গল্পঃ অদ্ভুত ছেলেটি ২

বাংলা ছোট গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo


গল্পঃ  অদ্ভুত ছেলেটি

তাসফি আহমেদ

প্রথম পর্ব

(দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব)


আজ আরেকটা রাত কাটবে নির্ঘুম ভাবে।কি করবে রুপা।ইজি চেয়ারে বসে চিন্তা করতে থাকে রুপা।কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে যায় সে নিজেই টের পায় না।
রুপা আজ ভার্সিটি যায় নি।বসে আছে নিপার জন্যে।কখন নিপা আসবে।কখন ও তাসফির সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবে।কতক্ষণ নিজের রুমে পায়চারী করে।তারপর বসার রুমে এসে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।রুপা সকালে উঠে নিজেই বাবার জন্যে নাস্তা বানাল।তারপর বাবাকে  অফিস পাঠিয়ে দিল।রুপার বাবা নিপার আচরণে কিছুটা অবাক হলেও কিছুই বললেন না।এটা যে মঙ্গলকর সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।
রুপা সকল কাজ করে বসে আছে নিপার জন্যে। কখন সে আসবে।তাকে আজকে কাজ করতে দিবে না।আজ যতক্ষণ থাকে ও ততক্ষণ তাসফির সম্পর্কে শুনবে রুপা।কিন্তু রুপাকে হতাশ হতে হল। আজকে নিপা আসে নি।মনে হয় আর আসবে না।মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় রুপার। কাজের সময় কিছুই ঠিক মত হয় না।সব কিছু সময় বুঝে।রুপা খুব দ্রুত নিপাকে ফোন দিল।কয়েকবার রিং হওয়ার পর যখন ধরল তখন নিপা ফোনের ওপাশ থেকেই শুনতে পেল রুপার ঝাঁঝাল কন্ঠ।
:এই নিপা তুই আজ আসিস নি ক্যান? এত কাজ কি তোর বাপে করবে? হ্যাঁ।
:....
:চুপ করে  আছিস কেন? কথা বল?
:আপু মা টার কি জানি একটা রোগ দেয়া দিছে।তাই হেরে লইয়া ডাক্তারের কাছে আইছি।
:ওওও।সরি আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারি নি সরি রে।
:আন্নে না বুইজতে পাইরলেও আঁই কিছুটা বুঝতে পাইচ্ছি।
:কি?
:তাসফি ভাইয়ের সম্পর্কে কিছু জানতে চাই তাই না?
:তুই কেমনে বুঝলি?
:কাইল আমুনে।হেকতে বুঝায় কমু।
এই বলে ফোন কেটে দিল নিপা।রুপা কিছুটা অবাক হয়।কি ভাবটাই না দেখাইল মেয়েটা।
'
অনেক দিন পর আজ রুপা নিজের ডায়েরি লিখতে বসেছে।কিছুটা হলেও খারাপ লাগছে রুপার কাছে।আজ যখন বৃষ্টিতে তাসফি ভিজতে ছিল তখনই রুপা দেখতে পেল তাসফি হাঁটু ভেঙ্গে বসে  আজর ধারায় কাঁদতে শুরু করল।মাঝে মাঝে দু একটা চিৎকারও দিয়েছিল।কি ভয়ংকর সেই আর্তনাদ। যেন বুকে চেপে থাকা হাজারো কষ্ট বেরিয়ে আসছে।বাঁধ ভাঙ্গা কষ্ট। কেন জানি চীৎকারটা ঠিক রুপা হৃদয়ে লাগল খানিকটা ব্যাথা অনুভব করল রুপা।সেটাই আজ লিখতে বসছে রুপা।সাথে একটা প্রশ্ন।তাসফি কেন এত কষ্ট ভরা কান্না করছিল?
'
:ভাইজান কিন্তু বালা মানুষ। তবে...?
নিপা শান্ত ভঙ্গিতে  কথা বলল।রুপা ততটা অস্থিরতা নিয়ে বলল,
:তবে?:আসলে মাস ছয়েক আগে ভাইজান কোত্থাইকা যেন হস্তদন্ত হয়ে বাসায় আসে।আই তখন তাদের ঘরের ফ্লোর মুছতাছি।হে আইসাই রুমে গিয়া দরজা আটকাইয়া দিল।
এই বলে নিপা থামল।রুপা আরো অস্থিরতা নিয়ে  বলল,
:তারপর?
:তারপর থাইকাই সে কেমন জানি ওই যায়। বেকের লগে বাঝে ব্যবহার করে। ঠিক মত খায় না।আর বৃষ্টি আইলেই খামি ভিজে।আর রাইতে নাকি উনার রুমের থাইকা কান্নার আওয়াজ আইসে।
:কি বলিস? তাকে দেখে তো তেমন মনে হয় না।
:কি জানি।তবে আমার মনে হয়ে কি আপু  তারে নিশ্চই ভুতে ধরছে। তা না হইলে কেও এমন হাগলামি করে?
:ধুরর! কি যা তা বলছিস। যা তো আমারে একলা থাকতে দে।
:হা। বুঝি আপু।সব বুঝি।
:কি বুঝছ?
:অনেক কিছু।আম্নের চোখ দেইখাই বইলা দেওয়া যায়।
:কিভাবে?
:চোখে ভাষা দেইখা আফা আপনের চোখের ভাষ।
:তুই আবার আফা বলছিস।
:মাপ করবেন। গেলাম। আম্নের আবার মেজাজ গরম হইলে তাল ঠিক থায় না।
:কি বললি তুই? ওই শুনে যা।কি বললি?
তার আগেই নিপা দৌড়ে স্থান ত্যাগ করে।
'
কিছুদিন পরেই রুপা দেখে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তাসফি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ছাদে। তখন বেলা পাঁচটা।রুপা দৌড়ে গেল। অস্বাভাবিক ছিল তার দৌড়।প্রানপনে দৌড়ে ওর কাছে গেল।ওদের ছাদে গেল।গিয়ে ওর গায়ে হাত দিতেই রুপা দেখল জ্বরে ওর গা জ্বলে যাচ্ছে।তখনও কিছুটা বৃষ্টি হচ্ছিল।রুপা অনেক চেষ্টা করছে।তবুও উঠাতে পারছে না।আর যাই হোক সে তো একটা ছেলে।রুপা উপায় না পেয়ে সিঁড়িরর কাছে এসে কিছুক্ষন চেঁচাল।ওর এমন চিৎকার শুনে নিচের প্লেটের সদ্য বিবাহিত এক দম্পতী বেরিয়ে এল।তারা যখন ছেলেটাকে দেখল তখন তাদের মধ্যে মেয়েটি       " তাসফি ভাইয়া" বলে  চিৎকার দিয়ে উঠল।ছেলেটা এসে তাসফি কে ধরে সিঁড়ির রুমে আনল।মেয়েটা ততক্ষনে তাসফির মা বাবা কে ঢেকে আনল।তাদের দেখতেই রুপা বোমা ফাটাল।বলল,
:আপনারা কেমন বাবা মা।ছেলের যে এ অবস্থা খেয়াল রাখতে পারেন না?
তাসফির বাবা মা কিছুটা অবাক হলেন।তাসফির বাবা বললেন,
:আর কত খেয়াল রাখব রে মা।সে কি আমাদের কথা শুনে। কিছু বললেই মৃত্যুর হুমকি দেয়।তখন কি আর কিছু করার থাকে?
তাদের কথায় রুপা হতাশার আভা পেল।তাই আর কথা বাড়াল না।ছেলেটা তাসফিকে নিয়ে রুমে চলে গেল।সবার সাথে রুপাও গেল।ওর মা জল পট্টি দিচ্ছে। ওর বাবা পাশেই হতাশার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে।মাঝে মাঝে কয়েক ফোটা জলও পড়ছে।তা রুপার চোখ এড়াল না।কিছুক্ষণ পরেই তাসফি জ্বরের গোরে অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল,
: আরু! আমি তো ধর্শক হতে চাই নি।কেন এমন করলে অরু।কেন? অরু?
ওর মা পাশ থেকে বলে উঠল,
:অরু কে রে বাবা।
ও বিড় বিড় করেই যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর আবার থেমে গেল।ঘুমিয়ে গেল তাসফি।তাসফির মা পাশে বসে আছেন। তাসফির বাবা রুপার সাথে কথা বললেন।জানতে পারলেন রুপার সম্পর্কে। তাসফির এই বেপারে জানতে চাইল রুপা।তিনি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,
:সে কি আর আমাদের কিছু বলে।একদিন হুট করে এসেই দরজা বন্ধ করে দেয় তারপর আস্তে আস্তে সব পরিবর্তন।কিছু বলতেই পারি না ওকে।কত করে বললাম বৃষ্টিতে ভিজবা না।কে শুনে কার কথা।আবার যাবার সময় বলে গেল আমরা যেন ওর পিছন পিছন না যাই।গেলেই ও ছাদ থেকে ঝাপ দিবে।  জানো, আমার এক মাত্র ছেলে ও।ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আর ওর মা কি করব বল। কি নিয়ে বাঁচব আমরা?
এই বলে তিনি কাঁদতে লাগলেন।রুপা কিছু বলল না।চলে আসল সেখান থেকে। তারপর থেকে রুপাও কেমন জানি নিশ্চুপ হয়ে যায়।কেউ কথা বলতে এলে খুব বিরক্ত হয়।ও বাবা বিষয়টা আঁচ করতে পারলেও কিছু বললেন না। এই মূহুর্তে ওর একা থাকাটাই ভালো।
'
এর পরের দিন রুপা তাসফি কে দেখতে গেল।দরজায় বেল চাপ দিতেই তাসফির মা দরজা খুলল।রুপা সালাম দিল বলল,
:তাসফি কই আন্টি?
ওর মা বলল,
:দেখ না।একটু সুস্থ হতেই সবাইকে ভুলে গেল। আমাদেরকে ঠেলে ওর রুম থেকে বের করে দিল।
:ওমা! তাই নাকি?
:হুম।কি করি এখন?
:আচ্ছা আমি দেখছি।ওর রুমটা কোন দিকে?
:ওই যে...
'
:তাসফি সাহেব কি আছেন?
:....
:তাসফি?
:....
:আমি অরুর ফ্রেন্ড। প্লিজ দরজা টা খুলুন। আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
দরজা খুলেই তাসফি হস্তদন্ত হয়ে বলল,
:আপনি অরুকে চিনেন? অরু আপনাকে পাঠিয়েছে?
রুপা ভাবে যাক কাজ হয়েছে।রুপা বলল
:হুম।ওই তো আমাকে পাঠিয়েছে।কিছু কথা আপনাকে বলতে বলছে?
:কি কি বলেছে ও।আর ও কই? আপনি প্লিজ আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলেন
নিয়ে যাব।তবে আপনাকে এর আগে আমার কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।
:কি কি শর্ত।আমি সব মানতে রাজি। প্লিজ আপনি আমাকে ওর খোঁজ টা দিন।
:চলেন।
:কোথায়।
:আপনাকে আসতে বলছি।আসেন।বেশি কথা বলেন কেন?
:কিন্তু...?
:কোন কিন্তু নয়।না আসলে আপনি অরুর খোঁজ পাবেন না।
:চলুন। চলুন।
রুপা তাসফিকে ওর বাবা মায়ের সামনে দিয়ে বিজয়ীর হাসি দিয়ে ওকে নিয়ে ঘর থেকে বের হল।রুপার কাছে তাসফির বাবা মায়ের হাসিটা কেন জানি খুব ভালো লাগল পুরো হৃদয়ে শান্তির বন্যা বইয়ে দেওয়া হাসি।
তাসফি অবাক ভঙ্গিতে রুপাকে বলল,
:এখানে এলেন কেন?
:আপনাকে আগে ফ্রেশ হতে হবে।তা না হলে এই বেশে আপনাকে অরুর কাছে নিয়ে যেতে পারব না।
:না। আমি এখন চুল দাড়ি কাটতে পারব না।
:তাসফি! 
তাসফি কিছুক্ষণ রুপার দিকে তাকাল।তারপর কিছু না বলে বসে গেল চুল দাড়ি কাটতে।
এই অরুর কাহিনি বলেই রুপা তাসফি কে ঘর থেকে বের করত।এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াত। তাসফি শুধু অরুর কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু রুপা হেন তেন বুঝিয়ে ওকে ঠিক সামলিয়ে নেয়।মাঝে মাঝে তাসফি খুব বাঝে বিহেব করে।কিন্তু রুপা কিছু মনে করে না।এটাই স্বাভাবিক। ও যে রুপার সাথে বের হয় এটাই অনেক। এমন ভাবে চলতে থাকে তাদের পথ চলা।
'
কয়েক মাস পর
রুপা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে।খুব সুন্দর। কালো শাড়ি,চোখে গাঢ় কাজল,ঠোটে হালকা গোলাপি লিপষ্টিকে রুপা কে দারুন লাগছিল। কালো শাড়িটা আরও আকর্ষনীয় করে তুলছে রুপা কে।রুপা বের হতেই তাসফি কে ফোন দিল। তাসফি ধরেই বলল,আমি আসছি।তুমি নিচে থাক।
তাসফি আজ গোলা কালারের একটা শার্ট আর জিন্স এর প্যান্ট পরল।রুপা ভাবছে তাসফি ওকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে।কিন্তু হল কি? উল্টা ওকেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।তাসফি এসেই বলল,
:চল।
:হুম চল।
:আর আমাকে আজ অরুর কাছে নিয়ে যেতেই হবে।আজকেই আমি ওর সাথে 
দেখা করব।আচ্ছা তুমি আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবে আজ?
রুপা মুখ কালো করে বলল,
:হুম।নিয়ে যাব আজ।
,
রুপা আর তাসফি বসে আছে মনপুরি পার্কে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে ওরা।
রুপা কিছুটা হতাশ। কারন ও চাচ্ছিল তাসফি ওকে দেখুক।কিন্তু তাসফি ওকে দেখছেই না। এটা কোন ভাবেই মানা যায় না।তাই রুপা নিজ থেকেই বলল
:আমাকে কেমন লাগছে বললে না তো?
:বলার কি কথা ছিল নাকি?
:না তা না।তবে...
:তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।আর তুমি জান আমি কেন তোমার সাথে বেশি বের হই।
:কেন? 
:তোমার মাঝে আমি কেন জানি অরু কে খুঁজে পাই। তুমি ওনেকটাই অরুর মত করে চল।তাই।আর...
:আর...
:বলছি।আগে তুমি বল তুমি আরুর নাম শুনলে কোথায়?
:আরে আমি ওর বন্ধু।আমি ওর নাম...
:থাক আর অভিনয় করতে হবে না।কিভাবে শুনছ সেটা বল।
রুপা ভাবে,
 ও কি ধরা খেয়ে গেল নাকি।তাহলে...
নাহ।সত্যিটা বলেই দেই। আর ও হয়ত ধরেই পেলেছে।
রুপা  নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,
:আসলে তোমার যেদিন জ্বর ছিল সেদিন তুমি অরু নামে কাউকে ডাকছিলে।সেখান থেকে শুনেছি।
:তুমি আসলেই একটা পাঁজি মেয়ে।এত বুদ্ধি আসে কোথা থেকে?
এই বলে তাসফি মৃদু হাসল।সেই হাসিতে রুপা প্রান পেল না।পেল কঠোরতা।রুপা তা উপেক্ষা করে বলল
:মানে কি?
তাসফি এবার কঠোর হয়ে বলল,
:মানে এখনও বুঝ নাই? এই তুমি কি ভাবছ। আমি কিছু বুঝিনা তাই না।ভুল ধারনা তোমার।আমি প্রথম দিনেই তোমার চোখ দেখে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। এর পরে যখন তোমার সাথে চলতে শুরু করলাম তখনই সব ক্লিয়ার হয়ে যায়।তুমি যে আসলে আরুর সম্পর্কে কিছুই জান না সেটা আমি জানি রুপা।হারিয়ে যাওয়া অরু যে আর কোন দিন আমার কাছে আসবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি।আর আমার সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতাও অরুর নেই।
রুপা পাশ থেকে বলল,
:কেন?
তাসফি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
:অরু আমার স্বপ্ন।আমার রাত।দিন।আমার হৃদয়ে শুধু একটা নামই ছিল। অরু।যাকে আমি মন প্রান দিয়ে ভালোবেসেছি।সেও আমাকে ভালোবেসেছিল  খুব ভালোবেসেছিল। সর্বস্ব দিয়ে দিয়েছিল আমাকে।আমিও ওকে ভালোবেসেছিলাম রুপা।মন প্রান দিয়ে ভালোবেসেছিলাম।
এই বলে কিছুটা থামে তাসফি। চোখ দিয়ে যেন ঝর্নার পানির মত পানি পড়ছে।চোখের জল গুলো গাল বেয়ে ওর প্যান্ট এ পড়ছে।ওর প্যান্টের কিছু অংশ ভিজে যাচ্ছে।রুপা বলল,
:তারপর?
তাসফি চোখ মুছে বলে,
:তারপর হঠাৎই এক দিন অরু আমাকে ওর ফুফুর বাসায় ডেকে পাঠায়।
আমি গিয়ে কিছুটা অবাক হই।কারন এই বাসা আমার ভালো ঠেকছে না।আর ওর যে ফুফু আছে সেটা তো আমি জানতাম না।আমি বলি,
:এখানে নিয়ে এলে যে? 
অরু বলল,
:ফুফু তোমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। তাই নিয়ে এলাম।
চা টা খাওয়ার পর ও আমাকে নিয়ে ওর ফুফাতো বোনের রুমে নিয়ে যায়।ওই রুম দেখার সময়ই আমার মাথাটা ঘুরে আমি পড়ে যাই অরুর গায়ে। ও আমাকে সামলে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়।যখন আমার সেন্স পুরোপুরি যায় নি তার ঠিক কয়েক মিনিট আগে আমি আমার ঠোটে  শিতল কিছু অনুভব করি।হ্যাঁ ও আমাকে কিস করেছে।।আমার পুরো গা শিউরে উঠে।আমি শিউরে উঠতেই ও আমাকে আরো জোরে চেপে ধরে।আমার বুঝতে বাকি রইল না কি হতে যাচ্ছে।আমি হাত দিয়ে অরুকে বাধা দিলাম।কিন্তু  আমি ওর সাথে পারি নি।আমার সকল শক্তি যেন গ্রাস হয়ে গিয়েছে। তারপর  আমি ঘুমের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাই।আর কিছুই মনে নেই আমার
এক সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আমি অনুভব করি কেউ আমার বুকের উপর শুয়ে কান্না করছে।অরু কান্না করছে। কেন? বেপারটা বুঝে উঠার আগেই আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
 ঘুম থেকে উঠেই আমি একটা চিঠি পাই আমার বুকের উপর।
তাতে লিখা ছিল,
:ক্ষমা করে দিও।এমন না করলে তুমি কখনই রাজি হইতা না।বলতা যা হবে বিয়ের পর হবে।কিন্তু কি আশ্চর্য বেপার যে আমাদের বিয়ে কখনই হবে না।বাবা তা মেনে নিবে না।বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন।খুব ইচ্ছে ছিল তোমার বুকে মাথা রেখে বাকি জিবন পার করব।কিন্তু তা আর হল কই।।আর  হ্যাঁ আমার ভালোবাসা মিথ্যা নয়।তবে আমি বাবার অমতে বিয়ে করতে পারব না।জানি ক্ষমা করতে পারবে না। তবুও পারলে ক্ষমা করে দিও।ভালো থেকে।
ইতি
অরু।
জান সেদিন এই চিঠিটা বুকে নিয়ে কত কান্না করেছি। আমি যা চাই নি তা আমার সাথে হয়েছে।আমার আর ধর্শকের মাঝে পার্থক্য কি রইল।নাহ।আমি ভালো না।আমি ধর্শক।তাই তো বৃষ্টিতে ভিজে নিজেকে কিছুটা হালকা করতাম।যদি কিছুটা পরিষ্কার হত।কিছুটা পবিত্র হত আমার এ অপবিত্র গা।বাজে ব্যবহারের জন্যে ক্ষমা করে দিও রুপা।চলি।ভালো থেক।
:কিন্তু আমার যে তোমার এই সরল চোখ জোড়া চাই।
:পারব না দিতে।এটা সরল না।অপবিত্র।চলি।
রুপা ওর হাত ধরে বলে,
:প্লিজ এমন করিও না।আমি কি করব বুঝতে পারছি না।তুমি আমার ভেতরের অনেকটা জুড়ে অস্থান করেছ তাসফি। এখন আমি চাইলেই তোমাকে ভুলতে পারব না।তোমাকে সেখান থেকে বের করতে পারব না।
:কেন পাগলামি করছ রুপা।আমার আর এসব ভালো লাগে না রুপা।খামখা নিজেকে আর কষ্ট দিতে চাই না আমি।আর আমি চাই না কেউ আমার জন্যে কষ্ট পাক।চলি।ভালো থেক। তাসফি সেখান থেকে সোজা বাড়িতে চলে আসে।রুপা কিছুক্ষণ বসে থেকে কিছু কষ্ট ঝরায়।তারপর সেও সেখান থেকে চলে আসে।কয়েক দিন কেউ কারো সাথে দেখা করল না।তাসফি নিজেকে সামলে নিতে পারলেও রুপা তা পারে নি।চোখ দুটো বুঁজলেই যেন তাসফির মুখটা ভেসে উঠে।ভেসে উঠে ওর চোখ দুইটা। কি করবে ভেবে পায় না রুপা। রুপার বাবা রুপাকে বলে,
:মারে যা করবি ভেবে চিন্তে করবি।জীবন একটাই।আর যাই হোক আমি চাই না তুই আমার মত জিবন পার করিস।
রুপা কিছু না বলে বাবা কে জড়িয়ে ধরে।খুব কান্না করে বাবাকে ধরে। রুপার এমন অবস্থা দেখে কিছুটা চিন্তিত হন তিনি।
'
তাসফি রুমে বসে পড়ছিল।সে নিজেকে বদলে ফেলেছে। বাবা মাকে আর কষ্ট দিবে না ও।নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রানপন চেষ্টা করছে তাসফি। হঠাৎই কলিংবেল বেজে উঠে।ওর মা রান্না করছেন।তিনি তাসফিকে ডেকে বললেন দরজা টা খুলতে।
তাসফি দরজা খুলেই দেখল একজন লোখ দাঁড়িয়ে আছেন। খুব চিনা চিনা মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে কোথাও দেখেছে এই লোককে।পরক্ষনেই মনে পড়ল আরে ইনি তো রুপার বাবা।ইনি এখানে কি করছেন? তাসফি তাড়াতাড়ি সালাম দিল।বলল,
:ভিতরে আসুন প্লিজ।
তিনি ব্যাস্ততার ভঙ্গিতে বললেন,
:না না।ভিতরে অন্য একদিন যাব।আজ সময় নেই একটা কথা বলতে এসছিলাম বাবা।
:ভিতরে এসে বলুন না প্লিজ।
:না।তার প্রয়োজন নেই।যা বলছিলাম।শুন বাবা,আমার মেয়েটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।আমি ঠিক কি করব বুঝতে পারছি না।তুমি যদি একটু ওকে দেখে আসতে তাহলে হয়ত মেয়েটা কিছুটা স্বস্তি পেত।কি বাবা,সময় হবে?
:আরে আঙ্কেল বলছেন কি।সমস্য নেই।আমি এখনি গিয়ে দেখে আসছি।
:আচ্ছা বাবা আমি চলি।অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে।যাই।
এই বলে তিনি খুব জলদি সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন।
'
রুপাদের বাসার কলিংবেল বাজাতেই নিপা দরজা খুলে দিল। বলল,
:আরে ভাইজান? কেমন আছেন?
তাসফি বলক,
:এই তো ভালোই।আচ্ছা রুপা রুম কোনটা?
:আহেন।আঁই দেহাই দেই ।তাসফি  আস্তে আস্তে ওর পিছন পিছন রুপার  রুমের দিকে গেল।যখন রুমে গেল তখন আমি নিপাকে পাঠিয়ে দেয়। তাসফি  ওর রুমের গিয়ে দেখল ও রুমে নেই।বারান্দায় গিয়ে দেখল ও তাসফিদের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তাসফি  কিছু বলল না।আস্তে করে ওর পাশের চেয়ারটাতে বসল। তাসফির উপস্থিতি টের পেতেই রুপা কিছুটা অবাক হয়ে তাসফির দিকে তাকাল। তবে কিছু বলল না।অন্য দিকে মুখ গুরিয়ে নিল।তাসফি বুঝতে পারছে। "তাসফিও কিছু বলল না।কিছুক্ষণ দুজনের কেউই কোন কথা বলল না।তাসফি ওর দিকে তাকাতেই রুপা ওর দিকে তাকাল। দুজনেই আবার চোখ ফিরিয়ে নিল।নিরাবতা ভেঙ্গে তাসফি বলল,
:এ কেমন পাগলামি শুরু করছ রুপা? অন্তত তুমি তো বেপারটা বুঝ।কেন এমন করছ।আমার মত একটা মানুষের জন্যে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ?
:এগুলোর উত্তর তুমি জান তাসফি। কেন বারবার এগুলো জিজ্ঞেস করছ?
:দেখ...
:তুমি আমাকে মেনে নিবে কি না বল?
:বিষয়টা বুঝার চেষ্টা কর রুপা।
:অনেক বুঝেছি।অনেক ভেবেছি।আমার একটাই কথা। আমার তোমাকেই চাই।
:ধুরর! তোমাকে বুঝানোর সাধ্যি আমার নেই।তোমার বাবাকে বলতে হবে।তারপর তোমার বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
রুপার কেন জানি খুব রাগ উঠল।রুপার রাগ উঠলে নিজেকে আর কন্ট্রল করতে পারে না।রুপা চোখ রাঙিয়ে বলে,
:আমার বিয়ে দিবি তাই না? আমার বিয়ে? শুনে রাখ, আমার বাবা কেন? তার চোদ্দপুরুষ যদি এসে আমাকে বলে বিয়ে করতে তাহলেও আমি বিয়ে করব না।কথাটা মনে রাখিস।
তাসফি মৃদু হেসে বলে,
:আমাকেও বিয়ে করবে না?
তাসফির কথা শুনে রুপা হুট করেই ওর দিকে তাকায়।এতক্ষণ জমে থাকা সব রাগ অভিমান যেন নিমিশেই পানি হয়ে গেল।রুপা ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে ও।চোখটা ভিজতে শুরু করে দিল।কয়েকফোটা পড়েও গেল।উপরের দাঁত দিয়ে ঠোটটা কামড়ে ধরে রুপা শুধু মাথা উপর নিচ করল।তাসফি ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
:আরে কান্না করছ কেন? আরে পাগলি। এত কান্না করতে হয় নাকি?
ওর কোন কথাই বলছে না।শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।কান্না করতে করতে বলল,
:ওই তুমি  জান না যে আমি তোমাকে কতটা  ভালোবাসি। ভালোবাসি বলেই এগুলো করছি।বুঝ না?
তাসফি কিছুটা দুষ্টুমি করে বলে,
:নিজে তো ভালোবেসেছ সাথে আমাকে তোমাকে ভালোবাসাতে বাধ্য করেছ।
রুপা খানিকটা অভিমানী স্বরে বলল,
:হুহ।আমার জিনিস আমি যা ইচ্ছে তাই করব। তাতে তোমার কি?
:তাই না।
:হুম তাই।আর শুন।আজ থেকে কোন থেকের যদি তাকাও তাহলে তোমাকে যে কি করব সেটা আমিও জানি না।কথাটা মনে রেখ। 
রুপা রাগি চোখে তাসফির দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল। রাগি রক্ত বর্নের মুখটাতে গৌধুলির রক্তিম আভা পড়লে হয়ত রুপাকে আরও বেশি সুন্দর দেখাত।কিন্তু এখন তা হচ্ছে না।তবে মৃদু বাতাসে রুপার চুল উড়ছে।রুপাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। তাসফি সেই সৌন্দর্য দেখছে।ভাবছে,মেয়েটা আসলেই পাঁজি। প্রথম দিন দেখেই আমি সেটা বুঝতে পারছি।আমাকে নিজের করেই ছাড়ল।পাগলি একটা।
'
রুপার বাবা অফিসে বসে কাজ করছিল। এমন সময় পিয়ন এসে বলল,
:স্যার! আপনার জন্যে কেউ একজন অপেক্ষা করছে। খুব জরুরি কিছু কথা আছে বলছেন তিনি। দেখা করতে চাচ্ছেন।
:আমি এখন ব্যাস্ত আছি।পরে কথা হবে।
:উনি আপনার কেবিনে
আসতে চাচ্ছেন।
রুপার বাবা কিছুক্ষণ ভাবল।এখানে তো আমাকে তেমন কেউ চিনে না।তাহলে কে হবে? তিনি কিছুটা ভেবে বললেন,
:আচ্ছা উনাকে আসতে বল।
:আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর দরজার পাশ থেকে বলে উঠল,
:আসব?
রুপার বাবা খুব তাড়াতাড়ি মাথা উঁচিয়ে দেখলেন। কিছুটা সক খেলেন তিনি। চিরচেনা সেই আওয়াজ।  'আসব 'যেন এখনো উনার কানে শব্দটা প্রতিধ্বনি হচ্ছে।কতদিন পর এই কথাটা শুনছি।হৃদয়টা যেন শান্ত হয়ে গিয়েছে।এতদিনের জলন্ত আগুন যেন নিমিশেই নিভে গেল।রুপার বাবা চোখ নামিয়ে নিজেকে যথেষ্ট সংযত রেখে বললেন,
:জি আসুন।
আসার পর তিনি চোখ ফাইলের উপর রেখেই বলল,
:বসুন।
সামনের মানুষটি রুপার বাবার এমন আচরণে কষ্ট পাচ্ছেনন।তবে কিছু বলতে পারছেন না।কারনটা তিনি নিজেই জানেন।নিজের জন্যেই নিজে এত কষ্ট পাচ্ছেন তিনি।মানুষটি একজন মেয়ে মানুষ। একজন মহিলা।হ্যাঁ তিনি রুপার মা।নিশি!
তিনি বসতে বসতে বললেন,
:কেমন আছ?
রুপার বাবা নিজেকে সংযত রাখতে পারছেন না।উনার মন চাচ্ছে নিশিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি কিন্তু তিনি এখন তা পারছেন না।তিনি বললেন,
:ভালো।আপনি?
:আপনি করে বলছ যে?
:পর কে তো আপনিই করে বলতে হয় তাই না।
রুপার মা কিছুটা কষ্ট পেলেন।মুখটা কালো হয়ে গেল।ছোট্ট একটা ভুলের জন্যে আজ এত মন কালাকালি।
রুপার মা বলল,
:কিহ? তুমি এই কথা বলতে পারলে?
:না পারার কি আছে বলুন? আপনিও তো একটা ছোট্ট ভুলকে বিশাল করে তুলে আমাকে আর আমার মেয়েকে একা ফেলে চলে গিয়েছেন।আপনি যদি সেটা পেরে থাকেন তাহলে আমি কেন এই কথা বলতে পারব না?
রুপার মা কিছু বলে না।চুপচাপ চোখের পানি ফেলে।কারন কথাটার উত্তর তার কাছে নেই। তিনি চুপ করে আছেন। 
রুপার বাবা তিনার দিকে তাকাচ্ছে না।তাকালে হয়ত এতক্ষণ যেভাবে বসে বসে কঠোর ভাবে কথা বলছেন সেটা আর পারবেন না।নিচের দিকে তাকিয়েই বললেন,
:কি জন্যে আসছেন?
:ফিরে যেতে।
:সম্ভব নয়।
:কেন?
:কারন আপনার প্রয়োজন নেই। আমি একা একা ছিলাম।আছি।এবং থাকতেও পারব।তাছাড়া আর বাঁচবোও বা কয় দিন।থাকতে পারব আমি।কষ্ট হবে না।
:কিন্তু আমি যে আর পারছি না।
:সেটা তো আমার বেপার না।আপনি ছেড়ে যেতে যেহেতু পেরেছেন থাকতে পারবেন।
:না আমি পারছি না শাকের।আমার দ্বারা সেটা হচ্ছে না।অনেক চেষ্টা করেছি। পারি নি। আর তুমি? তুমিও তো আমার আর খোঁজ নেও নি।খুব বেশি অভিমান তোমার তাই না।
:ভালো থাকার জন্যে ছেড়ে গিয়েছেন। তাই ভালোই থাকবেন। এটাই স্বাভাবিক।
:না আমি ভালো থাকি নি।এক মূহুর্তেও আমি ভালো থাকি নি। আর আমি পারবও না।প্লিজ ফরগিব মি।আমি আর পারছি না।
:প্লিজ আপনি এখান...
:তোমার দু পায়ে পড়ি। প্লিজ।আমাকে আর কষ্ট দিও না।আমি আর পারছি না।
:কষ্ট কি তোমার একার হয়। আমার হয় না? আমি থাকছি কিভাবে।প্রতিটা দিন কিভাবে যে পার করি সেটা খোদা ছাড়া আর কেউই জানে না।কি দোষ ছিল আমার? কেন এমন করলে আমার সাথে?
রুপার মা বুঝতে পারলেন।তিনি ভাবছেন,শাকেরের রাগ কমে এসেছে।কিছুটা খুশি হচ্ছেন তিনি। কারন শাকেরের চোখ অন্য কিছু বলছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই সে আমাকে রার বাহু ডোরে জড়িয়ে নিবে।আর তার অপেক্ষাতেই আছি।
'
শাকের আহমেদ এর অফিস কক্ষে তার বউ তাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন।খুব কান্নাও করছেন দুজনে।এতদিনের সকল মান,অভিমান,রাগ সব যেন কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই নিভে গেল।ভরে গেল ভালবাসায়।শাকের আহমেদের রুমটা কেমন জানি অন্য রকম হয়ে গেল।কেমন জানি ভালোবাসা ময়।দুই ক্লান্ত প্রেমিকের এমন মিল দেখে সর্বত্রই যেন খুশির রোল পড়ল।মনে হচ্ছে রুমের দেয়ালটাও খুব খুশি তাদের এমন মিলনে।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কষ্ট গুলোকে ঝরিয়ে ফেলছে।কষ্টের পরিবর্তে সেখানে ভালোবাসা স্থান পাচ্ছে।পরম পবিত্র সেই ভালোবাসা।

ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url