গল্পঃ তুমি আমার
আমি তখন ভার্সিটি ভর্তি হয়েছিলাম।ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার কারনে আমাকে বাবা-মা এবং ভাই বোন কে ছেড়ে মেছে থাকতে হয়।কারন আমাদের ভার্সিটি থেকে বাড়ি অনেক দুরে।পড়ালিখায় আমার অগ্রগতি ছিল বেশ।কিন্তু কিছুক্ষেত্রে চেষ্টার ত্রুটি ছিল। অবশ্য তা সমাধান করার চেষ্টায় লেগে আছি এখন। এখানে আমার কামরাটা ছিল মাজারি টাইপের। শুধু একটা বুক সেলফ ছিল।আর একটা ছোট টি-টেবিল।বিছানাটা ফ্লোরেই করতে হত।একা থাকি। তাই তেমন ব্যাবস্থা নেই।বিল্ডিং টা পাঁচ তালা বিশিষ্ট। পঞ্চম তলার উপরে মানে ছাদে ছোট দুই রুম প্লাস একটা বাথরুম আছে।এখানেই আমি থাকতাম।এক রুমে আমি রান্না করি আরেক রুমে আমি ঘুমাই।যে রুমে আমি ঘুমাই সে রুমের উত্তর পাশে একটা ছোট জানালা আছে।ওই জানালা দিয়ে প্রশান্তির বাতাস আসে।মৃদু বাতাসে প্রান টা শান্তিতে ভরে যায়।তাই আমি তার নাম দিয়েছি শান্তির জানালা।আর রাতে চাঁদ উঠলে আমি পড়া শেষ করে চাঁদ এর আলো গায়ে মাখতাম। খুব ভালো লাগত।
.
আমার দুইটা জগৎ ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ফেবু,সেখানে সবাই আমায় ছিনে একজন লেখক হিসেবে।সেখানে আমার ছবি দেওয়া নেই।তাই কেউ আমাকে ছিনে না। আর আমি সেটাই চাইতাম। এই জগৎ -এর নাম অসাধারণ জগৎ। আরেকটা জগৎ হচ্ছে এইটা।যে জগৎ টা আমি এখন অতিবাহিত করছি। যেখানে সবাই আমাকে জানে যে আমি একজন সহজ, সরল ও ভালো ছেলে।তাই আমি এই জগৎ-নাম দি সাধারন জগৎ। সাধারন জগৎ -এর কথাটাই আগে বলি।
আমি খুব একটা বড় লোক ফেমিলির ছেলে নই,তা আমাকে দেখলেই বুঝা যায়।তবে স্মার্ট হয়ে চলার চেষ্টা করতাম। আমার এই চেষ্টা আঘাত হানে ৩য় তলায় ভাড়া থাকা একটা মেয়ের উপর। তার মতে আমার চলা উচিৎ আনস্মার্ট ভাবে।এখন আপনারাই বলেন,আমি গরিব বলে সে এক আধ দিন একটা সুন্দর ড্রেস পরে কি ভার্সিটি যেতে পারি না ? কিন্তু তিনার মতে এ হতেই পারে। এ কেমন কথা তা আমি আজোও বঝিনি।সে যদি এই বাড়ির কর্তার মেয়ে হত আমাকে সে তাৎক্ষনাত এই বাড়ি ছাড়া করত।আমার ভাগ্য ভালো যে বাড়ির মালিকের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।তা না হলে যে কি হত আল্লাই জানে।সে যাই হোক,তিনি আমাকে এক ফোটাও সহ্য করতে পারেন না।এ নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু মাথা ব্যাথাটা এখানে এসে বেধেছে যে,মেয়েটি এখন ভার্সিটি তেও আমাকে যা নায় তা বলছে। হেস্ত নেস্ত করে কথা বলে।কিছুই বলি না আমি।আমার কেন জানি কিছুই বলতে মান চায় না।আসলে স্বভাবত আমি একটু কম কথা বলি।
.
মেয়েটার জন্যে এখন আমার চন্দ্রবিলাশ করতেও সমস্যা হচ্ছে। সে এখন ছাদে এসে বসে থাকে।যদিও সে আমাকে ছাদে আসতে না করে নি!! তবে আমার ওর সামনে গিয়ে বিরক্তিকর পরিবেশ তৈরি করার কোন রূপ ইচ্ছে নেই।তাই দরজা বন্ধ করে আমি আমার শান্তির জানালার কাছে যাই।বিশাল শহর। লাল,নিল বাতির সমারাহ। তার উপর চন্দ্রের মিষ্টি আলো।মৃদু হাওয়া!! বেশ ভালোই লাগে।নিয়মিত ভার্সিটি যাই আসি।মাঝে মেয়েটির সামনেও পড়ি।তখন লেজ ঘুটিয়ে পালাই।কারন এত সুন্দর মানবির মুখে আমি বিরক্তিত আভা দেখতে চাই না।আর তার সাথে বিন্দু মাত্র জগড়া করার ইচ্ছা কোন কালেই আমার হয় নি আর হবেও না।তবে তার উপদ্রব কিছুটা কমেছে বলে মনে হয়।এখানে নিউটনের সুত্র টা কাজে দিচ্ছে না।যদি কাজে দিত তাহলে তার সাথে আমার এত দিনে অনেক কিছু হয়ে যেত।আর আমিই ইচ্ছে করে নিউটনের সুত্রকে সমর্থন করতে চাই নি।তাই মেয়েটি যখন দেখবে আমার কাছ থেকে কোন প্রকার কথা পেরত পাচ্ছে না,এক সময় সে নিজেই থেমে যাবে।এই মেয়েকে এখানেই স্টপ করে রাখি।মানে এই মেয়ের কাহিনী আর কি।
.
অসাধারণ জগৎ-এ আসা যাক।এখানে আমার প্রভাব প্রশংসনীয়। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে।ছেলেরাও কম যায় না। অনেকে মেয়েই আমাকে নানা ভাবে প্রপোজ করে।এমনকি ছেলেরাও!!! কি হাস্যকর বেপারটা।।
অনেক মেয়েই আমাকে প্রপোজ করে।তবে আমি জানি তাদের মধ্যে কেউই আমাকে রিয়েল লাভ করে না।আর আমি তাদের কাছ থেকে ভালোবাসাও চাই না।তাদের অনেক কেই আমি নানা ভাবে পরিক্ষা করি। এই যেমন,
কেউ যদি আমাকে প্রপোজ করে আমি তার সাথে কিছুদিন কথা বলি।তারপর একদিন সুযোগ বুঝে বলি যে আমার দুই পাঁ নেই।আমি পঙ্গু। এই কথা বলার পর আর তাকে খুঁজে কে।সব সময় পঙ্গু বলি না।মাঝে মাঝে অন্য কিছুও বলি।এতে তাদের এত ভালোবাসা যে কই যায় তা বলাই বাহুল্য।
এমনি একদিন এক মানবির মেসেজ পাই।মেসেজটি ছিল,
আপনার লিখা খুব ভালো লাগে।আপনার প্রতিটা গল্প আমার প্রায় অনেক বারই পড়া হয়ে গেছে।এত ভালো গল্প লিখেন কি ভাবে,,,,?
আমার কাছে এই মেসেজ নতুন কিছু না।কিন্তু আজিব লাগল যে মেয়েটা আমার কাছে বন্ধুত্বের হাত চেয়েছে। প্রনয়ের নয়। অবশ্য এমন অনেকেই চায়।পরে আর কে মনে রাখে কাকে ? এও হয়ত তেমন হবে। তাই তার অনুরুধ টা আমি গ্রহণ করলাম।
'
বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় নিতে মেয়েটি একদিন খুব চেষ্টা করল।খুব!! তারপর আমার সেই অনাকাংক্ষিত পরিক্ষা!!আমি সিউর ছিলাম যে এও আমাকে ব্লক মারবে। কিন্তু আমার ধারনায় ছিল বেসম্ভব ভুল।মেয়ে টা বলল,
পাঁ নেই তো কি হয়েছে,,,,?তুমি আমার পাঁ দিয়ে চলবে।চাকরিটা না হয় আমিই করব। শুধু তোমার বুকে ঠাই দিলেই হবে। আমি না হয় এতটুকুতেই খুশি থাকব!!
আমি বললাম,
বেশী আবেগ ভালো না।আবেগ কে কন্ট্রোল করতে শিখুন,,,,
মেয়েটি বলল,
আমি মোটেও আবেগ দেখাচ্ছি না।আমি আপনাকে সত্যি খুব ভালোবাসি।
:কিছুদিন পর যখন বুঝবেন যে আগের সব আবেগ ছিল,,,,বাস্তবে তেমন কিছুই না,,তখন আমায় ছেড়ে পালাবেন।।।।কই যাবে যে ভালোবাসা,,,,?
:বুঝার বয়স আমি পেরিয়ে এসেছি।কোনটা আবেগ আর কোনটা বাস্তব তা বোধ করার ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দিয়েছে,,,,
:আপনি তো আমাকে দেখেন-ই নি।আমার সম্পর্কে জানেনও না।তবে কি ভাবে আমাকে ভালোবাসলেন,,,,?
:যে এত সুন্দর গল্প লিখতে পারে তার মন নিশ্চই তত সুন্দর হবে,,,,?
:গল্প তো আমি আমার কল্পনা থেকে লিখি,,,,বাস্তবে তো তা না,,,,?
:সেটাই তো,,!যার কল্পনা জগৎ এত সুন্দর তার বাস্তবিক জগৎ টা তো তার চেয়ে খুব সুন্দর না হোক।সুন্দর তো নাকি,,,,,?আর আপনার চিন্তা ভাবনা তো কাল্পনিক,,,, কিন্তু লিখেন তো মনের ভাষায়,,, তাই না,,,,,?
:হুম
:তাহলে? আপনার প্রতিটা গল্প আমি আপনার অনুভূতি দিয়ে পড়েছি,,,,,তাই আমার মনে হয় না আপনি কোন বদ কিংবা খারাপ প্রকৃতির লোক হবেন,,,!
:দেখেন আমি খুব বড় লোক ফেমেলির লোক নয়।পরিবার নিয়েই আমি সুখে আছি।তারা আমাকে অনেক কষ্টে পড়ালিখা করায়। তাই আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পড়ালিখা শেষ করে চাকরি তাদের মুখ উজ্জ্বল করা।তাই আমি এখন প্রেমের প্রতি খুব আগ্রহী না,,,,
:সে না হয় বুঝলাম। আমাকে না হয় চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করিয়েন,,,,আমি না হয় তত দিন অপেক্ষা করলাম,,,,
:জানিনা,,,,,
এই বলে আমি ফেবু হতে বেরিয়ে গেছি।মনে হচ্ছে এতক্ষন একটা ঘোরের ভিতর ছিলাম। কিন্তু বেপার কি,,? আমি দেখি আজ মেয়েটার কাছে পদে পদে হেরে গেছি।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না,,,?কোথা থেকে কোন মেয়ে আসল,,এসেই সে আমাকে হারিয়ে দিল,,,,,কি করি এখন,,,?
নাহ!! আমাকে এ নিয়ে খুব ভাবতে হবে,খুব !!
।
দুইদিন ফেবুতে গেলাম না।না জানি আবার মেয়েটার কাছে হেরে যেতে হয় সে ভয়ে। আবার ভালোওও লাগছে না।কি যে করি,,,,?বড় অসস্থির মাঝে পড়েছি,,,,
নাহ,,!ফেবুতে যাওয়া দরকার। গিয়ে দেখি কি হয়, ,,? আমি পুরুষ জাতি।ভয় পাওয়া আমার নয় মেয়েদের মানায়।তাই গেলাম ফেবুতে।
অনেক গুলো মেসেজ এসেছে।তার মধ্যে আগেই ওই মেয়েটার মেসেজটা আগে পড়লাম।কেন পড়লাম তা নিজেও জানি না।মেয়েটার শেষ মেসেজ ছিল,
কি বেপার ভয় পেয়ে গেলেন নাকি,,,,!একেবারে ফেবুই ত্যাগ করলেন,,,,যদি তাই হয় তবে আপনি ফেবুতে আসবেন।আমি আপনাকে কোন প্রকার বিরক্ত করব না। আর যাই হোক আমি চাই না যে আমার জন্যে আপনার গল্প লিখা বন্ধ হয়ে যাক।বরং এতে আমারি ক্ষতি।আপনার গল্পগুলো আর পড়তে পারব না।পূর্বে যদি ভুল করে থাকি তা হলে ক্ষমা করে দিয়ে আবার ফেবুতে এক্টিভ হবেন প্লিজ।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।এর উত্তর কি দিব???
পুরুষ জাতির এক বড় প্রব্লেম হল তারা মেয়েদের প্রতি অনেক দুর্বল।খুব দুর্বল।আমি যেহেতু পুরুষ জাতি, সেহেতু আমার মাঝেও সেই দুর্বলতা কাজ করত।তাই এক সময় দেখা গেল এই ফেবুর মেয়েটার সাথেই আমার প্রনয়ের ভাব হয়। মেয়েটা কিভাবে জানি আমার হৃদয়ের মাঝে নিজেকে ঢুকিয়ে দিয়েছে।আমার অজান্তেই আমি এই অজানা, অচেনা এই মেয়ের প্রেমে পড়ি।যাকে কখনো দেখিই নাই, কিভাবে তার প্রেমে পড়লাম তা আমার আজানা।র নিয়ে আমি অনেক ভাবি।খুব ভাবি।কিন্তু সব ভাবনার শেষে উত্তর হয় শুন্য।
এর কাহিনি টা এখানে স্টপ করা যাক।
বেশ কয়েক দিন পর,
৩য় তলার মেয়েটা নাম রূপা,ওর সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ খুব হয়।আমি ইচ্ছে করে তার সামনে যাই না।তবে বেশ কিছুদিন ধরে আমি লক্ষ্য করতেছি যে রুপার মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে।খুব পরিবর্তন। এখন আর তিনি আমাকে ভৎসনা কিংবা যব্দ সূচক কথা বলে না।শুধু তাকিয়ে থাকে।তারপর আমু তাকালে চোখ সরিয়ে নেয়।যাক সে নিয়ে আমার ভেবে কোন কাজ নেই,,,
,
আজ শুক্রবার। লুবনা!! সেই ফেবুর মেয়েটা। আমার বর্তমান প্রেমিকা। তার সাথে আজ আমার প্রথম সাক্ষাতকার এর দিন। তাই বেশ সেজেগুজে নিচ্ছিলাম।হঠাৎ ফোন আসল লুবনার ফোন থেকে।ফোন টা বাজু দিয়ে কানে চেপে ধরলাম আর বললাম,
হ্যাঁ এইত আমি আসছি।তুমি আর একটু ওয়েট কর বাবু,,,আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি।কথা বলছিলাম আর তালা টা লাগাচ্ছিলাম।
মেয়েটা ঢাকাতেই থাকে। তাই দেখা করতে কোন সমস্যা হবে না।তীর্থ যাত্রাও নয়। আদ ঘন্টার রাস্তা।খুব তাড়াতাড়িই যাওয়া যাবে।
আমি আবার বললাম,
আরে বাবু তুমি একটু বস,,, আমি তাড়াতাড়িই চলে,,,,,,,
তালাটা মেরেই মোবাইলটা হাত দিয়ে কানে ধরে পিছনে ফিরে দেখি রুপা দাঁড়িয়ে আছে।চল চল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।খুব সেজেছে মেয়েটা। কালো কালারের একটা শাড়ি পরেছে ও।খুব সুন্দর লাগছে ওকে।
এদিকে লুবনা হ্যালো হ্যালো করছে।
তাই ওকে বললাম,
আমি আসছি।এখন রাখি।
ও বলল,
আচ্ছা
রুপার দিকে তাকাতেই দেখি তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।তারপর,,!! তারপর মেয়েটা দোড়ে চলে গেল আর আমি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলা।ভাবলাম,
মেয়েটা কাঁদছে কেন,,,?আমার জন্যে?
আজকে এত সেজেছে কেন? আমার জন্যে? না তা হয় নাকি।মেয়েটা আমার জন্যে সাজবে কেন,,,,?আমি তার কে?
সে তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না।এসব ভেবে লাভ নেই আমি আমার আমির কাছেই যাই।যে দির্ঘ ক্ষন ধরে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে,,,
,
মনিপুরী পার্ক।ভিতরে ডুকতেই দেখলাম অনেকেই জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে।অবশ্য আমিও এখন এসেছি কোন অপূর্ন কাপলের পুর্নতা দান করতে। কিছুক্ষন পর আমি আর সে দুজনেই পুর্ন জোড়া হয়ে যাব।এখন শুধু তাকে খুজে নেওয়ার পালা।তাকে আমি আগে দেখেছি ছবিতে।এখন বাস্তবে তাকে খুঁজে বের করতে হবে।মিনিট পাঁচেক হেঁটে যাওয়ার পর দেখলাম কেউ একজন একটা বেঞ্চ এ একা বসে আছে।আমাকে দেখতেই সে দাড়িয়ে গেল।আমিও আর সামনে যেতে পারছি না।যেন পা চলে না আর।সে আমার দিকে আমি তারদিকে।এভাবেই অনেক্ষন কেটে যায়।কিন্তু আমার মন চায় আমি যেন সারাদিন তাকে এভাবেই দেখি।আচমকা মেয়েটা দোড়ে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। নতুন করে কিছু পাওয়ার আসা।শার্টের খানিকটা ভিজে গেল।সাথে কান্নার আওয়াজ। আমি আগেই বলেছিল মেয়েটা খুব আবেগি।এখন এটা তার প্রমাণ।
গৌধুলি লগ্নে আমরা একে অপরের হাত ধরে ফিরতি পথে রওনা হলাম। উদ্দেশ্য বাড়ি।
'
লুবনাকে ফোন দিয়ে বললাম,
আজকে আমাদের ভার্সিটিতে চলে আস।কেম্পাসেই আজকে আমি আর তুমি আড্ডা দিব।
ও বলল,
কেন,,,
আমি বললাম,
ভালো লাগছে না।
ও বলল,
আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আসছি।
"
আমি আর লুবনা দুজনেই বসে আছি।এমন সময় রুপার আগমন।কোন কথা বলল না।একটা কাগজ হাতে দিয়ে আবার চলে গেল।লুবনার দিকে তাকিয়ে দেখি মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তবে ও কিছু বলল না।শুধু অন্য দিকে মুখ ফিরাল।চিঠিটা খুললাম,
প্রিয় রবিন,
প্রিয় বলার অধিকার আমার আছে।কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।তুই না!ভালোবাসি বলেই প্রিয় বলেছি। আমি আসলে আগে তোমাকে খুব বিরক্ত করতাম। কিন্তু তার বিপরীত কোন রিয়েকশন পেতাম না।এ জিনিসটা আমায় খুব ভাবাত।আমি খুব ভাবতাম। তোমার এই চুপ থাকা নিয়ে।পরক্ষনে বুঝলাম আমি তোমার সাথে খুব অন্যায় করে পেলেছি।না বুঝেই তোমাকে আমি আঘাত দিয়ে দিয়েছি।না আমি ক্ষমা চাইছি।তোমার সামনে দাড়িয়ে থেকে ক্ষমা চাওয়ার মত শক্তি আমার নেই।তাই লিখেই চাইলাম।এক সময় আমি অজান্তে তোমাকে ভালোবেসে পেলি।কিন্তু আমি মনে হয় খুব দেরি করে পেলেছি।খুব দেরি!! সেদিন তোমাকে ভালোবাসার কথাই বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যা শুনলান তা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছি না।
একবার ভেবেছি তোমাকে কথা টা বলব না।কিন্তু যখন দেখলাম এ কথা না বলে আমার শান্তি হবে না তাই চিঠির মাধ্যমেই
জানালাম । মেয়েটা কে নিয়ে সুখে থেক।খুব সুন্দর মেয়েটা।আর আমাকে নিয়ে ভেব না।চলে যাচ্ছি তোমাদের কাছ থেকে।আড়াল হয়ে যাচ্ছি।ভালো থেক।
খুব ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি তোমাকে।
ইতি
রুপা।
চিঠিটা পড়ে আমি খুব অবাক হলাম। খুব অবাক।চিঠিটা এখন লিখা হয়েছে।হয়ত
আমাদের দেখেই চিঠিটা লিখল ও। পাশ তাকিয়ে দেখি লুবনা বিষন্ন চেহারায় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি চিঠিটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। ও কাপা কাপা হতে নিল ওটা।"
" চিঠিটা পড়ে ও আমার দিকে তাকাল,,
রবিন তোমার উনার কাছে যাওয়া উচিৎ। চিঠিটা পড়ে বুঝলাম যে উনি তোমাকে খুব ভালোবাসে।
:আর তুমি????
ও অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,
:আমার কথা ভেব না।আমি কোন এক ভাবেই পার করে যাব জিবন।
:আচ্ছা ঠিক আছে।ভালো থেক।গেলাম।
এ আমার দিকে হুট করে তাকালো। যেন নিজের কানকে সে বিশ্বাস করাতে পারছে না।
আমি উঠে আসলাম। আড়াল থেকেই দেখলাম মেয়েটা ওড়নায় মুখ গুঁজে খুব কান্না করছে। আমাকে পার করে দিয়ে নিজে কান্না করছে। ভালো হয়েছে।বুঝ ঠেলা।একি আমি কান্না করছি কেন,,,? আমার চোখে জল কেন,,,?
আমি রুপার জন্যে আসি নি।আমি দেখতে এসেছি যে লুবনা কি করে।
নাহহ!! আর পারছি না।মেয়েটা খুব কান্না করছে। আমাকে এখনি যেতে হবে।
আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম,
খুব ভালো লাগছে তাই না,,,,,?খুব তো বললে তুমি ভালো থাকবে।তা হলে কান্না করছ কেন হুঁ,,এই আমার দিকে তাকাও,,, বল যেতে দিলে কেন বল,,,,?
ও কিছুই বলল না।শুধু পাগলের মত আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কান্না শুরু করল।কোন কথা বলছে না।শুধু কান্না করছে।আমি বললম,
কি হয়েছে বল,,,,?আচ্ছা আমি যদি সত্যি তোমাকে ছেড়ে চলে যেতাম তাহলে,,,,
:আমি বাঁচতাম ন। রবিন,,,,,,, আমি এতক্ষনেই তা টের পেয়ে গেছি।
:তাহলে যেতে দিল কেন,,,,?
:আরে আমি কি জানতাম তুমি সত্যি সত্যি চলে যাবে,,,?
:শুন আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।রুপাকে নয়।কিন্তু সেই তুমি কি না বলতেছ আমি যেন ওর কাছে ফিরে যাই।
:এই দেখ কান ধরেছি আর কখনও বলব না।এক বার বলেই আমার যা অবস্থা হয়েছে।আমি আর এই কথা দ্বিতীয় বার বলতে চাই না।
:হুম মনে থাকে যেন।
:জানো আমার মন বলছিল যে তুমি আমাকে কখনই ছেড়ে যাতে পারবে না।এখন তাই হয়েছে।আমি জানি তুমি আমাকে কখনই ছেড়ে যাবে না।
:ছেড়ে যাবার জন্যে তো আর তোমাকে ভালোবাসি নি।।তোমার হাত সারাজিবন ধরে খারার জন্যেই ভালোবেসেছি।
:হু
এই বলে ও আমার বাহুতে মাথা রাখল।
কিছুক্ষন পর ও বলল,
-জানো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
আমি বললাম,
-আমিও।
সমাপ্ত
ভুলত্রুটি মার্যনীয়
তাসফি আহমেদ