গল্পঃ একটি খুনের গল্প

বাংলা ছোট গল্প| Bangla Love Stories| Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo.


গল্পঃ একটি খুনের গল্প



:একদম কাছে আসবা না আমার| তোমাকে আমি মোটেও
দেখতে পারি না| ঘৃণা করি বুঝেছো|ঘৃণা করি তোমাকে|
যাও তো! যাও এখান থেকে| স্টুপিড একটা! তোমার মুখ
দেখতে চাই না আমি|
আমি কপট রাগ নিয়ে তাকে কথা গুলো বললাম| সে অস্ফুট
স্বরে কিছু একটা বলল তবে চলে গেল না| বরং আরেকটু
কাছে এল যেন| আমার মেজাজটা যেন ক্রমেই বেড়ে
যাচ্ছে| ওকে এত অপমান করি, এত মারি, তবুও বেহায়ার
মত বারবার ফিরে আসে| আশ্চর্য! ওর কি একটুও খারাপ
লাগে না? কই, তার কুম্বকর্নের মত মুখটাতে তো কখনই
বিষন্নতার ছায়া দেখি নি আমি| বরং সে যেন খুশি হয়|
গায়েই মাখে না| গুন গুন করে গান গেয়ে যায় কেবল|
আজকাল ওর গানের কন্ঠটাও আমার কাছে বিষাদের মত
লাগে| ছি! কি বাজে কন্ঠ!
.
সে পাশে বসে আছে আমার| আমি রবি ঠাকুরের নৌকা
ডুবি-তে ডুব দিলাম একটু আগে| অদ্ভুত সুন্দর একটা বই|
একটু পড়লে বাকিটুকু না পড়ে পারা যায় না| এত নেশা
লুকিয়ে আছে বইটার মাঝে যা বলে বোঝানো যাবে না|
আজকে রাতের মাঝেই শেষ করতে হবে| না হলে যে ঘুম
হবে না আমার| সবে ৭০ পৃষ্ঠা শেষ| আরো ৭৪ পৃষ্ঠা বাকি|
পড়তে হবে অনেক| আচ্ছা তা না হয় পড়া যাবে,কিন্তু
পাশে এমন আপদ নিয়ে তো পড়া যায় না| কি যে করি?
হঠাৎ-ই আমার পড়ায় ছেদ পড়ে| সে আমার পেশিতে
মাথা রাখে| তারপর চট করেই খুব গভীর
ভাবে চুমু খায় আমার বাহুতে। আশ্চর্য! বাহুতে চুমু খায়
কেউ! আমার মাঝে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল|
অনন্য শিহরন| যেন চামড়া ছিড়ে যাচ্ছে| তার প্রতি
প্রচন্ড ঘৃণা আজ তার প্রতি আমার সকল অনুভূতি কেড়ে
নিয়েছে|অবশ্য এই অপয়ার প্রতি আমার কোন কালেই
অনুভূতি ছিল না| একে দেখলে কেবল চড় দিতে ইচ্ছে হয়|
এখন তাই-ই করলাম| এত ভালোবাসার কোন দরকার নেই
আমার| ঠাশ করে একটা চড় মেরে দিলাম| সে হুড়মুড়ি
খেয়ে বিছানা থেকে পড়ে গেল| একেবারে পড়ে গিয়ে
চিত হয়ে আমার দিকে কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে চেয়ে
থাকল| তার এমন দৃষ্টি মায়া জন্মাতে পারে না আমার
হৃদয়ে| আমি তাকে উপেক্ষা করি চরম ভাবে| মরে যাক
সে| এমন একজন মরে গেলে কিছু যায় আসে না আমার|
আমি অবার নৌকাডুবিতে ডুব দিলাম| কিছু সময় পরেও সে
আসল না| আমি একটু অবাকই হলাম|হায়! সে অভীমান
করলো নাকি? করলে করুন|কি যায় আসে আমার! মনে মনে
এ কথা বলেও আমি আড় চোখে মেজের দিকে
তাকালাম| আরে নেই দেখছি|কই গেল? ধুর! যাক সে|
আমার কি? সে থাকলেও যা না থাকলেও তা| আমি
মিহিনকেই চরমভাবে ভালোবাসি এবং ভালোবাসবো|
আমাকে চুমু খাওয়ার অধিকার একমাত্র তাকেই দিয়েছি|
অন্য কাউকে নয়| কিন্তু এই বেহায়াটা সেটা বুঝে না|
খালি চুমু খেতে চলে আসে| তাও যদি সুন্দর হতো একটা
কথা ছিল| কিন্তু ও এত কালো যে বলে বুঝাতে পারবো
না| আমি আর সেদিকে ধ্যন দিলাম না| বই মেলে ধরলাম
চোখের সামনে| ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল| পাশ
থেকে নিতেই স্ক্রিনের উপর মিহিনের নাম দেখলাম|
ঠোটের কোণে মৃদু হাসি ঠাই পেল আমার| ধরতেই ওপাশ
থেকে পাগলিটা বললো,
:হ্যালো!
:হুম বলো!
:কি করছো বাবু|
:এই তো একা একা বই পড়ছি| সময় কাটে না তাই|
:একা একা! আন্টি নেই?
:নাহ! খালার বাসায় গেছে।
:ও আচ্ছা| তাহলে বই পড়ো| ডিস্টার্ব করবো না আর।
:আর ডিস্টার্ব! ওর জ্বালায় কি আর থাকা
যায়!
:কার?
:আরে 'ও'|
ওর নামটা না জেনে কি ভুলটাই না
করলাম! জানলে 'ও, ওর' করে ওকে সম্বোধন করা লাগত
না|
:আচ্ছা দুজনে তাহলে একসাথে আছো! শুনো, এসব আমার
একদমই পছন্দ
না| তোমাকে আজ রাতের ভিতরেই কিছু একটা করতে
হবে। প্রয়োজনে খুন করবা তাকে।
-খুন! বাবু তুমি কি বলছো এগুলা?
-যা বলছি তাই। রাখি এখন| বায়! গুড
নাইট|
এই বলে মিহিন ফোন কেটে দিল| আর
আমি কেবল বোকার মত বসে থাকতাম| বলে কি মেয়েটা!
এখন আমাকে খুনাখুনি করতে হবে? অবশ্য করলেও কি
ক্ষতি হবে|এদেশে হাজারো লাশ পড়ে যায় সেগুলোর
কোন খবর নেই আর এ তো কিছু না| টাকা থাকলেই হয়|
পুলিশের পেট পুরে গেলেই কেইস আপনাআপনিই ক্লোজ
হয়ে যায়| আর আমার তো টাকার অভাব নেই| একটা খুন
তো হাতের ময়লা ঝেড়ে ফেলার মত করা যাবে|
ঠিক তখনই কেউ একজন দৌড়ে এসে আমার কোলের উপর
বসে পড়ল| তারপর বুকে নিজের মাথাটা গুজল| আমার
মেজাজটা আবার চট করেই গরম হয়ে গেল| আর ভালো
লাগে না এসব আমার| এর বিহিত করতেই হবে| সে যখন
আমাকে আবায কিস করতে উদ্যত হচ্ছিল ঠিক তখনই আমি
তাকে এক ঝটকায় ফেলে দিলাম বিছানার উপর| দাড়া!
আজ তোর কিস ছোটাচ্ছি| আর জিবনেও কিস করতে
পারবি না আমায়| কাউকেই পারবি না| ওকে বিছানায়
ফেলে রেখে রুমের দরজা আঁটকে দিয়ে ডাইনিং
টেবিলে আসলাম| ফল কাটার চাকুটা নিলাম| সাথে
একটা আপেলও| আপেলটা ধুয়ে চাকু দিয়ে কেটে
ফেললাম| যাক একটা অনুশীলন হয়ে গেল| খুন করতে হাত
কাঁপবে না আর| আপেলটা খেয়ে রান্না ঘরের দিকে
এগুলাম| লাইটারটা
হাতে নিতে হাঁত যেন কাঁচছিল| এভাবে কি কাউকে খুন
কযে ফেলবো| একটু ভালোবাসতে চেয়েছিল সে
আমাকে| তাই বলে একেবারে পুড়ে ফেলতে হবে তাকে?
একেবারে খুন করবো? আমি হঠাৎ যেন একটু আপসেট হয়ে
পড়লাম| পরক্ষনে নিজেকে সংযত রেখে লাইটারটা
নিয়ে সেল্পের দিকে এগুলাম| ঠিক তখন চোখে পড়লো
সে অদ্ভুত জিনিসটা যা দিয়ে ওকে খুন করবো| আমি
কারো প্যাকেটটার দিকে ভালোভাবে তাকালাম| উপরে
লেখা 'ঢাকা এ্যটাক'| আশ্চর্য! এই জিনিসটা এত সহজে
একজনকে খুন করে ফেলতে পারে? কাঁপা কাঁপা হাতে
প্যাকেটটা নিলাম আমি| আল্লাহ মনের মাঝে একটু বল
দাও|
.
আমি বসে আছি| মাথার উপর কম্পানির প্রচারের জন্যে
১০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা 'তসিবা এনার্জি' লাইটটা
অদ্ভুত সুন্দর ভাবে আলো দিচ্ছে| আমি আদশোয়া হয়ে
বেশ আরামে রবি দাদুর নৌকা ডুবি-তে ডুব দিয়ে আছি|
বিরক্ত করার মত কেউ নেই এখন| সে মারা গেছে একটু
আগেই| 'ঢাকা এ্যটাক' নামক কয়েলটা দারুণ ভাবেই
মশাটাকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়েছে| মশাটা
মেজেতে মরে পড়ে আছে| তাকে দেখে আমার একটুও
মায়া হচ্ছে না| বরং ভালোই লাগছে| আয়! এবার কিস
করতে আয়! বেটা আমার গফ এখনো আমায় কিস করে নি
সেখানে তুই কোন সাহসে কিস করতে আসছিস?
.
অনুপ্রানিত হয়েছি বন্ধু নিশাদের গল্প পড়ে।
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url