরছে কেবল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর এগিয়ে এসে আমার গলা চেপে ধরল।আমি গুঙ্গিয়ে উঠলাম। ঠিক তখনই নিরা আসল পিছন থেকে।জোরে একটা চিৎকারের দিল।দৌড়ে এগিয়ে এল আমার দিকে।মেয়েটা নিরাকে দেখতেই বলে উঠল,
:ভুল করছ! ভুল করছ তুমি!
তাসফি এইবার কিছু বলল না।মনযোগ দিয়ে শুনতে থাকল কেবল।সাদিল বলতে লাগল,
:নিরা মেয়েটাকে ধরতেই মেয়েটা আমাকে জোরে ছুড়ে মারল।তারপর নিরাকেও জোরে ছুড়ে মারল।তারপর আস্তে আস্তে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
সাদিক থামল।তাসফি ওর দিকে তাকিয়ে থাকল কেবল।তাসফি মনে মনে কিছু একটা ভাবল।বলল,
:প্রশ্ন গুলোর উত্তর?
সাদিক একটু বিব্রত বোধ করল।বলল,
:আপনার প্রথম প্রশ্ন ছিল আমি আগে বিয়ে করেছি কি না? এর উত্তর হল "না"।২য়য় প্রশ্ন হল আমি কি কখনো কাউকে খুন করেছি? এর উত্তরও একই।"না"।
তাসফির কেন জানি মনে হল সামনে বসা ভালো মুখোশদারি লোকটা মিথ্যা বলছে।খুব বড়সড় একটা মিথ্যা বলছে।তাসফি কিছু বলল না।সাদিকের দিকে তাকিয়ে থাকল কেবল।ঠিক তখনই নিরাকে দেখতে পেল।রোগাপাতলা মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে রুমের দরজার সামনে। ওকে খুব ক্লান্ত লাগছে।
.
সাদিক ও তাসফি কফির মগটা নিল।নিরাও নিল।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।নিরা একটা জিনিস লক্ষ্য করল।ওর কাছে এখন আর এই বাড়িটা ভূতুড়ে মনে হচ্ছে না।কেমন জানি ভালো লাগা কাজ করছে।নিরা ভীষণ অবাক হল।এটা নিশ্চই এই তাসফি সাহেবের কারনেই হচ্ছে।এতে নিরার সন্দেহ নেই।কারন বিকেল থেকেই লক্ষ্য করছে ও।লোকটা অদ্ভুত ভাবে এই বাড়িটা দেখছে। ওর কেন জানি মনে হচ্ছে এই আত্মাটা তাসফি সাহেবকে ভয় পাচ্ছে।ভীষণ ভয় পাচ্ছে।তাসফি নিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
:আপনাকে আর একটু কষ্ট করতে হবে। আমরা রাতে প্লানচেট করব।ওই আত্মাটা আপনার দেহেই ঢুকবে।তাই আপনাকে এই শেষ সময়টাতে কষ্ট করতে হবে।
নিরা শুকনো হাসি দিল।বলল,
:আচ্ছা।ঠিক আছে।তবে এই প্লানচেট কিভাবে করে?
তাসফি কথাটা শুনে সাদিকের দিকে তাকাল।কেননা প্রশ্নটা সাদিকের কাছ থেকে আশা করছিল ও।সাদিক অন্য মনষ্ক হয়ে আছে।তাসফি বলল,
:সাদিক সাহেব আপনিও শুনন।কিভাবে প্লানচেট করতে হয়।
তারপর তাসফি বলল,
:প্লানচেট হচ্ছে আত্মাদের ডাকার একটা মাধ্যম। এর দ্বারা কথা বলা যায় আত্মাদের সাথে। এখানে চারজন মানুষ দরকার হবে আমাদের। সবাই বোর্ডে হাত রাখার পরে একটা ৩" পরিধির ছোট বোল নিতে হবে। সেটা উল্টো করে ধরে তা আগরবাতির ধোঁয়া দিয়ে পূর্ণ করতে হবে এবং যেকোন মৃত মানুষের আত্মাকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে তখন। তারপরে চারজন মানুষ তাদের অনামিকা আঙ্গুল আলতোভাবে বাটিতে (বোলে) রাখবে। বাটি ঘুরতে শুরু করবে এবং অক্ষরগুলোর (বোর্ডে অক্ষর থাকবে)উপর দিয়ে যাবে।যা দ্বারা আমরা আত্মার নাম জানতে পারব।বাকি কাজ আমার!
নিরা ভীষণ অবাক হল।বলল,
:আচ্ছা! আমরা এটা করব কেন?
:আপনাদের ঘরে যে আত্মাটা আছে সেটা যেইসেই আত্মা নয়।খুব ভয়ঙ্কর এক আত্মা।
:আপনি কি ভাবে বুঝলেন?
তাসফি একটু হাসল।তারপর পকেট হতে সেই কাগজের অদ্ভুত জিনিসটা বের করল। বলল,
:এটা কাল রাকিব নামক যে ছেলেটা এসেছিল না ও রেখে গিয়েছে।এটা ভেদ করে কোন সাধারণ আত্মা ঘরে ঢুকা সম্ভব না।সেখানে সেই আত্মাটা কাল রাতে আপনাদের উপর আক্রমন করেছে।তাই এটা এতটা সাধারন আত্মা নয়।
:ও।আচ্ছা।
নিরা কিছু বলল না।তবে ওকে বেশ চিন্তিত লাগল।এতক্ষণ যে এত কথা হল তার মাঝে সাদিক একটা কথাও বলল না।চুপচাপ অন্য মনষ্ক হয়ে থাকল।মুখে হাত দিয়ে বসে রইল।হুট করেই সাদিক প্রশ্ন করল।বলল,
:তাহলে আপনি আত্মার সাথে কথা বলবেন।তাই তো?
তাসফি বলল,
:হুম।ঠিক তাই।
.
সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছে সাদিকের মুখের ভাবটা ততটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।ফর্সা মুখটা কালো হত্র থাকল।তাসফি ব্যাপারটা খুব ভালো করে লক্ষ্য করল।
.
রাত বারোট পাঁচ বেজে গিয়েছে।এতক্ষনে আত্মাটা নিরার দেহে অনেকবার প্রবেশ করত।কিন্তু আজ একবারেও করল না।এতে সাদিক ও নিরা দুজনেই বেশ অবাক হল।কিন্তু তাসফি ততটা বিচলিত হল না।তাসফি নিরার রুমটা খালি করল।দেয়ালে বেশ কয়েকটা ছবি আঁকল।পুরো রুম মোমবাতি লাগিয়ে দিল।বোর্ডের চারকোনায় চারটা লাগাল।সব কাজ শেষ।এখন কেবল বসলেই হবে।বোর্ডে বসতে যাবে তার আগে সাদিক তাসফিকে কিছু একটা বলতে চাইল।তবে তাসফি তা শুনল না।বোর্ডে বসতেই তাসফি বলল,
:বোর্ড হতে কেউ হাত সরাবে না।আর আত্মা আসলে মোমবাতি গুলো কেঁপে উঠবে।আর রাকিবে তোর পাশেই নিরা
আছে।তাই একটু খেয়াল রাখবি।
রাকিব উদ্ধিগ্ন হয়ে বলল,
:আচ্ছা।
তাসফি মন্ত্র পড়তে শুরু করল।কিছু সময় পর একটা আলোড়ন শুরু হল।পুরো রুম যেন কেঁপে উঠল।মোমবাতি গুলো নিভু নিভু হয়ে আছে।খুব জোরে একটা বাতাস বইল।রুমের সব মোমবাতি নিভে গেল।কেবল নিরার সামনের মোমবাতিটা জ্বলতে লাগল।বোলটা বেশ কয়েকবার গুরল।তারপর আর ঘুরল না।সব গুলো শব্দ মিলিয়ে হয় "মিহিন" নামক কোন একটা মেয়ের নাম।তাসফি সাদিকের দিকে তাকাল।দেখল ও মাথা নিচু করে আছে।তাসফি কিছু বলল না।আবার মন্ত্র পড়তে লাগল।হুট করেই নিরা চিৎকার দিয়ে উঠল।ওর চেহারা হুট করে চেঞ্জ হয়ে গেল।ধপধপে সাদা হয়ে গেল।লাল লাল চোখ গুলো তাকিয়ে আছে সাদিকের দিকে।কেমন জানি অস্পষ্ট স্বরে আওয়াজ করছে।তাসফি বলল,
:কে তুমি? কি চাও।
নিরা চিৎকারের দিয়ে উঠল।বলল,
:আমি মিহিন।আমি এই সাদিকের মৃত্যু চাই!
:কেন? কেন তুমি ওর মৃত্যু চাও।কি ক্ষতি করেছে ও তোমার?
:হাহ! কি করে নি ও।ছি! এত নিচু ও।এত নিচু! এই ছিল আমার এত বেশি ভালোবাসার পরিনাম।খুব ভালোবাসতাম ওকে।কিন্তু ও! ও আমাকে দেখতেও পারত না।কোন দিন একটু ভালো করে তাকায় নি।মারত আমায়।ভীষণ মারত।মুখ বুঁঝে সহ্য করেছি সব।কেবল ভালোবাসি বলে।আর ও।ও কি করেছে জানেন? নিজের প্রমোশনের জন্যে আমাকে, আমার শরিরকে দিয়ে দিয়েছে ওর অফিসের সেই জানোয়ার সমতুল্য মানুষটাকে।রাতকে রাত থাকতে হয়েছে আমাকে অন্যের রুমে।তারা টাইমপাস করত আমাকে নিয়ে।ছিনিমিনি খেলত।এই ছিল আমার এত ভালোবাসার পরিনাম।এই ছিল! আমি মুখ বুঁজে মেনে নেই।কিন্তু ও।ও অন্য নারীর ফাঁদে পড়ে আমাকে ডিবোর্স দিতে চায়।আমি নিশেধ করি।প্রতিবাদ করি।পুলিশে কেইচ দেওয়ার হুমকি দেই আমি।ও কি করেছিল জানেন! আমাকে খুন করেছিল।খুন করে মাটিতে পুঁতে রেখেছিল।এই ছিল আমার এত ভালোবাসার পরিনাম।এত বেশি ভালোবাসার অপরাধ। এই বলে ও কান্না করতে থাকে।চোখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে ওর।তাসফি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সাদিকের দিকে। ও ভেবেছিল এমন কিছুই হবে।তবে সেটা যে এত বিভৎস হবে সেটা ওর জানা ছিল না।ঠিক তখনই সাদিক বোর্ড হতে আঙ্গুল সরিয়ে নেয়। পুরো রুমটা যেন আবারো কেঁপে উঠে। এক প্রকার আলোড়ন সৃষ্টি হয় রুমে। এভাবে আত্মাকে ডেকে যদি বোর্ড হতে হাত সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে সেই আত্মা খেপে যায়।এটাকে তারা অপমান মনে করে।সাদিক উঠে গেল।অন্য রুমে গিয়ে একটা রিভলভার নিয়ে এল।কালো একটা রিভলভার। বলল,
:আয় তুই। বেয়াদব মেয়ে।আয়।আজ তোকে মেরেই ফেলব।
এই বলে রিভলভার নিরার দিকে তাক করল। মিহিন নের আত্মাটা নিরার শরির হতে বেরিয়ে গেল চট করেই।নিরা মাটিয়ে পড়ে গেল।তাসফি আর রাকিব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল সাদিকের দিকে।লোকটাকে দেখলে খুব ভালোই মনে হয়। কিন্তু ওর মাঝে যে এতটা খারাপি থাকবে কে জানে?রাকিব ও তাসফি অবাক হয়ে সাদিকের দিকে তাকিয়েই থাকল।ঠিক তখনই মিহিনের গলার আওয়াজ ভেসে এল।সে হাসছে।খুব জোরে হাসছে।বলছে,
:ভুল করেছিস তুই সাদিক।বড্ড বেশি ভুল করে ফেলেছিস।তোকে ক্ষমা করাটাও হবে খুব বড়সড় অপরাধ। এই বলে অদৃশ্য কেউ একজন সাদিককে একটা আঘাত করল।সাদিক ছিটকে গিয়ে দেয়ালের উপর ছিটকে পড়ল। ফ্লোরে পড়েই গঙ্গিয়ে উঠল ও।সেই ফাঁকে তাসফি আর রাকিব নিরাকে নিয়ে রুম হতে বেরিয়ে গেল। তাসফি রুম হতে বেরিয়েই দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিল।রাকিব অবাক হল ভীষন। বলল,
:ভাইয়া সাদিক সাহেব?
:ওকে বাঁচালেও পাপ হবে। মরুক শালা।আগে নিরাকে বাঁচানো প্রয়োজন। দেরি হলে নিরাও মারা যাবে।
:তাহলে ওই আত্মার বিনাশ হবে কিভাবে?
:দেয়ালে চিত্র এঁকেছি না।আর পুরো রুমে যে মোম গুলো ছিল না, সেগুলো প্রত্যেকটা এক একটা তাবিজ।এগুলো ভেদ করে কোন আত্মাই বের হতে পারবে না।সাদিককে মারার পর ওই আত্মাটা কোথাও যেতে পারবে না।এখানেই তার বিনাশ হবে।চল চল। আগে নিরাকে বাঁচাই।
নিরাকে রাকিব ও তাসফি ধরাধরি করে নিয়ে গেল।আর রুমের ভিতর হতে অদ্ভুত সব চিৎকার আসতে থাকল।সাদিক খুব জোরে একটা চিৎকার দিল।তারপর ধপ করে মেজেতে পড়ে গেল।এরপর থেকে সাদিকের গলার আওয়াজ এল না আর।কেবল মিহিনের চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকল।একসময় সেটাও নিস্তব্দ হয়ে গেল।সব শান্ত হয়ে গেল।কোথাও টু শব্দও হচ্ছে না।একেবারে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।এর বেশ কিছুক্ষন পর সেই রুমের দরজাটা কেঁচ কেঁচ শব্দ করে খুলে গেল।রুম হতে ধোঁয়া বের হতে লাগল।হুট করেই সব ধোয়া উধাও হয়ে গেল।
.
নিরা ভালো আছে।খুব ভালো আছে।সাদিকের এমন কাজের জন্যে তিব্র নিন্দা জানিয়েছে ও।ওর মৃত্যতে খুশি ও।এরপর অবশ্য নিরাকে তাসফির সাথে বেশ কয়েকবার কফি খেতে দেখা গিয়েছে।ভিবিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে ওর দুজন এক সাথে।

(সমাপ্ত)
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ


বাংলা গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url