গল্পঃ আমি চাই তোরা ভালো থাক
'
রুপা আজ কলেজ যায় নি।আজ কলেজে যেতে ওর ইচ্ছে হয় নি।রুপা সাধারণত কলেজ মিস করে না।তবে কোন অজানা কারনে সে কলেজ যায় নি।ওর মন ভালো নেই।যেই মানুষ টা কে দেখলে ওর মাঝে প্রশান্তি আসে সেই মানুষটাই অন্য কারো মাঝে প্রশান্তি খুঁজে। পায় ও বটে।কে এই মেয়ে? আমি কি মেয়েটার চেয়ে কম সুন্দর। সে কি খুব সুন্দরি। হবে নিশ্চই। তাসফির পছন্দ বলে কথা। এ কথা মনে উঠতেই গা জ্বলে উঠে ওর।মেরুদণ্ড শিথিল হয়ে যায়।বুকের বাঁপাশে শুন্যতা অনুভব হয়।রুপা বারান্দায় দাড়িয়ে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো ভাবে।কিছু অস্রুও বিসর্জিত হয়।কিছুই কি করার নেই ওর?
এমন সময় হঠাৎ-ই জোরে চিৎকার শুনা যায়।তাসফি বলে কেউ চিৎকার দিয়েছে।বুকের বাঁপাশ টা ধক করে উঠে।কি হয়েছে জানতে চায়।তাসফির কিছু হয়ে যায় নি তো।মূহুর্তের মাঝে নানান কটু কথা মনের মাঝে খেলা করে ওর। আর এক মিনিটও দাড়িয়ে থাকে না ও।এক ছুটে চলে যায় তাসফিদের প্লেটের সামনে।মুখে ওড়না গুঁজে কান্না করে ও। চাপা কান্না।প্রিয়তম কে হারিয়ে পেলার ভয় সে কান্না করে।আব্দুর রাহিম ঘর থেকে বের হলেন।আরো কয়েকজন বেরিয়ে এল।রূপাও এল।দরজা বন্ধ। সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন।রুপাতো কান্না করছেই।দরজা ভাংগার সিদ্ধান্ত হল।ভাংগাল।দরজা খুলতেই দেখল মেজেতে তাজা রক্ত গড়াচ্ছে।রুপা দৌড়ে গেল।সে দেখেই বুঝল না তাসফি নয় আরাফাত ভাইয়া।সস্তি ফিরে এল ওর মাঝে।এখন আর হারানোর ভয় নেই ওর মাঝে।এখন শুধু খারাপ লাগছে তাসফি ভাইয়ের জন্যে। খুব খারাপ লাগছে।
,
:তাহলে তুমি করেই বলি। কি বল?
তিথি হাসি মুখ নিয়ে কথাটা বলল।
আমিও সায় দিলাম।ও আবার বলল,
:তোমার আর আরাফাতের বন্ধুত্ব কত দিনের?
:বছর দশেক হবে।
ও নিচের ঠোট উল্টিয়ে বলল,
:বাবাহ।অনেক দিনের বব্ধুত্ব তাহলে।এই জন্যেই তো বলি ভার্সিটিতে তুমি
কিংবা আরাফাত অন্য কারো সাথে বেশি মিশে না কেন?
আমি বললাম,
:কেন বলতে পার?
:যেন বন্ধুত্বের মাঝে ফাটল কিংবা ভালোবাসার কমতি না হয়।তাই না?
:হুম।অনেকটা তেমনিইই।
:ভালো।বেশ ভালো।
এই বলে তিথি হাসল।এই মেয়েটার প্রব্লেম কি।এত হাসে কেন? আমাকে মোহিত করার জন্যে নানি অন্য কিছু।ওর হাসিটাও বেশ সুন্দর।মেয়েটাও বেশ ভালো। মিশুকও বটে।ওর সাথে কথা বলে ভালো লাগছিল আমার।ভালো লাগছিল? কথাটি মনে পড়তেই নিজের অজান্তেই হেসে উঠলাম।ভালো তো আরও আগ থেকেই লাগত।দুজনেই চুপচাপ। কেউ কথা বলছে না।
মৃদু বাতাসে তিথির সামনের চুল গুলো উড়ছে।তাসফি আড় চোখে সেটা দেখছে।মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে।তিথির চোখের আড়ালেই। বাতাসটাও যেন শরিরের সাথে মিশে যায়।সব মিলিয়ে এক অনন্য পরিবেশ ।হুম ভালোবাসার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ক্যাম্পাসের শহিদমিনারের দিকে।এক অজানা ভালোবাসার পরিবেশ। যার শেষ কি হবে তা কেউই বলতে পারবে না।
হঠাৎ -ই তাসফির ফোনটা বেজে উঠল।রুপার বাবার নাম্বার থেকে ফোন আসছে।ওহ সিট! রুপাকে তো পড়াতে যেতে হবে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।এই জন্যেই অঙ্কেল ফোন দিয়েছে হয়ত।কেটে দিলে বেয়াদবি হয়ে যাবে।তাই ধরে ফেললাম।ফোন ধরতেই রুপার অস্পষ্ট কয়েকটা অস্থির বাক্য শুনলাম।আমি স্থির হয়ে থাকতে পারলাম না। বললাম,
:কি হয়েছে রুপা? তুমি এমন করছ কেন?
:আ আ আ আ আ রাফাত ভাই,,,,,
:হ্যা কি হয়েছে?স্পষ্ট করে বল
:আ আ আ আপনি চিটি হাসপাতালে চলে আসেন। আ আ আ আ আরাফাত ভাই,,,
:কি হয়েছে।আরাফাতের কি হয়েছে,,,
:আপনি আসেন? ৪০৩ নাম্বার কেবিনে।
খুব তাড়াতাড়ি কথাটা বলল রুপা।
ফোনটা কাটা গেল ।মেয়েটা কথা বলতে পারছিল না ঠিক মত।নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে।
আমি ফোনটা রেখে দৌড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই তিথি বলে উঠল,
:কি বেপার? কি হয়েছে ওর?
আমি ওকে ভালো করে দেখলাম। হ্যাঁ ওই তো মেয়েটার মুখটা কালো হয়ে গিয়েছে।মুখে চিন্তার রেখা ঢেউ খাচ্ছে।চোখে জল চলে আসার উপক্রম। এমনটা তো কেউ কারো আপন জনের জন্যে করে।আরাফাত কি ওর আপন কেউ।ধুরর ভাবার সময় নেই। আমাকে যেতে হবে।আমি হাঁটা দিলাম।পেছন থেকে ও বলল,
আমিও যাব। আমাকেও নিয়ে চল।
আমি আবারো অবাক হলাম।আমি তো ওকে বলি নি আমি কোথায় যাচ্ছি।তাহলে? ও যেতে চাচ্ছে কেন? আরাফাতের খবর জানার জন্যে? আমি বললাম,
কোথায় যাবে তুমি?
ও বলল,
হাসপাতালে। নিশ্চই ওর কিছু হয়েছে।যা তোমার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে।প্লিজ বল না ওর কি হয়েছে।
খুব উৎসুক হয়ে উঠছে ও।কেন?
আমি নির্বিকার হয়ে বললাম,
আমিও জানি না।শুধু এটা জানি যে চিটি হাসপাতালে।৪০৩ নং কেবিন।
আমি আর তিথি যাচ্ছি রিক্সায় করে।কিছু দুর যেতেই দেখলাম মেয়েটা কাঁদছে। মুখে ওড়না গুঁজে কাঁদছে। আমার কেমন জানি লাগল।ও কান্না করছে কেন? আমি ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না।আমার কোন হিসেব মিলছে না।সব আউলিয়ে যাচ্ছে।কাঁদুক ও।আমি কি বলব।এখানে আমার কিছুই বলার নেই।
ওর বাবা মাকে ফোন করলাম।আমার বাবা মাকেও খবরটা জানালাম। ওরা আসছে।
,
রুপা ওর বাবাকে আরাফাতের কাছে রেখে বাইরে বের হল।তাসফি আসছে কি না তা দেখতে। বার বার গেইট এর দিকে তাকাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর দেখল দুই চিন্তিত মুখ।একটা তাসফি অন্যটা? নাহ।রুপা চিনতে ভুল করে নি কে এই মেয়ে। কারন রুপা মেয়েটার সম্পর্কে সব জানে।তাসফির মুখে ওর কথা শুনার পরেই খবর নেয় ও।খুব ভদ্র ও মার্জিত একটা মেয়ে তিথি।তারা দুজন এগিয়ে আসছে।যতই এগিয়ে আসছে ততই ওর বুকটা জ্বলে যাচ্ছে। তবে ওদের দুজনকেই বেশ মানিয়েছে। কয়েক মিনিটের জন্যে রুপা স্থির হয়ে গেল।কয়েকফোটা জল গাল বেয়ে পড়ল।এবং রুপা সেগুলো খুব তাড়াতাড়িই মুছে ফেলল। কারন এই জল কাউকে দেখান যাবে না।
'
রুপার বাবা খুব বিরক্ত হচ্ছেন।আর কত বসে থাকা যায়।তিনি অস্থির হয়ে উঠছেন।কখনও এতক্ষন বসে থাকেন নি তিনি।তবুও ছেলেটার বিপদ দেখে বসে আছেন। তাসফি আর আরাফাত এর মধ্যে আরাফাতকেই ভালো লাগে উনার।তাসফিকে যে খারাপ লাগে তা নয়।তবে একটু ভালো আরকি।আর তাইতো প্রথম চাওয়াতেই তিনি ওদের ঘরটা বাড়া দিয়ে দিলেন। এবং তিনি মনে মনে রুপার সাথে ওর বিয়েটা দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করে রেখেছেন।তাইতো এতক্ষন বসে থাকা।
'
ডাক্তার শাকের আহমদ কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে থাকা এক্সরে টার দিকে তাকিয়ে আছেন।খুব মনযোগ দিয়ে দেখছেন।প্রথম থেকেই উনার ভিতর একটা ভয় কাজ করছিল। গ্লাসের সরু অংশটা অনেকটাই পেটের ভিতরে চলে গিয়েছে।উনার ভয় ছিল গ্লাসের সরু অংশটা আবার কিডনিতে আঘাত করে নি তো।যদি করে তাহলে অনেক বড় সমস্যা ঘটতে পারে।এবং যদি তাড়াতাড়ি কিডনিটা অপারেশন করে ফেলে না দেওয়া হয় তাহলে পাশের কিডনিটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।তারপর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। যা কেউই চায় না।তবে মারা গেলে সেটা মেনে নিতে হবে।এমন ঘটনার মুখোমুখি তিনি আর হন নি।সে দিক দিয়েও তিনি খুব চিন্তিত।
মাথা চুলকিয়ে তিনি আবার স্ক্রিনের দিকে মন দিলেন।হঠাৎ-ই উনার ব্রু জোড়া কুছকে গেল।চিন্তাটা যেন বেড়ে গেল।ছবিটা বড় করলেন তিনি।ওই তো সরু কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।তিনি আরেকটু বড় করলেন ছবিটা।নাহ গ্লাসটা কিডতে আঘাত করে নি।অনেকটা কাছেই চলে গিয়েছে।কোন ক্ষতি করতে পারে নি কিডনির।হঠাৎ-ই উনার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।চিন্তার রেখাটা মুছে গিয়ে প্রশান্তির আভা দেখা গেল তার মুখে। আনন্দে উনার হৃদয় টা পুলকিত হল।স্ক্রিন থেকে মুখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলেন উনার সহযোগী নিরা উনার দিকে তাকিয়ে আছে।প্রশান্তির চোখে মেয়েটা শাকের আহমদ কে দেখছে।যেন এই প্রথম দেখল। কিন্তু না।সে গত ছয় মাস থেকে এভাবে দেখেই আসছে।তবুও ওর দেখার শেষ নেই।শাকের সাহেব তাকাতেই নিরা চোখ নামিয়ে নিল।কিছু একটা পড়ছে এমন ভাব।শাকের সাহেব বেপারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি না বুঝার ভান করে বললেন,
নিরা?
নিরা উৎসুক চোখে তাকাল।এতক্ষন যে তাকিয়ে ছিল তার লেশ মাত্র মেয়েটার মুখে নেই।কিভাবে এত কম সময়ের মধ্যে নিজের চেহারার ভঙ্গিমা পরিবর্তন করতে পারে মেয়েটা? বেপারটা ভাবায় শাকের সাহেব কে।নিরা বলল,
কিছু পেলেন স্যার।
শাকের সাহেব বললেন,
হ্যাঁ, পেলাম।ছেলেটার পরিবারের কেউ আছে কি না দেখে আস।আর থাকলে আমার সাথে অতি তাড়াতাড়ি দেখা করতে বল।কুইক।খুব ফাস্ট যাবে এবং খুব ফাস্ট আসবে।
নিরা রাগত স্বরে বলল,
স্যার আমি কোন রোবট নই।আপনার মতই একজন সাধারণ মানুষ।
এই বলে হন হন করে রুমের দরজা ঠেলে বের হয়ে গেলে।
নিরা যেতেই শাকের সাহেব হেসে উঠলেন। মনে মনে বললেন,
মেয়েটা আস্ত একটা পাগলি। ও তো জনে না ওকে আমার সামনে না দেখলে আমার ভালো লাগে না।মাত্র এক বছর আগে এই ডাক্তারি পেশায় নিয়জিত হয়েছে ও।এর কয়েক মাস পরেই নিরা আমার সহযোগী হিসেবে জয়েন করে।প্রচন্ড মেধাবী মেয়েটা। এগুলো ভাবতেই তিনি কম্পিটারের স্ক্রিনে ভেসে থাকা ছবিটার দিকে চোখ গেল।কিছু একটা দেখলেন। যা দেখার পর উনার চোখটা স্থির হয়ে গেল।আবার চিন্তার রেখা দেখা গেল তার মুখে।
৩য় ও পরিশেষ পার্টের জন্যে একটু অপেক্ষা করুন।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ