Bangla Golpo: বিষাদ আজ মন ছুঁয়েছে
Bangla Golpo: বিষাদ আজ মন ছুঁয়েছে
তাসফি আহমেদ
(প্রথম পর্ব)
-আপু? দুলাভাই এসেছেন।
লিলির মন মেজাজ এমনিতেই ভালো ছিল না। ইদানীং রাগ উঠে থাকে সবসময়। তারউপর হঠাৎ 'দুলাভাই এসেছেন' শুনেই তার মেজাজটা আরো বেশি বিগড়ে গেল। তার বিরক্তির সীমা রইলো না৷ সে খানিকটা কাঠিন দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকালো। বেশ চড়া গলায় বলল,
-দুলাভাই এসেছে তো কী হয়েছে? কী করবো আমি এখন? তাকে মাথায় তুলে নাচবো?
লিলির ফর্সা চেহারাটা মূহুর্তে লাল হয়ে গেল। এতো লাল হলো যে তমা কিছুটা ঘাবড়ে গেল৷ কিন্তু পরক্ষনে সে তার ঘাবড়ে যাওয়া চেহারাটা পরিবর্তন করে ফিক করে হেসে দিলো। এমন ভাবে হাসলো যেন খুবই হাস্যকর একটা জোক্স শুনেছে সে৷
লিলির বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো তমার দিকে। তমা মুখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে খুন হয়ে যাচ্ছে৷ এই মেয়েটা হাসার সময় মুখে হাত দিয়ে হাসে। যেন হাসি গোপন করছে। এটা তার স্বভাব। তার এই স্বভাবটা বড় ভালো লাগে লিলির। মেয়েটাকে এতো মায়াবী লাগে!
লিলি ভাবলো তার ছোট্ট বোনটা অনেক বড় হয়েছে৷ শরীর সাথে চেহারার পরিবর্তন হয়েছে। তমা আগ থেকে অনেক সুন্দরী হয়ে গিয়েছে। অনেক। লিলির থেকে বেশি সুন্দর? নাকি কম? মনে তো হচ্ছে লিলির থেকে বেশিই।
লিলির রাগটা মূহুর্তে পড়ে গেল। অন্য কারো রাগটা সে তার এতো সুন্দরী বোনের উপর ঝাড়তে পারবে না৷ ঝাড়াটাও অন্যায়৷ লিলি তার চেহারার কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলল,
-কী ব্যাপার? এতো হাসার কী হলো?
তমা হাসতে হাসতে বলল,
-আপু, তুমি দুলাভাইকে দুলাভাই কেন বলেছো? উনি কি তোমার দুলাভাই নাকি? নিজের জামাইকে কেউ দুলাভাই বলে? হিহিহি।
তমা হাসতেই থাকলো৷ লিলি লক্ষ্য করলো তমা কথা বলার সময় মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। তখন তার হাসিমাখা মুখটা স্পষ্ট দেখা যায়। এতো অমায়িক লাগে! কেমন নিষ্পাপ নিষ্পাপ ভাব৷ তার হাসিটা সমস্ত মুখে ভেসে বেড়ায়৷ চোখ, ভ্রু এবং নাকও যেন হাসে। লিলি বলল,
-বেশি পাকনা হয়ে গিয়েছিস। যা? ভাগ এখান থেকে?
তমার হাসির গতি কমে এলো। বলল,
-আপু? লজ্জা পাচ্ছো নাকি?
-বেশি কথা বলছিস তুই। চলে যেতে বলেছি, চলে যা। সব জেনেও না জানার ভান করছিস৷ এটা বড়ই অসহ্য লাগে।
-আপু? তুমি কি ভাইয়াকে ভালোবাসো না?
-না, বাসি না৷ হয়েছে? এবার যা তো এখান থেকে! শান্তিতে বাবুর খাবারটা তৈরী করতে দে। প্লীজ।
তমা কিছু বলল না। নিজের রুমে চলে এলো৷ টেবিলের উপর একটা উপন্যাস রাখা। 'জোছনায় ভেজা জল।' সে বইটা হাতে নিলো এবং পড়তে শুরু করলো। দুলাভাইয়ের লেখা বই গুলো পড়তে ভালোই লাগে।
শাহেদ প্রায় অনেকক্ষণ বসে থাকলো। কারো দেখা পেল না৷ তমা এসে একবার চেহারা দেখিয়ে চলে গেল। তার আর খবর নেই৷ খবর পাবে বলেও মনে হয় না৷ সে নিশ্চিত বই পড়েছে৷ শাহেদ ভাবলো উঠে চলে যাবে। কিন্তু গেল না। অরুকে দেখতে মন চাচ্ছে৷ মেয়েটাকে দেখে না অনেকদিন৷ প্রায় দু'সপ্তাহ৷ লিলি কি এখনও রেগে আছে? কেমন রেগে আছে? খুব বেশি? কে জানে! এই মেয়ের কোনো ঠিকঠিকানা নেই৷ আচ্ছা লিলিকে ডাকলে কেমন হয়? সে কি জবাব দিবে? দিবে বলে মনে হয় না৷ শাহেদ বসে থাকলো। তার ভাব ভঙ্গিমা বেশ কোমল। দেখে মনে হচ্ছে না সে চিন্তিত। অথচ ভেতরে ভেতরে সে চিন্তায় অস্থির৷ লিলির কেমন আচরণ করবে সেই চিন্তায় তার মাথা ভারী হয়ে আসছে৷ মেয়েটা যা শুরু করেছে না! সেদিন ফোন দিয়ে চট করেই বলে ফেলল,
-আমি ডিভোর্স চাই। ব্যবস্থা করো।
তারপরই কল কেটে দিলো। শাহেদের খবর তো দূরে থাক, সে শাহেদের কথাটাও শুনলো না। কল কেটে দিলো৷ শাহেদ ফের ফোন দিতেই দেখলো ফোন বন্ধ৷ আজ এখানে আসার দুটো উদ্দ্যেশ্য। প্রথম উদ্দেশ্য অরুকে দেখার৷ দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে লিলির সাথে কথ বলার। এখন মনে হচ্ছে এই দুইটার একটাও সম্ভব না৷ বাবুর সাথে দেখা তো দূরে থাক, সে লিলির দেখাও পাবে না। তাও সে বসে থাকলো। অন্তত কেউ যদি আসে! আরো আধঘন্টা বসে থাকার পর কাজের মেয়েটি এসে বলল,
-দুলাভাই? আফায় আপনেরে চলি যাইতে কইছে।
শাহেদ হাসলো। সম্পূর্ণ কথার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
-জামিলা, কেমন আছো?
জামিলার মনটা গলে গেল। তার চোখে পানি আসতে চাইলো। লিলি আপার জামাইটাকে তার ভীষণ পছন্দ৷ ইনি সব সময় তার খোঁজখবর নেন। দেখা হলেই এতো সুন্দর করে বলেন, "জামিলা, কেমন আছো? "তার প্রাণ ভরে যায়৷ এতো ভালো লাগে৷ এতো আপন মনে হয়! জামিলা বলল,
-ভালা আছি দুলাভাই। আপনে ভালা?
-হ্যাঁ, আমি ভালো আছি৷ তোমার আপা আমাকে চলে যেতে বলেছে তাই না?
-হু।
-তাকে জিজ্ঞেস করো বাবুর সাথে দেখা করা যাবে কি না?
-যাইবো না। উনি কইয়া দিছেন। বাবুর লগে দেখা করা যাইবো না এখন৷ আর কইছেন আপনেরে এই বাসায় আর না আইতে।
শাহেদ কী বলবে ভেবে পেল না৷ কথা খুঁজে না পেয়ে বলল,
-একটু পানি খাওয়াবে? নাকি এটাতেও তোমার আপার নিষেধাজ্ঞা আছে?
-হু। আছে। আপনেরে কিছু দিতেও মানা করছে। তয় আপনি দাঁড়ান। আমি পানি লইয়া আসি।
জামিলা দৌড়ে গেল। মগে পানি ঢাললো। ঢালার সময় লক্ষ্য করলো তার সামনে লিলি দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি কঠিন। লিলি কড়া স্বরে বলল,
-কার জন্যে পানি?
জামিলা জবাব দিলো না। সে সম্পূর্ণ ভাবে লিলিকে উপেক্ষা করলো। দৌড়ে গেল বসার ঘরে৷ গিয়ে দেখলো শাহেদ সেখানে নেই। চলে গিয়েছে৷ তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কান্না পেল। লিলি আপা এতো কঠিন কেন? মানুষটাকে এতোক্ষণ বসিয়ে রেখে অপমান করার মানে কী? স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তো ঝামেলা হয়ই৷ তাই বলে এমন ব্যাবহার করার কোনো মানেই হয় না৷ জামিলা ডাইনিং রুমে ফিরে এলো। দেখলো লিলি সেই এক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। সে মগটা টেবিলের উপর রাখলো। লিলি বলল,
-তোমাকে না বলেছি ওকে কিছুই দিবে না? একটু পানিও না?
জামিলা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না৷ বলল,
-আপা, আপনের মনডা অনেক শক্ত। পাথরের লাহান। জামাই বউয়ের সমিস্যা হয়ই। এই জন্যি এতো পাষাণ হওন ঠিক না৷
কথাটা বলেই জামিলা মুখে আঁচল চেপে চলে গেল। লিলি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময়৷ রাগ হলো খানিক। তাও নিজেকে সামলে নিলো। কাজের মানুষদের সাথে তর্ক করাটা মানায় না। পরে দেখা যাবে নানান সমস্যা বেরিয়ে আসবে৷ আর কাজের মানুষ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। যে আছে তাকে বড় কষ্টের পর পেতে হয়েছে৷ দ্বিতীয়বার সেই কষ্ট হোক, সে তা চায় না৷
লিলি নিজের রুমে চলে এলো। কী মনে করে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। দাঁড়াতেই দেখলো শাহেদকে। কারো সাথে কথা বলছে৷ একটা মেয়ে৷ সামনের বিন্ডিংয়ে থাকে মনে হয়৷ বেশ কয়েকবার বের হতে দেখেছে। বয়স বাইশ তেইশ হবে৷ লিলি ভাবলো এই মেয়েটাকে চিনে কি না? কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না। চিনে না বোধ হয়৷ নতুন এসেছে হয়তো৷ কিন্তু এই মেয়ে শাহেদের সাথে কী কথা বলছে? আর এতো হাত নাড়িয়ে হেসে কথা বলার মানে কী? আশ্চর্য! এই মেয়ের হাসির রোগ আছে নাকি? বড় অসহ্য লাগলো লিলির৷ সে জানালার কাছ থেকে সরে এলো৷ আজকালকার মেয়ে গুলোর যে কী হয়ে গেল!
-আপনি অনেক ভালো লিখেন। আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত স্যার।
শাহেদ অবাক হলো। তারও ভক্ত আছে নাকি! বলল,
-তাই নাকি?
-জি।
'জি' বলে মেয়েটা তাকিয়ে থাকলো৷ শাহেদ বলল,
-আচ্ছা, আসি তাহলে?
মেয়েটা চট করেই বলে উঠলো,
-এটা আপনার শ্বশুর বাড়ি?
শাহেদ হাসলো। কিছু বলল না৷ মেয়েটা বলল,
-ভাবী কি এখানেই?
-হ্যাঁ৷
-আচ্ছা৷ দেখা করে আসবো৷
শাহেদ এবারেও হাসলো৷ তারপর কিছুদূর হেঁটে গিয়ে বলল,
-আসি৷
মেয়েটা পেছন থেকে বলল,
-আমি কি আপনার পাশে একটু হাঁটতে পারি?
শাহেদ কিছু বলে কূল পেল না৷ মেয়েটা তার আগেই তার পাশে চলে এলো৷ তারা দু'জন চুপচাপ হাঁটলো কিছুক্ষণ। মেয়েটা বলল,
-আপনি এতো উপমা পান কই?
-সরি! বুঝিনি।
-বলেছি গল্পে এতো উপমা, এতো বিশেষণ কোথায় পান?
শাহেদ থতমত খেয়ে গেল! এটা আবার কেমন প্রশ্ন? এর জবাব কী হতে পারে? সে চুপ করে থাকলো।
-বলবেন না? বললে কি আমি চুরি করে নিয়ে যাবো?
মেয়েটা ফিক করেই হেসে ফেললো। শাহেদ বলল,
-তা নয়৷ চুরি করবেন কেন? আর করেও বা কী করবেন?
-তাহলে? এতো ভাবছেন যে?
-ভাবছি এটার জবাব কী হতে পারে, সেটা।
মেয়েটা অবাক হয়ে তাকালো। বলল,
-আপনার কাছে এটার জবাব নেই?
-নাহ৷ নেই। উপমা-বিশেষণ এগুলো মনে আপনা আপনিই চলে আসে৷ জোর খাটিয়ে আনা যায় না৷ এগুলো কেন কিংবা কোন কারণে আসে তা জানা নেই।
মেয়েটা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
-বোধহয় জটিল প্রশ্ন করে ফেললাম।
-উত্তর জানা না থাকলে সব প্রশ্নই জটিল৷
কথাটা বলে শাহেদ হাসলো৷ বলল,
-এইবার বোধ হয় আপনার যাওয়া উচিৎ।
মেয়েটা কেমন জানি একটা স্বরে বলল,
-তাড়িয়ে দিচ্ছেন?
-না না! তাড়াবো কেন? রিক্সা নিবো এখান থেকে। তাই কথাটা বললাম।
-অহ আচ্ছা। আসুন তাহলে৷ আবার দেখা হবে স্যার৷
শাহেদ হাসলো৷ কিছু বলল না৷ রিক্সায় উঠে গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো সে৷
বাবুর কান্না থামছেই না। সে বেশ জোরেশোরে কেঁদে যাচ্ছে৷ লিলির মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই আজকাল সে ছন্নছাড়া হয়ে থাকে৷ তারউপর আজ শাহেদ এসে তার মেজাজটা নাড়িয়ে গেল৷ এখন তার মাথা থেকে যেন আগুন বের হচ্ছে৷ এদিকে জামিলা তার সাথে কথা বলবে না বলছে। জামিলার কথা হলো সে শাহেদের সাথে কেন এমন আচরণ করেছে? এতোক্ষণ বসিয়ে রাখার মানে কী? একটু পানি দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? জামিলা সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছে, যতক্ষন না লিলি শাহেদকে ফোন দিয়ে ক্ষমা চাচ্ছে ততোক্ষণ সে লিলির সাথে কথা বলবে না৷ কোনো মতেই না৷ এটা শোনার পর লিলি আরো বেশি রেগে গিয়েছে৷ তার সাথে জামিলার বেশ ভালোই একটা ঝগড়া হয়ে গিয়েছে৷ ঝগড়া মাঝপথে রেখে জামিলা ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে সে আর কখনই এই ঘরে আসবে না৷ বেঁচে থাকতে এই ঘরের কাউকে তার এই মুখ দেখাবে না৷ এতে লিলির বিরক্তির সীমা থাকলো না। পাশাপাশি তার টেনশন হতে থাকলো। জামিলা কাল থেকে না এলে কঠিন সমস্যা হয়ে যাবে।
লিলি বাবুকে কোলে নিয়ে তমার ঘরের দিকে গেল। বাবু গলা ফাটিয়ে কান্না করছে৷ কান্নায় লিলির কান ফেটে যাচ্ছে যেন৷ মাথার ভেতর কেমন যন্ত্রণা হচ্ছে৷ লিলি তমার রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
-তমা? একটু বেরিয়ে আয় না?
তমার জবাব পাওয়া গেল না৷ লিলি আবারও ডাকলো,
-তমা? এই তমা? শোন না?
তমা দরজা খুলে বলল,
-কী হয়েছে আপু?
-বাবুকে একটু কোলে নে৷ সেই কখন থেকে কান্না করে যাচ্ছে৷ কান্না থামছেই না৷
তমা বাবুকে কোলে নিতে নিতে বলল,
-কাঁদছে কেন ও?
-মেরেছিলাম ওকে?
-কিহ? তুমি ওকে মেরেছো? কী বলো?
-তো মারবো না তো কী করবো? এতো জ্বালায় কেন? খাওয়ানোর সময় কিচ্ছু খায় না। খালি অ্যাঁ অ্যাঁ করে কান্না করে৷
-তাই বলে তুমি ওকে মারবে? পাগল হয়েছো?
লিলি তমার রুমে ঢুকে গেল। বলল,
-হ্যাঁ, পাগলই হয়ে যাচ্ছি বোধহয়।
কথাটা বলতেই তমার বিছানার দিকে চোখ গেল তার৷ তখনই সে বইটা দেখলো৷ দেখতেই মাথায় রাগ উঠে গেল তার। বলল,
-এই বই এখানে কেন?
-মানে?
-তুই ওর বই পড়িস?
-অবশ্যই পড়ি৷ দুলাভাই ভালোই লিখে। মাঝখানে আমার চোখে জল চলে এসেছিল গিয়েছিল একবার।
তমা কথাটা শেষ করে কূল পেল না। দেখলো তার বোন বইটা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে৷ সে চিৎকার দিয়ে বলল,
-এটা কী করলে তুমি আপু?
-দেখছিস না কি করেছি? বইটা ফেলে দিয়েছি।
-আশ্চর্য! কেন ফেললে?
-ওই বদ লোকের কোনো কিছুই এই ঘরে থাকা যাবে না৷
-ধুর আপু! কাজটা কি ঠিক করলে? আমার বইটা পড়া শেষ হয়নি। আরো কিছু বাকি আছে৷
-যা করেছি ভালোই করেছি। ওর কোনো কিছুই এই ঘরে থাকা যাবে না। আর শোন, ওর কোনো বই তুই পড়বি না। কখনই না।
তমা চোখে জল জমে গেল। একটা ইন্টারেস্টিং কাহিনীতে এসেছিল সে৷ সে ভেবেছিল আপুকে বিদায় দিয়ে পড়বে। কিন্তু সেটা হলো কই? তমা ভেজা স্বর কঠিন করে বলল,
-আপু, তুমি আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছো৷ মহা পাগল। ধরো, তোমার মেয়েকে নাও।
লিলি অবাক হয়ে বলল,
-আশ্চর্য! তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?
-আরো খারাপ ভাবে যে বলিনি তা ভেবে খুশি হও৷ কাজটা একদমই ঠিক করোনি তুমি৷
বাবু তমার কোলে গিয়ে শান্তই ছিল। কান্না করছিল না। কিন্তু লিলির কোলে আবার আসতেই সে কান্না করে দিল। আবার সেই গলা ফাটানো কান্না৷ লিলির ভাবলো, মেয়েটা কি তাকে অপছন্দ করে নাকি? তা না হলে তমার কোলে গিয়ে কাঁদলো না অথচ তার কোলে আসতেই কেঁদে দিলো কেন? লিলি এক ভাবে বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুসময়। বাবুর চোখ দুটো একদম তার বাবার মতো হয়েছে৷ বাবার মতো? ওর বাবার কিছুই তো এই ঘরে রাখার যাবে না৷ তাহলে? পরক্ষণেই ভাবলো, ছি ছি! এসব কী ভাবছে সে? সে কি আসলেই পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি?
শাহেদ বাসায় ফিরে এলো। ঠিক তখনই তার ফোনে শব্দ হলো৷ সে ফোন বের করতেই স্ক্রিনে একটা মেসেজ দেখলো,
"আমাদের দেখা হওয়ায় কি তোমার সংসার ভাঙ্গতে বসেছে?"
.
চলবে...
গল্পঃ বিষাদ আজ মন ছুঁয়েছে
ভুলত্রুটি মার্জনীয়