ভালোবসার গল্পঃ মধ্যরাতের গল্প কথা৷ । লেখক তাসফি আহমেদ
ভালোবসার গল্পঃ মধ্যরাতের গল্প কথা৷ । লেখক তাসফি আহমেদ
ভূমিকাঃ ভালোবাসার গল্প, বিষাদ, তিক্ততার গল্প, ফিকশন, নন-ফিকশন, ভৌতিক, রহস্যময় থ্রিলার গল্পে সমৃদ্ধ আমার এই ছোট্ট ব্লগটি। বাংলা ছোট গল্পের এই অনন্য-অসাধারণ জগতে আপনাকে স্বাগতম। ভীষণ অপূর্ণতায় ভরপুর আমার গল্প গুলো। তাও লিখি। লিখলে মনের মাঝে কেমন অদ্ভুত এক প্রশান্তি মিলে। বিশেষ করে ভালোবাসার গল্প গুলো। কারণ এই ভালোবাসার গল্প গুলোতে আমার এক প্রেমিকা থাকে। কাল্পনিক প্রেমিকা। তারে ভীষণ ভালোবাসি আমি।
আমার মন ভালো নেই। বারান্দায় বসে আছি। বাইরে রোদের মতো ঝকঝকে চাঁদের আলো। আমি সেদিকে তাকিয়ে থাকি। বাইরে তাকিয়ে থাকার মতো কিছু নেই৷ তাও তাকিয়ে থাকি৷ চাঁদের আলো যা কিছু ছোঁয় তা-ই অন্য রকম সুন্দর হয়ে যায়৷ এক অন্য রকম ভালো লাগা ঘিরে রাখে যেন। আমি বারান্দায় বসে থেকে সামনের মাঠটা দেখছি৷ এখান থেকে মাঠটা স্পষ্ট দেখা যায়৷ চাঁদের আলোয় আলোকিত একটি বিশাল মাঠ।
চাঁদের আলোয় আলোকিত মাঠটি দেখলে অন্য সময় আমার মন ভালো হয়ে যেতো৷ আজ কেন জানি হচ্ছে না৷ কেন হচ্ছে না তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়৷ হয়তো আজ আমার মন একটু বেশিই খারাপ। মিহিনের এমন আচরণ আমাকে একটু বেশিই আঘাত দিয়ে ফেলেছে হয়তো৷ মনের ভেতর স্থিরতা না থাকলে কোনো কিছুই হয়তো ভালো লাগে না৷ আমারও তাই লাগছে না৷
মিহিনের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। স্বাভাবিক কোনো ঝগড়া নয়৷ এতো বড়সড় ঝগড়া হয়তো আমার মাঝে আর কখনই হয়নি৷ আজ হয়েছে৷ ঝগড়ার বিষয়বস্তু আহামরি কিছু নয়৷ খুবই সামান্য একটা কারণে ঘটে যাওয়া ঝগড়াটা হঠাৎই বড়সড় রূপ নেয়৷ হয়তো আমিই বেশি সিরিয়াস হয়ে যাই৷ আমার মাঝে সিরিয়াসনেস একটু বেশিই।
অফিস থেকে একটু দ্রুতই ফিরি আজ৷ চারটা বেজে গিয়েছে তখন৷ শরীর ক্লান্ত৷ বিশ্রাম নিচ্ছিলাম৷ মিহিনকে দেখলাম তৈরী হচ্ছে৷ কোথাও যাবে নাকি? আমি শুয়ে থেকে তাকে বললাম,
-কোথাও কি যাবে?
সে কেমন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়৷ তার ভ্রু কুচকে আসে। সে বলে,
-মানে কী?
-কিসের মানে?
-কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করছো যে?
-রেডি হচ্ছো দেখেই বললাম।
-অ্যাই? তুমি কি রাতের কথাটা ভুলে গিয়েছো?
আমি রাতের কথাটা চিন্তা করতে চাইলাম। কিন্তু বিশেষ কিছু মনে পড়লো না৷ রাতে কী বলেছিল ও? কী এমন কথা? কোথাও যাবে বলেছিল নাকি? মিহিন খানিকটা কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
-এখন যদি বলো তুমি কাল রাতের কথাটা ভুলে গিয়েছো তবে তোমার খবর আছে বলে দিলাম!
আমি কেবল তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছু বললাম না। তবে মনে মনে খুব মনে করার চেষ্টা করলাম সে আসলে কাল রাতে আমাকে কী বলেছিল। তাও মনে পড়লো না। মিহিন আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে৷ হঠাৎই যেন সব কিছু সে বুঝে যায়৷ আচমকা বিড়বিড় করতে থাকে৷ হাতে থাকা চুড়ি গুলো খুলে ফেলে দেয়। ড্রেসিং টেবিলের উপর তার বেশ কিছু সাজপ্রসাধনি ছিল। সে সেগুলো দু'হাতে টেনে ফেলে দিলো। খুব জোরেই সেগুলো ফেলল। ড্রেসিং টেবিলের কাছেই বিছানা। সে জিনিসপত্র গুলো এতো জোরে মারল যে তার নেলপলিশের একটা কৌটা ঠিক আমার কপাল বরাবর এসে লাগল। অন্যান্য গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। আমি চট করে কপালে হাত দিয়ে ফেললাম। মাথাটা ভনভন করা শুরু করেছে যেন। সে সেটা ঠিক খেয়াল করেনি। এতোক্ষণ বিড়বিড় করে কী যেন বলেছিল। এখন আর সে বিড়বিড় করছে না৷ সে স্পষ্ট বলছে,
"একটা গাধাকে বিয়ে করলাম যে কিছু মনে রাখতে পারে না। কোনো কিছুই না৷ জীবনটাই শেষ করে দিলো আমার।"
আমি নিচু স্বরে বললাম,
-আমার সত্যিই মনে নেই মিহিন।
মিহিন কঠিন স্বরে বলে,
-কী মনে থাকে তোমার?
আমি খানিকটা চুপ থেকে বললাম,
-বাদ দাও না। কী বললা সেটা বললেই তো হয় তাই না?
-বলেছি না! কম বলেছি? সকালেও তো বললাম আজ দ্রুত এসো। নিপুন ভাবীদের ওখানে যাবো। বলো বলিনি?
আমার ঠিক তখনই সব মনে পড়ে গেল। আমি কপাল ডলতে ডলতে বললাম,
-এই সামান্য একটা ব্যাপারের জন্যে তুমি এতো রাগলা? খামখা আমার কপালটা ফাটালে। আমি তো তখনই বলেছি আমি ওদের ওখানে যাবো না। তুমি যাও৷ বলেছি না আমি?
-কেন? ওখানে গেলে কী সমস্যা তোমার?
-এমনিই। আমার ভালো লাগে না৷ শরীর বড়ই ক্লান্ত মিহিন। খামখা এসব বলে মেজাজ খারাপ করো না। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও।
-একা যাবো? এটা একটা ফ্যামিলি পোগ্রাম আর তুমি আমাকে একা যেতে বলছো?
-তো কী বলব আমি? মিহিন, আমি তোমাকে আগেও একবার বলেছি, এখনও বলছি, নিপুন ভাবীদের ওখানে আমি আর যাবো না৷ কখনই যাবো না৷ এটা তোমাকে লক্ষবার বলেছি আমি। তাও কেন বারবার বলো?
-কেন? ওখানে গেলে কী সমস্যা তোমার? কী করেছে আমার নিপুন ভাবীরা হ্যাঁ? কেন যাবে না তুমি?
-নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে৷ আমি তো আর এমনি এমনি বলছি না!
-কী কারণ বলো আমায়৷ আজ তোমাকে বলতেই হবে৷ এর আগেও একবার এমন করেছো। যেতে বলেছি যাওনি। তোমার জন্যে আমারও যাওয়া হয়নি। এ জন্যে অনেক কথা শুনেছি আমি। আর না। এবার বলো কেন এমন করেছো? হোয়াই?
-কারণটা তোমাকে বলা যাবে না৷
-কেন যাবে না? তোমার ব্যক্তিগত ঝামেলা আছে নাকি ওখানে? নাকি কোনো কুকর্ম করে এসেছো সেই এলাকায়? তোমার তো আবার সখার অভাব নেই।
-আশ্চর্য ব্যাপার, এসব কী বলছো তুমি মিহিন?
-গায়ে লেগে গেলো তাই না? সত্যি কথা বললে ঠিকই গায়ে লেগে যায়৷
-তুমি স্থির হয়ে বসো প্লীজ৷ এসব আজেবাজে কথা বলিও না৷
-আমি কোনো আজেবাজে কথা বলিনি। জেনে শুনেই বলেছি। তোমাকে চেনা আছে আমার।
-নিজের রাগ কমাও। রাগ উঠলে তো আর তোমার মাথা ঠিক থাকে না৷
-আমার মাথা ঠিকই আছে। তোমার মাথাটাই আসলে ঠিক নেই৷ আমাকে এখন আর ভালো লাগে না তাই না?
-বুঝলাম না, তুমি কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছো?
-কয়েকদিন ধরেই ব্যাপারটা উপলব্ধি করছি৷ তুমি আর আমায় ভালোবাসো না। আমার কথা শোনো না৷
-তোমার কোন কথাটা শুনিনি আমি বলো তো?
-লিস্ট করে কূল পাবো না৷ তুমি আসলে ভালো মানুষ না৷ তুমি আস্ত একটা খারাপ মানুষ। ভালো মানুষ ভেবে প্রেম করে করেছি। বিয়ে করেছি৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি ভুল ছিলাম। ভুল মানুষ চুজ করেছি আমি।
আমি খানিকটা চুপ থেকে বললাম,
-তুমি আমাকে চুজ করেছো?
মিহিন আমার কথাটার জবাব দিলো না৷ সে এক ভাবে তাকিয়ে নিচের দিকে থাকলো। বলতে থাকলো,
-কতো আনন্দ নিয়ে সাজতে বসেছিলাম। কতো সময় নিয়ে শাড়ি পরেছি, কাজল মেখেছি। ওখানে গিয়ে কতো মজা করবো ভেবেছিলাম। ওই মানুষ গুলোকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলাম। এখন তারা কী ভাববে? গতবার একবার আম্মু ফোন করে একগাদা কথা শোনালো। যা তা বললো৷ অথচ তার এসব কোনো খেয়ালই নেই৷ সে যাবে না বলেছে তো যাবে না! গেলে কী ক্ষতি হয়? কিছুই হয় না৷ এসব তার মনের বাঁদরামি। কোন অঘটন ঘটিয়েছে কে জানে!
-ফালতু কথা বলবা না। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও। আমি তোমাকে বাধা দিচ্ছি না।
-সেখানে একা গিয়ে কী করবো আমি? আর তারা তো আমাকে একা দাওয়াত দেয়নি৷ তারা আমার সাথে তোমাকেও দাওয়াত দিয়েছে৷
-দাওয়াত দিলেই যে যেতে হবে তা তো না৷ মানুষের ব্যস্ততা থাকতেই পারে।
মিহিন খানিকটা জোরেই বলে,
-তোমার এখন কিসের ব্যস্ততা?
-আমার কোনো ব্যস্ততা নেই৷ আমার এখন ক্লান্ত লাগছে৷ তাই যেতে চাচ্ছি না।
-সকল ক্লান্তি কেবল আমার বেলাতেই৷ এছাড়া তোমার তো আর কোনো ক্লান্তি নেই৷
-মিহিন, প্লীজ। আর প্যাঁচায়ো না। তোমার যদি ওখানে যেতে ইচ্ছে হয় তবে তুমি ওখানে যাও৷ তোমাকে নিষেধ করছে কে?
-নিষেধ কেন করবা? আমি না থাকলে তো তোমারই লাভ৷ বাসাটা একদম ফাঁকা হয়ে যাবে৷ যাকে তাকে নিয়ে আসতে পারবা।
-এইতো! এই হলো আসল ঘটনা৷ আমাকে একা রেখে যেতে চাচ্ছো না৷ ভয় করছে৷ সন্দেহ হচ্ছে। এই কথাটা স্পষ্ট বললেই পারতা।
-শোনো, তোমার মতো এতো থার্ডক্লাস চিন্তাভাবনা নিয়ে চলি না আমি।
-তোমার মনে কোন চিন্তাভাবনা চলছে তা স্পষ্টই বুঝতে পারছি আমি।
-উল্টাপাল্টা কথা বলিও না তাসফি।
-চুপ? একদম চুপ করে থাকো৷ তুমি বললেই সব ঠিক? আমি বললে উল্টা হয়ে যায় না? কী সমস্যা তোমার? সমস্যাটা কোথায়? আমি কেন যাচ্ছি না সে জন্যেই তো তাই না? শোনো, আমাদের যখন বিয়ের কথা চলছে তখন আমার বাবা তোমাকে নিয়ে একটা বেড নিউজ পায়৷ তোমার চারিত্রে দোষ নিয়ে পাওয়া একটা নিউজ। জানো নিউজটা কে ছড়িয়েছে? তোমার গুণধর নিপুন ভাবী৷ কেন জানো? কারণ তিনি চেয়েছিলাম আমার সাথে যেন তার বোন মৌরির বিয়ে হয়৷ আমি জাস্ট ওই মানুষটাকে দেখতে পারি না৷ আমার সহ্য হয় না৷ কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি। তোমাকে নিয়ে যারা উল্টাপাল্টা কথা বলে তাদেরকে আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারি না। মেজাজ গরম হয়ে যায়৷ আমি তোমাকে জানি বলেই বিয়েটা করেছি৷ অন্য কোনো ছেলে হলো বিয়েটা সেদিনই ক্যান্সেল হয়ে যেতো। কী বলছিলে তুমি? আমাকে বিয়ে করে তোমার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে? ওকে দেন ফাইন! লিব মি! তোমাকে থাকতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই৷ যে জিনিস চুজ করা হয় সে জিনিসের প্রতি আমাদের মায়া কাজ করে। এমন এক মায়া যেটা অল্প কিছুদিন থাকে৷ এরপর চলে যায়। মিহিন, তোমার চয়েজটা আসলেই ভুল হয়েছে৷ আমি মানুষ ভালো না। খারাপ মানুষ। খারাপ মানুষের সাথে তোমার না থাকলেও চলবে৷ তুমি চলে যাও৷ তোমার মতো করে ভালো মানুষ খুঁজে নাও৷
কথাটা বলেই আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাই৷ ফিরি রাত সাড়ে আটটায়৷ কিছুক্ষণ বসার ঘরে বসে টিভি দেখি৷ ভেতরের ঘরে মিহিন শুয়ে আছে। সে কান্না করছে৷ তার কান্নার শব্দ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম৷
এখন রাত দশটার মতো বাজে৷ আমি আমার রুমের বারান্দায় বসে আছে৷ আমার বারান্দা থেকে একটা মাঠ দেখা যায়৷ চাঁদের আলোয় ডুবে যাওয়া বিশাল একটি মাঠ৷ আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি৷ আমার মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা৷ অথচ হচ্ছে না৷ কারণ আমার মন আজ বেশি খারাপ। খুব বেশি খারাপ।
এই মাঠটার উত্তর পাশে একটি গাছ আছে৷ বিশাল একটি বট গাছ৷ গাছটার চারপাশ ইট দিয়ে বাঁধানো। আজ থেকে চার বছর আগের এক বিকেলে আমি গাছটার নিচে বসে ছিলাম৷ সেই বিকেলের শেষ মুগ্ধতা হয়ে একটি মেয়ে সেই মাঠে আসে। মন ভার করে রাখা এক অনন্য রূপসী মেয়ে৷ এসেই আমার থেকে দূরে থাকা রাস্তার ধার ঘেঁষে বসে৷ বট গাছটার এখান থেকে আমি মেয়েটাকে স্পষ্ট দেখি। এলোমেলো চুল নিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে মেয়েটি। চোখে জল। কাজল লেপ্টে আছে৷ চোখ ফোলা ফোলা। মাঝে মাঝে মেয়েটার চোখের কোণা দিয়ে পানি পড়ে যায়৷ মেয়েটা সেটা মুছে না৷ সে ছলছল করে আসা চোখে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকে।
তার চেহারায় প্রচণ্ড রাগ ভাসে৷ মাঝে মাঝে আশপাশে কেমন অভিমানী দৃষ্টিতে তাকায়৷ যেন সে ভীষণ অসহায়। তার কেউ নেই। কিংবা সে কাউকে খুঁজছে৷ এমন কাউকে খুঁজছে যাকে জড়িয়ে ধরে তীব্রভাবে কান্না করা যাবে।
অদ্ভুত, আচমকা এই কান্নারত মেয়েটাকে এখানে দেখে আমি যারপরনাই অবাক হই। তার দিকে তাকিয়ে থাকি। নিজেকে বেহায়া-নির্লজ্জের মতো লাগে৷ আমি তাও তাকিয়ে থাকি। এই কান্নারত মেয়েটাকে দেখতে আমার ভালো লাগছে৷ অন্য রকম একটা আনন্দ হচ্ছে৷ পাশাপাশি মন খারাপ, কেমন যেন উদ্বিগ্ন। এতো সুন্দর দেখতে একটি মেয়ে, এতো আকর্ষণীয় ভাবে কেন কাঁদতে চাচ্ছে তা ভীষণ জানতে ইচ্ছে হয় আমার৷ ইচ্ছে হয় কোনো ম্যাজিক করে মেয়েটার মন ভালো করে দেই৷ মেয়েটা হাসুক৷ আমি তার হাসি দেখি। আচমকা তার হাসি দেখার ভীষণ লোভ হলো আমার৷
মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে আমার বুকটা হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠে যেন৷ কেন উঠছে সেটার স্পষ্ট কোনো কারণ নেই৷ কোনো ব্যাখ্যা নেই। তাও কাঁপছে৷ আমার কেমন জানি লাগছে। আশ্চর্য! মেয়েটা এতো কাঁদছে কেন?
দিনের আলো মরে আসছে৷ মেয়েটার নড়চড় নেই৷ সে পাথের মতো সেখানে বসে থাকে। তার আনমনা ভাব আমাকে কেমন জানি তার দিকে আরো আকৃষ্ট করে রাখে৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি। ইচ্ছে হয় চোখ ফিরিয়ে নেই। অথচ সেটাও সম্ভব হয় না৷ আমি চোখ ফিরিয়ে নিতে পারি না৷ আমি যেন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছি৷ আশপাশের কোনো কিছুই আমাকে প্রভাবিত করছে না৷ আমাকে আকৃষ্ট করতে পারছে না৷ কেবল রাস্তার ধারে বসে থাকা এই অভিমানী কন্যা আমাকে আকৃষ্ট করছে৷ তার রাগ-অভিমান-মন খারাপ যেন আমার ভেতরটা ছুঁয়ে যাচ্ছে৷
পাশ দিয়ে কয়েকটা ছেলে যাচ্ছিল৷ তারা কি জানি জানতে চাইলো মেয়েটার কাছে৷ মেয়েটা আচমকা তাদের উপর রেগে গেল৷ অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিলো৷ ছেলে গুলো সেখান থেকে চলে গেল। তবে একদম চলে গেল না৷ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো। বারবার মেয়েটার দিকে আড়চোখে দেখতে থাকলো৷
যখন অন্ধকারটা ঘন হয়ে আসতে শুরু করলো তখন যেন মেয়েটা ছেলে গুলোর উপস্থিত কিংবা হাবভাব বুঝতে পারলো৷ তাকে আরো খানিকটা অসহায় লাগলো তখন৷ আমি আড়চোখ মাঝে মাঝে গেটের দিকে দেখতো৷ আমি মনে মনে হাসলাম৷ মেয়েটা এতো ভয় পাচ্ছে কেন? আমি আছি তো! আমি থাকতে কে তাকে ছুঁবে হু?
অনেক সময় পর মেয়েটা আমাকে যেন দেখতে পেল। আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ৷ তারপর সেখান থেকে উঠে এসে আমার দিক্ব এগিয়ে আসতে থাকলো৷ আমি অবাক হই ভীষণ। আমার গা কাঁপতে থাকে যেন৷ বুকের ভেতরটা কেমন জানি অতিরিক্ত ধপ ধপ করছে৷ মেয়েটা আমার কাছে এলো। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মিষ্টি স্বরে বলল,
"এই যে শুনুন, গেটের কাছের ছেলে গুলোকে আমার ভালো ঠেকছে না৷ ভয় হচ্ছে না। আপনি কি আমায় একটু সাহায্য করতে পারবেন?"
অনেকক্ষন পর, ঠিক অনেকক্ষণ পর আমি হাসলাম। মৃদু হাসলাম। বললাম,
"পারবো। অবশ্যই পারবো। আপনি চিন্তা করবেন না৷ আমি আছি তো!"
সেই গাল ফুলানো, অভিমানী, রাগে ফুঁসতে থাকা, অসহায় দেখতে মেয়েটির নাম হচ্ছে মিহিন। তার সাথে আমার গভীর প্রেম হয়৷ সেই থেকেই আমাদের বিয়ে৷ বিয়ের পর আজ আমাদের ঝগড়া হয়৷ খুবই বড়সড় একটা ঝগড়া।
ফোনে সময় দেখলাম। সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে৷ সাড়ে এগারোটা অনেক সময়৷ আমি উঠে দাঁড়ালাম। ঠিক তখনই বারান্দায় মিহিন এলো। বললো,
-খাবার দিয়েছি৷ খেতে আসো৷
আমি চট করেই বলে ফেললাম,
-তুমি খেয়ে নাও। আমি খাবো না৷
-কেন খাবে না?
-আমার ইচ্ছে নেই।
-ইচ্ছে না হলেও আসো৷
-তুমি খেয়ে নাও৷
-আসো না! আচ্ছা আমি খাইয়ে দিবো৷ আসো।
-লাগবে না৷ তুমি নিজে নিয়ে খাও৷ যখন তুমি তোমার ভালো মানুষটি পাবে তখন তাকে খাইয়ে দিও৷
-আমার ভালো মানুষ লাগবে না৷
-কেন? লাগার তো কথা৷ ভালো-উচ্চবিত্ত স্মার্ট ছেলে সব মেয়েরই পছন্দ। তোমার নিশ্চয়ই ভীন্ন নয়।
-আর একটা বাজে কথা বলবা তো চড় খাবা বলে দিলাম৷
-এটারই বাকি ছিল!
কথাটা বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসতে চাইলাম। মিহিন আমার পথ আগলে দাঁড়ালো। আমাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে বলল,
-সমস্যা কী তোমার?
-আমি মৃদু হাসলাম। বললাম,
-সমস্যা কিছুই না৷ আমি ভালোবেসেছি৷ এখন সেই ভালোবাসার প্রতিদান পাচ্ছি৷ এরচে বেশি কিছু না৷
আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। রুমের ভেতর চলে এলাম। মিহিন আমার পেছন পেছন এলো৷ বলল,
-শুনো?
আমি জবাব দিলাম না৷ বালিশটা নিয়ে নিলাম। মিহিন বলল,
-তুমি কি খুব বেশি রাগ করে ফেলেছো?
আমি এই প্রশ্নটার জবাবও দিলাম না৷ আলমারিটা খুলে কোলবালিশটা খুঁজলাম। পেলাম না। ভালো লাগলো না খুঁজতে৷ আমি পেছন ফিরে দরজার দিকে যাবো তখন দেখলাম মিহিন দরজা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি এগিয়ে গেলাম। মিহিন একদম দরজার সাথে মিশে গেল যেন৷ বললাম,
-সরো।
-আমি সরবো না।
-কেন সরবে না?
-কারণ আমি চাইনা কেউ এই ঘর ছেড়ে চলে যাক।
-সব সময় সব কিছু চাওয়া মতো হয় না।
-যেটা হবার সেটা হয়ই।
-এটা কখনই হবার নয়৷
-জোর করবে?
-প্রয়োজন হলে।
-ওতো রাগ?
-অস্বাভাবিক কী?
-তা নয়৷
-তবে?
মিহিন মাথা নিচু করে বলল,
-তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না৷
আমি বললাম,
-কেন? ভয় লাগে?
মিহিন মাথা উপর নিচ করে সায় জানালো৷ আমি বালিশটা রেখে দিলাম৷ বললাম,
-এবার সরো।
মিহিন সরলো না৷ বলল,
-কোথায় যাচ্ছো?
-কোথাও না। একটা মাদুর নিয়ে আসি৷ নিচে বিছানা করবো৷
-তোমাকে আমার পাশে শুতে হবে৷ আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখতে হবে৷
-তোমাকে জড়িয়ে ধরা তো দূরে থাক, টাচ করতে ইচ্ছা করছে না আমার।
মিহিন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় তার চোখ জলে ভরে গেল। সে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-তুমি এমন কথা কেন বলছো?
-এটাই হয়তো আমাদের জন্যে ভালো হবে।
মিহিন দরজা ছেড়ে দিলো। মেঝেতে বসে পড়লো। মুখে হাত দিয়ে কান্না শুরু করে দিলো। আমি বাইরে বেরিয়ে বিছানা নিয়ে এলাম। নিচে বিছানা করে নিলাম। মিহিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-খেয়ে নিও।
-বিষ আছে? ওটা দাও৷ খেয়ে মরে যাই৷ শান্তি পাবা তুমি।
-যতো অশান্তি তোমার মনেই মিহিন।
-এটা পাষাণ হইয়ো না প্লীজ৷ এসব ভালো নয়৷
-আমি খারাপ মানুষ। তাই ভালো কিছু করার কথা'ই না৷
মিহিন উঠে এলো৷ আমার বিছানার কাছে এসে বসে কেমন ধরে আসা স্বরে বলল,
-সরি।
আমি বললাম,
-সরি কেন?
-সব কিছুর জন্যে।
-সমস্যা নেই৷ ইটস ওকে৷ তুমি ভালোই করেছো৷ কিছু নতুন ব্যাপার জানা গেল। যে সম্পর্কে তুমি খুশি নেই সেই সম্পর্কটা বাঁচিয়ে রাখাটা হচ্ছে সবচে বড় ভুল৷ বাঁচিয়ে রাখা মানে তিক্ততা বাড়ানো৷ আর তিক্ততার ফল ভালো নয়৷
-তুমি কিন্তু বেশি বেশি বলছো তাসফি।
-আমি সত্যটাই বলার চেষ্টা করছি৷
-তুমি জানো সত্যটা কী। তুমি যেটা বলছো ওটা সত্য নয়৷ ওটা রাগ৷ ইগো।
-আমি যে সত্যটা জানতাম সে সত্যটা আসলে ভুল। আমি ভুল জানতাম৷ আজই আসল সত্যটা জানলাম।
মিহিন কান্না করে দিলো৷ বলল,
-ওটা সত্য নয়৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-মিথ্যা৷ তুমি আমায় ভালোবাসো না৷
মিহিন চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিলো৷ সে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো৷ আর একটাও কথা বাজে কথাও বলবা না৷ বললে মেরে ফেলবো একদম৷
-মেরেই ফেলো না।
মিহিন আমার হাত টেনে নিলো। বলল,
-প্লীজ, আমি জানতাম না তুমি ওই কারণেই নিপুন ভাবীদের বাসায় যেতে চাইতে না।
-তুমিই তো বললে, বেশ চেনো আমায়৷ কুকর্ম করে বেড়াই। বলোনি?
-রাগে মানুষ কতো কিছুই বলে।
-যা বলে তার মনের কোণে থাকে। রাগ হলে মানুষ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়৷ সেই নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় মানুষের মনের গোপন ভাবনা গুলো বেরিয়ে আসে। যা বলতে চায় না তাও বলে দেয়৷
-প্লীজ! ফরগিব মি!
-খেয়ে শুয়ে নিও৷
আমি শুয়ে গেলাম। মিহিন আমার পাশে বসে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে৷ তার একই কথা,
-সরি!
আমি চুপ করে থাকলাম। মিহিন আমার আরেকটু কাছে এলো৷ আমার গালের কাছে হাত রাখলো। আরেক হাত দিয়ে চুলের উপর হাত বুলাতে থাকলো। তার মুখটা একদম আমার মুখে চলে আসে। নিঃশ্বাস ফেলার গরম বাতাস আমার মুখের উপর এসে পড়ে। মিহিন বলে,
-আমার কষ্ট হচ্ছে তাসফি৷
-আমার তারচে বেশি কষ্ট হচ্ছে৷
-আমি স্বীকার করেছি তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।
-এসব কোনো ভুল নয় মিহিন৷ এসব সত্য৷
-কোনো কিছুই সত্য নয়৷ সবই মিথ্যা৷ দেখি তোমার হাতটা কই। হাতটা দাও৷ আমার বুকের কাছে হাত রাখো। ধপধপ শব্দটা উপলব্ধি করতে পারবে৷
মিহিন আমার হাতটা নিয়ে নিজের বুকের কাছে রাখলো৷ আমি স্পষ্টই অনুভব করলান ধপধপ করা চঞ্চল একটি শব্দ৷ বললাম,
-আমার বুকের ভেতরের তুমি ওখান থেকেউ শুনতে পাবে।
মিহিন আমার কপালে হাত রাখলো৷ ঠিক তখনই যেন সে কপালে ফুলে যাওয়া অংশটা দেখতে পেলো৷ সে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
-তোমার কপালে কী হয়েছে?
-কিছু না৷ তুমি খেতে যাও।
-আর একবার যদি খেতে যাওয়ার কথা বলো তবে তোমার নাম ফাটিয়ে দিবো৷ কপালে এমন হলো কীভাবে?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে৷
-আমাকে রাগাবা না প্লীজ৷ এভাবে আর কিছুক্ষণ কথা বলকে আমি পাগল হয়ে যাবো৷
আমি কিছু বললাম না৷ চুপ করে থাকলাম। মিহিন দ্রুত উঠে গেল। মুভ নিয়ে এসে আবার পাশে বসলো। তারপর ধীরে ধীরে আমার কপালের কাছ লাগিয়ে দিতে থাকলো৷ আমি চুপচাপ শুয়ে থাকলাম। মিহিন বলল,
-ব্যাথা কীভাবে পেয়েছো?
-জানি না৷
-জানো না? নাকি বলতে চাচ্ছো না৷
-বলতে চাচ্ছি না৷
-কখন এমন হয়েছে?
-বাদ দাও৷ তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো৷
মিহিন কিছু বলল না। চুপ করে থাকলো। আমার কপালে ধীরে ধীরে রাউন্ড করে মুভ মেখে দিতে থাকলো৷ অনেকটা সময় মিহিন কিছু বলল না৷ চুপচাপ থাকলো৷ মুভটা রেখে সে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। একদম আমার বুকের সাথে মিশে গেল মেয়েটা৷ কেমন ধরে আসা গলায় বলল,
-এই পৃথিবী উল্টে যাবে, তবুও আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
-আমি মানুষ ভালো নই৷
-আমার খারাপ মানুষ হলেও চলবে।
-কেউ আমাকে চুজ করেছে।
-চুজ করলে মেয়েটা এতোক্ষন এখান পড়ে থাকতো না৷ অনেক আগেই চলে যেতো৷
-মায়া কেটে গেল ঠিকই চলে যাবে।
-তোমার মায়া কাটানো এতোটা সম্ভব নয়।
-তুমি আমাকে সন্দেহ করো৷
-সন্দেহ করার অধিকার আছে বলেই করি৷
-অযথা সন্দেহ অন্যায়৷
-অন্যায়ের ক্ষমা হয়৷
-ক্ষমা ঠিকই হয়৷ অথচ ভেতরের ব্যাথাটা ঠিকই রয়ে যায়।
-ব্যাথা সারানোর জন্যে আমি আছি না?
-ব্যাথার উৎসও তো তুমি।
-তাহলে সেটা সারানোও আমার দায়িত্ব।
-মিহিন আমি চাই না তুমি কম্প্রোমাইজ করো৷
মিহিন হঠাৎই দু'হাতে আমার গলা চেপে ধরলো। বলল,
-আর একবার যদি এসব কথা বলেছো তো গলা টিপেই মেরে ফেলবো৷
মিহিন গলা ছেড়ে দিলো৷ কয়েকটা কাশি এলো চট করেই৷ মিহিন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। যেন খুবই মূল্যবান জিনিস৷ খুব সহজে হারাতে চায় না সে৷ হঠাৎই আমি কান্নার স্বর পেলাম। মিহিন কাঁদছে৷ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলছে,
-তুমি জানো না, তুমি আমার জন্যে কী৷ পুরো বিকেল থেকে একটা কথাও বলোনি আমার সাথে। রাতেও না৷ এতোক্ষণেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছি৷ আমার পাগল পাগল লাগছিল৷ আমার মনে বলো তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না৷ আসলেই চলবে না৷
-অথচ রাগলে তোমার ভীন্ন রূপ দেখা যায়৷
-তোমার যায় না?
আমি খানিকটা থতমত খেয়ে গেলাম। কী বলব ভেবে পেলাম না। মিহিন বলল,
-নিজের বেলায় চুপ। বাদ দাও। আমাকে জড়িয়ে ধরো শক্ত করে৷
আমি ধরলাম না৷ মিহিন খানিকটা চড়া স্বরে বলল,
-ধরো? জড়িয়ে ধরতে কী সমস্যা?
-আমি তোমার উপর রাগ করেছি৷
-এতো রাগ করে থাকতে হবে না৷ জড়িয়ে ধরো আমাকে৷
আমি চুপ করে থাকলাম। মিহিন এবার আর বলল কিছু বলল না৷ আমার হাতটা নিজের কোমরের কাছে নিয়ে রাখলো৷ বলল,
-শোনো।
আমি জবাব দিলাম না। মিহিন বুকের ভেতর লুকিয়ে থেকেই বলল,
-শোনো না?
-কী?
-শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। আমি একটু কাঁদবো।
-তুমি কাঁদবে না৷
-কান্না এলেও না?
-কেন?
-তোমাকে কান্না করতে দেখলে আমার খারাপ লাগবে।
-এখন লাগছে?
-লাগছে।
-তাহলে এতোক্ষণ যে এতো কঠিন আচরণ করলে।
-তুমি তারচেয়ে কঠিন কিছু প্রাপ্য।
-থাক। আর বলতে হবে৷ শাস্তিই তো দিতে জানো। ভালোবাসতে তো জানো না৷
-জানি না?
-একদমই না।
-তাহলে এতোদিন কী করলাম?
-তোমার মাথা করেছো।
আমি মিহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলাম। একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম। বললাম,
-হয়েছে?
-উহু।
-আর কী লাগবে?
-সারারাত এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতে হবে।
-আর?
-আর এখন তুমি আমায় আদর করবে।
-পারবো না৷ উঠে গিয়ে ডিনার সেরে শুয়ে পড়ো।
মিহিন এবার সত্যিই কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকের উপর এলোপাথাড়ি মারতে থাকলো। আমি কিছু বললাম না। তাকে কেবল শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।
মিহিনের সাথে রাগ করা মুশকিল৷ রেগে থাকাটা আরো মহা মুশকিল৷
গল্পঃ মধ্যরাতের গল্প কথা৷
ভুলত্রুটি মার্জনীয়
তাসফি আহমেদ