Bangla Golpo: ভূতেদের ভূত ৩

Bangla Golpo: ভূতেদের ভূত

তৃতীয় পর্ব




নেহার নিথর দেহটা ফ্লোরে পড়ে আছে৷ তুষার সোজা হয়ে বসলো বিছানার কাছে৷ আরমান সাহেবের দিকে তাকিয় দেখল একবার। তিনি যেন তুষারের চোখের ভাষা বুঝতে পারলেন। দৌড়ে এলেন দরজার কাছ থেকে৷ এসেই নেহাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। মৃদু কাঁদলেন যেন৷ তুষার কিছু বলল না৷ সে এগিয়ে গিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিল৷ খুলতেই দেখল সৃজিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। তুষার ওকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তার আগেই ও ভেতরে ঢুকে গেল। নেহার বাবার কাছে গিয়ে বসলো৷ নেহার মাথায় হাত রাখল ও। তুষার চেয়ারটা টেনে বসলো। সে ভাবলো সৃজিয়াকে এক গ্লাস পানি দিতে বলবে৷ ভীষণ তেষ্টা পেয়েছে তার। কিন্তু মেয়েটার তাড়াহুড়ো করে ভেতরে ঢুকে যাওয়ার কারণে বলা হলো না। তুষার চুপ থাকলো। আরমান সাহেব এবং সৃজিয়া মিলে নেহাকে বিছানায় তুলে নিল৷ তুষার ভাবলো এগিয়ে গিয়ে ধরবে ওদের সাথে। কিন্তু ও গেল না৷ কি জানি কী ভেবে বসে আবার৷ মানুষের ভাবনা শক্তির অন্ত নেই। এটি তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে মূহুর্তে। তুষার চুপচাপ বসে থাকলো৷ সৃজিয়া নেহার মাথার কাছে বসে আছে৷ আরেক পাশে বসে আছে আরমান সাহেব৷ নেহাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে৷ চেহারার ফ্যাকাসে ভাবটা যেন চলে গিয়েছে৷ কেমন জানি একটা মায়া এসে বসে আছে ওর চেহারায়৷ খানিক বাদেই তুষার কিছুটা কাশি দিয়ে বলল,
-আঙ্কেল! একটু পানি পাওয়া যাবে?
আরমান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন চট করেই। বললেন,
-অবশ্যই!
এই বলে তিনি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তুষার উনার গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময়৷ তারপর চোখ ফিরিয়ে এদিকে তাকাতেই দেখল সৃজিয়া তাকিয়ে আছে ওর দিকে৷ কেমন অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে দেখছে৷ হঠাৎই তুষারের গা'টা শিরশির করে উঠল যেন৷ কেমন অদ্ভুত আনন্দঘন শীতল স্রোত বয়ে গেল ওর শরীরময়৷ সৃজিয়া চোখ ফিরিয়ে নিল। তুষার বলল,
-সৃজিয়া?
সে জবাব দিলো না৷ এমনকি তুষারের দিকে ফিরিয়েও তাকালো না৷ কেমন নীরব অভিমান যেন। তুষার বলতে থাকল,
-মেহরুমা নামের কোনো আত্মীয় আছে আপনাদের?
সৃজিয়ার ভ্রু কুচকে এলো৷ বলল,
-হ্যাঁ। আমার বড় খালা হোন তিনি৷ কেন বলুন তো!
-প্রয়োজন আছে৷ আমাকে একটু ওখানে নিয়ে যেতে পারবেন?
সৃজিয়া কিছুটা বিরক্ত হলো যেন৷ মুখের উপর বলে দিল,
-নাহ৷ পারবো না৷
তুষারের হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও চুপ করে থাকল। আর কিছু বলল না। আরমান সাহেব ফিরলেন তখনই৷ তুষারের দিকে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলেন৷ তুষার এক সাথে সবটা পানি খেয়ে নিলো৷ দেখে মনে হচ্ছে ভারী তৃষ্ণা পেয়েছে ছেলেটার। আরমান সাহেব বললেন,
-আরেক গ্লাস পানি দিবো?
তুষার মৃদু হেসে বলল,
-প্লীজ! কষ্ট দিচ্ছি আপনাকে৷ আরেক গ্লাস হলে ভালো হয়৷ ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছে!
ও এমন ভাবে কথাটা বলল যেন মায়া লেগে গেল আরমান সাহেবের৷ তিনি বললেন,
-আরেহ! এভাবে বলছো কেন? এটা তো আমার দায়িত্ব। ডাক্তারের সেবাযত্নও তো করতে হয় তাই না?
এই বলে তিনি হাসলেন৷ সৃজিয়া বিছানা থেকে উঠে এসে বলল,
-মামা, আমাকে দিন৷ আমি এনে দিচ্ছি৷
-না মা, তুমি বরং ওর পাশে বসো৷ আমি যাচ্ছি।
-আহা মামা এদিকে দাও তো! তুমি নেহার পাশে গিয়ে বসো৷ আমি যাই৷
এই বলে আরমান সাহেবের কাছ থেকে মগটা নিয়ে চলে গেল সৃজিয়া৷ আরমান সাহেব তুষারের দিকে তাকিয়ে কিছুটা হেসে বললেন,
-এই মেয়ে একদম তার মায়ের মতো হয়েছে। ভীষণ জেদি। যা বলেছে তা করবেই।
কথাটা বলতে বলতে বিছানার কাছে গিয়ে বসলেন তিনি৷ তুষার কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল,
-আঙ্কেল নেহা কি কোনো স্বপ্নের কথা বলেছিল আপনাদের?
-স্বপ্ন?
-হ্যাঁ। একটু মনে করার চেষ্টা করুন তো! ওর এই অবস্থা হওয়ার আগে ও কি কোনো স্বপ্ন দেখছিল?
ভ্রু কুচকে এলো আরমান সাহেবের। ভাবনায় পড়ে গেলেন তিনি। কিছু সময় পর বললেন,
-আমি এমন কিছু জানি না বাবা৷ ওর মা জানবে হয়তো৷
-এই ব্যাপারটা একটু জানা দরকার আঙ্কেল।
-আচ্ছা দাঁড়াও! আমি ওর মাকে ডেকে দিচ্ছি।
এই বলে তিনি 'মায়া' বলে বেশ কয়েবার ডাকলেন৷ কিছু সময় পরই এক ভদ্রমহিলা এলেন রুমের ভেতর। ঠিক তখনই এক গ্লাস শরবত সমেত ফিরে এলো সৃজিয়া৷ গ্লাসটা তুষারের দিকে বাড়িয়ে দিলো। তুষার তার দিকে না তাকিয়েই গ্লাসটা নিলাম। মায়া নামক ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করল,
-আচ্ছা আন্টি, নেহা কি কোনো স্বপ্নের কথা আপনাকে বলেছিল?
তিনি কিছু সময় চুপ করে থাকলেন। ভাবলেন। কিন্তু তেমন কিছু মনে করতে পারলেন না বোধহয়। বললেন,
-মনে পড়ছে না কিছু৷ কেন বলতো? কী হয়েছে?
তুষার কিছু সময় চুপ থাকল। বলল,
-কিছু না। তবে...
ওর কথা হওয়ার আগেই সৃজিয়া ওকে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনার নাম তুষার। রাইট?
আচমা এমন প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বসলো তুষার৷ বোকার মতো তাকালো সৃজিয়ার দিকে৷ সৃজিয়া বলল,
-আপনি আমার সাথে আসুন তো। কিছু কথা আছে আপনার সাথে৷
তুষার খানিকটা অবাক হলো৷ ভাবলো, এই ভাবওয়ালা মেয়েটার সাথে তাত আবার কী কথা থাকতে পারে। তুষার কী বলবে ভেবে পেল না৷ সৃজিয়া খানিকটা কঠিন স্বরে বলল,
-কী ব্যাপার। আপনাকে আসতে বলছি না।
তুষার চট করেই উঠে দাঁড়ালো। আরমান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
-ওর খেয়াল রাখবেন। খুব ধকল গিয়েছে বেচারির উপর দিয়ে৷ আশা করছি জলদিই জ্ঞান ফিরবে৷
এই বলে মৃদু হাসল৷ আরমান সাহেব বললেন,
-তুমি কি চলে যাচ্ছো?
-না৷ এখনও অনেক কাজ বাকি৷ নেহা এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি।
কথাটা বলতেই মায়া এবং আরমান সাহেবের মুখটা কেমন চুপসে গেল। কেমন মন মরা হয়ে গেল। তুষার তাদের আশ্বাস দিয়ে বলল,
-চিন্তা করবেন না৷ সব ঠিক হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই সে বেরিয়ে এল। বাইরে অপেক্ষা করছে সৃজিয়া। বলল,
-আমার সাথে আসুন। কিছু কথা আছে আপনার সাথে।
-কই যাবো?
-ছাদে।
-এখন?
-কেন? কোনো সমস্যা আছে?
তুষার মাথা নেড়ে জানালো তার কোনো সমস্যা নেই৷ তারা দুজনেই ছাদে উঠে গেল৷ ছাদে চেয়ার ও টেবিল পাতা আছে। সেখানে বসতেই সৃজিয়া বলল,
-নিচে দেখলাম স্বপ্নে কথা জিজ্ঞেস করছিলেন৷
-হ্যাঁ৷
-কেন বলুন তো?
-আছে কারণ। আপনাকে বলা যাবে না৷
-কেন আমাকে বলা যাবে না৷
তুষার চুপ করে থাকলো। অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
-ব্যাপারটা আপনার বিশ্বাসযোগ্য হবে না৷
-সমস্যা নেই৷ আপনি বলেন৷ আমি শুনতে চাই৷
-অযথা সময় নষ্ট করবেন না প্লীজ৷ আমাকে এখনই যেতে হবে৷
সৃজিয়ার মুখটা শক্ত হয়ে এলো৷ সে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো তুষারের দিকে৷ যেন আস্ত খেয়ে ফেলবে। বলল,
-মেহরুমা আন্টিদের বাসায় যাওয়ার কথা ভাবছেন?
-হ্যাঁ৷
-উনাদের বাসা কোথায় তা কি জানেন আপনি?
-জানি না৷ তবে জেনে নিবো৷
-কার থেকে জানবেন৷
-কেন? এই বাসার কেউই কি বলবে না?
-জ্বী না৷ কেউই বলবে না৷ কারণ আমার ওই খালার সাথে বড় মামার দারুণ একটা ঝামেলা চলছে৷ আমরা কেউই ওই খালার সাথে যোগাযোগ করি না৷ তিনি এক প্রকার আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন৷
-কেন? ঝামেলাটা কী?
-সেটা আমাদের পরিবারের ইন্টার্নাল বিষয়। বাইরের মানুষকে বলা যাবে না৷
তুষার কিছু সময় সৃজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ মেয়েটার চোখমুখময় কেমন কাঠিন্যতা বিরাজ করছে। অথচ ও ভাবতেই পারেনি মেয়েটা যে এমন হবে৷ সৃজিয়া জিন্সের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে টেবিলের উপর রাখল। বলল,
-কী ব্যাপার? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
তুষার চোখ নামিয়ে বলল,
-কিছু না৷
-কিছু প্রশ্ন করছি। স্পষ্ট জবাব দিবেন৷
কথাটা বলেই সিগারেট ধরালো সৃজিয়া। ওকে সিগারেট ধরাতে দেখে নিজের পকেটে হাত দিল তুষার৷ জলদি করে সিগারেট বের করেই ঠোঁটের ভাঁজে রাখল। লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে খুব জোরে একটা টান দিলো সে৷ সৃজিয়া কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে৷ ব্যাপারটা ঠিক সয়ে উঠলো না তার৷ তুষার সিগারেটটা অনামিকা ও মধ্যমা আঙ্গুলের ভাঁজে নিয়ে বলল,
-সিগারেটের নেশাটা আরো আগেই উঠেছে৷ এখানে থাকার কারণে মুখে নেওয়া হয়নি। আপনি মেয়ে মানুষ দেখে এখানে এতোক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখলাম৷ কিন্তু...৷ যাই হোক! কী জানি বলছিলেন?
সৃজিয়া সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছিল ততক্ষণে। বলল,
-কিছু প্রশ্নের জবাব চাই।
তুষার সিগারেটে টান দিয়ে বলল,
-আমি কেন আপনার প্রশ্নের জবাব দিবো?
কথাটা বলেই সরাসরি তাকালো সৃজিয়ার দিকে। সৃজিয়া চোখ নামিয়ে কঠিন চোখে বলল,
-আপনাকে না বলেছি আমার দিকে এভাবে তাকাবেন না?
কথাটা শুনতেই হো হো হো করেই হেসে উঠল তুষার৷ বলল,
-চোখে চোখ রাখতে পারছেন না? এতো ভয় কিসের?
-ভয় কেন হবে?
-তাহলে তাকাতে নিষেধ করছেন যে?
-আমার দৃষ্টির গভীরতা ধরতে পারি না তাই৷ আমার প্রশ্ন গুলোর জবাব চাই।
-বললাম না তো, আমি কেন জবাব দিবো? হোয়াই?
-সেটা জানি না। তবে আপনাক্র বলতেই হবে।
তুষার সিগারেটে টান দিলো আবার। কিছু সময় চুপ থেকে বলল,
-ওয়েল! প্রশ্ন গুলো বলুন।
সৃজিয়া চুপ থাকল। কাঁধের কাছের চুল গুলোকে পেছনে সরিয়ে দিলো৷ বলল,
-আপনার কী কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে?
-জ্বি না৷
-ভবিষ্যত বলতে পারেন?
-উহু৷
-লাস্ট ওয়ান। আশা করছি এটার উত্তর অন্তত সত্য বলবেন৷
-এতোক্ষন কি আমি মিথ্যা বলেছিলাম?
সৃজিয়া হাসলো। বলল,
-অবশ্যই। আমি আপনার চোখ দেখেছিলাম। চোখ দেখেই বুঝা যায় আপনি সত্য বলছেন না মিথ্যা বলছেন।
-আরে বাহ! একটু আগে তো বলছিলেন আপনি আমার দৃষ্টির গভীরতা ধরতে পারেন না৷ এখন আবার বলছেন আমার চোখ দেখে আমার প্রশ্নের জবাব সত্য কি মিথ্যা তা বুঝতে পারছেন?
সৃজিয়ার চেহারা লাল হয়ে এলো৷ সে বলল,
-আপনার সাথে কথা পেরে উঠা যাবে না৷ শেষ প্রশ্নটা করছি৷ এটা ঠিক প্রশ্ন নয়৷ আমার জানার ইচ্ছে কিংবা কৌতূহল বলতে পারেন৷ সেটা হলো আপনার চোখে কি স্পেশাল কিছু আছে? এই ধরেন ভিন্ন কিছু৷ যা অন্যদের চোখে নেই৷ কেবল আপনার চোখেই আছে৷ ওই জিনিসটার জন্যে আমি আপনার দিকে ঠিক ভাবে তাকাতে পারি পর্যন্ত৷
তুষার কিছু সময় চুপ থাকল। পাঁয়ের উপর পাঁ তুলে ভাবলো কিছু সময়। বলল,
-তেমন কিছুই নেই৷ আমার চোখ আগ থেকেই এমন৷ আপনি কেন তাকাতে পারছেন না তা ঠিক বলতে পারছি না৷
সৃজিয়া কিছু সময় তুষারের দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ তারপর চট করেই চোখ সরিয়ে নিল। চেহারায় স্পষ্ট রাগ ভাসছে। তুষারের জবাবে যে সে খুশি হয়নি তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে৷ তুষার বলল,
-তবে একটা ব্যাপার আছে৷ অপরাধীরা আমার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না৷ আমার চোখে চোখ রাখতে পারে না৷
সৃজিয়ার ভ্রু কুচকে এলো৷ রাগে তার শরীরটা ফেটে যাচ্ছে যেন৷ সে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে তুষারের কলার চেপে বলল,
-ইউ রাস্কেল! আমাকে দেখে তোর অপরাধী মনে হয়?
ব্যাপারটার জন্যে তুষার একদমই প্রস্তুত ছিল না৷ সে হতবাক হয়ে তাকালো সৃজিয়ার দিকে৷ মেয়েটা রাগে ফোঁসফোঁস করছে যেন৷ তুষার বলল,
-আশ্চর্য! আমি বললাম কই?
-বলিসনি তো কী হয়েছে? তুই তো ওটাই মিন করেছিস। তোর কী মনে হয়? আমি বুঝি না কিছু? আর নিজেকে খুব মহান ভাবিস তাই না? খুব বেশি ভাব তাই না? তোর এসব ভাব আমি গায়েও মাখি না৷ তোর মতো এমন বহুত ছেলে আমার পেছনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ বুঝেছিস?
তুষার কিছু বলল না। সৃজিয়ার হাত ধরে নিজের কলার ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল। ঠিক তখনই আঁৎকে উঠল সে। সৃজিয়ার হাত দুটো শক্ত করে ধরে রাখল৷ তারপর চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো৷ সৃজিয়া অবাক হয়ে দেখলো। আশ্চর্য! এই ছেলে হুট করেই চোখ বন্ধ করে নিলো কেন? এমন সময় সৃজিয়ার ভাবনাটা হঠাৎই স্থির হয়ে গেলে৷ ওর গা'টা কেমন জানি গুলিয়ে উঠল। হঠাৎ সৃজিয়ার ভেতর থেকে বাঘের গর্জনের মতো কিছু একটা বেরিয়ে এলো। সৃজিয়া ভীষণ অবাক হলো৷ ও চিৎকার দিলো৷ ঠিক তখনই ও শুনলো ওর স্বরটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে৷ কেমন মোটা পশুর স্বরের মতো হয়ে গিয়েছে৷ তার চিৎকারটাও যেন কোনো ভয়ংকর জানোয়ারের চিৎকারের মতো শোনালো।
তুষার চোখ মেলতেই দেখল সৃজিয়ার চেহারাটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। চোখ দুটো কেমন গোল গোল হয়ে গিয়েছে৷ কেমন অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করছে সে৷ তুষার ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো৷ বলল,
-তুই কে?
কথাটা বলতেই তুষার দেখল সৃজিয়া চেহারা পাল্টে গিয়েছে৷ কেমন অদ্ভুত একটা চেহারা ধারণ করেছে সে৷ তার দেহটা হঠাৎই কেমন বৃহৎ হয়ে গিয়েছে। মূহুর্তের মাঝে সৃজিয়া পাল্টে গেল। তুষারের সামনে এসে দাঁড়ালো দৈত্যের মতো একটা দানব। সে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ গর্জে উঠল দানবটা তার গর্জের সাথে ছিটকে পড়লো তুষার৷ চেয়ার থেকে দু'হাত দূরে ছিটকে পড়লো সে৷ নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল দানবটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ তুষার তার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল,
-ও মাই গড!
দানবটা কিছুটা এগিয়ে এলো তুষারের দিকে৷ তুষার কোনোভাবে দাঁড়ালো কেবল। চিৎকার বলল,
-কে তুই?
দানবটা গর্জে উঠল৷ আরো কিছুটা এগিয়ে এলো সে৷ তুষার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভালো করে দেখল সে। এই দানবটাকে চিনতে পারছে না ও৷ আরো কিছু সময় ভাবলো। কিন্তু কিছুতেই বুঝতে উঠতে পারলো না যে এই দানবটা কে? এদের বংশ কী? তুষার দু'হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে রাখলো। দানবটা ততক্ষণে তুষারের একদম কাছে চলে এলো৷ এসেই বলল,
-তুই কে রে শালা?
তুষার কিছুটা অবাক হলো৷ স্বরটা নেহার নয়৷ এটা যেন পুরুষালি কণ্ঠ। কিন্তু ভীষণ মোটা। তুষার বলল,
-আমি তুষার৷ তুই কে?
-আমি কে তা জেনে তোর লাভ কী? এখানে কেন এসেছিস তা বল?
-উহু৷ তা হচ্ছে না৷ আমি তোর পরিচয় চাই৷
দানবটা কেমন জানি হেসে উঠল। বলল,
-আমার সাথে তর্ক করছিস? কী মনে হয়? আমার সাথে পেরে উঠবি তুই? এতো সহজ?
-চল। তবে শুরু হয়ে যাক।
দানবটা হেসে উঠল। তারপর তুষার কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর তলপেট বরাবর দিলো এক ঘুষি। ঘুষির আঘাতে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়ল সে৷ ছাদের সাথে ঘষা খেয়ে দু'হাতের কনুইয়ের কাছে ছামড়া ছিলে গেল ওর৷ মূহুর্তে রক্ত ঝরতে থাকলো হাত বেয়ে৷ ব্যাথায় ককিয়ে উঠল সে৷ কিছুটা সময় পড়ে থাকল নিথর হয়ে। তার উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই যেন৷ তবুও কোনো মতে উঠে দাঁড়াল ও৷ দানবটা আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে ছিল৷ তুষারকে উঠতে দেখেই সে বলল,
-সখ মিটেছে? নাকি আরো কিছু দিতে হবে।
তুষার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মনে মনে মন্ত্র পড়লো সে৷ কিন্তু ওর সেই মন্ত্র গুলো যেন কাজে দিলো না৷ ও ভীষণ অবাক হলো৷ আশ্চর্য! মন্ত্র কাজ করছে না কেন? হচ্ছে কী এসব?

চলবে...
.
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
-তাসফি আহমেদ।





বাংলা ছোট গল্প। Bangla Choto Golpo | Bangla Valobashar Golpo| Bangla Golpo| Bangla Vuter Golpo
তাসফি আহমেদের গল্প

Bangla Golpo

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url