গল্পঃ আমি রুপা। ভেতরে আসব?
সূর্যের আলোকে এখন প্রচন্ড ভয় পাই। ঘরে জ্বলে থাকা কৃত্রিম আলোটাকেও। আলো জিনিসটাকেই ভিষন ভয় লাগে আমার। তাই আগের মত হুটহাট করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই না। বাইরে গিয়ে প্রচন্ড রোদের মাঝে হাঁটিনা অনেক দিন হয়েছে।রোদে ভিজিনা।কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ে না আর।শার্টটা এখন আর ঘামে ভিজে যায় না|হিমেল বাতাস লেগে ঘামিয়ে যাওয়া শরিরটা আর শিতল হয়ে যায় না। রোদে শার্টটা আর শুকিয়ে যায় না।চাঁদটাকে দেখিনা অনেক দিন হয়েছে|চাঁদের মৃদু আলোয় নিজেকে ভিজাই না|সেই মুগ্ধতার বাতাস আর গায়ে মাখাই না। বৃষ্টিতে ভিজি না অনেক দিন হয়েছে।জানালা ভেদ করে ক'ফোটা বৃষ্টির পানি আর ঘরে ঢুকতে পারে না। সেই যে জানালাটা বন্ধ হয়েছে আর খোলা হয় নি। বৃষ্টি পড়ে।টুপ টুপ করে শব্দ হয়। বৃষ্টির গতি বেড়ে যায়,যখন আকাশের উপর থেকে আজর ধারায় বৃষ্টি মাটিতে পড়ে, পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে, পানিতে পড়ে,ছাদে পড়ে,ঘরের টিনে পড়ে, ঠিক তখন ঝন ঝন শব্দ। শব্দের তিব্রতা বাড়তে থাকে।আমার কেন জানি মনে হয়,তখন কেউ একজন হাসে। খুব উচ্চ স্বরে হাসে। কেউ একজনের হাসির আওয়াজ এমন ছিল।খুব উচ্চ স্বরে হাসত সে। সেই হাসির আওয়াজ এখনও আমার হৃদয়ে বাজে।কোমলতা সৃষ্টি করে হৃদয়ে। একটু শান্তি পাই আমি।বৃষ্টির আওয়াজের মাঝেই আমি সে হাসিটা খুঁজি। তন্ন তন্ন করে খুঁজি। তারপরেও কেন জানি ভয় করে।খুব ভয় করে।উঠে গিয়ে, টুপ করে কৃত্রিম আলোটা নিভিয়ে দেই।ভিষন ভয় করে বলে। রুমের এক কোনে চুপটি করে বসে থাকি। কাথা গায়ে দিয়ে গাপটি মেরে শুয়ে থাকি।বিদ্যুৎচমকানোর তিব্র নীলাভ আলো যখন রুমের দেয়ালে আছড়ে পড়ে তখনও ভয় লাগে।প্রকট শব্দে বেজে উঠা বজ্রপাতের শব্দ কানে যেতেই পুরো শরির কেঁপে উঠে। অন্ধকারে তলিয়ে যাই।একটুও শব্দ হয় না।মাঝে মাঝে কৃত্রিম বাতাসের যন্ত্রটা ফিস ফিস করে উঠে।যেন আমায় কিছু বলতে চায়। আমি কিছু শুনতে চাই না। বরং এমন শব্দ পেলে ভয় লাগে।প্রচন্ড ভয় লাগে।কোল বালিসটাকে আরটকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাথা মোড় দিয়ে শুয়ে থাকি।
.
চুপচাপ কাঁদি।একটুও শব্দ হয় না।কেউ শুনেও না।ঠিক যেমনটা মা কাঁদে।আড়ালে,আঁচলে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কাঁদে।শুধু আমার সামনে এলেই হাসি খুসি থাকার ভান করে।তাকে দেখলেই মনে হয় সে অনেক সুখে আছে।ভালো আছে।আমার সামনে এলেই মলিন একটা হাসি দেয়।সেই হাসি দেখেই আমি বুঝে যাই সে কতটা খুসি মা যে ভান করে তা আমি ঠিকই টের পাই।মা ভান করছে সেদিন থেকে যেদিন আমার এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়।শুধু মা নয়!বাবা আর বোন গুলোও ভান করে।বড় আপুটা তো দেখাই করতে আসে না।হয়ত তার মাঝে অপরাধবোধ কাজ করছে।
.
নিজেকে হয়ত বড্ড অপরাধি ভাবছে।নিজেকে কষ্ট দিচ্চে।আর যাই হোক,দুই দুইটা মানুষের প্রান নিয়ে কোন সৎ মানুষ ভালো থাকতে পারে না।একদম না।অপরাধের অনুশোচনা তাকে প্রতিদিন মারে।দৈনিক তার মৃত্যু হয়।কষ্ট গুলো তাদের কুড়ে কুড়ে খায়।যারা গোপনে হত্যা করে তাদের এই শাস্তিটাই হয়।তাদেরকে আদালতে নিয়ে যেতে হয় না।তারা নিজেরাই মানবতার আদালতে উঠে।নিজের দোষ স্বীকার করে এবং তাদের শাস্তি স্বরূপ দেয়া হয় বেঁচে থাকা। বেঁচে থেকে অনুশোচনা থেকে তারা কষ্ট পায়।ভিষন কষ্ট পায়।এর চেয়ে ফাঁসি হওয়া অনেক ভালো।মানুষকে খুন দু'ভাবে করা যায়।প্রথমত আঘাত করে।দ্বিতীয়ত যা এই গল্পে ঘটেছে।আমি অবশ্য আপুকে বিন্দু মাত্র দোষ দিচ্ছি না।সে আমার আপু।আমাকে নিয়ে কিছু বলার রাইট সে রাখে।
.
বন্ধু গুলো মাঝে মাঝে আসে।এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।এরা আমার বন্ধু। আসল বন্ধু।এদের মাঝে নকল কিংবা অভিনয় করার মত কেউ নেই। এরা সবাই আমার জন্যে জান দিতেও প্রস্তুত। আমি নিজেও।রুপা আসে একটু বেশি! দুই দিন যেতেই আসে। সেও আমার বন্ধু। খুব কাছের বন্ধু। সে ভার্সিটি থেকে আজ পর্যন্ত, এখনও মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়ায়, ভালোবাসার দাবি নিয়ে।এখনও সে বলে, সে নাকি আমায় ভিষন ভালোবাসে।মনে প্রানে ভালোবাসে। যে ভালোবাসায় কোন ছলনা নেই। আমি বুঝি।ওর দু'চোখ দেখেই বুঝি।কিন্তু ওকে ভালোবাসা যে আমার পক্ষে সম্ভব না।আমার মনটা যে এখনও কেউ একজনের অপেক্ষায় আছে।যার হাসি একদম বৃষ্টি পড়া শব্দের মত! আমি তার অপেক্ষায় আছি।সবাই আসে।আমাকে দেখে যায় এক নজর। একবার না! দুবার না!বারবার আসে।কিন্তু সে আসে না।এসে আগের মত আর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না।নিজের প্লেট থেকে ফুচকা তুলে আমাকে খাওয়ায় না।আমাকে ক্লাস থেকে টেনে হিচড়ে মনপুরি পার্কে নিয়ে যায় না।অনেক দিন হয়েছে ওর সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না।ভাবছি এবার আসলেই একেবারে নিজের করে রেখে দিব।কোথাও যেতে দিব না।দুজনে একসাথে চাঁদ দেখার কথা ছিল।সেই কথা রাখতে হবে।দুজনের এক সাথে চাঁদ দেখতে হবে।ও লাল শাড়ি পরে চাঁদ দেখতে যাবে।দুজনে এক জায়গায় বসে চাঁদ দেখব।সে আমার বাহুতে মাথা রাখবে।আমাকে গান গাইতে বলবে।আমি গান গাইব।সে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনবে।এমনটাই কথা ছিল।উঁহু! আমি কিছু বলি নি।এসব সেই বলেছে। সেই আমাকে কথা দিয়েছে।একসাথে চাঁদ দেখার কথা দিয়েছে। একসাথে রিক্সা নিয়ে দুরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল।এমনটা শুনে আমার ভিষন রাগ হল। এত দামি গাড়ি থাকতে রিক্সায় যাব? এটা আমি মানতেই পারি নি সেদিন।তাই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম।সে হুট করেই আমার গালে একটা চুমু খেল।সরল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,"অ্যাই! একদম রাগ করবা না বলে দিলাম।তোমাকে রাগ করলে একটুও মানায় না। একটু হাস।হাসলে তোমাকে খুব ভালো লাগে।আর শুন রিক্সায় চড়ে যাওয়ার মজাটাই আলাদা।একবার গেলেই বুঝবে।" আমি কিছু বললাম না।সেই গাল ফুলিয়ে বসেই রইলাম।
সত্যিই রিক্সায় চড়ে নিজের প্রেয়সীরর সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মজাটাই অন্য রকম।আমি একদমই জানতাম না যদি না পাগলিটা আমাকে সেদিন জোর করে না নিয়ে যেত। এর পর প্রায়ই আমি ওর ও রিক্সা ভ্রমনে বের হতাম।সৃতি গুলো এখনও আমার হৃদয়ের পাতায় লিখিত আছে।আমি চাইলেইই সেগুলো মুছে ফেলতে পারি না।মুছের দেওয়ার জন্যে যে রাবারটা দরকার সেটা পাগলিটার কাছে আছে।সে এলেই মুছে যাবে আমার সেই দুঃখ ভরা সৃতি গুলো।যুক্ত হবে নতুন কোন সৃতি। কিন্তু এতটা দিন হয়ে গেল পাগলিটা একবারও আমাকে দেখতে এল না। আগে আমার সাথে একদিন কথা না বললে নিজেকে ধরে রাখতে পারত না।এখন আসছে না কেন! কেন এসে আমার দুঃখ গুলো মুছে দেয় না।আমার সাথে একদিন কথা না বলে থাকতে পারত না পাগলিটা। এই কারনটা আমার খুব ভালো লাগত। কেউ একজন আমাকে ভালোবেসে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে এটা ভাবতেই আমার ভালো লাগে।কিন্তু এর শেষ পরিনাম যে এমন হবে সেটা আমার জানা ছিল না।
.
আমার বড় আপু বাড়িতে এসেছে।সে তার স্বামির সাথে থাকে আমেরিকা। এবার ছুটি পেয়ে ছুটে আসে আমাদের দেখতে।কিন্তু আমার জানা ছিল না যে সে সেদিন আমাদের দেখতে নয়, এসেছে আমি কারো সাথে প্রেম করি কি না তা জানার জন্যে। আমি যে প্রেম করি সেটা কাউকেই বলি নি।এমনকি মাকেও না।সে গোয়েন্দা হয়ে এসেছে। তাই সে এই কয়দিন আমাকে খুব ব্যাস্ত রেখেছে।আমাকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে।যার কারনে মিহিন আমাকে ফোন দেওয়ায় আমি ফোন ধরতে পারি নি।আপু সামনে ছিল বলে। আমি যখনই ফোন ধরতে যাব ঠিক তখনই আপু আমার সামনে এসে হাজির হয়।আমি ঠিক তখনই বুঝে যাই আপুর আসার কারনটা। এক মাত্র ভাই তাদের। কার সাথে না কার সাথে প্রেম করে এটা জানার ইচ্ছে হয়ত হয়েছে আপুর।তাই আমি কিছু বলি নি।সে রাতে আমরা সবাই আড্ডা দিয়েছি।আমি আর আমার দুই বোন মিলে। বাবা মাও ছিলেন।তবে তারা বেশি রাত জাগে নি।যখন শুতে গেলাম তখন মোবাইলটা নিয়ে দেখলাম একশ দুইটা মিসড কল।আমি অনেকটাই পাগল প্রায় হয়ে গেলাম।আমাকে না পেয়ে মেয়েটা জানি কি না কি করে বসে।ফোন দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল এক রমনির কোমল কন্ঠ।কিন্তু আমার তখন সেই কন্ঠটাকে কোমল নয়, কর্কশ মনে হল।সে বারবার বলছে, এই মূহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব না।মেজাজটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেল।তাই একটা মেসেজ দিয়ে রাখলাম।আমার অগাত বিশ্বাস যে পাগলিটা নিজের কোন ক্ষতি করবে না।
.
:তুই প্রেম করিস?
আমি মাথা নিচু করে নাস্তা করছিলাম।মিহিন জন্যে চিন্তা হচ্ছিল। তাই তাড়াতাড়ি খাচ্ছিলাম মাথা নিচু করে। ঠিক তখনই আপু কথাটা বলল। আমি কিছুটা কেশে উঠলাম।তবে কিছু বললাম না পাশ থেকে ছোট বোনটা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল।এর কিছু সময় পরেই খাওয়ার টেবিলে আগুন জ্বলে উঠল। যেন কোন পারমাণবিক বোমা ফাটল। বোমাটা আপুই পাঠাল।বলল,
:তোকে কত বার বললাম প্রেম করিস না,প্রেম করিস না।খামখা কষ্ট পাবি।তারপরেও তুই আবার সেই পথেই গেলি একবার প্রেম করে শাস্তি পেয়ে পেট ভরে নি?
আপু একটু থামল। আসলে আমার এর আগে ইন্টার থেকেই একটা মেয়ের সাথে ভালোবাসা নামক ছলনার বন্ধন ছিল।সেই মেয়েটিও বলত আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তার বলার সাথে মিহিন বলার কোন মিল নেই।মিহিন বললে আমি ভালোবাসা অনুভুব করি।কিন্তু সেই মেয়েটি বললে কেমন জানি লাগে।মনে হয় পর কেউ।আসলেই তাই হল।মেয়েটা আমাকে পর করে চলে গেল অন্য কারো সাথে।বিয়ে করে একেবারে বিদেশে পাড়ি জমাল।সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম সুইসাইড করার।কিন্তু এত জনের এত ভালোবাসা ফেলে, কোন ছলনাময়ী নারির জন্যে এদের কষ্ট দিতে চাই নি। তাই নিজে কষ্ট পেলেও তাদের কিছু বলি নি।চুপচাপ সয়ে গেলাম।আপু এবার কিছুটা ঠান্ডা হয়ে বলল,
:মেয়েটার নাম কি মিহিন?
আমি মৃদু স্বরে বললাম,
:হুম!
:সে এসেছিল।ক'টা কড়া কথা শুনিয়ে দিলাম মেয়েটাকে। আসা করি ওর সাথে আর তোর দেখা হবে না। ভালোবাসা পালাবে দেখিস।
আমি হস্তদন্ত হয়ে বললাম,
:কি বলেছ তুমি ওকে?
:যা বলেছি বেশ বলেছি।তোর শুনে কাজ নেই।আমি আর তোকে কষ্ট পেতে দিব না।
আমি আর কিছু বললাম না।নাস্তা শেষ বা করেই বেরিয়ে গেলাম।
.
:মিহিন শুন! আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।
:ভালোবাসা? আমার সখ মিটে গেছে। আমি আর কারো ভালোবাসা চাই না।চলে যাও তুমি।
:প্লিজ মিহিন।একটু বুঝার চেষ্টা কর।আপু কি বলেছে আমি তা ঠিক জানি না। তবে যাই বলে থাকে আমি তার জন্যে ক্ষমা চাইছি।আপু না বুঝে বলেছে।আসলে প্রথম প্রেমে আমি একটু হোচট খাই তো তাই।
এই বলে আমি ওর হাত ধরলাম।আস্তে করে বললাম,
:একটু বুঝায় চেষ্টা...
ঠাশ
করে একটা শব্দ হল। পার্কটা যেন কেঁপে উঠল। আমি গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম।ও বলল,
:একদম ন্যাকামি করার চেষ্টা করবা না।যত্তসব!
এই বলে উঠে দাঁড়াল ও।বেরিয়ে যেতে লাগল পার্ক থেকে। মুখে হাত গুঁজে কান্না করছে তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।কিছুটা ডৌড়ে গেল ও।আমিও ওর পিছন পিছন গেলাম।ও বুঝাতে লাগলাম।ওর দুহাত চেপে ধরতেই আবার চড় মারল ও।আমি একটু ব্যাথাও পেলাম না।ও হেঁটে ফুটওভার ব্রিজে উঠে গেল।আমি ওর পিছু নিলাম।সেখানে উঠতেই সে আমাকে শেষ চড়টা মারে।তার রাগ যে চরম পর্যায়ে চলে গেছে তা আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি।চড়টা মেরে বলল,
:তুই আর আমার সাথে কথা বলবি না।তোর সাথে আমার ব্রেক আপ।লুচ্ছাদের আর একবার হাত ধরার চেষ্টা করবি তো লোক ঢেকে তোকে পিটাব।
এই বলে সে চলে যেতে লাগল।একবারেও পিছন ফিরে তাকাল না।আমার কেন জানি খুব কষ্ট হল।কষ্টে বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে।বাঁপাশটা যেন কালি হয়ে গেল হুট করে।নিজেকে বড় অসহায় লাগতে শুরু করল।শেষমেশ আমি আর প্রমানিত করতে পারি নি যে আমি তাকে ভালোবাসি।প্রতারণা কিংবা ছলনা করি নি।ভালোবেসেছি ওকে।মন প্রান দিয়ে।সেও বেসেছে।এটাই অনেক। আমার কপালে আর ভালোবাসা নেই।এই অনেক।নিজেকে তখন আর ধরে রাখতে পারি নি।জোরে ওকে ঢেকে বললাম,
:মিহিন।তুমি যদি বিশ্বাস না কর তাহলে আমি এখান থেকে নিচে ঝাপ দিব।আমি সত্যিই বলছি "আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
ও আমার দিকে ফিরল। বলল,
:এই সব পুরোন ডায়ালগ। নেহাত ন্যাকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
ও আর দাঁড়াল না।ওপাশ দিয়ে নেমে যেতে লাগল।ঠিক তখনই খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই আমি। ঝাপ দেই সেখান থেকে।নিচে অনেক গাড়ি।কিন্তু সেই মূহুর্তে আমার এসব মাথায় খেলে নি। শুধু একটাই জিনিস মাথায় কাজ করেছে।তা হল,"মিহিনকে বিশ্বাস করতেই হবে।"পড়তেই মাথায় এবং বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অবুভব করলাম। শরির হতে রক্ত যেন বেরিয়ে যাচ্ছে। একটা গাড়ির বাঁপাশের চাকাটা আমার বাঁ'হাতের উপর দিয়ে উঠে গেল।আমি জোরে চিৎকার দিলাম।আমার আর্তনাদ শুনে গাড়ি গুলো থেমে গেল।চারপাশ থেকে লোকজন আসতে লাগল। আমার ঘোলাটে চোখ গুলো শুধু একজনকেই দেখছে।সে দৌড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।চোখে জল খেলা করছে।আস্তে সব ঘোলাটে হয়ে গেল।মিহিন ভুল বুঝতে পেরেছে। এটাই অনেক।আমি মৃদু হেসে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম।আহঃ শান্তির ঘুম।
.
মিটমিট করে তাকাতেই দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মুখটা কালো হয়ে আছে।ভিষন কালো। আষাঢ়ে কালো মেঘ তাদের মুখে জমা হয়েছে।আমি জেগেছি দেখেই সে মেঘটা কেটে গেল।পূর্ব দিগন্তে সূর্য উদিত হল। মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। শুধু একজনের বাদে। বড় আপু! তার মুখ উজ্জ্বল হয় নি।কালো কালোই রয়ে গেল।উজ্জ্বলতার পরিবর্তে অপরাধের ছাপ দেখা গেল।মিহিনের কথা জিজ্ঞেস করতেই তাদের মুখটা আবার কালো হয়ে গেল।বড় আপু কেঁদেই দিল।ছোট বোনটা একটা চিরকুট এগিয়ে দিল।সেখানে লেখা "ক্ষমা করে দিও।" নামধাম নেই। তবে লেখাটা কার তা বেশ বুঝতে পেরেছি। আমি বললাম,
:এটা কে দিয়েছে?
:মিহিন আপু!
:ও কই এখন!
ছোট বোনটা কেঁদে দিল।কাঁদার জন্যে কথা বলতে পারছে। আমি আবার বললাম,
:কি হয়েছে ওর?
দেখলাম মায়ের গাল বেয়ে পানি পড়ছে।বাবা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি আবার বললাম,
:কি হয়েছে ওর? বল না প্লিজ?
:ভাইয়া! ভাইয়ারে! মিহিন আপু আর নেই রে।তোর এ অবস্থার জন্যে নিজেকে দাই করে গলায় দড়ি দিয়েছে। সে আর নেই ভাইয়া।
আমি কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কথা বের হচ্ছে বা মুখ দিয়ে।চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছিল তখন।তারপর সব সত্যিই সব অন্ধকার হয়ে গেল।আমি আবার অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
.
হঠাৎ-ই ঠক ঠক করে শব্দ হল। আমি কিছুটা হকচকিয়ে উঠলাম। কেউ দরজায় টোকা দিচ্ছে।আমি ডান হাত দিয়ে চোখ গুলো মুছলাম।বললাম,
:কে?
:আমি রুপা।ভেতরে আসব?
একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম।আমি যেদিনই মিহিনের কথা ভেবে কান্না করি,ঠিক তারপরেই রুপা এসে হাজির হয়।দরজার ও পাশ থেকে বলে,
"আমি রুপা!ভেতরে আসব? "
আমার কেন জানি মনে হল কিছু একটা ঠিক চলছে না।খুব বড়সড় একটা পরিবর্তন আসছে সামনে। হয়ত এই আলোর ভয়টা কাটবে খুব তাড়াতাড়ি।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমদ