Bangla Golpo: মুনার জন্য অপেক্ষা। ভালোবাসার গল্পটি লিখেছেনঃ সাদ আহম্মেদ
Bangla Golpo: মুনার জন্য অপেক্ষা। ভালোবাসার গল্পটি লিখেছেনঃ সাদ আহম্মেদ
সাদ আহম্মেদ
২০০১ এর দিকে ক্রাশ শব্দটার খুব
একটা প্রচলন ছিলোনা। কারো কাউকে ভালো লাগলে, এক মাস সময় লাগতো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে। একে অপরকে জানানোটা খুব সহজ
ছিলোনা। বহু ঝামেলা করে টিএন্ডটি ফোন নাম্বার হয়তো ম্যানেজ করা যেতো কিন্তু কথা
বলতে অনেক আগডুম বাগডুম করা লাগতো। সেই উত্থাল পাথাল সময়ে রামপুরা এলাকায় অবস্থিত
সিটি কোচিং সেন্টারের উর্মির সাথে আমার দেখা হয়ে গেলো। মেয়ে নেকাব পড়তো, শুধু চোখ দেখা যেতো। তাহা দেখিয়াই আমি ব্যাপক সাইজের একটা ক্রাশ
খেয়ে গেলাম। ও একদম সামনে বসতো কোচিং রুমের। আমি তার দুই বেঞ্চ পরে বসে ছিলাম।
উর্মি মাঝে মাঝে পাশের বান্ধবীর দিকে তকিয়ে একটা দুইটা মিষ্টি হাসি দিতো, কিন্তু মুখ দিযে একটা শব্দও শুনিনি। রসায়ন স্যার সেদিন আলফা কণা
নিক্ষেপণ বর্ণন করছিলেন আর আমি উর্মির কাছে কিভাবে এই দুপুর ৩:৩০ এর বিদুঘুটে সময়ে
ধরা খেলাম সেটা বুঝার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। জীবনের প্রথম ধরা, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমার বন্ধুরা আমাকে বাকের ভাই বলে
ডাকতো। আমার মধ্যে বাকের ভাই টাইপ একটা উড়া ধুরা ভাব ছিলো। আমি এলাকায় বের হলে চোখে
একটা সানগ্লাস, গলায় গুলিস্থান থেকে কেনা ২০ টাকার
জং ধরা লোহার চেইন পরে ঘুরে বেড়াতাম। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবের সাথে দুই একটা
বাকের ভাই টাইপ ডায়ালগও ঝেড়ে দিতাম। সন্ধ্যা বেলায় চায়ের দোকানে বসে চুকচুক করে
সানগ্লাস চোখে চা পান করতাম। ছোট ছোট পোলাপাইনকে কারণে অকারণে গাট্টি মেরে বলতাম, “মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে। ভাইতামিন বি”। বহুবার বাপের উষ্টা, মায়ের থাবড়, সিনিয়র ভাইদের কানা টানা খেতে হয়েছে
এই ভাইগিরি করতে গিয়ে। কিন্তু আমি নিজেকে তার থেকে আলাদা করতে পারতাম না। বাকের
ভাইয়ের সাথে আমার পার্থক্য মাত্র দুইটাঃ আমার তখনোও দাড়ি গজায় নাই, আর বিরক্ত করার মত কোন মুনাও নাই। অবশ্য পড়ি মাত্র ক্লাশ টেনে, এই কচি বয়সে আর কিইবা অভিজ্ঞতা হবে। উর্মিকে দেখে আমার মনে হয়েছিলো, মুনা তোমারে পাইছি। বাকের ভাইয়ের ডাইহার্ড ফ্যান আমি বদিউল খান
আবীর ১৬ বছর বয়সে জীবনের অর্থ খুজে পেলাম। এই অর্থ খুজে পেতে বস্তাপচা হিন্দী মুভি, প্রেমময় বাংলা নাটকের ছ্যাকাখোর ডায়ালগ বিশাল উদ্দীপক হিসেবে কাজ
করেছে, তাতে সন্দেহ নাই। আমি ঠিক করলাম, জগত একদিকে মুনা আরেকদিকে। যেভাবেই হোক তাকে এই কোমলমতি ভার্জিন
হৃদয়ের ভালোবাসার কথা জানাতেই হবে।
আমার এই গোপন ভালোবাসার কথা টিফিন
টাইমে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে স্কুলের বন্ধুদের জানালাম। মেয়েঘটিত ব্যাপারে আমার
সবচেয়ে সাহসী বন্ধু ছিলো লালটু। আসল নাম বলা যাবেনা পাঠকদের। কারণ সে আমার লেখার
পাঠক। কপিরাইট আইনে মামলা খেতে পারি। যাহাই হোক, কোন এক বৃহস্পতিবার লালটুকে আমসত্বের লোভ দেখিয়ে আমি আমার এলাকায়
সম্মান দিয়ে নিয়ে আসলাম। রুল টানা খাতার একটা পেজ ছিড়ে আলাভু লিখে তার হাতে দিয়ে
বললাম, “দোস্ত ও ৪টায় বাইর হইবো। এই কাগজটা
এক্সকিউজ মি বলে ধরায়া দিস। আল্লাহর দোহাই লাগে তুই নিজে প্রপোজ দিয়া বসিস না”।
উর্মি সেদিন ৪টায, ৫টায় কখনোই বাহির হয়নাই। সে কোচিং এই আসেনাই। শালার কপাল। এরপর
কোচিং এ আমার এক দুমাসে যেসব বন্ধু হয়েছিলো, তাদের কোনরকমে ব্যাপারটা বুঝালাম। এরা আমার থেকেও এক্সাইটেড। কারণ
ওই বয়সে আমার মত এইরকম ইচড়ে পাকা পোলাপাইন খুব একটা পাওয়া যেতোনা। প্রেম করাটা
সাহসের ব্যাপার ছিলো বিশাল।কোন একভাবে উর্মির কাছে এই খবর চলে যায়। এরপর থেকে দেখি
উর্মি আমার কাছাকাছি কোন একটা বেঞ্চে বসে। আমি তার নেকাবের ফাক দিযে হাস্যজ্জ্বল
চোখ দেখি যাতে আমার ভুল না হলে একটা লজ্জা লজ্জা ভাবও থাকতো। আমার পড়াশোনা প্রায়
গোল্লায় গিয়েছিলো। টেস্ট পরীক্ষায় টেনে টুনে পাশ করলাম। স্কুলের কালাম স্যার আমাকে
ফিজিক্স সাবজেক্টিভে ১৬ দিয়ে পাশ করিয়ে দিলেন। আমি স্যারের বাসায় একগুচ্ছ গোলাপ
রেখে আসছিলাম খুশিতে। স্যার এরপর দিন আমাকে ক্লাসের পর ডেকে নিয়ে বেদম মাইর দিয়ে
বলেন, “আমারে বাসী গোলাপ দিছোস। কত বড়
সাহস। তোরে পাশ করাইয়া ভুল হই গেছে। বেত্তমিজ পোলা”।
উর্মির জন্য এতো কিছু অথচ উর্মিকেই
কিছু বলতে পারিনাই। সরাসরি একবার একটা কথাই হয়েছিলো। সেটাও ও সাহস করে বলেছিলো কোন
একদিন ক্লাসের গ্যাপে। আমাকে বলেছিলো, “শার্পনার আছে!”
আমার কাছে সেদিন ওটা ছিলোনা। কিন্তু
এরপর থেকে পাচ পিস রাবার, তিনপিস এইচটুবি পেন্সিল, চারটা ইকোনো পেন আর ২০ পিস শার্পনার নিয়ে ঘুরতাম। আফসোস সে আমার
কাছে আর কখনোই কিছু চাইনাই। তারপর একদিন বুঝলাম, বাকের ভাইয়ের মত পোষাক পরলেই হয়না। বুকে সাহস থাকতে হয়। এই সাহসটা
আমার কখনোই ছিলোনা। ১৭ বছর পার হয়ে গেছে, সেই সাহসটা হয়নি। পৃথিবী এবং তাতে বসবাসকারী মানুষরা বড়ই অদ্ভূত।
যেকোন রকম অন্যায় করতে তারা লজ্জা পায়না, কিন্তু কেন যেন ভালোবাসার কথা বলতে তারা খুব ভয় পায়, লজ্জা করে।প্রিয় মুনা আমি দুঃখিত, আমার ১৬/১৭ বয়সের প্রেমটা কি তীব্র ছিলো তা তোমাকে কখনোই জানাতে
পারিনি। আমার মত ইচড়েপাকা বাউন্ডুলে ছেলের ভালোবাসার মূল্য তুমি দিতে পারবা, এই আত্নবিশ্বাসটা আমার কখনোই ছিলোনা।
উর্মির সাথে গল্পটা এভাবে শেষ হলে
খারাপ হতোনা। একজন বিষণ্ন হতভাগা কাপুরুষ প্রেমিক, স্বপ্নের জগতে বেঁচে থাকা উর্মিরা- পারফেক্ট একটা গল্প। কিন্ত
এমনটা হয়না। আমার বড়বোনের মেয়ে আনুশাকে একদিন স্কুলে দিয়ে ফিরে আসার পথে তার সাথে
দেখা হয়ে গেলো। উর্মি এখন বোরখা নেকাব পড়েনা। হাটতে হাটতে আমি খেয়াল করছিলাম এক
জোড়া চোখ স্কুলের পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে আমাকে খেয়াল করছে।আমি
ব্যাপারটায় পুলকিত বোধ করলাম। ভাব নিয়ে হেটে যেতে যেতে ঠাস করে একটা ধাক্কা খেলাম।
মনে হলো যেই চোখগুলো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো সেগুলো উর্মির। আমার খুব চেনা, অনেক কল্পনার তুলিতে আকা চোখগুলো আমি কখনো ভুলিনি, ভুলবোও না। আমি পেছনে এগিয়ে এসে তার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি
দেয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালালাম। মনে তখনো কিছু সন্দেহ ছিলো। তাই মিষ্টি হাসিটা
কুদ্দুছ ব্যাপারীর পেয়াজ ব্যবসায় ধরা খাওয়ার পর দেয়া হাসির মত হয়ে গেলো। উর্মি
তবুও ভদ্রতা করে তার আমাকে বলা দ্বিতীয় বাক্যটি বললো, “কেমন আছো আবীর?”
আমি মাথা নাড়লাম। মুখ দিয়ে কোন
শব্দই বের হচ্ছেনা ঘটনার আকস্মিকতায়।উর্মি পরিস্থিতি বুঝে বললো, “তুমি এখনো অনেক লাজুক। জীবন কেমন যাচ্ছে আবীর সাহেব?”
আমি এবার সত্যি সত্যি হেসে দিলাম।
তাকে বললাম, “এইতো ভালো আছি, জীবনটাও খারাপ চলছেনা তুমি কেমন আছো? আমি শুনেছিলাম তুমি অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলে এইচএসসির পর। দেশে
আসলে কবে?”
উর্মি মাথার চুলে ঠিক করতে করতে
বললো, “এইতো কিছুদিন আগে। আমার
হাজব্যান্ডের মা একটু অসুস্থ, উনি দেশেই থাকেন।
দেখা করতে আসলাম। আর আজকে এখানে এসেছি আমার এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে। চলে
যাচ্ছিলাম, হঠাৎ তোমাকে দেখলাম”।
গল্পটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন- Bangla Golpo: মেকি হাসি
আমি উর্মির দিকে তাকিয়ে দেখি, ওর চোখের নিচে কেমন একটা ভাজ পড়ে গেছে। বয়স তো খুব বেশি হয়নি। তবুও
যেন একটা বিষণ্নতা। আমি ওকে সাহস করে বললাম, “এখানে একটা চমৎকার কফি শপ আছে। সময় থাকলে কফি খাওয়ার নিমন্ত্রণ
দিতাম”।
উর্মি সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলো।
আমি গাধার মত তাকে এমন একটা প্রস্তাব দিলাম আর সে এভাবে হ্যা বলে দিলো, ভাবা যায় এগুলা!
কফি শপে বসে তাকে বললাম, “বলো তোমার কথা শুনি। কি করলে কোথায় ছিলে এতোদিন”।
উর্মি হেসে বললো, “তেমন কিছুই করিনি আসলে এতোদিন। একটা পিএইচডি করলাম ক্লাস্টারিং
বেইজড এআই নিয়ে। কিছুদিন গুগলে কাজ করেছিলাম। ভালো লাগছিলোনা, ছেড়ে দিয়েছি। ছমাস ধরে বেকার। ক্যানবেরাতে বাচ্চাদের একটা স্কুলে
মাঝে মাঝে গেস্ট লেকচারার হিসেবে ফিজিক্সের ক্লাস নেই। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো এতো
কিউট। খুব ভালো লাগে”।
আমি মুগ্ধ হয়ে উর্মির কথা শুনছিলাম।
কোচিং সেন্টারে পড়ার সময় গণিতে ৫০ এ ৩ পাওয়া মেয়েটা মাশাল্লাহ কত ভালো করেছে
জীবনে। আমি হাসিমুখে বললাম, “তুমিতো বিশাল পাবলিক হয়ে গেছো। খুব
খুশি হলাম”।
উর্মি আমাকে মজা করে প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা তোমাকে কি এখনও বাকের ভাই বলে ডাকে বন্ধুরা। গলার চেইনটা, সানগ্লাস নাই এখন?”
বুকে ব্যাথা, চেহারায় লজ্জা ভাব নিয়ে বললাম, “সেসময় আসলে ক্রেজি ছিলাম বাকের ভাইয়ের জন্য। একদম ছোটকালে দেখা বাকের
ভাই ছিলো আমার সবচেয়ে বড় রোল মডেল। বাদ দাও। তোমার ছেলে মেয়ে কয়জন?”
উর্মির চোখে আমি আবার সেই বিষণ্নতা
দেখতে পেলাম। প্রশ্নটা করা মনে হয় ঠিক হয়নি। সে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বললো, “আবীর আমার আসলে ছেলে মেয়ে নেই”।
আমি ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দেয়ার
একটা চেষ্টা করলাম। তাকে বললাম, “মাশাল্লাহ তাহলে
অনেক ভালো আছো। বাচ্চা কাচ্চা খুব ভয়াবহ ব্যাপার। এরা সারাদিন হাগুমুতু করে। খুবই
যন্ত্রণা”।
উর্মি স্বাভাবিক হয়ে বললো, “তোমার মেয়েটা খুব কিউট। কি সুন্দর তোমার হাত ধরে থাকে। তুমি ওকে
স্কুলে ঢুকিয়ে দেয়ার আগে যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা আইসক্রিম ভাগ করে খাচ্ছিলে, এতো সুন্দর লাগলো ব্যাপারটা। আমি অনুমতি না নিয়ে ছবি তুলে ফেলেছি”।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলতে চাইলাম, ওটা তো আমার বোনের মেয়ে। কিন্তু বললাম না। কারণ কার মেয়ে সেটা
মুখ্য না। আমার ওর কথাগুলো শুনতে এতো ভালো লাগছিলো, আর কিছু মাথায় আসছিলোনা।
প্রায় এক ঘন্টা গল্প করে যখন তাকে
বিদায জানাতে উঠে যাচ্ছিলাম তখন ও অতর্কিত আমাকে বললো, “আচ্ছা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, কিছু মনে করবানা তো?”
আমি আবার বসে পড়লাম। বুঝলাম ঘটনা
খারাপ। ইতস্তত করে বললাম, “আরে না তুমি তো ছোটকালের বন্ধু।
কিছু মনে করবোনা বলো”।
উর্মি কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে বললো, “তুমি আমাকে পছন্দ করতে, কখনো বলোনাই কেন?”
আমি কি বলবো আসলে বুঝে উঠতে
পারছিলাম। বুকের মধ্যে ধড়ফড় করা শুরু করলো। আমি এখনোও ভয়ংকর কাপুরুষ, আর এসব শুনে বলে এখন আর কি লাভ।আমি ফ্যাসফ্যাস করে বলি, “আরেহ না। কি যে বলো। ওই বাচ্চাকালে বেশি পেকে গেছিলাম। তোমাকে
পছন্দ করতাম তো। আমরা সবাই করতাম। আমি হয়তো একটু একটু বেশি করতাম। তুমি কি রাগ
করতা?”
উর্মি সিরিয়াস চোখে বললো, “রাগ করতাম। এজন্য না যে তুমি আমাকে একটু বেশি পছন্দ করতা। এইজন্য
যে তুমি একবারও আমাকে ঠিকমত বোঝার চেষ্টা করোনাই। আমি তোমার আশেপাশে বসতাম শোনার
জন্য তুমি কিছু একটা বলো। তুমি কখনোই কিছু বলোনাই। অবশ্য আমারও দোষ ছিলো। আমি একটু
রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ছিলাম। এসবে খুব লজ্জা পেতাম। কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানো, আমি খুব বুঝতাম তুমি যে আমাকে অন্যভাবে দেখো”।
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, “এসব এখন আসলে বাচ্চাকালের দুষ্টুমি মনে হয়।হ্যা তোমাকে একটু না
অনেক বেশি হয়তো পছন্দ করতাম। কিন্তু এখন তোমার আমার দুজনের জীবন অনেক আলাদা। বয়সটা
তখন অল্প ছিলো। আমি এসব ভুলে গেছি”।
গল্পটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন- Bangla Golpo: অনামিকা এবং একটি গল্প
উর্মি উঠে যেতে যেতে বললো, “আমি ভুলিনাই আবীর সাহেব। এতো বছরেও ভুলিনি”।
উর্মির থেকে বিদায নিয়ে চলে
যাচ্ছিলাম। ও একদিন আমি অন্যদিকে। আমি কিছু না চিন্তা করে পিছনে ফিরে এসে ওকে
ডাকলাম। ও মিটিমিটি হাসি দিয়ে আমাকে বললো, “কিছু বলবে”।
আমি অনেক সাহস নিয়ে ওর ডানহাতটা ধরে
বললাম, “আমি তোমাকে অনেক বছর আগে একটা চিঠি
লিখেছিলাম। চিঠিটায় লিখেছিলাম, তুমি কি আমার
মুনা হবে? সেই মুনা যে আমি মরে গেলেও সাহস করে
আমাকে ভালোবাসতে জানবে”।
আমি হাত ছেড়ে দিয়ে আমার নিজের পথে
রওনা দেই। উর্মি এমনটা হবে ভাবতে পারেনি আমি নিশ্চিত। ওর বুক প্রচন্ড জোরে কাপছিলো, আমি টের পেয়েছি। ও হয়তো আমাকে একবার আস্তে করে ডেকেছিলো। আমি শুনতে
চেষ্টা করিনি। হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার মানুষের ডাক শুনতে নেই।
বাসায ফিরতে ফিরতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি
নামলো। আমি খেয়াল করলাম, আমার মাথাটা আউলে গেছে। আমি নিজ
বাসার বদলে বহু বছর আগে যে বাসার সামনে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকতাম সেখানে এসে আটকে
গেছি। আমার জীবনটাও মনে হয় এখানে আটকে গেছে। ঠিক এখানে একটা ভাঙ্গা দেয়াল ছিলো।
আমি দেয়ালের ওপাশে লুকিয়ে থাকতাম আর উর্মিদের বাসার বারান্দায় নজর রাখতাম। মাঝে
মাঝে ও এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। হয়তো কয়েকবার খেয়াল করেছে আমাকে। কিছু বলেনাই। আমি মনে
মনে বললাম, “উর্মি তুমি যদি আমার মুনা হতে আমি
তোমার সাথে বিয়ের পরেও এই ভাঙ্গা দেয়ালটার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম। আমি ৯টা
৫টা চাকরী করে যখন বাসায় ফিরে তোমাকে দেখতাম, বানিয়ে বানিয়ে অদ্ভূত অদ্ভূত কবিতাগুলো শুনাতাম। আমি কবিতা না
লিখেও কবি হওয়ার চেষ্টা করতাম। তোমাকে ভালোবাসি কথাটা শত সহস্রবার বলতাম কিন্তু
লুকিয়ে লুকিয়ে। আমি তোমার কাপুরুষ প্রেমিক হয়ে থাকতাম। তোমাকে সেদিন না দিতে পারা
শার্পনারটা প্রায়ই আমার হৃদয়টা কেটে দিয়ে যায়। এখন আমি আর ভালোবাসতে পারিনা। প্রিয়
উর্মি, প্রিয় মুনা তবুও এই বোকা মানুষটার
তরফ থেকে অনেক ভালোবাসা নিও”।
আবীররা অপেক্ষা করে কোন একদিন নীল
গোলাপে ঢাকা সেই বারান্দায় ভালোবাসার মুনা আকূল হয়ে তাকে খুজবে, ছোট্ট মায়া ভরা হাতে বৃষ্টির জল মেখে তাকে ডাকবে। সময় হারিয়ে যায়, এই অপেক্ষাটা শেষ হয়না।
সাদ আহম্মেদ
সাদ আহম্মেদে সকল গল্প পড়ুন-