ভালোবাসার গল্পঃ ভালো থাকুক মিহিনেরা
তাসফি আহমেদ
ছেলেটা একটা কালো কালারের শার্ট আর একটা জিন্সের প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটার কোচিং এর সামনে।কিছুটা আড়াল হয়ে।যেন মেয়েটা না দেখতে পায়।পকেটে হাত দিতেই কলমটায় হাতের স্পর্শ লাগল।কলমটা বের করেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল কলমটার দিকে।আবার পকেটে রেখে দিল খুব সাবধানে।কলমটা আজ মেয়েটা কে উপহার দিবে ছেলেটা।হুম! আজ মেয়েটার জন্ম দিন।সেই পিচ্চি মিহিনটা কত বড় হয়ে গেল! ভাবে তাসফি। হ্যাঁ! তাসফিই সেই ছেলে যে মেয়েটা মানে মিহিনকে আজ কলমটা উপহার দিবে ওর জন্মদিনের উপহার হিসেবে।দিয়ে বলবে, নিজের সুখ গুলো অন্তত এই কলম দিয়ে ডায়েরি তে লিখ।আমার ক্ষত আর অবুজ হৃদয়টা একটু হলেও শান্তি পাবে।কলমটায় তোমার হাতের স্পর্শ পেতেই এক ঝাক শান্তি বিরাজ করবে আমার মাঝে।
তাসফি ভাবে,আচ্ছা ও কি আমার কাছ থেকে কলমটা নিবে? নাকি ছুড়ে ফেলে দিয়ে এক গাদা কথা শুনিয়ে দিবে।অপমান কারবে।হেস্তনেস্ত করবে।চড়ও দিতে পারে।প্রচন্ড রাগি মেয়েটা। যা করে করুক। আমি আজ দিবই।আমার যে আজ ওকে কলমটা দিতেই হবে।আচ্ছা ও কি আমাকে ক্ষমা করতে পারে না।একটু ক্ষমা করে দিলে কি হয়।আমি তো নিজের দোষ স্বীকার করছি।তারপরেও কেন ক্ষমা করছে না আমাকে ও।কেন আমাকে এখনও ঠিক আগের মতই ঘৃণা করে।কেন আগের মত ভালোবাসে না আমাকে।কেন? কিছুক্ষনের জন্যে পিছনের দিন গুলো ভেসে উঠে ওর চোখের সামনে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে ওর।কি ভুল টাই না করল।
'
আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি ঠিক সে সময়ে মিহিনকে ওর আম্মু আমাদের স্কুলে ভর্তি করায়। সেদিনই কেন জানি ওই মেয়েকেই আমার খুব ভালো লাগে।অবশ্য সে বয়সে আর কিসের এত ভালো লাগা।এমনিতেই দেখতে সুন্দর। সুন্দর মেয়েদের (আটা ময়দা বিহিন) দেখলেই কোন বাচ্ছাও কান্না থামিয়ে ফেলে।এ আর এত কি।ও সুন্দর, তাই আমার ওকে ভালো লাগে।
আমি মেয়েটা কে চিনি।ওর মাকেও।বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে এসেছেন তিনি।মায়ের খুব ছোট বেলার বন্ধু। হুম! এমন কিছুই হবে।।আমি উনাকে আন্টি বলে ডাকি।বেশ ভালো মানুষ তিনি।তবে সেদিনকার সেই পুচকে মিহিনের সাথে আমার এত ভাব ছিল না।আমি প্রথম থেকেই মেয়েদের এড়িয়ে চলতাম।যেদিন ও প্রথম ক্লাস করতে আসে ঠিক সেই দিন আন্টি ওর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়।আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়।
আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।পড়ালিখায় ও আমরা ছিলাম এগিয়ে।ওদের বাসা ছিল আমাদের বাসা থেকে খানিকটা দুরে।যেতে প্রায় সাত কি আট মিনিট লাগে যেতে।তাই আমরা রোজ এক সাথে আসতাম।যাওয়ার সময় একসাথে যেতাম।ততদিন পর্যন্ত সব ঠিকি ছিল।কিন্তু পঞ্চম শ্রেনিতে উঠার পর আমি কেন জানি ওর প্রতি একটু বেশিই আশক্ত হয়ে গেলাম।পঞ্চম শ্রেনিতে উঠা মাত্রই মনে হতে লাগল আরে আমি তো বড় হয়ে গেছি।এগুলো এখন মনে পড়লে হাসি পায়।তখন আমার মনে হতে লাগল আরে আমি তো মিহিনের প্রেমে পড়ে গেছি।ভালোবেসে পেলেছি আমি ওকে।অনেক বেশি ভালোবেসেছি ওকে।
আমি একদিন সময় বুঝে সরাসরি বলে দেই ভালোবাসার কথা।সেদিন ক্লাস থেকে ফিরার পথে ও যখন ওদের বাসার গেইট দিয়ে ঢুকবে ঠিক তখনই আমি ওকে ডাক দেই।
:মিহিন!
ও পিছন ফিরে তাকায়।শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
:কি?
:একটা কথা বলার ছিল?
ও একটু এগিয়ে এসে বলল,
:বল।
:আমার কি মনে হয় জানিস?
:কি?
:আমি তোকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি তোকে।
:কি বললি? আবার বলত।বল!
আমি ওর চাহনি দেখে কিছুটা ভয়ে পেয়ে যাই। ভুলে মুখ ফসকে বলে ফেলি
: i heat u.
এ কথা শুনার পর মেয়েটার মুখটা কালো হয়ে যায় আমি একটু তাকাতেই দেখলাম চোখে পানি।আমার দিকে তাকিয়ে মুখে ওড়না গুঁজে দৌড়ে চলে যায়।আর আমি ঠায় দাড়িয়ে রইলাম।কি বলছি আমি নিজেও জানি না।এখন?এখন কি হবে?খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি।খুব।কিছুটা ভয় পেতে থাকলাম। তাহলে কি ও আর আমার সাথে কথা বলবে না।আমার সাথে আর স্কুল থেকে আসবে না।কথা গুলো মনে হতেই মন খারাপ হয় আমার। এর মাঝে কিছুদিন ওর সাথে কথা হয় না।আমিও ভয়ে যেতাম না।পরে অবশ্য আমাকেই ভয় কাটিয়ে মেয়েটার রাগ ভাঙ্গাতে হয়েছে।এর কিছুদিন বাদেই আমি ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলে দেই।প্রথম প্রথম আমাকে একেবারে না করে দিত।কিন্তু আমার পাগলামি দেখে ও নিজেও আমার ডাকে সাড়া দেয়।আমাকে অবাক করে দিয়ে ও নিজেও বলে ও আমাকে ভালোবাসে।
কিন্ত আমরা ঠিক তখনও আবেগ কি কিংবা আবেগে সংগা জানতাম না।জানতাম আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।পঞ্চম শ্রেনীর পিএসসি পরিক্ষায় ও ছিল আমার সামনে আমি ছিলাম ওর সামনে।আনন্দের সাথেই পরিক্ষা দিতাম আমরা।পরিক্ষার শেষে আমি চলে যাই আমার নানার বাড়ি।সেখানে বেশ কিছুদিন কাটাই।প্রথম ক'দিন ওকে আমার মনে পড়ত।এর পরেই আমি ওকে খানিকটা ভুলে যাই।আমি ভুলে যাই যে,আমি কাউকে ভালোবেসেছি।কাউক
ে প্রপোজ করেছি।আমি ভুলে যাই যে আমারও একজন ভালোবাসার মানুষ আছে।আমি সেখানে কিছু বন্ধু পেয়ে তাদের সাথে খেলাধুলায় মেতে উঠি।কিছুদিন পর আমরা আবার ফিরে আসি।একদিন বিকেলে মিহিন আর ও মা আসে।আমি তখন টিভি দেখছিলাম।ওর দিকে তাকাতেই আমার ভালো লেগে উঠল। আহঃ কত দিন যে এই মুখটা দেখি না।আমি ভেবেছি ও আমার কাছে আসবে।আমার সাথে বসবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও ওর আম্মু চলে গেল আমার আম্মুর কাছে।আমি খুব অবাক হলাম।সেদিন ও চলে গেল।আমার সাথে একটা কথাও বলল না।যাওয়ার সময় আমার শুধু একবার তাকিয়েছিল।খুব খারাপ লাগছিল আমার।খুব! মেয়েটা আমাকে এড়িয়ে চলছে কেন? কিছুক্ষণ ভাবতেই মনে পড়ল নানু বাড়ির কথা।ওখানে গিয়ে যে ওকে ভুলে গেলাম,আর যাওয়ার সময়ও ওকে বলে যাই নি।এ জন্যে হয়ত ওর মন খারাপ।
আমার ধারনাই ঠিক হল।আমি ওর কাছে সেদিন খুব ক্ষমা চাই যেদিন আমি জানতে পারি যে ও এই কারনেই আমার সাথে কথা বলে না।আমি অনেক রিকুয়েস্ট করলাম। তবুও মেয়েটা আমার কথা শুনে নি।আমার সাথে কথা বলে নি।
ক্লাস সিক্সে আমি আর ও একই স্কুলে ভর্তি হই।মেয়েটা আমার সাথে কথা না বলায় তখনও আমার মন খারাপ ছিল।
সেদিন স্কুলের মাঠে এসেম্বলি হচ্ছিল।সবার সাথে আমিও গিয়ে দাঁড়ালাম। মিহিন জন্যে খুব খারাপ লাগছে।খুব! হঠাৎই আমার কেন জানি মনে হল কেউ আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াচ্ছে।আমি সেদিকে ফিরলাম।আরে? এত মিহিন। আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াচ্ছে নাকি অন্য কাউকে।আমি পিছন ফিরে তাকালাম। কিন্তু তেমন কাউকে পেলাম। আমি আবার মিহিনের দিকে তাকালাম। মেয়েটা এখন হাত নাড়ছে না।শুধু তাকিয়ে আছে।ও তো আমার উপর রাগ করে আছে।তাহলে? আমাকে দেখে হাত নাড়বে কেন।আল্লাহই ভালো জানে।এসেম্বলি শেষে আমি ক্লাসে চলে আসি সবার সাথে।যখন আমি আমার সিটে বসলাম ঠিক তখনই একটা কাগজ আমার ব্যাগের উপর পড়ল।তাতে লেখা, তুমি আজ আমার সাথে কেন কথা বললে না।তুমি এখন থেকে আমার সামনে আসতে পার।তোমার উপর যে রাগ ছিল সেটা ভেঙ্গে গেছে।কাগজটা পাওয়ার পর কি যে ভালো লাগছিল।বলে বুঝাতে পারব না। এর পরের দিন গুলো বেশ ভালোই কাটছিল।
সিক্সের অর্ধ বার্ষিক যাওয়ার পর তাসফিদের বাড়িতে ছোট একটা একটা অনুষ্ঠান হয়। ওর ছোট বোন রূপার জন্মদিন ছিল।সেখানে মিহিনও আসে।বেশ গল্প গুজব করে অনেকটা সময় পার করে দেয় ওরা।যেন কথা শেষই হয় না।
কখন যে রাত দুটো বেজে গেছে ঠিক বুঝল না ওরা।তাসফির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রুপা বলল,
:আমাকে একটু দিয়ে আসতে পারবি?
তাসফি মৃদু হেসে বলল
:অবশ্যই পারব। পাগলিটা বলেছে যে।না পেরে থাকা যায়?
নিস্তব্ধ রাত।গাড়ি তেমন চলে না।দুজনেই হাঁটছে নিয়নবাতির নিচ দিয়ে। পিচ ঢালা পথে হেঁটে চলছে দুই গন্তব্যহিন মানব।বেশ ভালোই লাগছিল তাসফির কাছে।হলুদ বাতির আলোতে মিহিনকে খুব ভালো লাগছিল। যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক পরি। হুর পরি।
বেশ কিছুক্ষণ হাটাহাটি করল ওরা।তারপর মিহিনকে দিয়ে আসে ওর বাড়িতে।
ওাদের ভালবাসা ছিল নিষ্পাপ এবং পবিত্র। কেউ কারো হাত পর্যন্ত ধরে নি ওরা।ওরা জানে।হাত ধরার বয়স এখন না। তাই তাসফি তার হাত ও ধরেনি।তারা এখনও ছোট।তারা জানে না কি ভাবে ভালো বাসতে হয়।তবুও ওরা একে ওপরকে ভালোবাসে।খুব ভালোবাসে।
এর কিছু দিন পরেই আমি ওকে দেখার জন্যে ওদের বাসার সামনে যাই।আমি এবং আমার বন্ধু রাকিব।রাকিব দূরে দাঁড়িয়ে রইল। আমি গিয়েছি ওর বাসার সামনে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর পেলাম না ওকে। তাই ফিরে আসছিলাম। এমন সময় রাকিব কি যেন ইশারা করল।বলছে পিছন ফিরে দেখতে।আমি পিছন ফিরে তাকাতেই খুব অবাক হলাম। যার জন্যে এসেছি সেই আমার সামনে। খুব সুন্দর লাগছিল ওকে।খুব!আমার কেন জানি মনে হল আমি আবার ওর প্রেমে পড়েছি।আবার!কিন্তু সপ্তম শ্রেনিতে উঠার পর থেকেই আমি কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে যাই।কেমন যেন।বন্ধুদের নিয়ে আমি আড্ডায় মেতে উঠি।তাদের সাথে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম। হাসতাম, খেলাতাম, আরো কত কি। ঠিক তখনও মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে চাইত।কিছু সময়ের জন্যে। একটু কথা বলতে চাইত।কিন্তু আমি ওকে এড়িয়ে চলতাম।আমি কিছু দিনের জন্যে আবার ভুলে যাই যে আমি কাউকে ভালোবেসেছি। কেউ আমাকে ভালোবাসে।আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।কেউ আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।কেমন জানি সব কিছু পরিবর্তন হতে থাকে।মাঝে মাঝে মেয়েটা আমার দিকে কেমন করে জানি তাকাত।হয়ত মেয়েটা সেটা মেনে
পারছিল না।আমার সব কিছু পরিবর্তন হতে লাগল।সব কিছু।লম্বা হতে লাগলাম আমি।চেহারায় পরিবর্তন দেখা দিক।কন্ঠ স্বরও।আচরণে ছিল ব্যাপক পরিবর্তন।
একদিন ক্লাসে বসে ছিলাম।হঠাৎ মিহিনের আগমন। এসেই কিছু বলল না।আমার দিকে তাকিয়ে থাকল।আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম।মেয়েটার মুখটা কালো হয়ে আছে।খুব মায়া হল আমার।একটু সময় নিয়ে মিহিন বলল,
:তুমি আমার সাথে কথা বল না কেন?
আমি কিছু বললাম না।নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ও আবার বলল,
:তুমি আমার সাথে কথা বল না কেন?
আমি কিছু সময় পর বললাম,
:আমি সময় পাই না।
শুধু এতটুকুই বললাম।এটা শুনেই মেয়েটা চুপ করে চলে গেল।একটা কথাও বলল না।
আসলে তখন ভালোবাসা কি সেটা তখনও অনুধাবন করতে পারে নি আমি।
এর কিছুদিন পরেই মিহিন আমার এক বন্ধু কে কিছু কথা বলে। কথা গুলো ছিল,
ওকে আমি আর ভালোবাসি না।ও ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারে না।যে ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারে না সে কিভাবে অন্য জনকে ভালোবাসবে? ওকে বলে দিবেন কথা গুলো।
এই বলে মেয়েটা চলে যায়।
এরপর খুব গুরুত্বপূর্ন না হলে ওর সাথে আমার তেমন কথা হত না।ও নিজেই আমাকে এড়িয়ে চলত।নিজেই কথা বলত না।কিছুদিন পর আর কথা হয় না ওর সাথে,হারিয়ে যায় কথা গুলো,হারিয়ে যায় মিহিন,হারিয়ে যায় একটি ছোট্ট ভালোবাসা।
আমি কেন জানি এটা মেনে নিতে পারি নি।এরপর থেকেই আমার মনে হতে থাকল আমি ওকে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি। এবং আমি ওর জন্যে সব করতে পারি।আমি এখন মেয়েটার দিকে তাকাই।কিন্তু ও আর আমার দিকে তাকায় না।আমাকে এড়িয়ে চলে। এগুলো কেন জানি আমার ভালো লাগত না।
তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নেই।আমি আবার ফিরে যাব ওর কাছে।ভালোবাসার দাবি নিয়ে।
সাহস নিয়ে চলেও গেলাম।বললাম আমার অব্যক্ত কথা গুলো।কিন্তু ফল স্বরূপ পেতে হল কিছু কটাক্ষ বানি।যা একটা হৃদয়কে ক্ষত করতে কয়েক সেকেন্ড লাগে মাত্র। আমি এর পরেও দমে যাই নি।বার বার গিয়েছি।অপমানিত হয়েছি।হেস্তনেস্ত হয়েছি।তারপরেও সে আমাকে মেনে নেয় নি।আমাকে ক্ষমা করে দেয় নি।আমাকে ঘৃনা করে ও।খুব ঘৃণা করে।এগুলো চলতে থাকে ক্লাস টেন পর্যন্ত। ততদিনে ওর অপমান গূলো আমার সয়ে গেছে। এখন আমার কেবল এটাই মনে হয়, কি ভুলটাই না তখন করলাম।
'
হঠাৎ ই তাসফির ফোন বেজে উঠে।ও চোখ গুলো মুছে ফোনটা ধরে।ওর বন্ধু রাকিব ফোন দিয়েছে।
:কই তুই?
:মিহিনের কোচিং এর সামনে। তুই কই?
:আরে বেটা কোচিং এর সামনে কি করছ। ও তো আমাদের এলাকায়।তোদের বাসার সামনের পথটা ধরেই গেল।
:বলিস কি?
:আরে হ্যাঁ রে হ্যাঁ।
:তুই ওখানেই দাঁড়া। আমি আসছি।
'
:কিরে কই ওরা।
তাসফি হস্তদন্ত হয়ে কথাটা বলল।
রাকিব বলল,
:এদিক দিয়েই গেছে।তবে বেশি দুর যেতে পারে নি। চল আমরা পিছু নেই।
কথাটা শেষ হবার আগেই তাসফি হাটা ধরল।খুঁজতে হবে ওকে।এখনই খুঁজতে হবে।
ওরা খুঁজতে খুঁজতে মেইন রোডে চলে এল।পেল না ওদের।এক নিমিশেই কোথায় যেন উদাও হয়ে গেল।তাসফির মন খুব খারাপ।খুব বিষন্ন লাগছে ওকে।ভালো লাগছে না কিছুই।আজ যা প্লেন করেছে সব বেস্তে গেছে।কিছুটা ঘেমে যায় ও।সাথে রাকিব ও।রাকিবের মুখে কিছুটা বিরক্ত দেখা দিলেও ওটা কে তাসফির সামনে তুলে ধরল না।বেচারা এ ক'বছর কত কষ্ট করেছে সেটা শুধু এই রাকিবই জানে।তাই কিছু বলে না।পাগলা প্রেমিকাকে সাহায্য করে ও।
কিছুটা ক্ষুদা লেগেছে ওদের।সামনের রেস্টুরেন্ট টা দেখতেই এগিয়ে গেল ওরা।
গ্লাস ঠেলে ভিতরে মুখ দিতেই কয়েকজন মেয়ের হাসির আওয়াজ পেল ও।একটা আওয়াজ ওর খুব পরিচিত লাগছে।খুব পরিচিত। অনেক দিনের চেনা।মিহিনের দিকে চোখ যেতেই ও আর ভিতরে গেল না।বাইরে আড়াল হয়ে কাচের গ্লাস ভেদ করে তাকাল মিহিনের দিকে।খুব হাসছে মেয়েটা। খুব! মাঝে মাঝে দু'একটা কথাও বলছে।আরে মেয়েটা তো খুব সুখেই আছে।খুব সুখে আছে।বন্ধুদের নিয়ে বেশ আমোদেই আছে।ওর সুখেই তো আমি সুখি।ও সুখে থাকলেই তো আমি সুখে থাকি।মেয়েটা হাসছে।তাসফি সেদিকে মোহিত হয়ে তাকিয়ে আছে।ভেতর যাওয়ার ইচ্ছেটা দমে গেল ওর।ও চায় না ভিতরে গিয়ে মেয়েটার মুখে আবার ঘৃনার ছাপ দেখতে।মেয়েটার হাসি মাখা মুখটা ঘোলাটে করতে চায় না ও। চায় না মেয়েটার সুখে বাধা হয়ে দাঁড়াতে। ও ভালো আছে।বেশ ভালো আছে।এতেই তো আমি খুশি।আমি এতেই খুশি থাকব।
না খেয়েই দুই বন্ধু ফিরে এল।
'
রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি হবে।তাসফির ঠিক সামনে একটা কেক রাখা।তাতে ইংরেজিতে লিখা আমি তোমাকে ভালোবাসি মিহিন।কেকটার ঠিক মাঝ খানটায় একটা মোমবাতি। কেকটার ঠিক বাঁপাশে কলমটা রাখা আছে।তাসফি সেইদিকে তাকিয়ে আছে।ক'ফোটা নোনা জল পড়ছে।কিছু কষ্ট ও না পাওয়ার বেদন গুলো ঝরে পড়ছে।অপেক্ষায় থাকে তাসফি। কখন মিহিন আসবে।কলমটা নিবে। কেকটা কাটবে। ওকে খাইয়ে দিবে।মুখ ফুটে বলবে, এই পাগল! আমি তোকে খুব ভালোবাসি রে।খুব! তাসফি অপেক্ষা করে। মিহিনের আসার অপেক্ষা করে।তাসফির বিশ্বাস সে একদিন ঠিকি আসবে।ততক্ষণ অপেক্ষা করবে তাসফি। আর দোয়া করবে,
যেন মেয়েটা হাসি খুশি থাকে।যেন খুব ভালো থাকে মেয়েটা।
ভালো থাকুক মিহিন।ভালো থাকুক মিহিনরা।
'
গল্পটা বাস্তব।লিমন রাকিব নামক এক বন্ধুর। বেশ ভালো ও ভদ্র স্বভাবের ছেলে তিনি।ঠিক তার সাথেই এমন ঘটনাটা ঘটে। তিনি এখন পাগলের মত অপেক্ষা করে। আসবে সে।তার অপেক্ষায়।
দোয়া করি ভাই।সে যেন ফিরে আসে।ভালোবাসা রইল।
'
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ