গল্পঃ স্বপ্ন

বাংলা গল্প| Love Stories Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.


গল্পঃ স্বপ্ন


প্রথম পর্ব

.
অনার্স এর পর মাস্টার্স। গ্রেজুয়েশন কম্পলিট করে আমি এখন শিক্ষিত বেকার।তন্ন তন্ন করে চাকরি খুঁজছি। আজও চাকরির ইন্টার্ভিউ দিয়ে ফিরছি। খুব গরম। তার উপর এখন জ্যাম এ আটকা পড়েছি। ঘেমে অবস্থা একে বারে খারাপ।তাই অগত্যা রিক্সা তে চুপচাপ বসে রইলাম।মন খারাপ।চাকরি পাচ্ছি না।চাকরি টা খুব দরকার। কম বেতন হলেও চলত।কিন্তু চাকরিই তো পাচ্ছি না।বেতন তো পরের কথা।
বাবা রিটায়ার করেছে।সরকারি চাকরি করতেন তিনি।তাই এক কালিন কিছু টাকা পেয়েছেন। সেগুলো দিয়েই এখন চলছি।আবার পেনশন ও পাচ্ছেন। তবে যে টাকা আছে তার প্রায় অনেক অংশই খরচ হয়ে গেছে।কোন রকমে চলে সংসার। চাকরিটা পেলে কিছুটা নিশ্চিন্ত থাকা যেত।এগুলোই ভাবছি রিক্সা তে বসে। হঠাৎ চোখ গেল আমার ঠিক ডান পাশের কালো কার টার দিকে। আমার দৃষ্টি মন্থর হয়ে গেল।সকল ক্লান্তি, গ্লানি দুর হয়ে গেল।আমার বিরক্ত ভরা চেহারাতে বিস্ময় এর রেখা ফুটল।এত গরমের মাঝেও আমার হৃদয়ে স্নিগ্ধ হাওয়া বয়ে গেল।শান্তির হাওয়া।ভালো লাগার হাওয়া।নিজের অজান্তে বলে ফেললাম,
এত সুন্দরী মেয়েও কি বাংলাদেশে আছে? ওহহ কি মায়া ভরা চোখ।ছোট ছোট দুটি ঠোট। খুব পাতলা এবং চিকন। তার উপর হালকা গোলাপি লিপিষ্টিক এর প্রলেপ দেওয়া।চোখ জোড়ায় গাঢ় কাজল দেওয়া।চুপ চাপ বসে আছে গাড়িতে। চেহারাতে বিরক্তির ছাপ। তবুও আমার কেমন জানি ভালো লেগে উঠল।আমি চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। আমার হৃদয় বাগানে ততক্ষনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। শান্তি বা সুখ বেশিক্ষণ থাকে না।এখানেও তাই হল।জ্যাম ছেড়ে গেল।তার কালো কারটা আস্তে আস্তে চোখের আড়াল হয়ে গেল।আমি এক চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।
কে এই রমনি।কি তার পরিচয়। কেনইবা তাকে দেখে আমি যেন সুখের সাগরে হারিয়ে গেলাম।এক মুহূর্তের জন্যে ভুলে গেলাম যে আমি রাস্তায় আছি।আমি বাড়ি ফিরছি।।আমি সব ভুলে গেলাম।ভাবনার জগৎ-এ হারিয়ে গেলাম।আশে পাশে কি হচ্ছে এর কিছুই আমি জানি না।আমার মাথায় একটাই চিন্তা, কে এই রমনি? কি তার পরিচয়? 
বাড়ি ফিরেও মেয়েটা আমাকে শান্তি দিল না।চোখ বন্ধ করলেই যেন আমি তার সেই চোখ জোড়া দেখি।গোল গোল চোখ দু'টো শুধু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল।নাহ! বেশি ভাবা ভালো না।আমাকে আমার চাকরি নিয়ে ভাবতে হবে।আমার পরিবার নিয়ে ভাবতে হবে।তারপরেও সে আমার ভাবনায় হানা দেয়।এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম। জানি চেষ্টা বৃথা হবে।তবুও আমাকে চেষ্টা করতে হবে ভুলে থাকার।
.
নিউ মার্কেট এসেছি।দুইটা শার্ট আর গেঞ্জি কিনতে হবে।অনেক দিন মার্কেট করি না।।একটা শার্ট ছিঁড়ে গেছে।আর চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে গেলেও এখন স্মার্টনেস লাগে।মূলত এ জন্যেই আসা। সাথে আছে রিপাত। আমার বন্ধু।কয়েকটা দোকান দেখলাম। একটা দোকানে ঢুকার সময় আমার চোখে অন্য দিকে চলে গেল।সেই মেয়েটা। হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ। কালো জামাতে ওকে বেশ মানিয়েছে। জামাটার নাম আমার অজানা।তার সাথে আরেকটা মেয়ে আছে।পাশের মেয়েটা কি জানি বলল।তারপর দুজনেই   হেসে উঠল। ওহহ কি সুন্দর তার হাসি।আমি তাকিয়ে আছি।সে আস্তে চোখের আড়াল হয়ে গেল।গোর কেটে যাওয়ার পর আমি আমার পাশে তাকালাম। রিপাত খুব অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। আমি বললাম,
:কিরে হাবলার মত হা করে আছিস কেন? মসা ঢুকবে তো।
ও আমার কথার উত্তর না দিয়ে বলল,
:আমি যা দেখছি এবং এখন যা ভাবছি তা কি সত্যি?
:তুই কি দেখিস আর কি ভাবিস তা আমি জানব কিভাবে? আমি কি গায়েব জানি নাকি?
:তুই ভালো করেই জানিস আমি কি বুঝাতে চাইছি।
কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে কথায় পারা যায় না।রিপাত তাদের মাঝে একজন। তাই বলেই দিলাম,
:হুম তোর ধারনাই ঠিক। 
:কেমনে কি?
তারপর ওরে আমি বেপারটা বুঝিয়ে বললাম।
:দোস্ত আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।   যে ছেলে এত বড় হয়েছে তবুও কোন দিন কোন মেয়ের সাথে বলে নি কোন মেয়ের দিকে ঠিক মত তাকায়-ও নি সে কিভাবে আজ প্রেমে পড়তে পারে।
:কেন রে? আমার জন্যে কি প্রেম করতে কি নিষেধ আছে?
:না ঠিক তা না।তবে এটা মনে হতেই ভালো লাগছে যে তুইও শেষমেশ কারো প্রেমে পড়ে গেলি।
এই বলে ও হাসতে লাগল।আমি আর কিছুই বললাম না।পরিবারের কথা ভেবে আমি কোন দিন প্রেম করা তো দুরে থাক কোন মেয়ের দিকে ঠিক মত তাকাইও নি। যদি কারো চোখ দেখে প্রেমে পড়ে যাই সে ভয়ে।কিন্তু শেষমেশ প্রেমে পড়তেই হল।আরো এমন এক মেয়ের প্রেমে পড়লাম যাকে চিনিই না।তবে মেয়েটাকে আমার বেশ লেগেছে।মেয়েটার কথা মনে হতেই আমি এক দোড় দিলাম।মেয়েটাকে যেদিকে দেখিছিলাম সে দিকে। কিন্তু ততক্ষনে সে আবার হারিয়ে গেল।আমি দাড়িয়ে রইলাম। রিপাত এর দিকে তাকিয়ে দেখি সে আবারো হা করে তাকিয়ে আছে।মেজাজটাই গরম হয়ে গেল । এভাবে তাকানোর কি আছে।দিলাম এক ঘুসি।।শালা তোর জন্যেই আজ আবার ওকে হারালাম।
ও মুখ বাঁকা করে বলল,
:বাব্বাহ! একদিনের দেখাতেই এত সিরিয়াস!! তা বন্ধু তুমি যতই সিরিয়াস হও না কেন আমারে কিন্তু এক বেলা খাওয়াইতে হইবই।
:শালা তুই তো আছিস শুধু খাওয়া নিয়েই।চল তোর পেট ভরাই। তা না হলে আবার মায়ের কাছে গিয়ে কি না কি বলবি।তার থেকে ভালো এখনি তোর মুখ বন্ধ করার ব্যাবস্থা করি।
:এই না হল বন্ধু।চল চল!
আমি জানি রিপাত বেশি কিছু খাবে না।ও আমার অবস্থা সম্পর্কে সব বিষয়ই জানে।
.
আজ একটা চাকরির ইন্টার্ভিউ আছে যথা সময়ে এসে উপস্থিত হলাম। নতুন শার্ট আর প্যান্ট। বেশ ভালোই লাগছে।অনেক লোক বসে আছে। এরা সবাই ইন্টার্ভিউ দিতে আসছে । একের পর এক ডাকা হচ্ছে । অবশেষে আমার পালা আসল এক লোক এসে বলল,
:তাসফি আহমেদ আছেন। ? 
:জি আমিই তাসফি আহমেদ।
:আসুন।
আমি গেলাম। তিনজন লোক বসে আছে দুইজন পুরুষ। আর একজন মহিলা।মহিলা বললে ভুল হবে। মেয়েই বলা যায়।কিন্তু আজিব বেপার হল এই মেয়েকেই আমি খুঁজছি। এই মেয়েকেই আমি জানি।এই মেয়েই সেই মেয়ে যে প্রথম দেখাতেই আমার মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি করল।
ওর বাম পাশে বসা আছে একজন।তিনি বৃদ্ধ। বয়স ষাট কি পঁয়ষট্টি হবে । ডান পাশে আছে একজন। তিনি বেশি বৃদ্ধ নয়।চল্লিশ উপরে হবে তার বয়স। তবে দুই ভদ্র লোকের চেহারাতে অবিজ্ঞাতর ছাপ রয়েছে।
আমি গিয়ে বসলাম। একেবারে মেয়েটার মুখ বরাবর। কাকতালীয় ভাবে এই তিনবার দেখা হল মেয়েটার সাথে।কেন জানি তাকে দেখলেই আমার মনের ভিতর এক অন্য রকম অনুভুতির সৃষ্টি হয়। এই অনুভূতির নামই কি ভালোবাসা? এর অন্য কোন সংগা নেই?
মেয়েটা মনে হয় এই অফিসের উচ্ছপদস্থ কেউ।কারন সব কিছুতে ওকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।মেয়েটা আমার কাগজপত্র গুলো দেখে বলল,
:আপনার রেজাল্ট এত ভালো।আপনি চাইলে তো আরো চাকরি করতে পারেন।
আমি বললাম,
:এখন কোন রকম একটা হলেই চলে।এট লাষ্ট সবাইকে তো বলতে পারব যে আমি চাকরি করি।আর এমনিতে তো চাকরিই পাওয়া যায় না।     কোন রকম একটা পাওয়া মানে হাতে সোনার হরিন পাওয়া।
আমি কথা গুলো বলে আমার সামনের দিকে তাকালম।তারা আমার দিকে এক চোখে তাকিয়ে আছে।চুপ চাপ নিস্তব্ধতা। হয়ত তারা ভাবছে আমি বেশি কথা বলি।এই জন্যে এক চোখে তাকিয়ে আছে।আমি লজ্জা বোধ করলাম।তারপর বললাম,
:সরি।
ডানপাশের লোকটা বলল,
:আপনি এখন আসতে পারেন..
আমি সোজা চলে এলাম। এমন বাজে ইন্টার্ভিউ আমি আর কোথাও দি নাই।সব ওই মেয়েটার দোষ।ওর চোখে দিকে তাকাতেই পারি না।তাকালেই আমি যেন গহিন অরন্যে হারিয়ে  যাই।আমি সিউর ছিলাম যে আমার চাকরিটা হবে না।অন্য কোথাও দেখতে হবে।।
.
কিছুদিন পর একটা চিঠি  আসল। চাকরি হয়েছে।ওই মেয়েটার অফিসেই।আমি বেশ কয়েকবার চিঠিটা পড়লাম। আসলেই কি সত্যি? মা বাবা তো বেশ খুশি। তাদের ছেলেকে এখন আর কেউ বেকার বলতে পারবে না। এই বেকারত্ব নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছে তাসফি কে।এখন আর কেউই তেমন কিছু বলবে না।সবাই সন্মান করবে ওকে।
অফিসে জয়েন করে মেয়েটার নাম জানা গেল।তানজিলা রুহি।এই অফিসের বস। আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। ওর সামনে কিভাবে যাব।কিভাবে কথা বলব।প্রথম প্রথম খুব নার্ভাস লাগছিল।পরে সয়ে গেছে।তবে তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাটা মিস হয় না।এখন আমার শুক্র বারেও অফিসে আসতে মন চায়।তবে আমি বেশি দুর আগাই নাই।কারন রুহি আমার বস।এই কথাটা মাথায় রেখেই আমি আর বেশি দুর যাচ্ছি না।হঠাৎ চাকরি টা চলে গেলে আবার লোকের কটু কথা শুনতে হবে।মাইরের আঘাত থেকে কথার আঘাতে মানুষ কষ্ট পায় বেশি।তাই নিজের সুপ্ত ভালোবাসা কে নিজের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছি।
মাধ্যমিক শেষ হওয়া পরেই আমি আমার লক্ষ্য কে চেঞ্জ করলাম। বিসিএস দিব।একজন মেজিস্ট্রেড হব।এর পিছনে উপযুক্ত  কারনও আছে।কারনটা বললে লিখাটা বেশ বড় হয়ে যাবে। তাই বললাম না।
চাকরি করছি আর পাশাপাশি বিসিএস দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।এবং সেটা সবার অন্তরালেই।
একটা ফাইল নিয়ে রুহি মেডাম এর কাছে গেলাম।
:আসতে পারি মেডাম??
:হুম আসুন,,,
:মেম ফাইলটা একটু দেখে সাইন করে দিলে ভালো হত।
:কই দেন তো।
সে ফাইল নিল।ফাইল খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকাল।
:কি বেপার আপনি বসছেন না কেন?
:আপনার অনুমতি ছাড়া কি বসা যায়?
:অনুমিত ছাড়া লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে পারেন আর এখন সামান্য বসতে অনুমিত চাচ্ছেন?
:ঠিক বুঝলাম না মেম
:বেশি বুঝাও ভালো না।বসেন 
:জি মেম।
ফাইলটা দেখে সাইন করে বলল,
:নিল আর হলুদ কালারের শার্টটা পরে আর আসবেন না বুঝলেন?
:কেন মেম।?
:বেশি কেন কেন করবেন না।যা বলছি তাই করবেন।তা না হলে তো বুঝেন-ই।
:জি জি ঠিক আছে মেম।
:হুম যেতে পারেন।
আমি উঠে চলে আসার জন্যে পাঁ বাড়ালাম। তখনি ও আবার ঢেকে বলল  
:আর শুনুন। অফিসের সবাই আমাকে তুমি করে ডাকে শুধু আপনি ছাড়া। সো নেক্সট টাইম থেকে তুমি বলে ডাকবেন।আপনি আপনি বাদ।
:জি মেম ঠিক আছে
আমি বের হয়ে গেলাম। ওহহ!! যে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্ত হঠাৎ-ই মৃদু হাসি আওয়াজ পেলাম। হুম মেডাম এর রুম থেকেই তো আসছে। কিন্তু উনি হাসছে কেন? আমার এই নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে?
তবে ওর ব্যাবহারে নতুনত্ব দেখা দিচ্ছে।আমি আমার কলিগ রূপা কে জিজ্ঞেস করলাম,
:আচ্ছা মেডাম কি মানষিক ভাবে অসুস্থ?
:এই কি বল এগুলো । চাকরি হারানোর ইচ্ছে আছে তোমার?
:আরে নাহ।
:তাহলে এমন কথা আর মুখেও আনবা না।তা তোমার এমন মনে হওয়ার কারন কি?
:আসলে আমি যখন উনার রুম থেকে আসছিলাম তখন আমার কেন জানি মনে হল উনি হাসছে।আমি হাসির আওয়াজ পেলাম।
:জানি না ভাই।উনি কেন হাসলেন তা জানি না।।তবে উনার এমন কোন প্রব্লেম নেই।
আমি হেসেই বলে উঠলাম,
:হা হা হা।না থাকাই ভালো।
রুপাও হাসল। তারপর হঠাৎ-ই ও চুপ হয়ে  গেল।চোখ দুটু বড় করে পেলল। আমি ওর চোখ অনুসরণ করে আমি পিছনের দিকে তাকালাম।
রুহি রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর হন হন করে অফিস থেকে বের হয়ে গেল। আমিও চলে আসলাম। কারন অফিস ছুটি।
পরের দিন রুহি এসেই আমাকে ডেকে পাঠালো।আমি তো ভয়ে শেষ।না জানি কি হয়। ভয়ে..... 
(দ্বিতীয় পার্টের জন্যে অপেক্ষা করুন) 

। 
তাসফি আহমেদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url