Bangla Golpo: যুদ্ধ। লিখেছেনঃ সাদ আহম্মেদ

 

Bangla Golpo: যুদ্ধ। লিখেছেনঃ সাদ আহম্মেদ


Bangla Golpo: যুদ্ধ। লিখেছেনঃ সাদ আহম্মেদ


সকালবেলা যখন অফিসের গাড়িতে উঠি তখন ভোরের রবি কেবল মুখ তুলে তাকিয়ে আমাকে হাই জানায়।আমি হাসিমুখে তাকে বলি, “হারামজাদা দূরে গিয়া মর।এখন তো শান্ত হয়ে আছো, দুপুরবেলা তোমার উত্তাপ যন্ত্রণায় অফিসের নিচে চা খেতে যেতে পর্যন্ত মন চায়না।"এইসব ভাব বিনিময় শেষ হলে আমি আমার বিখ্যাত নীলরঙা খাদ্যভান্ডারটি খুলে ভেতরে আম্মুর হাতে বানানো ছোট্ট দুটি রুটি আর ফার্মের মুরগীর রান ভক্ষণ কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।তারপর আধ ঘন্টার ঘুম।হায়রে আমার সাধের ঘুম!কাউকে যদি বোঝাতে পারতাম সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার কথা মনে করলে বুকে কি প্রবল ব্যথা করে। প্রতিদিন মনে হয় এইসব ফাউল চাকরী- বাকরী আর করবোনা।আমি আবার হতে চাই এম.বি.বি.এস (ব্যঙ্গার্থে)তবে কিছুদিন আগে বিশেষ কারণে অফিসে যেতে আমার বেশ ভাল লাগতো।ফিটফাট হয়ে অফিসে যেতাম। আগের মত খোচাখোচা দাড়ি, কোচকানো শার্ট আর ধুলোমাখা জুতো ব্যবহার করতামনা। কারণ আমার ছিলো জিলেট!যাই হোক এই ফিটফাট থাকার ভাণ বেশিদিন ধরে শুরু হয়নি।এই আগের বছরের মাঝামাঝি থেকে।অফিসে ঢুকে তখন আর হায় না তুলে হাই দিতাম।কিন্তু কেন এত কিছু? বলতে লজ্জা লাগছে, তাও বলেই ফেলি।বুদ্ধিমান পাঠক ঠিক ধরেছেন নারীঘটিত ব্যাপার স্যাপার আর কি!সেই প্রিয়মুখটির জন্য এত কিছু করেছিলাম কিন্তু প্রথম ৪২টি দিন পার হয়ে গেলেও তার সাথে আমার সরাসরি একবারও কথা হয়নি। মাঝে মাঝে শুধু যখন তার ডিপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে যাবার সময় আড়চোখে তাকানোর চেষ্টা করতাম, কিন্তু সাহস হয়্নি।সবসময় বয়েজ স্কুল, বয়েজ কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে Introvert একজন মানুষের জন্য এটাই হয়তো স্বাভাবিক, কিন্তু আমি নিজেকে বদলাতে চাইতাম। আমি যখন তাকে প্রথম দেখি তখন বিকাল ৩টা বেজে ৩৫ মিনিট।তাকে আমার অফিসের এইচ.আর অফিসার পরিচয় করাতে নিয়ে আসলো।স্বভাবমতই আমি তার দিকে না তাকিয়েই হ্যালো বললাম।সে তবুও ভদ্রতা বজায় রেখে আমাকে বললো, “আশা করি আপনার থেকে পরে অনেক সহযোগিতা পাবো।"আমি তার কন্ঠ শুনে কয়েকটা বিট মিস করি এবং তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করি। আফসোস কিছুই মুখ থেকে বের হয়নি। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন এমন হলো। উত্তরটা আমি নিজেও জানিনা।তবে কারো কারো কন্ঠে এমন কিছু থাকে যা আপনাকে অন্যরকম কিছু একটা অনুভূতি দিয়ে হৃদয়ে আঘাত করার জন্য যথেষ্ট। আমি তখন ভয়ংকর একটা ভালোলাগা টাইপ হ্যালুসিনেশনের মধ্য দিয়ে আতিক্রান্ত হচ্ছিলাম। অবশেষে তার সাথে আমার কথা হলো একদিন, কোন এক অফিসের অনুষ্ঠানে। আমি সেদিন সাহস করে তার পাশে যেয়ে বসলাম।সে নিজে থেকেই বললো কেমন আছেন?” আমি সাহস করে সরাসরি তার দিকে তাকিয়ে বললাম ভালোব্যস শুরু হলো, কথার পর কথা,এই গল্প সেই গল্প। অবশেষে ফোন নম্বর শেয়ারিং। আমার নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়েছিলো।সে রাতেই তাকে এস.এম.এস পাঠালাম, “ঠিকমতো বাসাত পৌছুতে পেরেছেন কি?” সে জবাব দিলো সাথে সাথে, “না পারিনি। কি যেন একটা অনুষ্ঠানে ফেলে রেখে এসেছি।দেখুনতো আপনার কাছে কিনা।"আমি প্রতিউত্তরে বলেছিলাম, “হ্যা আমার কাছে।ওটা ফেরত পাবেন নাউইকএন্ডে আমি তার হাত ধরে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে ফাউল ফারুকীর ফাউল ভিডিও নাটক দেখলাম।কিন্তু জানেন কি থার্ড ক্লাস সেই ভিডিও নাটকটি আমার কাছে ফাস্ট ক্লাস লেগেছিলো।কারণ আমি একবারও ওতে মনোযোগ দেইনি।আমি শুধু পাশের প্রিয়নারীর প্রতিটি প্রশ্বাসের ধ্বনি শুনতে চাচ্ছিলাম।হৈমন্তীর অপুর মত বলতে চাইলাম, “আমি তাহাকে পেয়েছি।"আরো বললাম, “সবটুকু পেয়েছিতার নামটাই এখনো বলা হলোনা, নবনীতা।এত সুন্দর নাম কয়জনের ভাগ্যে জোটে বলুনতো? আমরা একসাথে অফিসের ক্যান্টিনে লাঞ্চ করতাম, বিকেল হলে একসাথে চা খেতে ছটপট করতাম।আমি অনেক সুখী ছিলাম, অনেক সুখী।সমস্যাটা হলো যেদিন সে আমাকে বললো, সে আমার জন্য সিরিয়াস না এবং তার বাসায় বিয়ে ঠিক করেছে তার জন্য।যখন সে আমাকে এই কথাগুলো বললো আমি তাকে বলেছিলাম এমন তো হওয়ার কথা না তাই না?” সে আমাকে জগতের সবচেয়ে পরিচিত অথচ সবচেয়ে কর্কশ কথাটি বললো, “আই এম স্যরিব্যস সব শেষ! এক পলকে এক ঝলকে আমার আশেপাশের সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেলো।আমি চাকরীটা ছেড়ে দিলাম।বাসায় বললাম ভালো লাগেনা এই চাকরী করতে।কোন ভবিষ্যৎ নাই। এভাবে মিথ্যা কথা বাবা মাকে কি করে বলেছিলাম তা আজ বুঝে পাইনা।অনুগ্রহ পূর্বক আপনারা নবনীতাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাববেন না।সে যা করেছে ঠিক করেছে, কোন ভুল হয়নি।আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত ঘরের একটা মেয়েকে যখন তার বাবা মা বিয়ের কথা বলে, কয়টা মেয়ে পারে মুখ ফুটে তার পছন্দের কথা বলতে? আমি এতটা অবুঝ ছিলাম না যে তার স্যরির পিছনে লুকিয়ে থাকা কষ্টটা বুঝবোনা। প্রিয় পাঠক যারা কখনোও কারো কাছে প্রত্যাখান হয়েছেন তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা ও ভালোবাসার মানুষকে ছোট করবেন না।নাহলে নিজেই নিজের কাছে একসময় হয়তো আরো ছোট হয়ে যাবেন।যে ধোকা দেয়, সে নিজেকেই নিজে ধোকা দিলো বলে বিশ্বাস করি। আমি তাকে ক্ষমা করেছিলাম, কারণ আমি তাকে ভালবাসতাম।একবারও ওর ওপর রাগ হয়নি, এমনকি সেদিনও নয় যেদিন ওর বিয়ের নিমন্ত্রণ পেলাম। সেদিন তাকে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, “রবির করোচ্ছটায় আমি তোমার উষ্ণতা খুজে ফিরি তাহাতে গ্রহণকালে ডেকোনা আমায় দোহাই তোমায় অনুরোধ করিএরপর আমি ওর সাথে আর যোগাযোগ করিনি বা করতে পারিনি। সেদিনটাই আমার ওই অফিসের শেষদিন ছিলো।

*

শুভ ভাইয়ের গল্প শুরু করা যাক।উনার সাথে ভার্সিটি পাসের পর আবার কথা হলো মাস তিনেক আগে।মনে আছে ভার্সিটিতে পড়ার সময় উনি প্রায়ই আয়েশ করে বিড়িতে টান দিয়ে বলতেন, “এদেশটা গেলো রে! পুরাই গেলো!” আমি এবং উনার বাকি শিষ্যরা সুর মিলিয়ে বলতো গেলো গেলো!” সেই শুভ ভাই হঠাৎ করে তিন মাস আগে ফোন দিয়ে বললো, “অর্ক দৌড় দিয়ে নীলক্ষেত মামুর হোটেলে চলে আয়।ইফ ইউ আর অনলি ইন আন্ডারগার্মেন্ট কাম উইথ ইট।" বুঝলাম যেতেই হবে, নাহলে পরে বাসায় এসে হাউকাউ করে ঝামেলা বাধাবে।আমি জানালাম, “জাস্ট টু মিনাটসঘটনা আসলেও সিরিয়াস ছিলো।সেই সময় ফেলানী হত্যা কান্ড নিয়ে প্রচুর লিখালিখি চলছে পেপার পত্রিকায়। শুভ ভাই চুপ করে বসে থাকবেন তা সম্ভব না। উনি উনার সকল শিষ্যকে নিয়ে আজকে মৌন মিছিল বের করবে বলেই আমার এখানে আসা।শুভ ভাইয়ের ডাকে তার ভক্তকূল অনেকেই এসে পড়েছে নীলক্ষেত মোড়ে।আমি অবাক হয়ে সকলের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি কি ভয়ংকর চাপা ক্ষোভ নিয়ে আজ সবার ফেলানীর জন্য প্রতিবাদ জানাতে এসেছে।শুভ ভাই সবাইকে নিয়ে কার্জন হলের সামনের রাস্তায় চলে আসলো।তার হাতে ঝুলছে তারই লেখা প্লাকার্ড।একটা প্লাকার্ডে লিখা আমি এই হত্যার বিচার চাইনা, আমি আমার বোনকে ফেরত চাইআমাকে দেখে শুভ ভাই এগিয়ে এসে বললো, “অর্ক তোদের একটা বিশাল সমস্যা হলো তোরা নিজেকে ছাড়া আর কিছু ভাবিস না।তোরা সব ফার্মের কুচে পড়া লাল মুরগী।আশেপাশে তাকায় দেখ কি হচ্ছে! চোখটা খোল। ফেলানী কে জানিস?” আমি মাথা নাড়িয়ে বলি, “পেপারে যা জেনেছি ওটুকুই শুভ ভাই শুভ ভাই রক্ত গরম চোখে তাকিয়ে বললো, “তোদের দিয়ে কিছু হবেনা বুঝলি।তোরা রাজনীতি করিস তো নিজের পকেট ভরতে, মিছিল করিস ফ্রি লাঞ্চ খাইতে।সামনে থেকে দূর হআমি একেবারে মাইন্ড খাইনি।কারণ এমন অপমানের সাথে আমি পরিচিত। আর যে মানুষটা এই কথাগুলো বললো উনি আমার কাছে দেবতাতুল্য। আমার মত আত্নকেন্দ্রিক Utopian মানুষ যার অন্যের কথা ভাবার আগে নিজে সুস্থ আছে কিনা চিন্তা করে তার জন্য উনার চিন্তাধারার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব না।আমার মনে পড়ে কোন এক টার্মে যখন রেজাল্ট বেশ খারাপ হয়েছিলো আমি মনের দুঃখে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম।সেসময় শুভ ভাই একদিন গভীর রাতে বিরাট বড় একটা লাঠি হাতে নিয়ে আমার রুমে আসে এবং কথা নাই বার্তা নাই বেদম একটা বাড়ি দেয় পশ্চাতদেশে।আমি ওমাগো বলে লাফ দিয়ে সরে গেলে উনি দাত কিড়মিড়িয়ে বলেন ভান করো বাবু?চল নিচে যায়া খাওয়া দাওয়া করবি।কালকে তোরে দিয়ে মিছিলের লিড দেওয়াবো।আই ওয়ান্ট ইউ টু বি দ্যা প্রটাগোনিস্ট আফটার আই ম্যারী ইশাঘটনা হলো শুভ ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিলো ইশা।এই মেয়ে যেদিন শুভ ভাইয়ের ভালবাসার ঘ্যানরঘ্যানরে বিরক্ত হয়ে উনাকে হ্যা বলে, সেদিনই স্পষ্ট বলে দেয় শুভ যা ফাজলামী করার করে নাও, বিয়ের পর যদি ভুল করে এইসব আউলফাউল কিছু বলো তবে তোমার জীবন আমি পঙ্গু করে দিবো আই সয়্যার।"শুভ ভাই তাই সবাইকে বলতো, ইশার সাথে বিয়ে হলে উনি এইসব রাজনীতি, মিছিল মিটিং ছেড়ে দেবে।মেয়েটাকে উনি আসলেও ভালবাসতো।ইশা আমার ক্লাসমেট ছিলো এবং আমি ওকে অনেক ভয় পেতাম।শুভ ভাই একবছর সিনিয়র ছিলো, তবুও ওকে ভয় পেতো। শুভ ভাইয়ের লাশ নিয়ে যখন আমরা ঢাকা মেডিকেলে দৌড়াদৌড়ি করছি তখন ইশা চুপ করে বসে ছিলো। আজকের মৌন মিছিলে সে শুভ ভাইয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।যে রাবার বুলেটটা শুভ ভাইয়ের মাথায় আঘাত করে সেটা ও মিছিলে কেন যেন খুজে বেড়াচ্ছিলো।আমি অত্যন্ত ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে পড়ি। আমার চোখ দিয়ে তখন আগুন গরম ফল্গুধারা উৎসারিত হচ্ছে।রাগে হাত পা কাপছে আবার কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।আমার পাশে আমার বন্ধু উৎস। ও বারবার বলছে সব ঠিকাছে, সব ঠিকাছে।আমরা কতিপয় ভগ্ন হৃদয়ের নরনারী তখন অভিশপ্ত পৃথিবীর বর্বরতার শিকার। পরবর্তী কয়েকটা দিন খুব ব্যস্ততার মাঝে গেলো।আমরা কয়েকজন মিলে আবার কিছু পরিকল্পনা করলাম।কেউ কেউ ভয় পেয়ে চলে গেলো।আমরা বাধা দেইনি।ইশাকে জিজ্ঞেসা করেছিলাম ও চলে যেতে চায় কিনা (জানিনা ওর পরিবার ওর এসব ব্যাপার জানতো কিনা! যদিও তারা রাজশাহীতে থাকতেন, কিন্তু মেয়ের খোজ কি নিতেন না? )ও বললো অবশ্যি চাই।কিন্তু যাবোনা।"ওকে আবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নতুন করে প্লাকার্ড বানালে কি লিখবো তাতে।ও বলেছিলো, “ফেলানীকে ফিরিয়ে দাও।"আমরা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ও পরের দিন আমাদের কয়েকজনকে (মূলত আমরা গুণে গুণে ১৩ জন ছিলাম সবাই চলে যাওয়ার পর)শুভ ভাইয়ের লেখা ডায়েরীর একটা পাতা পড়ে শোনায়ঃ পেপারে যখন দেখলাম ফেলানীকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমার তখন মনে হলো আজ আবার মানব জাতির মৃত্যু হলো।আমি লজ্জা পাচ্ছি এখন নিজেকে মানুষ ভাবতে।আমার যে বোনকে এভাবে কাটাতারে ঝুলায় রাখা হয়েছে, তার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে বোন আমায় মাফ কর।১৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে গুলি করে ঝুলিয়ে রাখাটা আমি কল্পনা করতে পারছিনা।প্রিয় ফেলানী, আমার বোন আমি কথা দিচ্ছি আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি এর প্রতিবাদ জানাবো।যতদিন না এর বিচার হবে ততদিন আমি তোমার জন্য লড়ব।আমি কথা দিচ্ছি আমি সবার মত কিছুদিন পর তোমাকে ভুলবোনা।আমি কথা দিচ্ছি তোমার সাথে এই নির্মমতার জন্য যারা দায়ী তাদের মুখে একবার হলেও থুতু দেবো। আসলে নিজেকেই নিজের থুতু দিতে ইচ্ছা করছে।কারণ আমিও যে এ ঘটনার সাক্ষী।বোন আমায় ক্ষমা করইশা এটুকু পড়ে কান্নাভেজা কন্ঠে আমাদের বললো, “তোমরা সবাই চলে গেলেও আমি একা ফেলানীর জন্য লড়বো।আমি যদি ফেলানীর জন্য বিচার পাই, তবে তা শুভর জন্যও পাবোআমরা প্ল্যাকার্ড লিখা শুরু করি, আমরা এখন অন্য মানুষ।আমরা ৫২র রফিক, ৭১এর মোস্তফা কামাল।আমরা লড়তে জানি, এবং আমরা জানি আমরা কেন লড়ছি। সেদিনের পর আমরা বহুবার রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, গলা উচু করে চিৎকার করে মানুষের ভিতর লুকিয়ে থাকা মানুষকে জেগে ওঠার আহবান জানিয়েছি।মার খেয়েছি, শরীরের রক্ত দিয়েছি, কিন্তু থেমে থাকিনি। আজকে আবার আমরা লড়তে যাবো, এই লড়াই মানুষের জন্য মানুষের। এই লড়াই আবার সবাইকে একবার জাগানোর জন্য। এই লড়াই নিজেকে জাগানোর জন্য।যে আমি দুদিন আগে নবনীতার ভালবাসায় পৃথিবী ভুলে আপন ভালবাসায় মত্ত হয়ে ছিলাম, সেই আমি আজ জীবনের জন্য লড়ছি।মনুষ্য জীবন।আমি শুভ ভাইকে মনে মনে বারবার বলছি, “শুভ ভাই আপনি যে ভালোবাসায় মানুষের জন্য যুদ্ধ করছেন সেই ভালবাসা একদিন আমি সবার কাছে পৌছিয়ে দেবসন্ধ্যার দিকে আমার রক্তাক্ত মাথা চেপে ধরে যখন মেডিকেলের বিছানায় শুয়ে আছি তখন পাশে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক এক মানুষ আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন এসব করো।"আমি অর্ধচেতনা নিয়ে বললাম আপনাদের জন্যআমার আশেপাশের সব কিছু বারবার অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে লক্ষ্য করি ইশা আমার মাথার পাশে বসে আছে। আমাকে মুখ শক্ত করে বললো, “তুমি এভাবে চলে গেলে হবেনা। আরো অনেক কিছু করার বাকী আছে।"আমি ওর হাত ছুয়ে বললাম, “জানি।কিছু হবেনা।" ইশা আমাকে বললো, “তুমি সবসময় এমনভাবে আমার সাথে থেকে যুদ্ধ করবে”? আমি দুর্বল কন্ঠে বললাম হ্যাআমরা এখনও লড়ছি,এবং আমরা লড়ে যাবো। 

.

 

সাদ আহম্মেদ


Bangla Golpo: পরশে তুমি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url